ইতিহাসে দৃষ্টিগোচর উপাদান বলতে কী বোঝ

 ইতিহাসে দৃষ্টিগোচর উপাদান বলতে কী বোঝ



  দর্শনযোগ্য বা দৃষ্টিগোচর উপাদান (Visual Documents) অর্থাৎ যে গুলিকে দেখে সমকালীন ইতিহাস বা নিকটবর্তী কোন সময়ের ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি যেমন উৎখননে প্রাপ্ত সস্তূপ দমন হয়রা নগর মটির উপরে প্রাপ্ত স্থাপত্য অঙ্ক যেমন তালেরের বৃহদেশ্বর মন্দির এবং সেই মন্দিরের গানে খোদিত ভাষা, বা রেনেসার সময়কালে দেনেতোয়া, বতিচেরি নিজেসৃষ্ট চিকনা দেন বিএনাদো অঙ্কিত মোনালিসা বাদুরারের ব্যক্তিগত প্রতিকৃতির চে, যে কোন ছবি বা ফটোগ্রাফ, রাগছিল, চান ছবি বা ভিডিও নকশা ও মানচি ইত্যাদি। 


  সাধারণভাবে , ইতিহাস রচনায় কাজে প্রয়োজনীয় যে সমস্ত উপাদান চোখে দেখা যায় সেগুলিকে দৃষ্টিগোচর  উপাদান বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ফটোগ্রাফ, ফিল্ম, ভিডিও, অঙ্কিত চিত্র, ব্যঙ্গচিত্র, প্রিন্ট, এগুলি ইতিহাসের প্রাথমিক উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।



ফটোগ্রাফ:

  দৃষ্টিগোচর উপাদানসমূহের ফটোগ্রাফ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ কোনো ঘটনা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জগত বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী কিংবা কোন প্রথা ইত্যাদি নানা বিষয়ে মূল্যবান তথ্য সরবরাই করে থাকে ফটোগ্রাফ। অনেক সময় খুব খারাপ মানের একটি ছবি ও অন্যান্ন বিবেচিত হয় তাতে নথিভূক্ত ঘটনা বা দৃশ্য বইয়ের জন্য উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ১৯৪৮ সালে কলকাতার দুর্ভিক্ষের চিত্র গুলির কথা । যেখানে দুর্ভিক্ষের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষদের অসহায়তার ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।




কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র:

 এটি ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। এ প্রসঙ্গে এ.কে লক্ষণ এর দ্বারা প্রচলিত the common man এর কথা বলা যায়। যার প্রথম আবির্ভাব ঘটেছিল ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে, The Times of India সংবাদপত্রে। এটি সাধারণ ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা সমস্যা আনন্দ ইত্যাদি সম্বন্ধে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। তাছাড়া সুভাষচন্দ্র বসু সম্বন্ধে people’s war পত্রিকায় যে কার্টুন গুলি আঁকা হয় তা ভারতীয় কমিউনিস্টদের সুভাষ বিরোধিতায় নগ্নরূপ তুলে ধরে।



চলমান রেকর্ডিং ভিডিও: 

  ঐতিহাসিক কে মূল্যবান অনেক তথ্য সরবরাহে সাহায্য করে চলমান রেডিও ভিডিও। মানুষের কথাবার্তা কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে চরিত্র কিংবা তার প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি জানতে চলমান রেকর্ডিং বা ভিডিও খুব ই সাহায্য করে। যা অন্য সকল উপাদান এড়িয়ে যায়।




চিত্রকলা :

  গুহা চিত্র অংকিত চিত্র যেকোনো ধরনের চিত্র ভারত ইতিহাসের অনেক মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। যেমন ষষ্ঠ শতকে অঙ্কিত অজন্তার গুহাচিত্র থেকে কার্পাস বীজ ছড়ানো আদি যন্ত্রের গঠন সংক্রান্ত ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও আকবরের চিত্রশালার চিত্রাংকন দেখে বার্ষিক চিত্রাংকন থেকে রনথম্বোর অবরোধকালে চার চাকার সকঠবাহী কামান ধারার গোলা নিক্ষেপ এর বিবরণ নজর চিত্র থেকে অস্ত্র চালিত খোলার অর্থ যাতে লাগাম এর পরিবর্তে জোয়াল ব্যবহৃত হয়েছে এসব মূল্যবান তথ্য বিবরণ পাওয়া যায়।



স্থাপত্য ও ভাস্কর্য :

এটি ইতিহাসে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। বিভিন্ন মন্দিরের প্রসাদ বা অট্টালিকা গাত্রে খোদিত ভাস্কর্য থেকে তৎকালীন সময়ের পোশাক-পরিচ্ছদ অলংকার তাদের দৈহিক গঠন তৎকালীন ফ্যাশন সম্পর্কিত নানা তথ্য পাওয়া যায়। যেমন কনিষ্কের মস্ত বাহিনীর মতি টি আমাদের অবগত করে কুশানরা পায়ে ভারি বুট পড়ত। আবার তাজমহলের আভিজাত্য মুঘল সম্রাটের আর্থিক সংগতি কে তুলে ধরে। তাছাড়া ভাস্কর্য কত নিদর্শন ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের আভাস দেয়।




Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *