StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

সুলতানী শাসনে উলেমাদের ভূমিকা । দিল্লি সালতানাত প্রশাসনে উলেমাদের ভূমিকা

 দিল্লি সালতানাত প্রশাসনে উলেমাদের ভূমিকা

অথবা

সুলতানী শাসনে উলেমাদের ভূমিকা 



সুলতানি সাম্রাজ্যের কিছু বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া সমাজ ও প্রশাসনের ওপর যে সম্প্রদায় প্রবল প্রভাব পড়েছিল তারা উলেমা নামে পরিচিত। উলেমারা শরীয়তী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জনসাধারণকে ধর্ম পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব ছিল এদের উপর তবে এই সম্প্রদায় বংশানুক্রমিক উপর গড়ে ওঠেনি। কোন একটা বিশেষ জাতি, লোক এরপর তা সীমাবদ্ধ ছিল না । তবে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে এই মর্যাদা লাভের যোগ্যতা খুব কমই ছিল। ফলে আরবি-ফারসি জানা ও ভারতীয়রাই উলেমা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এই সম্প্রদায় নিজেদের গুরুত্ব বিষয়ে অতি সচেতন ছিল এবং একই সঙ্গে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সদা তৎপর।


ভারতে মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্র বিকশিত হবার প্রথমদিকে উলেমাদের প্রাধান্য ছিল। এরা প্রায় নিজেদের বানানো কথা কোরানের নির্দেশ বলে চালাতেন। ফলে মুসলিম সমাজে এদের প্রতিপত্তি ছিল অসামান্য এরা জনসাধারণের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি এরকম ভাবে তৈরি করেছিলেন যে তার ফলে উলেমাদের বহু আচরণ বিরোধী হলেও বেশির ভাগ মুসলিম এদের বিরুদ্ধাচরণে সহজে হতেন না। তবে এদের পরামর্শ মানা ছেলে সন্তানের ইচ্ছাধীন ।



সুলতানি আমলে বিচারবিভাগীয় ধর্ম সম্পর্কিত এবং শিক্ষা বিষয়ক সমস্ত উল্লেখযোগ্য পদ ছিল এদের নিয়ন্ত্রণে। কেউ কেউ ব্যক্তিগত মাদ্রাসা ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এদের পদ গুলি ছিল ইমাম, মোহতাসিব,মুফতি এবং কাজী। এই যুগে বুদ্ধিজীবীদের বেশিরভাগই ছিল এই গোষ্ঠীভুক্ত এবং ঐইসলামিক ধর্মতত্ত্বে শিক্ষিত হবার ছিল বাধ্যতামূলক।




কোন ধর্মীয় বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে ফতোয়া জারি করার অধিকার ছিল তাদের। লৌকিক এবং অলৌকিক সমস্ত বিশেষ অধিকার প্রয়োগ কে উলেমারা নিজেদের সহজাত বলে মনে করত। এবং দুর্বল ব্যক্তিত্বহীন শাসকের পক্ষে এদের কাছে নতিস্বীকার ছিল সাধারণ ঘটনা।



উচ্চ পদের অধিকারী হলেও সব সময় রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণের সুযোগ এদের দেওয়া হতো না। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু প্রজাদের মধ্যে নিজেদের সত্ত অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একাধিক সুলতান উলেমা প্রভাবে জন্য হলেও স্বাধীনচেতা ব্যক্তির সম্পদের আদেশ অমান্য করতে দ্বিধা করতেন না । ইলতুৎমিস কে একাধিক উলেমা শরীয়তী আইন প্রয়োগ করতে পরামর্শ দিলেও ইলতুৎমিস তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। বলবান তাদের পুত্রদের সচেতন করেছিলেন যে উলেমারা ইচ্ছাকৃত কোরানের অপব্যাখ্যা করে।




তবে উলেমাদের সংকীর্ণ ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন হলেও তাদের অধিকার কোন সুলতান কে সচেতন করা যায়নি। ব্যতিক্রম ছিলেন স্বাধীনচেতা শাসক আলাউদ্দিন খলজী। তিনি প্রথমে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন যে কোন নীতি শরীয়ত অনুযায়ী কি না সে বিষয়ে তিনি ভাবীতো নয়। রাষ্ট্রীর শাস্ত্রে যা তিনি নেই বলে মনে করেন তাই তিনি বাস্তবায়িত করেন। তবে আলাউদ্দিনের উত্তরসূরিরা দৃঢ়চেতা না হওয়ায় সুলতানি সাম্রাজ্য উলেমাদের প্রভাব বাড়তে থাকে। রাজস্বের প্রথমদিকে মুহাম্মদ বিন তুঘলক ব্যক্তিগত জীবনে সংকট শেষ পর্যন্ত তার মনোভাব কিছুটা পাল্টে দিয়েছিল। ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজস্ব কাল ছিল উলেমাদের স্বর্ণযুগ। ফিরোজ এরপর উলেমাদের প্রতিপত্তি হ্রাসচেতা করা কোন স্বাধীনচেতা সুলতানের আবির্ভাব ঘটেনি।



 সন্দেহ নেই সুলতানি রাষ্ট্রের সমস্ত জীবনে উলামাদের প্রতিপত্তির খারাপ দিকটি প্রবণ হয়ে উঠেছিল। এই উলেমা ধর্মশাস্ত্রে কম বেশি জ্ঞান থাকলেও রাজনৈতিক প্রশাসনিক বিষয়ে এদের কোন জ্ঞান ছিল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা অত্যন্ত সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক বিষয়ে সুলতানকে পরামর্শ দিয়ে সাম্রাজ্যের ক্ষতি করেছিল। তবে মুসলিম জনগণের ওপর এর প্রভাব থাকায় প্রশাসনিক প্রতিপক্ষের সব সময় এদের উপেক্ষা করা সম্ভব হতো না। সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজাদের ধর্ম বিষয়ে বেশিরভাগ শাসকের সহিষ্ণুতার মূলে ছিল এই সম্প্রদায়। সন্তানের প্রতি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত আনুগত্যের পথ রোধ করে দিয়েছিল এই সংকীর্ণ সম্প্রদায়। 

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *