শশাঙ্কের কৃতিত্ব । শশাঙ্কের কৃতিত্বের মূল্যায়ন।শশাঙ্কের কৃতিত্ব আলোচনা কর ।
ভূমিকা:
প্রাচীন তথা আদি মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের এক খ্যাতনামা শাসক ছিলেন গৌররাজ শশাঙ্ক। গৌরের গুপ্ত শাসকরা ক্রমশ হীনবল হয়ে পড়লে শশাঙ্ক সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গৌড়ের তার স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । তার সুবিশাল এই রাজ্যের কথা আমরা জানতে পারি বাণভট্টের হর্ষচরিত, হিউয়েন সাং – এর সি-ইউ-কি ,বৌদ্ধ গ্রন্থ আর্য মঞ্জুশ্রী, শশাঙ্কের গঞ্জাম প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে।
শশাঙ্কের বংশপরিচয় এবং বাল্যজীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না তবে, বিহারের শাসারাম জেলার রোটাস দুর্গের গিরিপাত্রে ‘শ্রী মহাসামন্ত শশাঙ্ক দেবস্য’ নামের উল্লেখ রয়েছে । রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে , শশাঙ্ক অধিরাজ ছিলেন মহাসেন গুপ্তের। কিন্তু মহাসেনগুপ্ত খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের শেষ দশকের মগধে রাজত্ব করেন। তাই বিন্ধোশ্বরী প্রসাদ সিনহার মতে, শশাঙ্ক জয়নগরের অধীনস্থ মহাসামন্ত ছিলেন কিন্তু এ তথ্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। প্রত্নতান্ত্রিক সাক্ষ্যপ্রমাণে বলা যায় যে শশাঙ্ক সম্ভবত মৌখরীরাজ অবন্তী বর্মার অধীনে মহাসামন্ত ছিলেন এবং অবন্তী বর্মার মৃত্যুর পরবর্তীকালে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ।
শশাঙ্কের কৃতিত্ব/শশাঙ্কের কৃতিত্বের মূল্যায়ন
বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্কই প্রথম শাসক যিনি বাংলার বাইরে তার রাজ্যসীমা সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হয়েছিলেন। মেদিনীপুর এর তাম্রশাসন ও আর্য মঞ্জুশ্রী মূল কম্পের সাক্ষ্যে জানা যায় যে দণ্ডভক্তি ও পুন্দ্রবর্ধন ভক্তি তার সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। উড়িষ্যায় তার রাজ্যসীমা যে চিলকা হদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার প্রমাণ বঙ্গোদের শৈলোদ্ভব বংশীয় দ্বিতীয় মাধব রাজ্য তাকে অধিরাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তৎকালীন অবিভক্ত গঞ্জাম জেলা ও কটকের দক্ষিণাংশের রাজ্যে ও তার অধীনে ছিল।
শশাঙ্ক কেবলমাত্র রাজ্য বিজেতাই ছিলেন না ,তিনি এক দক্ষ শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বাংলার ভেঙে পড়া প্রশাসনকে গুপ্তদের মতোই গড়ে তুলেছিলেন। রাজ্য কয়েকটি বড় বিভাগে বিভক্ত ছিল আবার সেই বিভাগগুলি একাধিক বিভাগ বা ভুক্তিতে বিভক্ত ছিল, আবার বিষয়গুলি গড়ে উঠেছিল কয়েকটি গ্রাম নিয়ে।
শশাঙ্ক শৈবধর্মালম্বনে ছিলেন । 145 গ্রীন ওজনের স্বর্ণমুদ্রা গুলিতে তার ধর্মীয় চেতনার ভাব স্পষ্ট । খাদের পরিমাণ বেশি থাকায় তা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিচায়ক না হলেও শৈব ধর্মানুসারী রাজার প্রতীক ছিল । হিউয়েন সাঙ শশাঙ্কের ধর্ম বিরোধী কার্যকলাপের যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে অতিরঞ্জন থাকলেও তাকে একেবারে মিথ্যা বলা যায়না। হিউয়েন সাঙ এর বিবরণ অনুযায়ী প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণমুদ্রা এই সময় চালু ছিল। শশাঙ্কের পরবর্তীকালে বাংলায় আর কোন স্বর্ণমুদ্রা প্রচলিত ছিল না ।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে বাংলায় আসামে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবন শশাঙ্কের মত উচ্চ স্তরের মানুষের পক্ষে তার পৃষ্ঠপোষকতা করা ছিল স্বাভাবিক। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য সকল ও প্রভাবশালী বৌদ্ধদের শশাঙ্ক প্রসন্নচিত্তে গ্রহণ করতে পারেনি। তবে শৈব শশাঙ্কের কীর্তিকলাপের ফলে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের যে বিশেষ ক্ষতি হয়নি তার প্রমাণ নিহিত আছে এই তত্ত্বে যে শশাঙ্কের মৃত্যুর পর এবং তারও 50 বছর পর ই-সিউ বাংলাদেশে বৌদ্ধদের সমৃদ্ধিই লক্ষ্য করেছিলেন।
বাণভট্টের হর্ষচরিত এবং হিউয়েন সাঙ রাজ্যবর্ধন এর অকাল মৃত্যুর জন্য শশাঙ্কের বিশ্বাসঘাতকের দায়ী করেছেন তবে শশাঙ্কের বৌধ বিরোধী কার্যকলাপের চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের বিরাগভাজন হন । তিনি আর বানভট্ট ছিলেন হর্ষবর্ধন এর সভাকবি । ফলে তারা অহেতুক শশাঙ্কের চরিত্রে কলঙ্কলেপন করেছেন ।
হিউয়েন সাঙ বলেন 637-38 খ্রি শশাঙ্কের মৃত্যুর সময় পর্যন্ত মগধ তার অধিকারের ছিল। অন্যদিকে মাতোয়ানলিনের বিবরণ অনুযায়ী 641 খ্রি হর্ষ মগধ রাজ উপাধি নেয় অর্থাৎ শশাঙ্কের জীবিত থাকাকালীন হর্ষ তার রাজ্য দখল করতে পারেননি ।
মূল্যায়ন :
বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্কই প্রথম শাসক যিনি সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন ।শশাঙ্ক যদি বানভট্টের জীবনীকার ও হিউয়েন সাঙ এর সুহৃদ পেতাম তাহলে তিনিও বাংলার তথা ভারতের ইতিহাসে তারকারূপে প্রতিভাত হতেন। শশাঙ্কের মৃত্যু ও পাল বংশের অবস্থানের মধ্যবর্তী সময় বাংলায় যে অরাজকতা অবস্থা চলেছিল সমসাময়িক লিপি এবং কাব্যে তাকে মাৎস্যন্যায় বলা হয়েছে। পুকুরের বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে নির্বিচারে গ্রাস করে তেমনি অরাজকতার সুযোগে বাংলাদেশের সব দুর্বলদের ওপর অত্যাচার ও শোষন চলত ।শশাঙ্কের মৃত্যুর পর পদ্মা নদীর উত্তর ভাগের ভাস্কর বর্মন এর এবং দক্ষিণ ভাগে হর্ষবর্ধনের আধিপত্য স্থাপিত হয়েছিল।
Nice
Lekha ta khub valo hoyacha.
Thanks
Good
Thank you