নিকিয়াসের শান্তি চুক্তির শর্তগুলি বিশ্লেষণ করো ।
এই শান্তি চুক্তির প্রধান নিয়ামক হলেন স্পার্টার রাজা প্লেইস্টোয়ানাক্স এবং এথেন্সের শান্তিকামী দলের নেতা ও তদানীন্তন এথেন্সের প্রধান নিকিয়াস। পঞ্চাশ বছর মেয়াদী এই শান্তিচুক্তি নিকিয়াসের নামেই নামাঙ্কিত হল। প্রায় দশ বছরের যুদ্ধের পর, ছয় মাস ধরে আলাপ-আলোচনার টানাপোড়েনের পরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। উত্তরসূরীদের জন্য থুকিডাইডিস এই চুক্তির পূর্ণ বিবরণ লিপিবদ্ধ করে রেখে যান। সন্ধিটির শর্তাবলী নিম্নরূপ
(1) স্পার্টা ও তার মিত্ররা এথেন্স ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে অথবা এথেন্স ও তার মিত্ররা স্পার্টা ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে যদি ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশ্যে যে-কোন উপায়ে অস্ত্রধারণ করে, তবে তা বেআইনী হবে। যদি তাদের মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দেয়, তবে দুই পক্ষের সম্মতি অনুসারে আইন কিংবা শপথের মাধ্যমে তার মীমাংসা হবে।
2) স্পার্টা ও তার মিত্ররা অ্যাম্ফিপোলিস এথেনীয়দের প্রত্যর্পণ করবে। কিন্তু স্পার্টা যেসব নগর এথেন্সকে প্রত্যর্পণ করবে, সেখানকার অধিবাসীরা সম্পত্তিসহ যেকোন স্থানে ইচ্ছামতো যেতে পারবে। এই নগরগুলি স্বাধীন হবে, শুধু অ্যারিস্টাইডিস নির্দিষ্ট হারে কর দেবে। সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়ে গেলে যতদিন এই নগরগুলি কর প্রদান করবে, ততদিন এথেন্স কিংবা তার মিত্ররা যদি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে, তবে তা হবে বেআইনী।নগরগুলি হবে নিরপেক্ষ, এথেন্স কিংবা স্পার্টা কোন পক্ষভুক্তই হবে না।
(3) জাতীয় মন্দিরগুলিতে ইচ্ছুক যে-কোনো ব্যক্তির গমনাগমনের স্বাধীনতা থাকবে। স্বদেশের প্রথানুসারে, পূজাদি, ভ্রমণ ও দৈববাণীর সাহায্য নেওয়ার অধিকার থাকবে এবং ক্রীড়ানুষ্ঠানে যোগদানের সুযোগ থাকবে।
(4) ডেলফির মন্দির, মন্দির-সংলগ্ন জমি ও ডলফীয়রা স্বীয় আইনানুসারে শাসিত হবে, নিজেদের রাষ্ট্র তাদের উপর কর ধার্য করবে এবং নিজস্ব বিচারক সেই অঞ্চল ও জনগণের বিচার করবে।
(5) সন্ধিটি এথেন্স ও তার মিত্রদের মধ্যে এবং স্পার্টা ও তার মিত্রদের মধ্যে পঞ্চাশ বছর স্থায়ী হবে। তবে জলে বা স্থলে কোনো প্রতারণা বা ক্ষতিসাধন করা চলবে না।
(6) এথেনীয়রা স্পার্টাকে কোরিফেসিয়াম, সাইথেরা, মেথানা, টেলিয়াম অ্যাটালান্টা ফেরত দেবে। এছাড়া এথেন্স কিংবা এথেন্সের অন্তর্ভুক্ত কোন অঞ্চলে যেসব স্পার্টীয় বন্দী আছে, তাদেরও প্রত্যর্পণ করা হবে। স্কিওনে অবরুদ্ধ পেলোপনেসীয়রা এবং সেখানে স্পার্টার অন্য মিত্ররা অথবা ব্রাসিডাস যাদের সেখানে পাঠিয়েছেন এবং এথেন্স বা এথেন্সের অধিকারভুক্ত অন্য যেসব স্পার্টীয় মিত্ররা বন্দী আছে, তারাও মুক্তি পাবে।
(7) স্পার্টা ও তার মিত্রদের কাছে যেসব এথেনীয় বা এথেনীয় পক্ষভুক্ত মিত্র বন্দী আছে, তাদেরও অনুরূপভাবে প্রত্যর্পণ করতে হবে।
(8) এথেনীয়রা স্পার্টা ও তার মিত্রদের কাছে, প্রতিটি নগরের কাছে পর্যায়ক্রমে একটি শপথ নেবে। প্রতিটি নগর থেকে সতেরোজন করে প্রত্যেকেই তার দেশের সবচেয়ে অবশ্য পালনীয় শপথের নামে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে। শপথটি হবে : সন্ধির শর্তগুলি আমি সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব।” স্পার্টা ও তার মিত্ররা ঠিক একইভাবে এথেনীয়দের কাছে শপথ নেবে। দুই পক্ষই প্রতি বছর নতুন করে শপথটি গ্রহণ করবে। ওলিম্পিয়া, পাইথিয়া, যোজক, এথেন্সের অ্যাক্রোপলিস এবং স্পার্টার অ্যামিক্লির মন্দিরে স্তত্ত নির্মিত হবে।
(9) স্কিওন, টোরোন ও অন্য যে নগরগুলো এথেন্সের হাতে আছে, সেগুলো সম্পর্কে এথেন্স ইচ্ছমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
(10) ভুলবশত যদি কোনো বিষয় অনুক্ত থাকে, তবে শপথ ভঙ্গ না করেই এথেন্স ও স্পার্টা পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আলোচনা করে সন্ধি পরিবর্তন করতে পারবে।
মূল্যায়ন:
যখন সন্ধিপত্রটি স্পার্টার মিত্রশক্তিদের অনুমোদনের জন্য বিশেষ শান্তি সভায় পাঠানো হল তখন ঐ সভায় প্রচণ্ড বিক্ষোভ দেখা দিল। করিছ, মেগারা এবং বিয়োসিয়ার প্রতিনিধিরা কতগুলি শর্ত সম্পর্কে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে লাগল। সোলিয়ান এবং অ্যানাকটোরীয়দের সম্ভাব্য প্রত্যর্পণে করিছের দূতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। নিসিয়া বন্দরটি শত্রুর হাতে তুলে দিতে হবে বলে মেগারা ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। বিয়োসিয়ার প্রতিনিধিরা জানিয়ে দিল যে, তারা প্যানাক্টন ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু এথেন্সের পক্ষে এই সমস্ত স্থান ছেড়ে দেওয়া অসম্ভব। সুতরাং সন্ধি আংশিকভাবেসম্পাদিত হল। বিরুদ্ধ পক্ষের প্রধান মিত্ররা এই সন্ধি মেনে নিতে অস্বীকার করল। এলিস যখন এদের সঙ্গে যোগ দিল, তখন পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ল। নিকিয়াস যে চিরস্থায়ী শান্তি চেয়েছিলেন, তা ব্যর্থ হল।