StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর

 

নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য 



 1) নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চায় সাহিত্য, দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, ধর্ম, বর্ণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। অর্থাৎ নিম্নবর্গের ইতিহাস কোনো একক অথবা পৃথক জ্ঞানকাণ্ড নয়। বিশ্বব্যাপী এ জ্ঞানকাণ্ডের প্রভাব এখনো বহাল। ল্যাটিন আমেরিকাতে সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। সেখানে সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত।




 2) এই গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক ডেভিড আর্নল্ড এর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন ‘এলিট শ্রেণীর জমিদারের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে ধনী কৃষক নিম্নবর্গ আবার আধিপত্যের দিক থেকে এই ধনী কৃষক গ্রামীণ দরিদ্র ভূমিহীন মজুর, কারিগর ও অন্ত্যজ শ্রেণীর তুলনায় উচ্চবর্গ।’ এ কারণে এটি একটি অবিরাম প্রক্রিয়ার প্রত্যয়। যেকোনো সমাজে আধিপত্য ও অধীনতার স্বরূপ বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে নিম্নবর্গকে চিহ্নিত করা সম্ভব।



3) শ্রেণী, জাতি-বর্ণ, সম্প্রদায়, বয়স, লিঙ্গ অথবা কর্মস্থল যেখানে বর্তমান থাকুক না কেন, দক্ষিণ এশীয় সমাজব্যবস্থায় অধীনতার সাধারণ রূপগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছেন সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ ঘরানার লেখকরা। 




4) অধীনতার জটিল শাখা-প্রশাখাগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন থাকার কারণে সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ গোষ্ঠী সাব-অল্টার্নিটির দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজনীতি আর অগ্রন্থিত আচরণ, আদর্শ ও বিশ্বাসের পরিচয় যে সংস্কৃতি ধারণ করে তার সামগ্রিক রূপটি তুলে ধরেছেন গবেষণায়। 



5) নিম্নবর্গতার ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি এবং একই সঙ্গে তার আচার-আচরণ, ভাবনাচিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি সবকিছুই এককথায় সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত। এঁদের রচনায় কেবল ঔপনিবেশিক ভারত নয়, ঔপনিবেশিক-উত্তর অনুষঙ্গও আলোচিত হয়েছে। এ গোষ্ঠী ঔপনিবেশিক ভারতের বৃহত্তর গ্রামীণ রূপান্তরের ওপর বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। গুরুত্ব দিয়েছেন সামাজিক অধীনতাকে। 




6) প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিকল্প ইতিহাস অন্বেষণে গ্রামীণ নিচুশ্রেণীর স্বর এবং ঔপনিবেশিক কালে সংঘটিত তৃণমূল কৃষকশ্রেণীর প্রতিরোধ-উদ্যোগ সম্পর্কে নতুন ব্যাখ্যা প্রদান করতে চেয়েছেন এ গোষ্ঠী।



 7)  ‘সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ’ কেবল রাষ্ট্রক্ষমতা বা কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার কথাই বলে না, রাষ্ট্রবহির্ভূত ক্ষমতার প্রসঙ্গ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।




8) নিম্নবর্গের তাত্ত্বিকরা উচ্চবর্গ-নিম্নবর্গ সম্পর্ককে যাচাই করে দেখতে চান। প্রত্যেক মানুষ ক্ষমতা ব্যবহার করে, আবার একই সঙ্গে সে ক্ষমতার দ্বারা অধীন হয়। রাষ্ট্র নয়, সমাজের ভেতর ক্ষমতার এই পারস্পরিক আদান-প্রদান ও গতিবিধি নিম্নবর্গ প্রত্যয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ।



9) মূলত, সাম্রাজ্যবাদী আর জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের বিরোধিতার পথ ধরেই নিম্নবর্গের ইতিহাসের অগ্রযাত্রা। উচ্চবর্গ থেকে নিম্নবর্গের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আর পদ্ধতির স্বাতন্ত্র্য এবং নিম্নবর্গের চেতনার নিজস্বতা অন্বেষণই সাব-অল্টার্ন স্টাডিজের প্রাথমিক কাজ ছিল।




 10) কেবল নিম্নবর্গের স্বতন্ত্র ক্রিয়াকলাপের বিবরণে সীমাবদ্ধ না থেকে সমগ্র সমাজ প্রতিষ্ঠান, ভাবাদর্শের জগেকই নিম্নবর্গের দৃষ্টিতে দেখা। ঔপনিবেশিক আধুনিক ক্ষমতাতন্ত্রে ও স্বাধীন ভারতে যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞান সঞ্চারিত করতে সচেষ্ট হয়েছিল সেসব প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে স্কুল-কলেজ, সংবাদপত্র, প্রকাশনা সংস্থা, হাসপাতাল ডাক্তার, চিকিত্সাব্যবস্থা, জনসংখ্যাগণনা, রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স, আধুনিক শিল্প উত্পাদনে দৈনন্দিন শ্রম সংগঠন, বিজ্ঞান সংস্থা, গবেষণাগার প্রভৃতির বিশদ ইতিহাস অন্বেষণ।



11) জাতিভেদপ্রথা বিশ্লেষণে এ গোষ্ঠী দেখিয়েছে কিভাবে ধর্মীয় ভিত্তি লুপ্ত হয়ে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থান গুরুত্ব পাচ্ছে। নিম্নবর্গ সামাজিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্নভাবে এই ক্ষমতাতন্ত্রের একদিকে বিরোধিতা করছে অন্যদিকে আবার সুযোগ নিচ্ছে। উচ্চবর্গের আধিপত্য বিস্তারের কৌশল এই জাতিগত পরিচয়ে নিহিত।




12)  ‘সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ’ গোষ্ঠীর লেখকরা নিম্নবর্গের নিজস্ব ইতিহাসকে পুনর্নির্মাণ করেছেন। ইতিহাস অবশ্য ব্যক্তিগত কারো নয়। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ইতিহাসও হয় না, এ জন্য নিম্নবর্গের ইতিহাস অসম্পূর্ণ, পরিবর্তনশীল। তবে এই ইতিহাস ‘অবদ্ধ ও সচল’। নিম্নবর্গের সংগ্রামের যথার্থ প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার জন্য এখনো এ ইতিহাসচর্চা চলছে। প্রকৃত ইতিহাস উচ্চ/নিম্নবর্গের মিলিত জীবন ও সংগ্রাম; একে অপরের সম্পর্কে নির্মিত হয়।



13) উচ্চবর্গ-নিম্নবর্গের মধ্যেকার বৈপরীত্য ও সম্পৃক্তি যথাযথভাবে বর্ণনা করতে হবে এবং একারণেই ইতিহাসে নিম্নবর্গের ভূমিকাকে যথার্থ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে বলেন এ গোষ্ঠীর লেখকরা। আর এখানেই ‘সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ’ গোষ্ঠীর স্বাতন্ত্র্য; বিশ্ব জ্ঞানকাণ্ডের একটি বিশিষ্ট সংযোজনাও।




14) প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতাতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সামাজিক রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং ক্রিয়াকলাপ বিশ্লে¬ষণ ও সমালোচনা করা। অর্থাৎ যেকোনো প্রতিষ্ঠিত বা প্রতিষ্ঠায় অভিলাষী ক্ষমতাতন্ত্রের সমালোচনা এ গোষ্ঠীর আলোচনায় সম্ভব হলো।



15) পুরুষ চালিত সমাজে নারী নিম্নবর্গ। এ সমাজে নারীর অধীনতা বা ক্ষমতার সম্পর্কের ভিত্তিতে নারীর নির্মাণ এবং নিম্নবর্গের নারীর অধীনতাকে পৃথক করে চিহ্নিতকরণ। ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিংশ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে চর্চিত উচ্চবর্গের রাজনীতির বিরোধিতা করা।


Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *