সিন্ধু সভ্যতার অবদান ।
হরপ্পা সভ্যতা বর্তমান পাকিস্তান ও ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশের এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তার লাভ করেছিল।উন্নততর নগরকেন্দ্রিক হরপ্পা সভ্যতার কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যায়নি বৈদিক সভ্যতায়। কেননা, এটি ছিল পুরোমাত্রায় একটি গ্রামীণ সভ্যতা। এছাড়া, উভয় সভ্যতারমধ্যে মৌলিক পার্থক্যগুলি (পূর্বে আলোচিত) লক্ষ করলেও ঐ একই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব।
নন্দ মৌর্য আমলের যে ছাপ-যুক্ত মুদ্রা (Punch-marked coins) ও প্রতীকের পরিচয় আমরা পাই তার একটা আভাস মেলে সিন্ধু উপত্যকার হরফগুলিতে (যদিও পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি)—এই ধরনের মন্তব্য করেছেন এ. ডি. পুসলকার। তিনি আরো বলেছেন যে, প্রাচীন ভারতীয় মুদ্রার ছাঁচ ও কাঠামোর জন্য আমরা কিছুটা সিন্ধু সভ্যতার মানুষের কাছে ঋণী। এছাড়া, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর টেরাকোটা তথা মাটির পাত্রাদিতে যে ডিজাইন, আকার ও কাঠামো ব্যবহৃত হত যীশুখ্রিস্টের জন্মের মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের টেরাকোটা পাত্রাদিতেও সেই ধরন লক্ষ করা যায়।
ধর্মগত দিক থেকেও হরপ্পা সভ্যতার স্পষ্ট কিছু প্রভাব পরিলক্ষিত হয় পরবর্তী সভ্যতায়। সিন্ধু তথা হরপ্পা সভ্যতায় শিব পশুপতির যে মূর্তি পাওয়া যায় তা ভারতের পরবর্তী সভ্যতাতেও লক্ষ করা যায়। মনে করা খুব একটা অসঙ্গত হবে না যে পরবর্তীকালে যে শিব ও লিঙ্গ পূজার প্রচলন ঘটেছিল তা হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকে চলে আসছিল। অর্থাৎ এ ব্যাপারে পরবর্তী সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতার কাছে ঋণী। এ প্রসঙ্গে এ. ডি. পুসলকারের বক্তব্য হল দক্ষিণামূর্তি হিসাবে শিবের যে মূর্তি পাওয়া যায় এবং যোগীর ভূমিকায় বুদ্ধের যে মূর্তির কথা আমরা জানি তা ছিল পরোক্ষভাবে হরপ্পা সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। এছাড়া সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে যার ভিত্তিতে মনে হয় যে ওজন ও মেট্রিক পদ্ধতি হরপ্পীয়দের জানা ছিল। এই সমস্ত বিষয়গুলি থেকে বোঝা সম্ভব হয় যে, হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে এর পরবর্তীকালের ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির পুরোপুরি বিচ্ছেদ ঘটেনি।