ইতিহাসের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক ।
জ্ঞনচর্চার যে শাখা রাষ্ট্রনীতি, সরকারের গঠন র্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে চর্চা করে থাকে তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে।
ইতিহাসের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক পরম্পরা বেশ প্রাচীন। অনেকেই বলেন ইতিহাস হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষাগার স্বরূপ। অনেকে আবার মনে করেন যে ইতিহাস হল অতীতের রাষ্ট্রনীতি, অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল বর্তমানের ইতিহাস।
লর্ড আক্টন মনে করেন যে নদীর জলের সঙ্গে যেমন বালিকনা অবিচ্ছেদ্য, তেমনই ইতিহাসের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অবিচ্ছেনা। সমাজবিজ্ঞানমূলক জ্ঞানচর্চার এই দুই শাখার পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অত্যন্ত বেশি এবং একে অপরকে ছাড়া সম্পূর্ণ নয়।
সাধারণভাবে মনে করা হয় যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিকড় ইতিহাসের মধ্যে নিহীত। পলিবিয়াস বলেছিলেন যে রাষ্ট্রনীতির জ্ঞানঅর্জন করাই ইতিহাসের শিক্ষা।
কোনো বস্তুতত্ত্বের উদ্ভব ও বিবর্তন একটি নির্দিষ্ট কালে এবং একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষিতে ঘটে থাকে এবং সেই কাল ও প্রেক্ষিত না বুঝলে রাষ্ট্রতন্তুটির চরিত্র অনুধাবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সমকালীন ইওজেলে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের উদ্ভবের পেক্ষিতেই কিন্তু ম্যাকিয়াভেলির হি গ্রামকি হয়ে অথবা মৌর্য যুগের সমকালীন ব্যস্তন কোটিলোর রাষ্ট্রনৈতিক তত্ত্বকে মূর্ত করে তোলে।
মার্কসীয় সমাজতন্ত্র বাতিস্নান জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি তত্ত্বগুলি নিজ নিজ ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতেই রচিত হয়ে থাকে। অধ্যাপক উইদোৰি যথার্থই বলেছেন যে ইতিহাসের সাম রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে তৃতীয় মাত্রা বা তৃতীয় নেন প্রদান করে থাকে।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপরে ইতিহাসের নির্ভরশীলতাও কম নয়।
বস্তুত ইতিহাসচর্চার আকরে রয়েছে রাজনীতির চর্চা। কৌটিলোনা অর্থশাস্ত্র বাদ দিয়ে মৌর্য যুগের রাষ্ট্রনীতি, বা জন লকের উদারনৈতিক রাষ্ট্রতত্ত্ব বাদ দিয়ে সপ্তদশ শতকের শেষার্থের ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাস, রুশোর জেনাকো উইল নির্ভর হট্টতত্ত্বকে বাদ দিয়ে ফরাসী বিপ্লব বা মার্কসীয় বিপ্লবের তত্ত্বকে ব্যতিরেকে ১৯১৭ এর বলশেভিক বিপ্লবের পাঠ বেকা যে অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে ইতিহাসের পাঠ শুনাই করা যায়না।
একইভাবে টলস্টয় এবং থেরোর যে সকল তত্ত্ব পড়ে গান্ধী তাঁর অহিংস আহযোগ ও সম্রাহের নীতি গ্রহণ করেছিলেন সেগুলি না বুঝলে দীর রাজনৈতিক আনেগুলিকে বোঝা সম্ভব নয়। আসলে ইতিহাসের চর্চার অনেকটাই জুড়ে আছে রাষ্ট্রনীতি ও প্রশাসনিক ইতিহাস সেখেন মনুসংহিতার আইন, হাম্বুরাবিত আইন, জানিয়ানের আইন, কোড নেপোলিয়ান, মালেকৃত ইন্ডিয়ান পেনাল কোড একদিকে যেমন রাষ্ট্রনীতির চর্চা হয়ে ওঠে তেমনই প্রশাসনিক আইনো ইতিহাসের গবেষধর বিষয় হয়ে ওঠে।
সর্বোপরি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো বিষয় একইসাথে ইতিহাসের ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচির অন্তর্গত। পার্থক্য এখানে যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করে থাকে, যেখানে একজন ঐতিহাসিক সেই তলো বাস্তব প্রয়োগের দিকে মনোনিবেশ করেন। তত্ত্বটি ছাড়া যেমন বাস্তবকে বোঝা সম্ভব নয়, তেমনই ইতিহাসের বাস্তব প্রয়োগই তত্ত্বকে প্রাণদান করে।