StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

সাবিত্রীবাঈ ফুলে কে ছিলেন? সমাজ সংস্কারের কাজে তিনি কিভাবে শিক্ষাকে সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করেন তা আলোচনা কর।




সাবিত্রীবাঈ ফুলে কে ছিলেন? সমাজ সংস্কারের কাজে তিনি কিভাবে শিক্ষাকে সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করেন তা আলোচনা কর।

          

১৮৩১ এর ৩রা জানুয়ারী মহরাষ্ট্রের সাতারা জেলার নাইগাঁও নামক স্থানে ও বি সি শ্রেণিভূক্ত মালি সম্প্রদায়ের দম্পতি লক্ষ্মী ও খান্ডোজি নেভেসে পাতিল এর জ্যেষ্ঠ কন্যা রূপে সাবিত্রীবাঈ এর জন্ম। ৯ বছর বয়সে সাবিনীবাঈ এর বিবাহ হয় ১৩ বছর বয়সী জ্যোতিরাও ফুলের সঙ্গে। বস্তুত সেই সময় কেবল ব্রাহ্মণগন প্রথাগত বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারতেন সকলের জন্য রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, কেবল মিশনারী স্কুলগুলি সকল শ্রেণীর জন্য উন্মুক্ত ছিল। এইরকম একটি প্রেক্ষাপটে ২১ বছর বয়সী জ্যোতিবা এবং ১৭ বছর বয়সী সাবিত্রী ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে নারীদের জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ভারতে এটিই ভারতীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নারীদের জন্য প্রথম বিদ্যালয়।


সাবিত্রীর শিক্ষার পাঠ প্রথম শুরু হয়েছিল তার নিজের বাড়িতে স্বামী জ্যোতিবার হাত ধরে। তারপর তিনি আহমেদনগরে একটি মার্কিন মিশনারী দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক শিক্ষণের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং পুলের একটি নর্মাল স্কুল থেকেও শিক্ষালাভ করেন। অতঃপর পুণের মাহারাওয়াদা নামক স্থানে জ্যোতিবার শিক্ষাগুরু এবং পরামর্শদাতা তথানারীবাদী সনাবাঈ এর সঙ্গে যৌথভাবে একটি স্কুলে বালিকাদের পড়াতে শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই ফুলে দম্পতি ও সগুনাবাঈ তাতা সাহেব বিদের গুগ বা ভিদে ওয়াদাতে নারীদের জন্য তাদের স্কুলটি খোলেন। এই বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ব্রাহ্মণ্যবাদী বিদ্যালয়গুলির প্রচলিত পাঠ্যক্রম থেকে পৃথক ছিল এবং এই পাঠ্যক্রমে বেদ ও শাস্ত্রের পরিবর্তে গণিত, বিজ্ঞান ও সমাজবিদ্যার বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হোতো।

 

 কথিত আছে যে স্কুলে যাওয়ার পথে তার দিকে পাথর ও গোবর ছোড়া হোতো বলে সাবিত্রীবাঈ সঙ্গে করে একটি অতিরিক্ত শাড়ি নিয়ে যেতেন। ১৮৫১ সালের কাছাকাছি সময়ে ফুলে দম্পতি পুণের নিকটবর্তী অঞ্চলে অন্তত তিনটি বিদ্যালয় পরিচালনা করছিলেন যেখানে মিলিতভাবে প্রায় ১৫০ জন নারী পড়াশোনা করছিল। যেহেতু এই বিদ্যালয়গুলিতে পাঠ্যক্রম ও পড়ানোর পদ্ধতি অভিনব ও আকর্ষণীয় ছিল সেহেতু অল্পদিনেই দেখা গেল যে ফুলে দম্পতির বিদ্যালয়গুলিতে নথিভূক্ত ছাত্রীর সংখ্যা পুণের সরকারী বিদ্যালয়গুলিতে পাঠরত ছাত্রসংখ্যার থেকে অধিক।



তাদের কাজ ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্র অনুসারে পাপ এই অভিযোগে জ্যোতিবার পিতা জ্যোতিবা ও সাবিনীবাঈকে বাড়ি থেকে বহিষ্কার করে, তখন তারা জ্যোতিবার বন্ধু উসমান শেখ এর বাড়িতে থেকে তাদের কাজ চালাতে থাকে। সেখানে সাবিত্রীর সঙ্গে উসমান শেখ এর বোন ফতিমার বন্ধুত্ব তৈরী হয় – দাদার সাহায্যে ফতিমা পড়াশোনা শিখেছিল এবং দাদার উৎআসহ লাভ করে সে সাবিত্রীবাঈ এর সঙ্গে পুণের নর্মাল স্কুলে গিয়ে শিক্ষক শিক্ষণের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল সাবিত্রীবাঈ এবং ফতিমা একসাথে স্নাতক হন এবং ফতিমা হয়ে ওঠেন ভারতের প্রথম মুসলিম নারী শিক্ষিকা। উসমানের বাড়িতেই সাবিত্রীবাঈ এবং ফতিমা মিলিতভাবে নারীদের জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে। সাবিত্রীবাই ও ফতিমার বন্ধুত্ব ও যৌথভাবে করা এই কাজ তদানিন্তন সময়কালের ধর্মসম্প্রদায়গত বিভাজনের উর্দ্ধে উঠে নারীবাদী প্রয়াসের এক চমৎকার দৃষ্টান্ত


১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ফুলে দম্পতি দুটি শিক্ষা ট্রাস্ট স্থাপন করেছিলেন পুণেতে Native Female School’ এবং ‘ The Society for Promoting the Education of Mahrs, Mangs and Etceteras’ এবং এই দুই ট্রাস্টের অধিনে অনেকগুলি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এই বিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটির প্রধানশিক্ষিকা হন সাবিত্রীবাঈ, ১৮৫৫ সালে ফতিমা বিবিকেও অন্য একটি বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হ



শিক্ষকতার মাধ্যমে বালিকাদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও সাবিত্রীবাঈ অন্য একটি কারণেও স্মরণীয় তাঁর সাহিত্যচর্চা, বিশেষত কবিতা রচনার জন্য। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কাবা ফুলে এবং ১৮৯২ সালে বভন কাশি সুবোধ রত্নাকর নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই দুই রচনায় তিনি শোষিত সমাজ বা অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষদের, বিশেষত নারীদের সব রকমের শৃঙ্খল মুক্ত হয়ে শিক্ষালাভের জন্য উদ্বুদ্ধ করে


নারীবাদী সাবিত্রীবাঈ ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দেই নারীদের অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্য মহিলা সেবা মন্ডল প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে তিনি সমাজের সকল শ্রেণীর নারীদের বিভিন্ন সভা ও আলাপ আলোচনায় আমন্ত্রন জানান। এছাড়াও তিনি কন্যাসন্তান হত্যা বা কন্যাভূণ হত্যাকে প্রতিরোধ করার করার জন্য নিজ গৃহে Home for Prevention of Infanticide’ স্থাপন করেন যেখানে ব্রাহ্মণ বিধবারা নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পারতেন। এই সকল বিধবদের অনেকেই তাদের সদ্যজাত সন্তানকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারতেন না তারা ঐ হোমেও বেড়ে উঠত। বস্তুত এরকম এক সন্তান যসবস্তুকে সাবিত্রীবাঈ দত্তক নিয়েছিলে


সাবিত্রীবাঈ ক্রমাগত বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে এবং বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। ১৮৭০ এর দশকে যখন একদিকে আর্য সমাজ, প্রার্থণা সমাজ ও ব্রাহ্ম সমাজ সমাজের উঁচু তলার মানুষদের স্বার্থ রক্ষায় ব্রতী হয়েছিল তখন সমাজের নিম্নতলার মানুষের অবস্থার উন্নতির জন্য ফুলে দম্পতি ১৮৭৩ সালে সত্যসাধক সমাজ স্থাপন করেছিলেন।



 ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিবার মৃত্যুর পর সাবিত্রীবাঈ এই সংগঠনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যান, এমনকি ১৮৯৩ সালে সাসোয়াদে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করেন। তদানিন্তন সামাজিক প্রেক্ষিতে একজন নারী কর্তৃক একটি সংগঠনের বার্ষিক সভায় সভাপতিত্বের ঘটনা কার্যত বিরল। সাহিত্যসাধক সমাজ অসবর্ণ পণরহিত এবং ব্রাহ্মণা শাস্ত্রবাতিরেকে বিবাহের সূচনা করে তাঁর দত্তক পুত্র সবস্ত্রের এরূপ সাহিত্যসাধক অসবর্ণ বিবাহ হয়। জ্যোতিবাকে ১৯৬৮ সালের এক চিঠিতে সাবিত্রীবাঈ একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে নাইগাও নামক স্থানে একটি ব্রাহ্মণ যুবকের প্রাণসংশয় দেখা দেয় কারণ তিনি একটি দলিত মেয়েকে ভালোবেসেছিলেন এবং তার গ্রামের লোকই তাকে এই অপবিত্র সম্পর্কের কারণে মারতে উদ্যত হয়।


১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিবার মৃত্যুর পর তাঁর শেষকৃতা এবং মুখাগ্নি কে করবেন তা নিয়ে যখন বিতর্ক চলছে তখন সাবিত্রীবাঈ মশাল তুলে নিয়ে জ্যোতিবার চিতায় আগুন দিয়েছিলেন। Cynthia Stephen নামক বেঙ্গালোরের একজন লেখক লিখছেন যে এই কারণেই সাবিত্রীবাঈ এর ক্রান্তিজ্যোতি নাম সার্থক এবং যথার্থ।১৮৯৭ সালের ১০ ই মার্চ সাবিত্রীবাঈ মারা যান। তখন মহামারিকালে তিনি বিউবোনিক প্লেগ আক্রান্ত এক ব্যক্তির চিকিৎসা এবং সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন এবং আর্তদের চিকিৎসার জন্য একটি চিকিৎসালমা খুলেছিলেন। জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ব্যক্তিত্বদের প্রতিকৃতি আঁকার কাজে লিপ্ত সোনালি মেসরাম লিখেছেন যে সাবিত্রীবাঈ বা ফতিমাদের ঐকান্তিক এবং সাহসী উদ্যোগের জন্যই আজকের নারীরা শিক্ষালাভ করতে পারছে কিন্তু তাদের কথা বিশেষ কোথাও আলোচিত হয় না।

 


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *