নারী শিক্ষা বিস্তারে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা।
১৮৩০ এর দশকের গোড়ার দিকে মেকলে প্রস্তাবে স্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক সামান্যতম কোন বিবৃতি নেই। শাসক শ্রেণির স্ত্রী শিক্ষার বিষয়ে নির্লিপ্ততার একটি দৃষ্টান্ত দরোয়া যেতে পারে। ১৮৪৫ সালে উত্তরপাড়ার জমিদার শ্রীযুক্ত জয়কৃষ্ণ মুখার্জি ও রামকৃষ্ণ মুখার্জী স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে কাউন্সিল অফ এডুকেশন এর কাছে একটি মহিলা বিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তাব দেন তাঁরা বলেন যে এই বিদ্যালয়ের আর্থিক দায়ভারের অর্ধেক তারা বহন করবে বাকিটা সরকার গ্রহণ করুক। ডিস্কোয়াটার বেথুন এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দিলেও কাউন্সিল অফ এডুকেশনের অপর সদস্যবৃন্দের কেউই এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেনি।
ব্রিটিশ বড়লাটদের মধ্যে লর্ড ডালহৌসী (১৮৪৮-৫৬) প্রথম নারীশিক্ষার কথা বলেন, তিনি বলেছিলেন যে নারীদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটালে তা ভারতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। তাঁর শাসনকালেই ১৮৫৪ সালে ‘Wood’s Despatch’ এর শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবে গণশিক্ষা বিস্তারের অঙ্গ হিসাবে পুরুষের পাশাপাশি নারী শিক্ষার পক্ষে মত প্রকাশ করে।
ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে নারী শিক্ষার অগ্রগতি বিষয়ে উডের এই পর্যবেক্ষণের যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল কারণ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে তৎকালীন ভারতে ৬২৬ টি মহিলা বিদ্যালয় যার মধ্যে বাংলায় ২৮৮টি, মাদ্রাজে ২৫৬টি, বোম্বেতে ৬৫টি, উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও অযোধ্যা মিলিয়ে ১৭টি। এইসকল নারী বিদ্যালয়গুলিতে মোট ছাত্রীর সংখ্যা ২১৭৫৫জন যা সামগ্রিক জনসংখ্যার তুলনায় নগণ্য কিন্তু নিশ্চিতভাবেই প্রাক ঔপনিবেশিক যুগের নিরিখে পরিবর্তনের চিহ্নবাহী।
উডের ডেসপ্যাচের প্রায় তিন দশক পরে ১৮৮২ সালে হান্টার শিক্ষা কমিশন তার প্রতিবেদন পেশ করে। তখন ভারতে প্রতি ১০০ জন বালিকার মধ্যে ২ জন ছাত্রী স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করছে। সেই কারণে কমিশন সুপারিশ করে ছেলেদের থেকে মেয়েদের শিক্ষার জন্য সরকারকে অধিক অনুদান দিতে হবে যাতে করে নারীদের জন্য অধিক বিদ্যালয় স্থাপন করা যায়।
এছাড়াও মেয়েদের শিক্ষার জন্য বৃত্তি ও সাফল্যের জন্য পুরষ্কারের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। হান্টার কমিশনের সুপারিশের ফলে পরবর্তী দুই দশকে নারীশিক্ষার ছবিটা কিছুটা পাল্টায়। ১৮৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মাত্র ৬ জন ছাত্রী উচ্চশিক্ষা লাভ করছিলেন, সেখানে ১৯০০ সালে সংখ্যাটি বেড়ে হয়েছে ২৬৪ জন, মাধ্যমিক স্তরে বিদ্যালয়গুলিতে ১৮৮২ সালে মাত্র ২০৫৪ জন ছাত্রী, ১৯০০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪১৫৮২ জন।
নারী শিক্ষার প্রকৃতি