নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণ
- ভূমিকা:
- আদিম মানুষ লক্ষ্য করেছিল যে নদীর তীরে বসবাস করা তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধাজনক ।এজন্য প্রাচীনকালে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে জনবসতির প্রসার ঘটে। পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিল জলে আবার প্রাচীন সভ্যতা গুলির বিকাশও ঘটেছিল জলের কাছে অর্থাৎ নদী উপত্যকায়। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠা প্রাচীন সভ্যতা গুলিকে বলা হয় নদীমাতৃক সভ্যতা। আজ থেকে প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে নদীমাতৃক সভ্যতা গুলির বিকাশ শুরু হয়েছিল। প্রাচীন বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সভ্যতা গুলির অধিকাংশ বিভিন্ন নদী অববাহিকা অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল।
- চারটি উল্লেখযোগ্য নদীমাতৃক সভ্যতার নাম হল সিন্ধু নদের তীরে হরপ্পা সভ্যতা, নীল নদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা, ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে মেসোপটেমিয়া ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, ভূমধ্যসাগরের তীরে ইজিয়ান সভ্যতা।
- নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণ ।
- প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে বিভিন্ন কারণ ছিল তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- 1) উর্বর কৃষিজমি :
- আদিম মানুষ লক্ষ্য করেছিলে যে নদীতে প্লাবনের ফলে নদীর দুকূল ছাপিয়ে যখন বন্যার জল উপত্যাকা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে ।তখন উপকূল অঞ্চলে নদীর পলিমাটি সঞ্চিত হয় ।এই পলিমাটি সমৃদ্ধ জমি খুবই উর্বর এবং এই জমিতে তুলনামূলকভাবে বেশি ফসল উৎপাদিত হয়।
- 2) জল সেচের সুবিধা:
- নদীর উপকূল অঞ্চলে চাষবাস করলে জলসেচের সুবিধা পাওয়া যায়। নদীতে বাঁধ দিয়ে এবং সেখান থেকে খাল কেটে কৃষিজমিতে জলসেচ করা সম্ভব হয় জলসেচের ফলে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
- 3) মাছ শিকার:
- আদিম মানুষ যখন যাযাবর জীবন ছেড়ে কৃষি কাজে নিযুক্ত হল, তখন স্বীকার করে মাংস সংগ্রহের পরিমাণ কমতে শুরু করল। নদী ও হ্রদে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। মানুষ তখনকার উন্নত হাতিয়ার ব্যবহার করেই নদী থেকে প্রচুর মাছ ধরত। খাদ্যশস্য এবং নদীর মাছ ধরার ফলে তখনকার মানুষের খাদ্যের কোন অভাব হতো না।
- 4) অনুকূল আবহাওয়া:
- নদী বা বড় জলাশয় এর ধারে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক হয়। জলরাশি থেকে দূরবর্তী স্থানে গ্রীষ্মকালে বেশি গরম এবং শীতকালে বেশি শীত অনুভূত হয়। এজন্য নদী বা বড় হোলের উপকূলে প্রাচীন মানুষ তাদের বসতি গড়ে তুলতে চাইল।
- 5) পানীয় জলের সুবিধা:
- আদিম মানুষের কাছে পানীয় জলের একমাত্র উৎস ছিল নদীনালা বা হ্রদের জল। পানি জন্য প্রাপ্তির সুবিধার কারণে আদিম মানুষ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে।
- 6) পণ্য পরিবহনে যাতায়াতের সুবিধা:
- প্রাচীনকালে স্থলপথে দূরদূরান্তে যাতায়াত বা পণ্য পরিবহনে বিশেষ সুযোগ সুবিধা ছিল না। নদীর তীরে বসবাস করলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনের বিশেষ সুবিধা হয়। কৃষি কাজ শুরু করার পর উৎপাদিত শস্য ও অন্যান্য পণ্য দূর-দূরান্তে পাঠানোর জন্য নদীপথই ছিল সবচেয়ে উপযোগী।
- 7) পশু পালনের সুবিধা:
- নদী,হ্রদ বা দীঘির তীরবর্তী অঞ্চলে যথেষ্ট দুর্বল হওয়ায় এবং সেখানে জলের সরবরাহের থাকায় জলাশয় সংলগ্ন অঞ্চলে তৃণভূমির প্রসার ঘটত। এই তৃণভূমি আদিম মানুষের পশু পালনের পক্ষে বিশেষ সহায়তা হত। মানুষ নদী উপত্যকা বা শহরের নিকটবর্তী বিস্তৃত ভূমি অঞ্চলে পশুচারণ করতে পারত পশু পালনের ক্ষেত্রে নদীর তীরে বসবাস করায় আদিম মানুষের পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হয়।
- 8) অধিক নিরাপত্তা:
- আদিম যুগে শিক্ষার সম্পদ সংগ্রহ ও অন্যান্য কারণে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ বাধত। তাই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
- উপসংহার:
- আদিম মানুষ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করার ফলে বিভিন্ন সুবিধা লাভ করেছিল। নদী উপত্যকার উর্বর জমিতে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হয়। মানুষের খাদ্যের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছিল। অবসরকালীন আদিম মানুষ বিভিন্ন শিল্প সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে পেরেছেল।