StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

নারী শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্রের অবদান Or বাংলায় নারীশিক্ষা অগ্রগতির ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা বর্ণনা করো

বাংলায় নারীশিক্ষা  অগ্রগতির ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা বর্ণনা করো।

Or

নারী শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্রের অবদান।


ভূমিকা: 

 বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-৯১ খ্রি.)। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার বিস্তারের পথিকৃৎ। তিনি উপলব্ধি করেন যে, নারীজাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়।


নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের উদ্যোগ: 

 বিদ্যাসাগর উপলব্ধি করেন যে, নারীসমাজের মুক্তির জন্য তাদের শিক্ষার অত্যন্ত প্রয়োজন, একমাত্র শিক্ষাই মানুষের মন থেকে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের সঞ্চার করে প্রকৃত মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তুলতে পারে।


হিন্দু ফিমেল স্কুল:

  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন উদ্যোগী হয়ে কলকাতায় ‘হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়’ (১৮৪৯ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতে এটিই ছিল প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যাসাগর ছিলেন এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত। বিদ্যাসাগর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলায় মেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার স্বার্থে বেথুন স্কুলটিকে কলেজে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। ১৮৭৭ সালে চন্দ্রমুখি বসু প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়ে সফল হন। ১৯৮৭ সালের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বেথুন থেকে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন কাদম্বিনী বসু।


হিন্দু নারী বিদ্যালয়:

  ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ২১ জন ছাত্রীকে নিয়ে শিখন কাউন্সিলের তদন্তিত সভাপতি ড্রিংকওয়াটার বেথুন হিন্দু নারী বিদ্যালয় গঠন করেছিলেন এবং যা পরবর্তীকালে বেথুন কলেজে রূপান্তরিত হয়।


নর্মাল স্কুল স্থাপন:

 ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমাজের নারীদের জন্য‌ ভাবনা ও নারীশিক্ষার প্রসারে এত উৎসাহ দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে যায়। তিনি বালিকাদের শিক্ষার জন্য কলকাতায় ‘নর্মাল স্কুল’ স্থাপন করেন। নারী শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের মতো মহান ব্যক্তি বারে‌ বারে এগিয়ে এসেছেন। তিনি নারীশিক্ষার বিস্তার ছাড়াও নারীদের সমাজ মূলক যে কোনো কাজে অধীর আগ্রহী ছিলেন। এ ছাড়া তাঁর উদ্যোগে বাংলার গ্রামাঞ্চলে ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলিতে প্রায় ১৩০০ ছাত্রী পড়াশোনা করত।


মডেল স্কুল স্থাপন : 

   তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০টি মডেল স্কুল বা আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় তিনি নিজ ব্যয়ে চালাতেন।


ভগবতী বিদ্যালয় স্থাপন:

  মা ভগবতী দেবীর স্মৃতিতে বিদ্যাসাগর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে নিজ গ্রাম বীরসিংহে ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারের ফলে নারীদের বাল্যবিবাহ, সুতীদাহপ্রথা, পুরুষের বহুবিবাহ প্রভৃতির বিরুদ্ধে নারীদের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি হয়।


বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন:

  ১৮৫৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর হুগলি, বর্ধমান, মেদিনীপুর ও নদিয়ায় ৩৫টি নারী শিক্ষায়তন স্থাপন করেন, এতে শিক্ষা পেত ১,৩০০ ছাত্রী। এর আগে ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিভিন্ন জেলায় ২০টি মডেল ভার্নাকুলার স্কুল স্থাপন করেছিলেন। অনেক সময় এসব বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বিদ্যাসাগর নিজের অর্থ ব্যয় করতেন।পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর সরকারের কাছে ধারাবাহিক তদবির করায় সরকার এই বিদ্যালয়গুলির কিছু আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এগুলি ছাড়াও বিদ্যাসাগর পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি বালিকাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮ টি। এই বছর সরকার নারীশিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে সরকারি অনুদান প্রদানের কথা ঘোষণা করে।।


মূল্যায়ন:

  বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান অবিস্মরণীয়। উনবিংশ শতকের শেষার্ধে থেকেই দেখা যায় ভারতীয় নারীদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেরাই সুনির্দিষ্ট ক্ষেতে নারীশিক্ষা বিস্তারে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করছেন এবং স্বতন্ত্র বা মৌলিক মডেলের নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছেন। এই যুগনিশাই রামদীগনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ববিত্রীবাঈ ফুলে, পতিতারামাছ, মাতাজি মহারানী তপস্বিনী কোম রোকেয়া শাকাওয়াত হোসেন ও সিস্টার শুভলক্ষ্মী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top