StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক ।

 ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক।


প্রাচীন গ্রিসে হেরোডোটাস ও থুকিডিডিস কিছুটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ইতিহাসের চর্চা করলেও উনবিংশ শতকের আগে পর্যন্ত ইতিহাস চর্চায় বিজ্ঞানের প্রভাব বিশেষ একটা দেখা যায়না। কিন্তু ঊনবিংশ শতক থেকে ইতিহাস চর্চায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। জার্মান পন্ডিত নেব্যুর, রাঙ্ক , গার্ডিনার, প্রমখ ঐতিহাসিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মন নিয়েই ইতিহাস চর্চা শুরু করেন।


  বৈজ্ঞানিক যেমন পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ এর ওপর নির্ভর করে তার সিদ্ধান্ত উপনীত হয়ে থাকেন তেমনই একজন ঐতিহাসিক ও তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ এবং সেগুলির নানাভাবে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে পরীক্ষণ এর পরেই তার সিদ্ধান্তে আসেন। একজন বৈজ্ঞানিক যেমন তার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ এর বিষয়টিকে প্রত্যক্ষ ভাবে ব্যবহার করতে পারেন, একজন ঐতিহাসিক তা বিশ্লেষণের বিষয় বস্তু রূপে অতীতের তথ্যগুলিকে প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পারেন না। তাকে দেখতে হয় সমকালীন কোন লেখক এর চোখে বা অতীতের সময়ে রেখে যাবা কোন চিহ্ন বা উপাদান থেকে। সত্যি উপনীত হবার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক যেমন একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে আসার জন্য বারংবার পরীক্ষণের পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তেমনই একজন ঐতিহাসিক অতীতের কোন একটি বিশেষ ঘটনাকে বিবৃত করার জন্য একাধিক তথ্যকে বিশ্লেষণ করে প্রকৃত সত্যকে উন্মোচিত করেন।


  ফরাসি ঐতিহাসিক তথা গণিতজ্ঞ অগস্ট কোমতে বলেন যে, বিজ্ঞান চর্চায় বীজগণিতের সূত্র দিয়ে যেমন একটি অর্ধ বৃত্তের পরিমাপ করা যায় তেমনি সাধারণ নিয়মকে অনুসন্ধান করে ইতিহাস চর্চার মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতার ধারাটিকে অনুধাবন করা যায়‌। বিজ্ঞানের মত ইতিহাস চর্চা ও ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারে।


  বিজ্ঞান চর্চায় কিছু সাধারণ নিয়ম বা সূত্রকে সমর্থন আর পরিপ্রেক্ষিতে বা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে যেমন- মাধ্যাকর্ষণ এর ফলে সকল বস্তু পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয়। ঠিক একইভাবে ইতিহাস ও মানব গোষ্ঠীর অতীতের আচরণ অনুমান করেন তথ্যগুলিকে বিশ্লেষণ করেন একজন ঐতিহাসিক অবরোহ পদ্ধতি অবলম্বন করে কিছু সাধারণ সূত্র নির্ধারণের চেষ্টা করেন।


  ইতিহাস ও বিজ্ঞান এর জ্ঞানচর্চার লক্ষ্যই এক অভিন্ন উভয়ই সত্য প্রতিষ্ঠার কাজে লিপ্ত। একদিকে বিজ্ঞান যেমন বস্তুগত বা প্রাকৃতিক জগতের অজানা তথ্য কে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ এর মাধ্যমে উন্মোচিত করে তেমনি ইতিহাস চর্চায় তথ্য অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষের অতীতকে প্রকাশিত করা হয়।


  পদ্ধতিগতভাবে ইতিহাসকে বিজ্ঞানের অনুরূপ জ্ঞান রূপে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বা উভয় প্রকার চর্চার মধ্যে প্রক্রিয়াগত সাদৃশ্য গুলি উপস্থাপন করতে গিয়ে এই তত্বের সমর্থকগণ বেশ কিছু যুক্তি তর্কের অবতরণ করেছেন। বিজ্ঞানের মত ইতিহাস চর্চা ও ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারে অর্থাৎ বিশেষ পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে মানবসমাজ কিরূপ আচরণ করতে পারে তা বোঝা যায়। ইংরেজ ঐতিহাসিক টমাস বাকলে অভিমত প্রকাশ করেন যে তার সময়কাল পর্যন্ত ঐতিহাসিকগণ অতীতের চর্চায় সমষ্টিগত মানুষের পরিবর্তে ব্যক্তিকে সাধারণ আন্দোলনের বিশেষ বিশেষ ঘটনা কে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং সেই কারণে তারা ইতিহাসের সাধারণ সূত্র গুলি কে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।


  মার্কিনী কূটনৈতিক ইতিহাস চর্চার সঙ্গে জড়িত প্রখ্যাত গবেষক Bernadette Achmitt বলেছেন যে যদি সকল প্রকার সংস্কার ও মানসিক আবেগ মুক্ত হয়ে একজন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত সকল তথ্য কে যথার্থ ভাবে বিশ্লেষণ করে কেবল সত্যানুসন্ধানে জন্যেই ইতিহাসের অনমেষন করেন তাহলে এম ইতিহাস চর্চা এবং বিজ্ঞান চর্চা সমর্থক হয়ে যায়। তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন যে আধুনিক যুগের ঐতিহাসিকগণ যেভাবে তথ্যকে যাচাই ও বিশ্লেষণ করে থাকেন তা নিশ্চিত ভাবেই পরীক্ষাগারে সাধিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মতই।


  আধুনিক কালের ইতিহাস চর্চায় ঐতিহাসিকগণ যে পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ মাত্রায় বর্তমান। ট্র্যাভেলিয়ন ও মন্তব্য করেছেন যে, ইতিহাসের মধ্যে সত্য উপস্থাপিত হলে তাকে নিশ্চিতভাবেই বিজ্ঞান বলা চলে।EE Evans Pritchard এর মতে একজন নিরপেক্ষ ও সচেতন ঐতিহাসিক’ একজন রসায়নবিদ বা জীব বিজ্ঞানের মত করেই তার গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণ করেন। পদ্ধতিগতভাবে উভয়ের কাজে কোন তারতম্য না থাকলেও পার্থক্য রয়েছে যে বিষয় বা ঘটনা নিয়ে তারা গবেষণা করেছেন তার প্রকৃত বা চরিত্রে।


  সত্যে উপনীত হবার জন্য একজন বিজ্ঞানী প্রয়োজনে বারবার পরীক্ষা চালান পর্যবেক্ষণ করেন ঐতিহাসিক কেবল তার তথ্যগুলিকে বারবার যাচাই করতে পারেন অতীতের কোনো ঘটনাকেই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ এর কোন উপায়ে তার কাছে নেই। একজন বিজ্ঞানী নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করে জানতে পারেন কেন এবং কখন ভূমিকম্প ঘটতে পারে কিন্তু একজন ঐতিহাসিক কোনভাবেই নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না যে কখন বিপ্লব হবে। কিন্তু এ সত্বেও বলা চলে এই দুই ভিন্নধর্মী জ্ঞানের শাখার মধ্যে কোন একটি মিল রয়েছে উভয়ই সত্য উদঘাটনের লক্ষ্যে নিযুক্ত।


  ইতিহাসের চর্চায়  সাহিত্য ও বিজ্ঞান এক স্থানে মিলিত হয় তথ্যানুসন্ধান ও তার বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রটি ইতিহাসের বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস উপস্থাপনের লেখোকের অনুমান ভাবনা এবং তার ভিত্তিতে ঘটনার আকর্ষণীয় বিবরণ ইতিহাসকে সাহিত্যে পর্যায়ভুক্ত করে তোলে। বস্তুত ইতিহাস চর্চা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সাহিত্য সৌরভ উপস্থাপন ও দশনসুলভ অনুমান এর সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা স্বতন্ত্র এক মানব বিজ্ঞান। 


1 thought on “ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক ।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top