পণপ্রথা প্রতিরোধে ‘Dowry Prohibition Act’ এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
সামাজিক কুপ্রথাকে থামানোর জন্য ভারত সরকার ১৯৬১ সালে Dowry Prohibition Act’ জারি করে যেখানে বিবাহে পাত্রপক্ষের পণ গ্রহণ এবং পাত্রীপক্ষের পণ দানকে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ রূপে চিহ্নিত করা হয়। আইনের দ্বিতীয় ধারায় বলা হয় যে পাত্র পক্ষের পক্ষ থেকে কন্যা পক্ষের কাছে বিবাহের সময় বা তার পরে নগদ অর্থ, অলংকার, সম্পত্তি ও অন্যান্য যে কোন দামী জিনিস গ্রহণ করা বা তার দাবি জানানো Dowry বা পণ রূপে পরিগণিত হবে এবং এই অপরাধে অপরাধীর অন্তত ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ১৫০০ টাকা/ আদায়ীকৃত পণের সমমূল্যের টাকা জরিমানা হবে। নববধূ ব্যক্তিগতভাবে বা তার অভিভাবকগণ বা কোনো পুলিশ অফিসার বা সংশ্লিষ্ট এলাকার Dowry Prohibition Officer ( আইনের ৮ খ ধারা অনুসারে নিযুক্ত) এমনকী কোন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (NGO) পাত্রপক্ষের বাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে পণ আদায়ের অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
এই আইন প্রবর্তনের পরেও অবস্থার বিশেষ কোনো পরিবর্তন না হওয়ার ফলে ১৯৮০’র দশকে নারীবাদী সংগঠনগুলি পর্ণগ্রহণ এবং তা অনাদায়ে বধূহত্যা ও বধুর উপর অত্যাচার চালানোর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য আন্দোলন শুরু করে। এই প্রেক্ষিতে ভারতীয় দন্ডবিধি বা Indian Penal Code এ বেশ কিছু কঠোর আইনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ‘Section 304B’ তে পণজনিত কারণে মৃত্যু বা হত্যা Dowry Death’ অভিধাটি যুক্তকরে বলা হয় যে বিবাহের সাত বছর পর্যন্ত শ্বশুর বাড়িতে যদি কোন বন্ধুর অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তাহলে সেই শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই আইনের প্রয়োগ ঘটানো হবে এবং অভিযোগ প্রমাণ হলে শাস্তি প্রদান করা হবে।
IPC Section 306 কে প্রয়োগ করে বলা হয় যে বিবাহের সাত বছরের মধ্যে যদি কোন কারণে নববধূ আত্মহত্যা করে তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার Abetment to suicide’ এর মামলা রুজু করা হবে। এছাড়াও পণজনিত কারণে বন্ধুকে অত্যাচার করা হলে Section 498 A প্রয়োগ করা যাবে তবে এক্ষেত্রে বিবাহের পরে কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। বধুকে তার স্ত্রীধন ফেরত না দিকে দণ্ডবিধির Section 406 প্রযুক্ত হবে।
বস্তুত আমাদের সমাজ দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণার দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সেই কারণে পণ প্রথার মতো সামাজিক ব্যাধি পুরোপুরি বন্ধ করার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। এই কুপ্রথাকে নির্মূল করতে গেলে ধারণাগত এবং চেতনাগত ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন দরকার যেমন, দান বা উপহার হিসাবে প্রাপ্ত সকল সম্পত্তি বধূর স্ত্রীধন রূপে বিবেচিত হবে এবং এই স্ত্রীধনের উপর কেবল তারই অধিকার এই বিষয়টি অনেকেরই অজানা বা জানা থাকলেও সেটা প্রকাশ্যে মানা সম্ভব হয় না।
এছাড়াও মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময়ও পাত্রীপক্ষকে কিছু প্রচলিত আচার আচরণ ও চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যেগুলিকে তারা বাধ্যতামূলক বলে মনে করে। যেমন পণের দাবি জানাচ্ছে এমন পাত্রপক্ষের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরী না করা, ভালোবাসা থেকে পাত্রীকে যে সকল উপহার বা দান করা হবে সেগুলিকে তালিকাভুক্ত করে পাত্রীর সম্পত্তি বা স্ত্রীধন রূপে লিখে রাখা, টাকা পয়সা দিলে তা পাত্রীর নামে চেক কেটে দেওয়া বা সরাসরি তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া; এমনকি বিবাহের সময় যদি পাত্রপক্ষ হঠাৎ করে পণ দাবী করে ব্ল্যাকমেল করতে চায় তাহলে তৎক্ষণাৎ তা পুলিশ বা যথাযোগ্য জায়গায় জানানো, বিয়ের পরেও যদি পণের জন্য দাবি জানাও হয় সেক্ষেত্রে তাও পুলিশ বা প্রশাসনকে চিঠি লিখে বা মেল করে বা অন্য যে কোনো প্রকারে জানানো।
এককথায় পাত্রী ও তার বাড়ির লোকজনদেরই সাহস অবলম্বন করে এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে পরিবারে বধূঅত্যাচার বা নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির IPC Section 498 A একটি অত্যন্ত কঠোর আইন যা নারীদের পারিবারিক সুরক্ষার একটি আদর্শ রক্ষাকবচ। অপব্যবহার বা অপপ্রয়োগ না করে সমোচিতভাবে এই আইনের দ্বারস্থ হলে অনেক সম্যসার সমাধান হওয়া সম্ভব- যেটা দরকার সেটা হল সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এই আইনের যথার্থ প্রয়োগ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
সমাজকে প্রগতিশীল করে তুলতে গেলে ও আইনের মাধ্যমে নারীদের জন্য সমানাধিকার ও সম্মান বা মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যা উপায় নেই। এখানে আরও খেয়াল রাখতে হবে যে আইনী পদক্ষেপ জনিত ফলাফল যদি নর্থক হয় অর্থাৎ বধূকে যদি বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত যেতে হয় সেক্ষেত্রেও তিনি স্বামীর কাছ থেকে নিজের এবং সন্তানের জীবনযাত্রার যথাযথ মান বজায় রাখার জন্য ভরণপোষণ বা Maintainance’ দাবি করতে পারবেন এবং সন্তানকে নিজ তত্ত্বাবধানে রাখার জন্যও দাবি জানাতে পারবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতের বিচার ব্যবস্থা নারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকেই তাদের রায় প্রদান করে থাকে।