StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ভারতে পারিবারিক আদালত গুলির কাজ কি কি।


ভারতে পারিবারিক আদালত গুলির কাজ কি কি। 


১৯৮৪ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর Family Courts Act’ পাশ করা হয়। আইনটিতে মোট ৬টি অধ্যায় এবং ২৩টি অংশ বা ধারা রয়েছে। মূলত পরিবার সংক্রান্ত সমস্যা যেমন বিবাহ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, ভরণপোষণ, সন্তানের উপর অধিকার ইত্যাদি বিষয় সংক্রান্ত মামলাগুলির দ্রুত ও সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যেই এই আইনটি প্রণিত হয়। এই আইনের দ্বিতীয় ধারায় বলা হয় যা কেবল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি ছাড়া সমগ্র দেশ জুড়ে আইনটি বলবৎ হবে। তৃতীয় ধারাটিতে বলা হয় এই আইনের প্রয়োগের জন্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করবে নতুবা সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি নিজ নিজ অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে Family Courts Act প্রয়োগ করবে।


পরিবার আদালত বা ‘Family Courts’ গুলি স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কম সময়ে অল্প বায়ে পারিবারিক বিবাদ ও সমস্যাগুলির মীমাংসা করা। এই আদালতগুলির প্রধান লক্ষ্য হল পারিবারিক বিবাদ সংক্রান্ত মামলাগুলিকে প্রথাগত মামলার তুলনায় সহজ সরলভাবে চালানো এবং সর্বোপরি সামান্যতম সুযোগ থাকলে বন্ধুত্বপূর্ণ পদ্ধতিতে মিলনসাধক উপায়ে বিবাদগুলির নিষ্পত্তি ঘটিয়ে পারিবারিক মেলবন্ধন ঘটানো। আইনের চতুর্থ অংশে লেখা আছে যে পরিবার আদালতগুলির বিচারক চেষ্টা করবেন যাতে করে পারিবারিক বন্ধনগুলিকে অটুট রাখা যায় অর্থাৎ পরিবারগুলিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। এই প্রেক্ষিতে বিচারকের ভূমিকা অনেকটাই উপদেশ প্রদানকারী একজন অভিভাবকের মতো। 


  আইনের ৯(ক) অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে প্রত্যেকটি মামলার শুরু থেকেই আদালতগুলি চেষ্টা করবে বিবাদমান দুটি পক্ষকে বুঝিয়ে সমস্যার সমাধান করে পারিবারিক সম্পর্কগুলিকে টিকিয়ে রাখতে। আইনটির ১৯(খ) অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের বিন্দুমাত্র উপায় দেখতে পেলে বিচারক সংশ্লিষ্ট মামলাটিকে খারিজ করবেন এবং যথাযথ উপদেশ দিয়ে বিবাদমান পক্ষ দুটির মধ্যে পুনরায় মৈত্রীর বা সম্পর্কের বন্ধন স্থাপন করবেন। আইনের ১২ নম্বর অধ্যায়ে বলা হয়েছে এই মৈত্রীর বন্ধন স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনে ‘Family Court’ গুলি পরিবার কল্যান বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞর পরামর্শ গ্রহণ করবে এক্ষেত্রে নারী পরামর্শদাতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরিবারের পরিচিত বা অপরিচিত কোন পেশাদারের সাহায্যই এক্ষেত্রে গ্রহণ করা যেতে পারে যিনি পারিবারিক মেলবন্ধন স্থাপনে ও সমস্যার সমাধানে পরিবার আদালতের কাজে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারবেন। 


‘Family Courts Act’ এ বলা হয়েছে যে রাজাগুলি সেই রাজ্যের সংশষ্টি High Court’এর সঙ্গে পরামর্শক্রমে এরূপ আদালতগুলি স্থাপন করবে, তার এক্তিয়ার নির্ধারণ করবে, প্রয়োজনে সময়ে সময়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তার সংযোজন, বিয়োজন বা পরিমার্জন ঘটাবে এবং এক বা একাধিক বিচারপতি নিয়োগ করবে। রাজ্যের মধ্যে ১০ লক্ষাধিক লোক বাস করে এরূপ যে কোন নগর বা জনপদে Family Court’ স্থাপন করা যেতে পারে।


আইনটির চতুর্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। হাই কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে অঙ্গরাজ্যের সরকার ‘Family Court’ এর জন্য বিচারক নিয়োগ করে তাদের মধ্যে থেকে যে কোন একজনকে মুখ্য বিচারপতি বা ‘Principal Judge’ এবং অন্য কাউকে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারপতির বা Additional Principal Judge’ দায়িত্ব অর্পন করতে পারে। মুখ্য বিচারপতির প্রধন দায়িত্ব হচ্ছে Family Court’ বা পরিবার আদালতগুলিতে রজু হওয়া মামলাগুলি বিভিন্ন বিচারপতিদের মধ্যে বন্টন করা। অন্যদিকে মুখ্য বিচারপতির শারীরিক কারণ বা অন্য কোন কারণজনিত অনুপস্থিতিতে এই দায়িত্ব পালন করেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারপতি। ভারতে পরিবার আদালত বা ‘Family Courts’ গুলি নিম্নলিখিত পারিবারিক বিবাস সমস্যা সমাগুলি শুন করতে পারে।


বিবাহবন্ধন ছিন্ন করা সংক্রান্ত মামলা ভারতের বিবাহিত যে কোনো দম্পতির মধ্যে দাম্পানি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য সমস্যা সমাধানের জন্য পারিবারিক আদালতগুলির দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবার আদালত ভারতে প্রচলিত নিম্নলিখিত যে কোন বিবাহ বিচ্ছেদমূলক আইনের অন্তর্গত বলা হতে পারে Hindu Marriages] (validation of proceedings) Act, 1960 Dissolution of Muslim Marriage Ect. 1939. Muslim Women (Protection of Rights on Divorce Act 1936 the Divorce Act, 1869 The Special Marriage Act, 1954, Foreign Marriage Act, 1960 ইত্যাদি।


 দাম্পত্য সমস্যার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে সেই দম্পতির সন্তান মা না বাবা কার তত্ত্বাবধান বা হেফাজতে থাকবে সেই বিষয়ে রায় দেওয়ার অধিকার পরিবার আদালতগুলির রয়েছে। Family Courts Act Section 7 (i) g’ তে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিবাহ বিচ্ছেদ এর পর সন্তানকে প্রকৃত অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে তুলে দেওয়ার রায় এই আদালত দিতে পারে। তবে এক্ষত্রে সন্তানটি যে অঞ্চলে বা স্থানে বসবাস করছে সেই অঞ্চলের আদালতই রায় দান করবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে যদি পিতার বাসস্থান পশ্চিমবঙ্গ হয় আর সন্তান তার মায়ের সাথে সেই সময় মহারাষ্ট্রে থাকে তাহলে সন্তানের হেফাজত সংক্রান্ত এই মামলাটি মহারাষ্ট্রের পরিবার আদালতেই দাখিল করতে হবে। এই সকল মামলার ক্ষেত্রে পরিবার আদালতগুলি Guardian and Wards Act, 1890″ Hindu Minority and Guardianship Act, 1956, ইত্যাদি আইনকে অনুসরণ করে থাকে।


বিবাহবিচ্ছেদ জনিত সম্পত্তির বিবাদের মীমাংসাও পরিবার আদালতগুলি করে থাকে। বিবাহ বিচ্ছেদ এর সঙ্গে যুক্ত পক্ষগুলির মধ্যে সম্পত্তি সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব মেটানোর ক্ষমতা ৭ (১) ধারার মধ্যে দিয়ে পরিবার আদালতগুলির উপর অর্পিত। এই ক্ষমতার একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। Mrs Mariamma Ninan v KK Ninan (1997) মামলায় বিচ্ছেদের সাথে সাথে পত্নী মারিয়াম্মা তাদের যৌত সম্পত্তির আংশিক অধিকার দাবী করে পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হন এবং জানান যে উক্ত সম্পত্তির নির্মাণে তিনি ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন। তখন পরিবার আদালত আবেদনকারীর মামলাটি গ্রহণ না করে ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশ দেয়। পরে হাইক কোর্ট পরিবার আদালতের ঐ রায়কে পরিবর্তন করে বলে যে বিবাহ বিচ্ছেদ জনিত সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলার রায় প্রদান পরিবার আদালতের এভিয়াভূক্ত এবং এই মামলাটিকে পুনরায় পরিবার আদালতের কাছে প্রত্যার্পন করা হয়।


উপযুক্ত পরকাঠামোর অভাব, কর্মপদ্ধতির ক্ষেত্রে তার অভাব, পক্ষপাতমূলক পরামর্শ দান, বিচারকের অভাব ইতাদি কারণে পরিবার আদালত স্থাপনের উদ্দেশ্য অনেকটাই বার্থ হয়েছে। এই কারণে কর্মপদ্ধতিকে আরও সহজ সরল ও বহু কর, কোর্টের ভূমিকা আরও বেশী নারীর প্রতি বন্ধুত্বমূলক করা বিভাবকদের নারীদের প্রতি সহানুভূতিশীলতার পাঠ প্রদান কর পরামর্শদাতাদেরো নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করা ইত্যাদির উপর এই আদালতগুলির পাষা অনেকাংশে নির্ভরশীল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top