StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন

বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন

Or

বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের চরিত্র ব্যাখ্যা করো।



য়াহাবি কথার অর্থ নবজাগরণ। উনিশ শতকের  বেশিরভাগ সময় ধরে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন চলছিল বিশের দশকের এর শুরু , নব্বইয়ের দশক এর শেষ। আরবের আব্দুল ওয়াহাব এই আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন, তার নামানুসারে এই আন্দোলন ওয়াহাবি আন্দোলন নামে পরিচিত। ভারতে এই আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন রায়বেরিলি সৈয়দ আহমেদ। তার মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের নেতৃত্বদেন তার দুই শিষ্য এনায়েত আলী ও বেলায়েত আলী । পূর্বে ঢাকা থেকে উত্তর-পশ্চিমে পেশোয়ার পর্যন্ত এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। 




বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন তিতুমীর। তার প্রকৃত নাম মীর নিসার আলী। মক্কায় হজে গিয়ে তিনি ভারতের ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ সৈয়দ আহমেদের সান্নিধ্যে এসে ওয়াহাবি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। বাংলায় ফিরে তিনি দরিদ্র ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার ,মহাজন’ ও নীলকর ,সাহেবদের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন । তিতুমীরের নেতৃত্বে 24 পরগনা, নদিয়া ,যশোহর ,মালদা , রাজশাহী-ঢাকা প্রভৃতি জেলাগুলিতে ওয়াহাবি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বহু দরিদ্র ও নিম্নবর্গের হিন্দুরাও এই আন্দোলনে যোগ দেয় । 

তিতুমীর বারাসাত বসিরহাট এর বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করেন ।তিনি নিজেকে বাদশা এবং মৈনুদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী, গোলাম মাসুম কে সেনাপতি ঘোষণা করেন। তিনি নারকেলবেরিয়া গ্রামে বাঁশেরকেল্লা তৈরি করে তার দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন ।এই ঘটনা “বারাসাত বিদ্রোহ” নামে পরিচিত ।স্থানীয় জমিদার ও নীলকরদের বাহিনী তিতুমীর দের কাছে পরাজিত হলে ভারতের বড়লাট লর্ড বেন্টিং তিতুমীরের বিরুদ্ধে  অভিযান পাঠান । তিতু ও তার (1831)কয়েকজন অনুগামী প্রকাশ্য যুদ্ধে প্রাণদেন। বাঁশেরকেল্লা কামানের গোলার আঘাতে ধ্বংস করা হয়। বহু বিদ্রোহীর ফাঁসি বা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড হয়।  





বাংলায় তিতুমীরের নেতৃত্বাধীন ওয়াহাবি আন্দোলনের চরিত্র বা প্রকৃতি কিরূপ ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে । ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার, বিহারীলাল সরকার , কুমুদনাথ মল্লিক, প্রমুখ তিতুমীরের আন্দোলন কে সাম্প্রদায়িক বলে মনে করেন ।কেউ কেউ মনে করেন যে এই আন্দোলন ছিল  ধর্ম উন্মাদ মুসলমানদের কান্ড এবং হিন্দু বিরোধী ।অন্যদিকে হান্টার ,থর্নটন এই আন্দোলনের কোনো সাম্প্রদায়িক ছাপ দেখতে পাননি। নরহরি কবিরাজ, ডা  কুয়েমুদ্দিন আহমদ প্রমুখ মনে করেন যে অত্যাচারী জমিদার নীলকর এবং ইংরেজ বিরোধী ছিল এই বিদ্রোহের মূল কথা।




অনেকে এই আন্দোলনকে সংস্কার আন্দোলন, প্রজা বিদ্রোহ আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবেও চিত্রিত করা হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ আন্দোলনটিকে এই তিনটি উপাদান সম্মিলিতভাবেই কাজ করেছে বলে মনে করা হয়। তিতুমীর ওয়াহাবি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে মুসলিম সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করার প্রচেষ্টাই প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। মক্কায় অবস্থানকালে তিনি ইসলামের মহান সংস্কারক সৈয়দ আহমদ বেরেলভির সান্নিধ্য লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে তিতুমীর সমাজ সংস্কারে মনোযোগ দেন। এভাবেই তাঁর একদল অনুসারী গড়ে ওঠে এবং তিতুমীর এদের নেতৃত্ব দেন। তিতুমীরের আন্দোলনে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বহিপ্রকাশও ঘটেছিল। বিশেষ করে আন্দোলনের একটি পর্যায়ে কয়েকটি ধারাবাহিক সফলতার পর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে তিতুমীর ও তাঁর দল এদেশ থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করে আবার মুসলিম শাসন পুনপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।





জমিদারদের বিরুদ্ধে তিতুমীরকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল বলে এই বিদ্রোহকে প্রজা বিদ্রোহও বলা হয়ে থাকে। তবে একে কোনভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলা ঠিক হবে না। কেবলমাত্র ঘটনাচক্রেই জমিদারেরা সকলে ছিলেন হিন্দু এবং এই জমিদারদের বিরুদ্ধেই তিতুমীরকে অস্ত্র ধরতে হয়েছিল। তবে জমিদারেরা তিতুমীরের অনুসারীদের কাজে-কর্মে বাধা না দিলে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়তো হতো না। তিতুমীরের এই আন্দোলন শুধুমাত্র নারিকেলবাড়িয়া অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল, তাদের এই সংহতি, চেতনা আঞ্চলিক সীমারেখা অতিক্রম করতে পারেনি। এ কারণে ইংরেজ শাসক ও দেশীয় জমিদারদের সম্মিলিত শক্তির পক্ষে অঞ্চলকেন্দ্রিক এই আন্দোলন সমন করা কঠিন হয়নি। অন্যদিকে ইংরেজদের উন্নততর রণকৌশল ও অস্ত্রের কাছে তিতুমীরের পরাজয় ঘটেছে। ইংরেজদের হাতে ছিল শক্তিশালী কামান, আর তিতুমীরের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি। কাজেই বিদ্রোহের এই পরিণতি ছিল অনিবার্য।





তিতুমীরের বিদ্রোহ আপাতভাবে ব্যর্থ হলেও এই জাতীয় আন্দোলন এর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না । শুধু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। হিন্দু ব্যাংকাররা ওয়াহাবীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল। অমুসলমানরা অর্থসাহায্য দিয়েছিল। হিন্দুরাজারা ওয়াহাবি আন্দোলনের পরিবারবর্গ কে আশ্রয় দেন। সম্ভবত হিন্দু-মুসলমান সকলের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী ছিল,এর থেকে হিন্দু ও মুসলমানের কাছে এসেছিল ।  তিতুমীরের সংগ্রাম সাময়িকভাবে ব্যর্থ হলেও বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এর গুরুত্ব অনেক। তার মৃত্যুর পরও স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারা থেমে থাকেনি বরং জোরদার হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top