রামবল্লভী সম্প্রদায় ।
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে হুগলির নিকটবর্তী বাঁশবেড়িয়া গ্রামের সর্বধর্ম সমন্বয় আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে একটি নতুন ধর্ম সম্প্রদায় গঠিত হয়।1881 সালের 31 শে মে তারিখে সেই রাজনারায়ণ বসু রামমোহন রায়ের জীবন লেখিকা মিস কলেটের কাছে একটি চিঠিতে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে জানা যায় শ্রীযুক্ত কেশবচন্দ্র সেন নানা প্রচলিত ধর্মমত ও অনুষ্ঠানের জগাখিচুড়ী করে যে নববিধান প্রবর্তন করেছেন তা এ দেশে নতুন নয়।
প্রায় অর্ধ শতাব্দী পড়বে হুগলির নিকটে বাঁশবেড়িয়া গ্রামের রাধাবল্লব নামে একটি অদ্ভুত প্রাকৃতিক লোক অনুরূপ একটি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। এই সম্প্রদায়ের বাৎসরিক সবাই হিন্দু প্রণালীতে দেবতার কাছে ভোগ নিবেদন প্রথার অনুকরণে কৃষ্ণ, খ্রিষ্ট,ও মোহাম্মদ এই তিনজনের উদ্দেশ্যে ভোগ দেওয়া হতো। এই উৎসবে যে স্রোএ পাঠ করা হতো তাহার সমাথ এই যে কালি,কৃষ্ণ,খোদা এ সকলেই ভগবান এদের মধ্যে কোনো ভেদ বুদ্ধির কোন ঠাঁই ছিলনা।
শ্রী রাজনারায়ণ বসু লিখেছেন যে অক্ষয় কুমার দত্তের “HINDI SECTS”নামে প্রসিদ্ধি বাংলা গ্রন্থের বিস্তৃত বিবরণ আছে। কিন্তু এই গ্রন্থে নাম রামবল্লভী নামে অভিহিত করা হয়েছে। অক্ষয় কুমার কর্তাভজা সম্প্রদায়ের বিবরণ এর পরই এর বিবরণ দিয়েছেন।
রাজনারায়ণ বসু ও অক্ষয় কুমার দত্ত বিভিন্ন নামে একই সম্প্রদায়ের বিবরণ দিয়েছেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই। রাধাবল্লভী নামে একটি বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও ছিল। অক্ষয় কুমার তাহার বর্ণনা করেছেন কিন্তু তাও ভিন্ন মতাবলম্বী এবং বাংলায় তার বিশেষ প্রাধান্য ছিল না। রাজনারায়ণ বসু বোধহয় ভ্রমবসত রামবল্লভী ও রাধাবল্লভী এই দুই সম্প্রদায়কে অভিন্ন বলে মনে করেছেন। রাধাবল্লভী নামই ঠিক বলে মনে হয়। ঠাকুর রামকৃষ্ণের “যত মত তত পথ “ও কেশবচন্দ্রের নববিধান এই দুই ধর্ম সমন্বয়ের পরিকল্পনা সহিত রামবল্লভী সম্প্রদায়ের ধর্মমতও উল্লেখযোগ্য।