StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

বৈদিক যুগে নারী শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করো।

 


বৈদিক যুগে নারী শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করো।



  বেদের রচনাকালের উপর ভিত্তি করে বৈদিক যুগকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে ঋক বৈদিক যুগ ও পরবর্তী বৈদিক যুগ। 

ঋগ্বৈদিক যুগে নারী শিক্ষা ।
 (১৫০০-১০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ) 

 নারীদের রাজনৈতিক তথ্য শিক্ষার অধিকার স্বীকৃত নারীরা সভায় ও বিদদ্ধে অংশ নিতে পারেন এবং উপযোগী বক্তব্য বা মত প্রকাশ করতে পারেন। অন্যদিকে সভা সমিতি বিদদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ঋগ্বেদে বিশহপলা, বপ্রিয়সী, শশিয়সী প্রমুখ নারীরা যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন অর্থাৎ তারা শক্তবিদ্যা অর্জন করেছিলেন। ঋগ্বেদে ঘোষার মত নারীদের উল্লেখও রয়েছে যারা বিবাহ না করে জ্ঞানার্জনের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতেন। 


 সুকুমারী ভট্টাচার্য মত প্রকাশ করেছেন যে ঋগ্বেদে জরৎকুমারী বা বৃদ্ধাকুমারী অভিধাগুলি দ্বারা সেই সকল নারীদের বোঝানো হয়েছে যারা বার্ধক্যেও কুমারী রয়ে গিয়েছিলেন। ঋগ্বেদের যুগে নারীরাও শিক্ষার ও জ্ঞানচর্চার অধিকারী ছিলেন – অত্রির কন্যা বিশ্ববারা, অগস্ত্যের পত্নী লোপামুদ্রা, অত্রির কন্যা অপালা, কাক্ষিবতের কন্যা ঘোষা, অস্তূণের কন্যা বাক, প্রমুখ শিক্ষিতা নারীর উল্লেখ ঋগ্বেদে রয়েছে। ঋগ্বেদে অনেকগুলি সূক্ত অপালা, ঘোষা, বিশ্ববারা, সূর্য্যা (বিবাহসূক্তের রচয়িতা) প্রমুখ নারীরা রচনা করেছিলেন এই নারীরা ব্রহ্মবাদিনী নামে পরিচিত ছিলেন। এই ব্রহ্মবাদিনীরা নিঃসন্দেহে বৈদিক শিক্ষা লাভ – করেছিলেন।



পরবর্তী বৈদিক যুগে নারী শিক্ষা।
 (১০০০-৬০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ) 

 পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতিতে নারীকে ক্রমে অন্তঃপুরবাসিনী ও অসূর্যস্পশ্যা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় -গৃহস্থলী ব্যতিত অন্য কোন কর্মে নারীর ভূমিকা ক্রমেই সংকোচিত হয়ে উঠে। যজ্ঞে যজমানের পত্নী হিসাবে নারীর ভূমিকা নিষ্ক্রীয়; গৌতম ধর্মসূত্রে বলা হয়েছে যে ‘অস্বতন্ত্রা ধর্মে স্ত্রী’ -অর্থাৎ ধর্মাচারণে নারীর কোন স্বাতন্ত্র নেই (১৮.১)।



  নারীর শিক্ষার অধিকারও পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের সময় থেকে ক্রমে লুপ্ত হল, বৈদিক উত্তরকালে রচিত পাণিনির অষ্টাধায়ীতে আচার্যা বা উপাধ্যায়ার মত শব্দ রয়েছে, যার অর্থ অধ্যাপনায় রত নারী, কাশিকাভাষ্যে কাশকৃৎস্না ও আপিশালার নাম পাওয়া যায় যারা ব্যাকরণে পন্ডিত ছিলেন, অস্তূণ ঋষির কন্যা বাক, গাগী, মৈত্রেয়ী, শাশ্বতী প্রমুখ নারীরাও শিক্ষিত ছিলেন সুকুমারী ভট্টাচার্য এই দৃষ্টান্তগুলিকে স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম হিসাবেই দেখেছেন। তবে গোভিল গৃহ্যসূত্র, আশ্বলায়ন গৃহাসূত্র ইত্যাদি কয়েকটি সাহিত্যের উল্লেখ থেকে মনে হয় যে এই সময় মেয়েদের উপনয়ন হত এবং তারা উপবীত বা পৈতে ধারণ করতেন। 



  আশলায়ন গৃহ্যসূত্রে মেয়েদের সমাবর্তনোত্তর অনুষ্ঠানের উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীকালে রচিত সংস্কারপ্রকাশ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে বৈদিক যুগে বেদপাঠে ইচ্ছুক মেয়েদের যজ্ঞোপবীত ধারণ করতে হত এবং নিত্য গায়ত্রী স্তোত্র পাঠ করতে হত। তৈত্তরীয় আরণাকে (১.১১.৪) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে শিক্ষিতা নারীরা নারী হয়েও পুরুষ।



  মৈত্রায়ণী সংহিতার বিধান (৪৭.৪)- নারীদের সভায় যাওয়ার কোন অধিকার নেই। শতপথ ব্রাহ্মণে নারীদের পশম পাকানো ও বোনা, গোবর সংগ্রহ করা ইত্যাদি দু একটি তুলনামূলক হীন কর্মের উল্লেখ থাকলেও পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীদের একমাত্র কর্তব্য ছিল গৃহকর্ম সম্পাদন করা ও সন্তান উৎপন্ন করা। সুকুমারী ভট্টাচার্য, কুমকুমরায়, উমা চক্রবর্তী প্রমুখ গবেষকের সাম্প্রতিক কালের রচনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে যে বৈদিক যুগের দ্বিতীয় পর্ব থেকেই নারীদের সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top