StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

সংস্কৃত গল্প সাহিত্যের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় দাও

সংস্কৃত গল্প সাহিত্যের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় দাও ।

ভূমিকা:
সংস্কৃত সাহিত্যের বিশাল অংশ জুড়ে গল্পসাহিত্যের অবস্থান। গল্পসাহিত্যে গল্পকার গল্পকাহিনী বর্ণনা করে একটি নীতি বাক্যের অবতারনা করেন। সুপ্রাচীনকাল থেকেই গল্পের প্রতি মানুষের একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। আবালবৃদ্ধ বনিতা সকলেই গল্প করতে ভালোবাসেন।সর্বোপরি শিশুমনকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যেও গল্পপ্রয়োজন। যে বয়সে গুরুগম্ভীর কথাবার্তার কোন তাৎপর্য থাকে না, ভয় ভীতি কি তা জানে না, সেই সুকুমার কোমল বয়সেও শিশুমনের কাছে গল্পের একটা স্বভাবিক আবেদন থাকে।কথার জাল বুনে গল্পকার সকল স্তরের মনুষ্য মনকে এক রহস্যঘন মায়াবী পরিবেশে নিয়ে যেতে পারেন। জীবনের উপযোগী নীতি আদর্শগুলিকে গল্পের মোড়কে পরিবেশন করে গল্পকার প্রকৃত অর্থেই এক প্রকৃত সমাজ শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
পঞ্চতন্ত্র:
সংস্কৃত সাহিত্যের এক বিশাল অংশ জুড়ে গল্পসাহিত্যের অবস্থান। এই সাহিত্য সংস্কৃত সাহিত্যের গৌরববহ বস্তু। এই গৌরবের দরবারে উজ্জ্বলতম রত্ন অতি অবশ্যই পঞ্চতন্ত্র। দাক্ষিণাত্যের কবি বিন্নুশর্মা পাঁচটি তন্ত্র বা অধ্যায়ে রচনা করেন পঞ্চতন্ত্র।সমস্ত অর্থশাস্ত্র, কাব্যশাস্ত্র, সংহিতাগ্রন্থ পর্যালোচনা করে কবি বিষ্ণুশর্মা মিত্রভেদ, মিত্রপ্রাপ্তি, লম্বনাশ, কাকোলূকীয় ও অপরিক্ষীতকারক— এই পাঁচটি তন্ত্রে বিভক্ত পঞ্চতন্ত্র রচনা করেন। দাক্ষিণাত্যের মহিলারোপ্যনগরীর শাসক অমর সিংহের মূর্খ ও নির্বোধ পুত্রদের বাস্তবজ্ঞান ও নীতিশিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষক কবি বিষ্ণুশর্মা এই গ্রন্থ রচনা করেন। বাইবেলের পর সর্বাপেক্ষা অধিক প্রচারিত এই গ্রন্থ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল ভাষায় পঞ্চতন্ত্র অনূদিত। পাশ্চাত্য সাহিত্য সমালোচক Hertal পঞ্চতন্ত্রকে খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের রচনা বলে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য যে বিষ্ণুশর্মা বিরচিত মূল পঞ্চতন্ত্র বর্তমানে অবলুপ্ত। পরবর্তী কালে রচিত কয়েকটি সংস্করণে পঞ্চতন্ত্রের কাহিনীকে ধরে রাখা হয়েছে।
 
বৃহৎকথাঃ——পঞ্চতন্ত্রের পর যে গল্পসাহিত্য শুধুমাত্র আসমুদ্র হিমাচল ভারতবর্ষেই নয়, বহির্ভারতেও সমান শ্রদ্ধা আকর্ষণ করছিল, তা হলো বৃহৎকথা।পৈশাচী প্রাকৃতে পশুর রক্তে সাত লক্ষ শ্লোকে রচিত বৃহৎকথা প্রকৃত অর্থেই বৃহৎকথা। কবি গুণাঢ্য এর রচয়িতা। বলা হয় বিতর্কে পরাজিত হয়ে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ এই তিন ভাষায় মৌন থেকে কবি পৈশাচী প্রাকৃতে গ্রন্থটি রচনা করেন। প্রাচীন ভারতীয় রাজা সাতবাহন এই গ্রন্থের সাথেই যুক্ত। পতন্ত্রের মতো মূল বৃহৎকথাও অবলুপ্ত। সুবন্ধু, বাণভট্ট প্রভৃতি গদ্যকার, নাট্যকার ভাস এই মহাগ্রন্থের উল্লেখ করেছেন। ভাসের‘স্বপ্নবাসবদত্তম্’ ও ‘প্রতিজ্ঞা-যৌগন্ধরায়ণ’ এর উৎস বৃহৎকথা। মহাকবি কালিদাস তাঁর ‘মেঘদূতম্‘এগ্রামবৃদ্ধদের মুখ থেকে নগরবাসীদের বৃহৎকথার গল্প শোনার উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীকালে রচিত কয়েকটি গ্রন্থে বৃহৎকথার কাহিনী স্থান পেয়েছে। সেগুলির অন্যতম হলো কবি ক্ষেমেন্ত্রের ‘বৃহৎকথামঞ্জুরী’, কবি জয়রথের ‘হর্ষচরিত’, কাশ্মীরী কবি সোমদেব ভট্টের ‘কথাসরিৎসাগর’ উল্লেখযোগ্য।
হিতোপদেশ : বঙ্গকবি নারায়ণ পঞতন্ত্রের কাহিনী অনুসরণে চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত হিতোপদেশ রচনা করেন। পঞতন্ত্রের পর বিশেষত বঙ্গদেশে এই গ্রন্থটি সবিশেষ সমাদৃত হয়। কবি নারায়ণ বঙ্গেশ্বর ধবল চন্দ্রের সভাকবি ছিলেন। হিতোপদশের চারটি বিভাগ হলো— মিত্রলাভ, সূহৃদভেদ, বিগ্রহ ও সন্ধি। খ্রীষ্টিয় একাদশ শতকে গ্রন্থটি রচিত হয়। এতে মোট গল্প ৪৩। ২৫ টি গল্পপতন্ত্র থেকে নিলেও ১৮টি গল্প অন্যান্য বিষয় অবলম্বনে কবিকর্তৃক স্বয়ং রচিত।
 
কথাসরিৎসাগর: অধুনাপ্রাপ্ত গল্পসাহিত্যের আকর গ্রন্থগুলির মধ্যে কথাসরিৎসাগর অন্যতম বৃহত্তম গল্পগ্রন্থ। কাশ্মীরী কবি সোমদেবভট্ট কথাসরিৎসাগর রচনা করেন। বৃহৎকথা অবলম্বনে রচিত কথাসরিৎসাগর গুণাঢ্যের বৃহৎকথার এক বিশ্বস্ত সংস্করণ। কবি সোমদেব তাঁর পূর্বসূরী গুণাঢ্যের কাছে তাঁর ঋণ অক্লেশে স্বীকার করেছেন। ১৮ লম্ভকে ১২৪ তরঙ্গে এবং ২৪,০০০ শ্লোকে রচিত কথাসরিৎসাগর বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম গল্পগ্রন্থ। কবি সোমদেব কাশ্মীর নরেশ অনন্তের সভাকবি ছিলেন। রাজমহিবী সূর্যমতীর পৃষ্ঠপোষকতায় সোমদেব এই গ্রন্থটি রচনা করেন। গ্রন্থটির রচনাকাল খ্রীষ্টিয় একাদশ শতক।
বৃহৎকথামঞ্জরীঃ গুণাঢ্যের বৃহৎকথার আর এক বিশ্বস্ত সংস্করণ বৃহৎকথামঞ্জুরী। কবি ক্ষেমেন্দ্র কাশ্মীরের অধিবাসী ছিলেন। বৃহৎকথামঞ্জুরী গ্রন্থটির যে পান্ডুলিপি আবিস্কৃত হয়েছে সেটি অসমাপ্ত। ২৮টি সর্গে ৪৫৩ টি শ্লোকে অসমাপ্ত অবস্থায় এটি আবিস্কৃত হয়। ক্ষেমেন্দ্রও সোমদেব ভট্টের সমসাময়িক ছিলেন।
শুকসপ্ততিকথা: —৭০ টি গল্পের সংকলন শুকসপ্ততিকথা। খ্ৰীষ্টীয় দ্বাদশ শতকে কবি ‘চিত্তামণিভট্ট’ এই গ্রন্থটি রচনা করেন। দেবদাস নামক কোন এক রাজকর্মচারীর পালিত এক শুকপাখি ছিল। রাজকর্মচারী দেবদাসের সুন্দরী পত্নীর প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে রাজা তাকে রাজকার্যের অছিলায় রাজ্যের বাইরে পাঠান। পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে দেবদাসপত্নী প্রতিরাত্রে গৃহত্যাগের উদ্যোগ করতে লাগলে শুকপাখিটি তাকে একটি করে গল্প বলত। গল্পের মোহে দেবদাস পত্নীর আর গৃহত্যাগ করা হতো না। এভাবে সত্তর রজনীতে ৭০ টি গল্প শুখপাখিটি বলে। ইতিমধ্যে দেবদাস ফিরে আসে এবং দেবদাস পত্নীর চারিত্রিক বিশুদ্ধতা রক্ষিত হয়। গ্রন্থটির রচনা কাল খ্রীষ্টিয় দ্বাদশ শতক। 
 
বেতালপঞ্চবিংশতিঃ— কিংবদন্তী মহারাজ বিক্রমাদিত্যকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত সাহিত্য রচিত হয়ছে বেতালপঞ্চবিংশতি তার অন্যতম। এক সন্ন্যাসিকে প্রদত্ত কথার মর্যাদা রাখতে মহারাজ বিক্রমাদিত্য মৌন অবস্থায় অন্ধকার রাত্রিতে একটি শবদেহ আনতে যান। বৃক্ষের উপর অবস্থিত শবদেহটিকে অশ্রয় করেছিল একটি বেতাল। বেতালের শর্তছিল বিক্রমাদিত্য যদি তার জিজ্ঞাসার যথাযথ উত্তর দিতে পারেন তবে তিনি শবদেহের অধিকার ছেড়ে দেবেন। বিক্রমাদিত্যকে বেতাল কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেন। প্রাজ্ঞ মহারাজ সেগুলোর যথাযথ উত্তর দিলেও তাঁর মৌনতা ভঙ্গের সুযোগে শবদেহটি পুনরায় গাছে উঠে যেত। এইভাবে বেতাল ২৫ টি গল্প বলে। বেতাল পঞ্চবিংশতি এই ২৫ টি গল্পেরই সংকলন। রচয়িতা শিবদাস। সময়কাল দ্বাদশ শতাব্দী।
 
পুরুষপরীক্ষাঃ— বৈয়ব কবি বিদ্যাপতি রচিত পুরুষপরীক্ষা একটি প্রসিদ্ধ গল্পগ্রন্থ। মনুষ্যচরিত্রের পরিচয় প্রাপ্তিতে এই গ্রন্থটি প্রকৃতই অতুলনীয়। সহজ সরল সংস্কৃতে রচনা এই গ্রন্থটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এছাড়া আরোও কিছু রচনা গল্প সাহিত্যের ভাণ্ডারকে পরিপূর্ণতা দান করেছে। এগুলির অন্যতম কবি বল্লাল রচিত ভোজপ্রবন্ধ। রাজা ভোজের বিচিত্র কর্ম পদ্ধতি এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু। মেরুতুঙ্গের প্রবন্ধ চিন্তামনি এবং রাজশেখরের প্রবন্ধ কোষও এই ধারার উল্লেখযোগ্যগ্রন্থ। 
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *