StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

গুপ্ত যুগকে সুবর্ণ যুগ বলা কতটা যুক্তিযুক্ত

 

গুপ্ত যুগকে সুবর্ণ যুগ বলা কতটা যুক্তিযুক্ত । গুপ্ত যুগকে সুবর্ণ যুগ বলা হয় কেন  । 

গুপ্ত যুগকে কি প্রাচীন ভারতের সুবর্ণ যুগ বলা যায়। গুপ্ত যুগকে কী ভারতের সুবর্ণ যুগ বলা যায়?

প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে গুপ্ত শাসন কাল বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের সভ্যতা-সংস্কৃতির অভাবনীয় বিকাশের কথা স্মরণে রেখে তাকে অন্যান্য দেশের গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায় এক আসনে বসানো প্রবণতা দেশি-বিদেশি ঐতিহাসিকদের মধ্যে অতি প্রবল। এই রাজবংশের দই উল্লেখযোগ্য সম্রাট সমুদ্র গুপ্ত এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের পরাক্রম ও প্রশাসনিক দক্ষতা ফলে এই বিশাল সাম্রাজ্যে দীর্ঘকাল শান্তি শৃঙ্খলা ছিল সমৃদ্ধির সহায়ক। এই অনুকূল পরিবেশেই হিন্দু মনীষার বিকাশ শিল্প-সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ সম্ভব হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রাজ পৃষ্ঠপোষকতা।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের বেশিরভাগই ছিলেন ব্রাহ্মণ্যধর্মের সমর্থক বিষ্ণুর উপাসক। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বেড়েছিল। গুপ্ত সাম্রাজ্যের লেখ ও মধু রাতে হিন্দুদের দেবীর নামাঙ্কন ও প্রতিকৃতি তার প্রমাণ। বিষ্ণুর ছিলেন প্রধান দেবতা তা প্রমাণিত হয় এ যুগে বিষ্ণুপুরাণ বিষ্ণুস্মৃতি এবং খ্রীষ্টের চতুর্থ শতকে এর ভাগবত গীতা আলোচনা থেকে। কিন্তু একটা বিশ্বাস ধর্মের অনুরাগী হলেও গুপ্ত সম্রাট ছিলেন উদার ও পরমত সহিষ্ণু। বৌদ্ধ বিহার ও মোট এবং জৈন মন্দির নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য গুপ্ত সাম্রাজ্যের দাক্ষিণ্য ছিল অবাধ। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সেনাদক্ষ আম্রকরধব ছিলেষ বৌদ্ধধর্মাবলি। সাচির কাছে একটা বিহারের জন্য তার দানের কথাও জানা যায়। এসময় সর্নাথ মথুরা ও নালন্দা বৌদ্ধ ও বোধিসত্ত্বের বহুমুখী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শুধু তাই নয় গুপ্ত শাসকদের বদান্যতা ছাড়াও এ সময় থেকেই গৌতম বুদ্ধ হিন্দুদের কাছে বিষ্ণুর অবতার রূপে পুজিত হতে থাকেন।
হিন্দু ধর্মের হিতক গৌরব পুনরুদ্ধারই নয় গুপ্তযুগ সংস্কৃত সাহিত্য ও জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিকাশের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের অনেকেই ছিলেন সুশিক্ষিত, বিদ্যোৎসাহী ও সংস্কৃতিবান। সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের কাব্য সংস্কৃত প্রতিভা উল্লেখিত হয়েছে এলাহাবাদ প্রশস্তি তে। কার পৃষ্ঠপোষকতায় গুপ্তযুগ হয়ে ওঠে সংস্কৃত সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। কিংবদন্তির বিক্রমাদিত্যের রাজসভা কে আলোকিত করে রেখেছিলেন সাহিত্য ও শিল্পের 9 জন অসামান্য জ্যোতিষ্ক। নবরত্ন এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের িছেলন বিক্রমাদিত্য। নবরত্নের শ্রেষ্ঠ রত্নটি ছিলেন সংস্কৃত সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার কালিদাস। তার মেঘদূতম্ অভিজ্ঞান শকুন্তলম রঘুবংশম্, মালবিকাগ্নিমিত্রম প্রভৃতি ধ্রুপদী সাহিত্যের অমূল্য ঐশ্বর্য। এলাহাবাদ প্রশস্তির রচয়িতা হরিসেন বাসক দত্তা রচয়িতা সুবন্ধুর আবির্ভাব এযুগের ঘটেছিল। বৌদ্ধ সাহিত্যিকদের মধ্যে সুপরিচিত ছিলেন বসুবন্ধু, ও দিউনাগ।
মুদ্রারাক্ষস প্রণেতা বিশাখদত্ত অমরকোষ রচয়িতা ছিলেন এই যুগের মানুষ। ভারবি মাগ ছাড়াও পঞ্চতন্ত্র রচয়িতা ছিলেন উল্লেখযোগ্য। সম্ভবত খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে রামায়ণ-মহাভারতের পূর্ণাঙ্গ সংকলন সম্পন্ন হয়েছিল। এ সময় বহু পুরানো স্মৃতি রচিত হয়েছিল। পাণিনির পতঞ্জলির রচনা সূত্র ধরে ব্যকারন শাস্ত্রকে প্রসারিত করেছিলেন চন্দ্রগ্রহণ ও জিনেন্দ্র। ভক্তিহরি রচনা করেন পতঞ্জলির মহাভাষ্য টিকা। চিকিৎসাশাস্ত্রের বিখ্যাত লেখক ছিলেন বাগভট যাকে চরক ও শুশ্রুতের পরেই স্থান দেওয়া হয়েছে।
গ্রহ নক্ষত্র বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থের জন্য গুপ্ত মুখ বিশেষভাবে স্মরণীয়। অধ্যাপক এ এল ব্যাসাম এর মতে গণিত শাস্ত্রের জন্য সমস্ত পৃথিবী ভারতবর্ষের কাছে ঋণী। পঞ্চসিদ্ধান্তিকায় বরাহমিহির অন্যান্য যে সমস্ত গ্রহ নক্ষত্র বিদদের উল্লেখ করেছেন, তারা হলেন রাত, সিংহ, প্রদ্যুম্ন এবং আর্য ভট্ট দশগীতিকা সূত্র এব আর্যাষ্টশত প্রণেতা আর্য ভট্ট। পৃথিবীর যে আপন কক্ষপথে আবর্তিত হয় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়লে যে চন্দ্রগ্রহণ হয় এবং 365.3586805 দিনে যে এক বছর হয় এই মহাসত্য গুলির তিনি আবিষ্কারক। এমনকি দশমিক পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। গুপ্ত যুগের সংস্কৃত ভাষা সাহিত্যের বিকাশ ও সমৃদ্ধির কারণে অনুশাসন ও মুদ্রা ব্যবহৃত হতো সংস্কৃত ভাষা। এমনকি বহু ধর্ম গ্রন্থকারগন পালির বদলে সংস্কৃত কেউ তাদের রচনার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। 
 শিল্পকলার ক্ষেত্রেও গুপ্ত যুগ স্মরণীয়। স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পীর ক্ষেত্রে এই সময়ের শিল্পীরা কত মানের পৌঁছেছিল। মতি কুলি যে যে ধর্মানুসারী হোক না কেন মানবীয় যৌবনোচিত কান্তিকে আশ্রয় করে সৃষ্টি হয়েছে। গুপ্ত যুগের ভাস্কর্যের মথুরা ও অমরাবতী শৈলীর পূর্ণ পরিণতি ঘটে ছিল। বুদ্ধগয়ার বুদ্ধাদেব ও বধির সত্যের মধ্যে গুলিতে সোমনাথের দন্ডায়মান ও উপবিষ্ট বুদ্ধ মূর্তি গুলির মধ্যে আধ্যাত্মিকতার ছাপ স্পষ্ট। গোয়ালিয়র ঝাঁসির দেওগরের মন্দিরে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি গুলির নান্দনিকতা অনস্বীকার্য।
গুপ্ত যুগের স্থাপত্য শিল্পের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন পাওয়া যায় ভেতর গান ভিতারি এবং দেওগর এ। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে নির্মিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইটের তৈরি ভবনগুলি এই সময়ের স্থপতিদের নৈপুণ্যের স্মারক। স্থাপত্য শিল্পের ছবি ও চৈত্য নির্মাণ অব্যহত ছিল। অজন্তা ও ইলোরা চৈত্যগুলি পর্বত গাত্র খোদিত করে নির্মিত হয়েছিল। বর্গাকার গর্ভগৃহ বিশিষ্ট মন্দিরের সৌষ্ঠব ও নিরলঙ্গার বা হিরঙ্গ এবং দেওগড়ের দশাবতার মন্দিরের গাত্রে প্রোজেকশন সদৃশ বিভাজন দেখা যায়।
 চিত্র শিল্পের কালজয়ী নিদর্শন আছে অজন্তা গুহা ( 1,2,16,17,19) গুলিতে । এই গুহাচিত্রের নান্দনিকতা সর্বজন বিদিত। বৌদ্ধ জাতকের কাহিনীর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী অবতারণা হয় মানবদেহের উপস্থাপনার মতোই শিল্পী সুজনী দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। ভিক্ষু বুদ্ধের পাশে মানবী যশোধারা ও রাহুল, বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বর পদ্মপানি শান্তচিত্ত চিত্রটি উল্লেখযোগ্য। যে বিশেষ লক্ষণ এই চিত্র শৈলী কে চিহ্নিত করে দেয় তাকে স্টেলা ত্রমরিশ the direction of forthcoming বলে অভিহিত করেছেন। উজ্জ্বল ও গাঢ় ভেষজ রঙের ব্যবহার অজন্তার গুহাচিত্র লিকে বিশিষ্ট মর্যাদা গেছে।
যুগের এই সৌন্দর্য চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সর্বত্র সম্রাটের প্রবর্তিত মুদ্রায়, ধাতু শিল্পের ক্ষুদ্র বৃহৎ নিদর্শন। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে নির্মিত দিল্লির মেহেরৌলির 23 ফুট উঁচু চন্দ্র নামাঙ্কিত লৌহ স্তম্ভে মহাবীরের ব্রোঞ্জ মূর্তি গুলিতে অসামান্য শিল্পবোধের সঙ্গে ধাতুবিদ্যা কুশল ও অত্যাশ্চয প্রয়োগ দেখা যায়।
উত্তর ভারতে গুপ্ত যুগের সংস্কৃতি জীবনের যে অসামান্য সৃজনশীলতা দেখা গিয়েছিল তাকে বহু ঐতিহাসিক সুবর্ণ যুগ বলে অভিহিত করেন। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ চারুকলা অত্যাশ্চয বিস্তার ব্রাহ্মণ্য পৌরাণিক ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার প্রসার এই লক্ষণগুলি ঐতিহাসিকদের বিচারে ভারতীয় সভ্যতা কে এক অদ্ভুতপূর্ব শিখর স্থানে উন্নীত করে দেয়। গুপ্ত কালীন রাজনৈতিক সুস্থিতি এই সংস্কৃতিক সৃজনশীলতার বিকাশ এর বিশেষ সহায়ক ছিল বলেও তাদের ধারণা। গুপ্তদের শখ ক্ষত্রপ শাসনের অবস্থান জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিদেশি শাসনের অবসান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

মূল্যায়ন:

ডি ডি কোসাম্বি এর মতে, গুপ্তদের শাসনে জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠার ঘটেনি বরং জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক দের দ্বারা বিশ শতকের প্রথমার্ধে গুপ্তযুগের প্রতি এক বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করেছিল। রামশরণ শর্মা দ্বিজেন্দ্র নারায়ণ ঝাঁ , কৃষ্ণমোহন শ্রিমালি প্রমুখ মার্কসীয় ঐতিহাসিক রায় সুবর্ণ যুগ এর ধারণার সীমাবদ্ধতা ও আশালতা প্রতিপন্ন করেছেন। তাদের মতে সুবর্ণ যুগ ধারণাটি ইউরোপীয় ইতিহাস চর্চা থেকে ধার করা। সুবর্ণ যুগ বলতে যে শোষণমুক্ত সমান অধিকারের আদর্শে গড়ে ওঠা সমাজব্যবস্থার কল্পনা করা হয় তার সঙ্গে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অবস্থান দুস্তর ব্যবধান। আর্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতে যেসব প্রশংসনীয় ঘটনা ঘটেছিল তার ফলে ভোগ করতেন সমাজের উপর তলার অল্প সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ। আপামর জনসাধারণের দৈনন্দিক জীবনযাত্রায় আরাম বিলাস, আমোদ-প্রমোদের অবকাশ ছিল সামান্য।
সমাজে বিষ্টির মত নিপীড়ন প্রথা বর্ণ জাতির অস্পৃশ্যতা অনাথ আতুর কৃপনদের উপস্থিতির মধ্যে সুবর্ণ যুগ এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মা মতে স্বর্ণযুগের আখ্যা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সত্য নয় কারণ বেশ কয়েকটি নগরের পতন হয়েছিল। একইসঙ্গে ভারত রোম বাণিজ্যের অবনতি ঘটে এই সময় পবে । ঐতিহাসিক রণবীর চক্রবর্তী সুবর্ণ যুগ এর ধারণা বাতিল করলেও অন্তত সম্ভাবনার কথা বলেছেন। প্রাচীন যুগের অবসান ও আদি মধ্যযুগের সন্ধিক্ষণের এই যুগে রাজনৈতিক ও সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে নতুন সম্ভাবনার বীজ উপ্ত হয়েছিল। রোমিলা থাপার তাই যথার্থভাবে এই পর্বকে পরিবর্তনের ভিত্তিভূমি বলে চিহ্নিত করেছেন।
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *