নবাব আলীবর্দী খান ।
১৭৪০ থেকে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আলিবর্দী বাংলার নবাব ছিলেন। উড়িষ্যার নায়েব নাজিম ও সরফরাজের আত্মীয় রুস্তম জঙের আলিবর্দীর অন্যায়ভাবে বাংলার মসনদ দখলকে মেনে না নিলে বালেশ্বরের কাছে ফলওয়ারির যুদ্ধে আলিবর্দী তাকে পরাজিত করেন; পরে উড়িষ্যায় মীর্জা বাকরের অভ্যুত্থান দমন করেন।
আলিবর্দীর শাসনকালে বাংলার ইতিহাসে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় পেশোয়া শাসিত মারাঠা বর্গি বাহিনীর নিরন্তর বাংলা আক্রমণ ও লুন্ঠন। ১৭৫১ সালে বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা চৌথ আদায় ও উড়িষ্যা রাজ্যের উদ্বৃত্ত রাজস্ব প্রদানের শর্তে আলিবর্দীকে মারাঠাদের কাছ থেকে শান্তি ক্রয় করতে হয়। কার্যত উড়িষ্যার উপর নবাবী নিয়ন্ত্রন শিথিল হয়ে যায়। মারাঠা বর্গীদের নিরন্তর আক্রমণের ফলে একদিকে যেমন বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুরের ভয়ানক ক্ষতি হয়, তেমনি বাংলার কৃষি অর্থনীতি, তাঁত শিল্প এবং উত্তর ভার ও পশ্চিম ভারতের সঙ্গে স্থলবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
মারাঠাদের আক্রমণের সুযোগ নিয়ে আফগান নেতা মুস্তাফা থান পাটনা দখল করে নেন এবং আলিবর্দীকে তা পুনরুদ্ধার করতে হয়। তবে এটাও ঠিক যে আলিবর্দির শাসনকালেই বাংলার শাসনকার্যে মুঘল দরবারের বা মুঘল সম্রাটের আর কোনোরূপ নিয়ন্ত্রন ছিল না, এমন নয় যে আলিবর্দী খাঁ মুঘল সম্রাটের বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন কিন্তু তাঁর সময়কালে থেকেই বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার প্রশাসনিক কাজে মুঘল সম্রাটরা আর কোনোরকমের হস্তক্ষেপ করতে পারেননি।
১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দীর মৃত্যুর পর বাংলার মসনদে বসেন তাঁর তৃতীয় কন্যা আমিনা বেগমের জ্যেষ্ঠ্য পুত্র সিরাজউদ্দৌলা। সিরাজের বাংলা শাসনকালেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ পলাশির যুদ্ধকে ডেকে আনে। সেই ইতিহাসে যাওয়ার আগে দেখে নেওয়া যেতে পারে বাংলায় ইওরোপীয় কোম্পানীগুলির কার্যকলাপ ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শক্তিবৃদ্ধির কাহিনীটিকে।