StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

হর্ষবর্ধনের দাক্ষিণাত্য অভিযান সম্পর্কে আলোচনা করো।

হর্ষবর্ধনের দাক্ষিণাত্য অভিযান সম্পর্কে আলোচনা করো।




  হর্ষবর্ধন যে দাক্ষিণাত্যের চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন তা সর্বজনস্বীকৃত।এছাড়া চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল প্রশস্তি এবং তাঁর পরবর্তীকালের শাসকদের নিরপান, করনুল ও তোগরচেদু শিলালেখতে হর্ষ-পুলকেশী সংঘাত এবং তার বিবরণ প্রাধান্য পেয়েছে। এই সংঘাতের আনুমানিক তারিখ ৬৩০-৩৪ খ্রিস্টাব্দ




  উত্তরভারতের খ্যাতিসম্পন্ন পরাক্রমশালী শাসকের সঙ্গে দাক্ষিণাত্যের সামরিক প্রতিভাসম্পন্ন শাসকের যে যুদ্ধ বেধেছিল।এর পিছনে প্রধান কারণ ছিল বাণিজ্যিক তথা অর্থনৈতিক।





   হর্ষবর্ধন ও পুলকেশী উভয় শাসকই পশ্চিম ভারতের উপকূল সংলগ্ন বাণিজ্যিক বন্দরগুলি দখল করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙের বিবরণের আলোকে বন্দরগুলির গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেতে পারে।ব্রোচ-এ সমুদ্রের লোনা জল থেকে লবণ প্রস্তুত করা হত। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীনে লবণ তৈরি খনিজ সমৃদ্ধির পরিচয় দেয়।





 ব্রোচ-এর নিকটবর্তী অ-ট-লি বন্দরের বর্ণনা দিতে গিয়ে চীনা পর্যটক বলেছেন যে, সেখানের অধিবাসীরা ছিলেন সমৃদ্ধিশালী ও উন্নত এবং কৃষকদের তুলনায় ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ছিল বেশি। এই বর্ণনা থেকে ঐ অঞ্চলের বাণিজ্যিক গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।




  সু-ল-চ অর্থাৎ সুরাট বন্দর সম্পর্কে হিউয়েন সাঙ লিখেছেন যে এখানকার অধিবাসীরা ছিল উন্নত ও বর্ধিষ্ণু। বন্দরটি সমুদ্রের নিকট অবস্থিত হওয়ায় এবং পরিবহন ব্যবস্থার যোগাযোগ থাকায় এখানের বেশিরভাগ অধিবাসীই ব্যবসায়িক বৃত্তি বেছে নিয়েছিল।




   চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙের উপরিউক্ত বিবরণ থেকে পশ্চিম ভারতের বন্দরগুলির অর্থনৈতিক তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায়। মালব ছিল প্রকৃতপক্ষে ঐ বন্দরগুলির পশ্চাদভূমি। হর্ষবর্ধন পশ্চিম উপকূলের ঐ বন্দরগুলির তাৎপর্য উপলব্ধি করে মালব জয়ে সচেষ্ট হন। অপরদিকে গুজরাট তথা পশ্চিম ভারতের ব্যাপারে চালুক্যদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। গুজরাট অঞ্চলে চালুক্যরা নিয়মিত প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ করতেন। সম্ভবত বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন করার উদ্দেশ্যেই হর্ষের প্রতিদ্বন্দ্বী চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশী পারস্যের সম্রাট দ্বিতীয় খসরুর কাছে ৬২৫-২৬ খ্রিস্টাব্দে দূত পাঠিয়েছিলেন।






  হর্ষ ও দ্বিতীয় পুলকেশী খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে বাণিজ্যিক তথা অর্থনৈতিক কারণে মালব ও পশ্চিম ভারতের উপকূলভাগের ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য সম্প্রসারিত করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন।





  আর. কে. মুখার্জী মনে করেন যে, নর্মদা নদী হর্ষের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল এবং উভয়ের মধ্যে এই যুদ্ধ বেধেছিল নর্মদা নদীর তীরবর্তী কোনো অঞ্চলে। গুলব চন্দ্র চৌধুরী আইহোল প্রশস্তির ২৪ নং স্তোত্রের ভিত্তিতে ঐ একই সিদ্ধান্তে এসেছেন এবং মন্তব্য করেছেন যে এই যুদ্ধ বিন্ধ্যপর্বত এবং রেবা (নর্মদা) নদীর তীরবর্তী কোনো এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল।” এটা ছিল দ্বিতীয় পুলকেশীর সাম্রাজ্যের উত্তরের সীমানা এবং সেখানে অবস্থিত তাঁর বিশাল সেনাবাহিনী হর্ষের অগ্রগতি প্রতিহত করেছিল।





  ডি. দেবাহুতিও ঐ সমস্ত ঐতিহাসিকদের মতামতকে সমর্থন করেছেন এবং লিখেছেন যে যেহেতু এই যুদ্ধে আক্রমণকারীর ভূমিকায় ছিলেন হর্ষ, সেহেতু পুলকেশীর শাসনাধীন/প্রভাবাধীন এলাকাতেই এই যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, হর্ষের সেনাদলকে নর্মদার তীরবর্তী কোন অঞ্চলেই পুলকেশীর বাহিনী বাধা প্রদান করেছিল বলে তিনি মনে করেন। হেমচন্দ্র রায় এই যুদ্ধের ক্ষেত্র সম্পর্কে সরাসরি না বললেও সিদ্ধান্তে এসেছেন যে সাম্রাজ্যের উত্তরাংশের শত্রুর বিরুদ্ধে চালুক্যদের উপযুক্ত যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে নর্মদা নদীর তীরবর্তী এলাকাকেই নির্দিষ্ট করেছেন।





  কিন্তু রমেশচন্দ্র মজুমদার হর্ষ-পুলকেশীর যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসাবে নর্মদা নদীর তীরবর্তী এলাকাকে মেনে নিতে রাজি নন। তাঁর মতে, নর্মদা নদীর আরো অনেক উত্তরে এইযুদ্ধ বেধেছিল। তাঁর কাছে মনে হয়েছে যে মালব তথা নর্মদা তীরবর্তী অঞ্চলে হর্ষের সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের ওপরেই নর্মদাকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে বেছে নেওয়ার বিষয়টি নির্ভরশীল। দক্ষিণে নর্মদা পর্যন্ত হর্ষের সাম্রাজ্য বিস্তৃতি সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছেন।




  চীনা পর্যটক ও হর্ষের গুণগ্রাহী হিউয়েন সাঙ পশ্চিম মালবের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঞ্চলের সমন্বয়ে মো ল-পো (মালব) নামে একটি স্বাধীন রাজ্যের উল্লেখ করেছেন। তবে মালব তাঁর অধিকারে ছিল না বলে নর্মদার তীরবর্তী এলাকায় এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।




  চীনা পরিব্রাজক এক জায়গায় লিখেছেন যে, আঃ ৬৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি যখন সেখানে গিয়েছিলেন, সেখানে শাসন করছিলেন পু-লো-কি-শে (পুলকেশী) নামে একজন ক্ষত্রিয়। এরপর তিনি লিখেছেন যে মহান শাসক শিলাদিত্য (হর্ষবর্ধন) একদা যখন রাজ্য বিস্তারে বের হয়েছিলেন, তখন মো-হ-ল-চ-র আনুগত্য লাভে তিনি বঞ্চিত হন। হিউয়েন সাঙের বিবরণে এই যুদ্ধের ফল অতি সাধারণভাবে বর্ণিত হলেও তিনি যে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছিলেন তার প্রমাণ মেলে চালুক্যদের শিলালেখতে।

  




  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *