হরপ্পা সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন।
Or
হরপ্পা সভ্যতার শিল্পকলা ও কারিগরি শিল্প।
হরপ্পার নগরাশ্রয়ী অর্থনীতিতে শিল্প-বাণিজ্য সঙ্গে সঙ্গে কৃষির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হরপ্পার মত নগর এর উদ্ভবের বহু আগে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দে সিন্ধু উপত্যাকায় কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সভ্যতার লক্ষণ পাওয়া গেছে। হরপ্পার সন্নিহিত অঞ্চলে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে কালিবঙ্গান এর গমের দানা, নথান ও রংপুরে কাদামাটিতে ও মৃৎপাত্রের ধানের তুষ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রত্ন ক্ষেত্র থেকে গলায় তিল ও সর্ষের দানা এমনকি কার্পাশের মত পণ্য শস্যের প্রমাণ ও সহজলভ্য।
কৃষি উপকরণ নিয়ে পন্ডিত মহলে বিতর্ক বর্তমান। হরপ্পায় লাঙ্গল ব্যবহারের স্পষ্ট নজির অগাতো থাকায় কোসাম্বি নিড়ানি জাতীয় উপকরণের ব্যবহারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। হরপ্পার মহেঞ্জোদারোতে দুটি বৃহৎ শস্যাগার পাওয়া গেছে। শস্য সংরক্ষণের সুবন্দোবস্ত ও এগুলি নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। এই শস্যাগার আধুনিক ব্যাংকের মতো শস্য লেনদেন হত। এছাড়া উৎখনন থেকে ছাগল ভেড়া মহিষ প্রভৃতি গৃহপালিত পশুর অস্তি পাওয়া গেছে।
হরপ্পার নগর আশ্রয় অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য তাঁর কারিগরি শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দেখা যায়। পাথর ও ধাতু ব্যবহারেই হরপ্পার কারিগররা দক্ষ ছিলেন। হাতিয়ার ছাড়াও ভাস্কর্য ও শিল্পকর্মে পাথরের ও তামার ব্যবহার আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অলংকার হিসেবে সোনার ব্যবহার, ইমারতের জন্য ইট নির্মাণ জ্যামিতিক ও বিভিন্ন নকশা সম্মিলিত মৃপাত্র তৈরি ইত্যাদি ছিল বিশিষ্ট।
হরপ্পার ব্যবহৃত ধাতু গুলির সব তার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে পাওয়া যেত না। সেগুলি দূর দেশ থেকে সাধারণত বাণিজ্যিক লেনদেন এর মাধ্যমে আসতো। যেমন সোনা আসতো দাক্ষিণাত্য থেকে, আফগানিস্তান থেকে রুপা, রাজস্থানের ক্ষেত্রি থেকে তামা, জেড পাথর আস্ত পশ্চিম এশিয়া এবং লাপিয় লাজলী আফগানিস্তানের বদখগানি এলাকা থেকে।
হরপ্পীয়রা যে আরও দূরপাল্লার বাণিজ্যে অংশ নিতেন তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ পশ্চিম এশিয়ার পুরা বস্তু দ্বারা সমর্থিত। 1923 এ মেসোপটেমিয়ার উর এ প্রাপ্ত চব্বিশটি সিলমোহর আকারে হরপ্পীয় সিলমোহরের অনুরূপ। এগুলি উপস্থিতি সিন্ধু ও টাইগ্রিস ইউফ্রেটিস উপত্যাকার মধ্যে বাণিজ্য চলত সমুদ্রপথে এবং এতে পারস্য উপসাগর ও বাহরিন অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম।
গুজরাটের উপকূল স্থিত লোথাল হরপ্পা সভ্যতার সমুদ্র বাণিজ্যে বিশেষ ভূমিকা নিত। দূরবর্তী এলাকাগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল। এছাড়া পণ্যসামগ্রীর ওজন শুদ্ধতার প্রতীক সিলমোহর ও বিভিন্ন প্রথা সুনিশ্চিতভাবেই ছিল উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অভ্রান্ত প্রমাণ।
*হরপ্পা সভ্যতায় ব্যবহৃত দুটি দামি পাথরের নাম হল কালেনিয়াম , আগেট ।