StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব


মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব


  ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় বাবরের ভূমিকা ছিলেন পিতা ওমর শেখ মির্জার দিক থেকে দিগ্বিজয়ী তৈমুর লং এর পঞ্চম পুরুষ এবং মাতা কুতলেগ নিগর খানুনের দিক থেকে চেঙ্গিস খান চতুর্দশ পুরুষ। স্ট্যানলি লেনপুল মন্তব্য করেছেন যে এশিয়ার দুই অংশ ও তৈমুর এর রক্ত বাবর এর ধর্ম নীতিতে মিশ্রিত হয়েছিল। বাবর ও তার বংশধরদের মুঘল বলা হত। মুঘল কথাটি মঙ্গল থেকে এসেছে। বাবর কিন্তু মঙ্গল ছিলেন না তিনি ছিলেন চাঘতায় তুর্কি । বাবর তার আত্মজীবনী “বাবরনামা” তে বলেছেন যে তুর্কিরা মঙ্গল থেকে আলাদা। তবে যাই হোক না কেন ভারতবর্ষের তিনি ও তার বংশধররা মঙ্গল বা মুঘল নামে পরিচিত হন।


 বাবর 1483 খ্রিস্টাব্দে 14 February মধ্য এশিয়ার ফারগনা রাজ্যের অধিপতি ওমর শেখ মির্জা ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। 12 বছর বয়সে পিতৃ বিয়োগের পর পৈত্রিক ফারগানা রাজ্য হস্তচ্যুত হবার উপক্রম হলে তিনি অল্প বয়সেই তা নিবৃত্ত করেন। নানা বিপদ সংকটের মধ্যেই তার রাজনীতি শিক্ষা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে । 1496-1512 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সমরখন্ড জয়ের জন্য অন্তত পাঁচ বারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বাবর ভারতের দিকে দৃষ্টিদেন । এর দ্বারাই ভারতের ইতিহাসে মুঘল যুগের সূচনা হয়।


  খাজদাওয়ানের যুদ্ধে পরাজয়ের পর বাবর 1512 খ্রিস্টাব্দ থেকে একদিকে কাবুলে তার ক্ষমতাকেন্দ্র করার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে কাবুলের পার্বত্য ভূমি থেকে পূর্বদিকে ভারতের সমতল অঞ্চলের প্রতি দৃষ্টিদেন। তার মত উচ্চাকাঙ্ক্ষী সাম্রাজ্যবাদী শাসকের পক্ষে কেবল ক্ষুদ্র একটি পার্বত্য রাজ্য আফগানিস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব ছিল না। ফলে ভারতের সমতলভূমির শ্যামল হাতছানি তাকে আকৃষ্ট করে। মধ্য এশিয়ার তার রাজ্য বিস্তারের সম্ভাবনা সুদূর পরাহত হলে তিনি স্বভাবতই ভারতের দিকে দৃষ্টি দেন। উত্তর ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতা, নদী শব্দের মধ্যে অন্ত বিরোধ এবং ভারতের ঐশ্বর্য ধন-সম্পদের ঠিকানা তার অজানা ছিলনা। ঐতিহাসিক রসব্রুক উইলিয়ামস মন্তব্য করেছেন যে রাজপুতদের হাতে অত্যাচারিত ভারতীয় মুসলমানরা তাদের মুক্তির জন্য বাবরকে ভারত আক্রমণের আহ্বান জানান। অধ্যাপক কুরেশিও এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। কিন্তু বাবরের ভারত আক্রমণের কারণ এর এই ধরনের ব্যাখ্যা সঠিক গ্রহণযোগ্য নয়। সম্ভবত মেবারের রানা সঙ্গ ও বাবরকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারত আক্রমণের উৎসাহিত করেন। 1519-24 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চারটি প্রাথমিক অভিযান চালিয়ে বাবর ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে তার প্রবেশের পথ পরিষ্কার করেন।


  বাবর তার আত্মজীবনী ”তুজুক ই বাবরি” তে বলেছেন যে 1525 খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দুস্থান বিজয়ের জন্য যাত্রা করেন। দৌলত খাঁ লোদির পক্ষে বাবরকে প্রতিহত করা অসম্ভব হওয়ায় তিনি তার বস্যতা স্বীকার করেন। বাবর পাঞ্জাব জয় করে দিল্লির দিকে এগিয়ে যান। ইব্রাহিম লোদী দিল্লি রক্ষার জন্য তাকে পানিপথের প্রান্তরে বাধা দিলে 1526 খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়।


  ইব্রাহিমের বিরাট বাহিনীর সম্মুখীন হয়ে বাবর হতাশ হন নি। তিনি উজবেগ ও তুর্কিদের কাছ থেকে যে রণ কৌশল আয়ত্ত করেছিলেন তার নাম ছিল তুলঘুমা যুদ্ধনীতি। তার নতুন রূহ গঠন, এবং উজবেগি অশ্বারোহী দের দ্বারা আক্রমণ এইতিন কৌশলে তিনি পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম বাহিনীকে নিহত ও ছত্রভঙ্গ করে দেন। 


  পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আফগান শক্তির ধুলিস্যাৎ ঘটে। ডক্টর আর পি ত্রিপাঠী মন্তব্য করেছেন যে “এই যুদ্ধ ছিল এক চূড়ান্ত ক্ষমতা নির্ণায়ক যুদ্ধ”।


 পানিপথের যুদ্ধ জয় লাভ এর ফলে মহান মুঘল সাম্রাজ্যের পত্তন(সূচনা) হয় । এই সাম্রাজ্য তাঁর বিশালতার আড়ম্বর ও সংস্কৃতিক দিবা থেকে মুসলিম জগতের শ্রেষ্ঠ ধর্ম ছিল এবং তা রোমান সাম্রাজ্যে সমকক্ষতা দাবি করতে পারত । এই যুদ্ধ জয়ের পর বাবর দিল্লি আগ্রা লুণ্ঠন করে বহু ধনরত্ন পান। দিল্লি আগ্রা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল তার অধীনে আসে এবং জৌনপুর পর্যন্ত সমৃদ্ধশালী গঙ্গা ও যমুনা উপত্যাকার দরজা বাবর এর কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায়। ক্রমেই উত্তর ভারতে তার কুক্ষিগত হলে বহু আফগান শয়তান তার প্রতি বশ্যতা জানান । উত্তরপ্রদেশের এটিওয়া, সম্বল, কনৌজ, চোলপুল ছবিটি অঞ্চল তার অধীনে হয়। কনৌজের পূর্বদিকে আফগান শক্তি তাদের ক্ষমতা পূর্ণ গঠনের চেষ্টা চালালে তা ধ্বংস করার জন্য তার পুত্র হুমায়ূনকে দায়িত্ব দেন।


  এমন অবস্থায় মেবারের রানা সঙ্গ তার বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হন। পানিপথের পর বাবর স্থায়ীভাবে ভারতে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে রানা প্রমাদ গোনেন। রানা সঙ্গ এর অভিযোগ ছিল যে তার রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত বিয়ানা বাবর অধিকারের চেষ্টা করে তার নিরাপত্তা নষ্ট করছেন। সুতরাং রাজপুত ও মুঘলদের এই যুদ্ধ ছিল আসলে শক্তিসাম্য স্থাপনেরই লড়াই।


  রশব্রূক উইলিয়ামস এর মতে রাজপুত মুঘলদের সেনারহাট ছিল যথাক্রমে 7:1 । এই পরিস্থিতিতে বাবর উপলব্ধি করেন তার সেনাদলের মনবল ও নষ্ট হচ্ছে। তিনি রানা সঙের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলে সেখানকার সুন্নি সেনারা বাবর এর প্রতি অনুপ্রাণিত হন ফলে 17 ই মার্চ 1527 খ্রিস্টাব্দে খানুয়ার প্রান্তরে রাজপুত মুঘল সেনার মধ্যে ঐতিহাসিক যুদ্ধ ঘটে। প্রায় 10 ঘন্টা ব্যাপী এই যুদ্ধে রাজপথ বাহিনী অসাধারণ বিক্রম দেখালেও বাবু তাদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন।

এই যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে রাজপুত শক্তি হীনবল হয়ে পড়লে বাবর এক প্রবল শক্তির আক্রমণের সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পান। রাজপুতদের দিল্লি দখলের যে পরিকল্পনা ছিল তার চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ হয়। রানা সঙ্গ এর সহকারি রূপে আফগানরা এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু রানা সংঘের পতনের ফলে আফগান শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার আসা চিরতরে নির্মূল হয়। ভারতে মুঘল শক্তির ভিত্তি দৃঢ় হলে বাবর কাবুল থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। ডক্টর কে কে দত্তের মধ্যে খানুয়ার যুদ্ধ ছিল ভারত ইতিহাসের নিশ্চিতভাবে এক চূড়ান্ত যুদ্ধ।

 পরবর্তীকালে বাবর মেদিনী রায় কে দমন করে চান্দেরি দুর্গ সুরক্ষিত করেন। কারণ এই দুর্গ ছিল রাজপুতানার প্রবেশদ্বার। 1528 খ্রিস্টাব্দে বাবর তার আক্রমণ করে তার শাসন ভার প্রাক্তন শাসক আহমেদ শাহ কে দেন। যথার্থভাবেই ভারতের রাজপথ প্রতিরোধ ও পুনরুজ্জীবনের সকল সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়।


  বাবর ভারতের মধ্যে তার শক্তির ভারসাম্য ভেঙে দিয়ে। লদী ও আফগান শক্তি ধ্বংস করে একটা নতুন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার ভিত গরে দিয়েছিলেন। তার গঠিত কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে পারেননি। বা মন্ত্রীদের পুতুল করে রাখেন নি । যেভাবে তিনি হিন্দুস্থানী ও আফগান অভিজাত ও দের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন বা বাংলা ও বিহার শাসকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেছেন তা থেকে বোঝা যায় যে তিনি ধৈর্য ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন।


  প্রকৃতপক্ষে বাবর যে বিদ্যা ভারতের নিয়ে এলেন সেটি যুদ্ধবিদ্যা। তার আসার আগে বন্দুকের ব্যবহার হলেও উনি যুদ্ধক্ষেত্রে তার কামানের ব্যবহার শুরু করেছিলেন তা এর আগে হয়নি। অশ্বারোহী ও কামানের সুদক্ষ ব্যবহার যে প্রতিপক্ষের বিশাল সৈন্যদলকে হটানো যায়, সেটা তিনি বারবার দেখেছেন। ফলে প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের সমুক্ষে আপাতত কোনো কঠিন সমস্যা ছিল না। ইতিমধ্যেই মাদকদ্রব্য সেবন ও কঠিন পরিশ্রমের ফলে বাবর এর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। 26 শে ডিসেম্বর 1530 খ্রিস্টাব্দে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


  মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি ভারত ইতিহাসে যে স্থায়ী কীর্তি লাভ করেন তার সীমানা ছিল উত্তর হিমালয় থেকে দক্ষিনে গোয়ালিয়র এবং পশ্চিমে পাঞ্জাব থেকে বাংলাদেশে পর্যন্ত।




Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top