StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের গুরুত্ব

 প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের গুরুত্ব।



 স্থাপত্য-ভাস্কর্য প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে স্বীকৃত।অনুসন্ধান ও উৎখননের ফলে মাটির তলা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নবস্তু, যথা—মৃৎপাত্র তথা টেরাকোটার নিদর্শনসমূহ, পাথর অথবা অন্য কোনো ধাতব মূর্তি এবং স্থাপত্য-ভাস্কর্যের নানা নিদর্শন প্রভৃতি হল বাস্তবভিত্তিক উপাদান।


  সাম্প্রতিককালে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বেড়াচাঁপার চন্দ্রকেতুগড় এবং বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে খননকার্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাদি উক্ত ধারণার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বস্তুত, বাংলার ইতিহাস রচনায় ঐ দুই অঞ্চলের প্রত্নসম্পদকে এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।


   চন্দ্রকেতুগড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে যে সমস্ত প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে । উল্লেখযোগ্য প্রত্নবস্তুগুলি হল চিত্রিত ধূসর মৃৎপাত্র, লাল মৃৎপাত্র, লাল-কালো মৃৎপাত্র, উত্তরের কৃষ্ণ-মসৃণ মৃৎপাত্র, খোদাই করা সীলমোহর (নামমুদ্রা), ছাপযুক্ত (punch-marked) রৌপ্য মুদ্রা ও ঢালাই করা তাম্রমুদ্রা এবং জপমালার গুটি ও দামি পাথর।

  

   উৎখননের ফলে আরো পাওয়া গেছে কুষাণ ও গুপ্ত যুগের কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা, জলনিকাশের কাজে ব্যবহৃত মাটির পাইপ এবং সর্বোপরি খরোষ্ঠী ও ব্রাহ্মী-খরোষ্ঠী লিপিসম্বলিত কাদামাটির তৈরি সীলমোহর প্রভৃতি। প্রসঙ্গত বলা যায় চন্দ্রকেতুগড়ে প্রাপ্ত চিত্রিত ধূসর মৃৎপাত্রগুলির সঙ্গে উত্তর ভারতের হস্তিনাপুর, ইন্দ্রপ্রস্থ, অহিচ্ছত্র, মথুরা, কৌশাম্বী প্রভৃতি অঞ্চলের সুপরিচিত চিত্রিত ধূসর মৃৎপাত্রগুলির এক অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে।


  হরপ্পা সভ্যতা ও সাম্প্রতিক কালে আবিষ্কৃত মেহেরগড় সভ্যতা। হরপ্পা সভ্যতা যে নগরকেন্দ্রিক ছিল, সুদূর প্রাচীনকালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় ভারতবর্ষেও যে উন্নতমানের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তা হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথাল, ধোলাবিরা (গুজরাট), কালিবঙ্গান (রাজস্থান) প্রভৃতি অঞ্চলে খননকার্যের ফলে জানা সম্ভব হয়েছে। 


  বস্তুত, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের সাহায্যেই নগরায়ণ সংক্রান্ত আলোচনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। শুধু হরপ্পা সভ্যতার ক্ষেত্রেই যে একথা প্রযোজ্য তা নয়, তক্ষশিলা, সারনাথ অথবা রাজগীর প্রভৃতির ক্ষেত্রেও একথা সত্য।


  ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ ও এপ্রিল মাসে যথাক্রমে পশ্চিম বাংলার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোসাবা থানায় এবং মধ্যপ্রদেশের সাঁচী-সাতধারা এলাকায় নতুন আবিষ্কারের কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বন ও পরিবেশ দফতরের কর্মীরা গোসাবা থানা এলাকায় ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মাটি খুঁড়তে গিয়ে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয়-পঞ্চম শতকের কিছু দুর্লভ প্রত্ন নিদর্শন পান। এগুলির মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য হল, পবিত্র পদচিহ্নের অনুকৃতি, একটি সূর্যমূর্তি এবং গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ‘শ্রী বিক্রম’ স্বর্ণমুদ্রা।


  ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম কর্তৃক যে ২টি বৌদ্ধমঠ ও ৬টি স্তূপ আবিষ্কৃত হয়েছিল সেগুলির সঙ্গে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের এই আবিষ্কার হল এক নতুন সংযোজন।


  সাম্প্রতিককালে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের উদ্যোগে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যে সমস্ত খননকার্য চলছে, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আশা করা যায় যে, ভবিষ্যতে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অনেক বাড়বে।

  

  আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করলেও রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি এগুলি ততটা দিতে পারে না, যতটা পারে লেখমালা। 


  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top