StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

কনস্টান্টিনোপলের পতনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য

কনস্টান্টিনোপলের পতনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য 

 



1453 সালে অটোমান তুর্কিদের আক্রমণের সামনে কনস্টান্টিনোপলের পতনকে একটা রাজনৈতিক যুগ বিভাজন হিসেবে ধরা হয়। কনস্টান্টিনোপলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা বাইজেনটিয়াম রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এই পতনের পর স্বাভাবিক যুগ ধর্ম অনুযায়ী সেখানে চলেছিল লুণ্ঠন, হত্যা ও নারী নিগ্রহ, সেন্ট সোফিয়া গির্জা পরিণত হয়েছিল একটি মসজিদে। খ্রিস্টীয় জগৎ-এর পূর্ব বাহু অপসিত হয়েছিল। এবং এই ঘটনার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ছিল ইসলামের সম্প্রসারণ। মোহাম্মদ দা কংকারার(শাসক) যেভাবে তুর্কি সাম্রাজ্যের আয়তন বাড়ি এসেছিলেন তার ফলে ইউরোপ ও এশিয়ার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তুর্কি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সামরিক শক্তিতে বলিয়ান তুর্কিরা ইসলাম ধর্ম ওঐসলামিক সাম্রাজ্যের প্রসার কে তাদের লক্ষ্য বলে মনে করত এবং বিপক্ষের প্রতিরোধ এতই দুর্বল ছিল যে লাতিন ওয়েস্ট কে বহুকাল তুর্কিদের সামনে সন্তুস্ত থাকতে হয়েছিল।





কনস্টান্টিনোপলের পতন একটা নতুন রাষ্ট্র এর রাজনৈতিক ও সাম্রাজ্যবাদী ক্রিয়া-কলাপ এর পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় ইউরোপের নতুন স্বরূপ নির্ণয় যা ছিল ইউরোপের চিরাচরিত পরিচয় ‘সোসাইটাস ক্রিস্টানিটাস’ এর থেকে আলাদা। তবে পুরো প্রচলিত ঐতিহাসিক ধারণা ছিল 1453 এর ঘটনা মধ্যযুগের ইউরোপের মৃত্যু ঘটায় এবং জন্ম হয় আধুনিক ইউরোপের। সাম্প্রতিক গবেষণায় যুগান্তরের তথ্যটিকে ঐতিহাসিকরা দেশভেদে আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করেছেন। ফ্রান্স আধুনিক তাই পদাপন করেছিল 1494 এ ইতালি আক্রমণের মধ্য দিয়ে, ইংল্যান্ডে 1485 এর বসওয়াথের যুদ্ধ ও টিউডার শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এবং জার্মানভাষী অঞ্চলে 1519 পঞ্চম চার্লস এর সিংহাসনে বসার মধ্য দিয়ে। ক্সেমব্রিজ ঐতিহাসিক ডেনিস হে দেখেছেন যে ইতালিতে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো 1453 বহু আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিল সুতরাং কনস্টান্টিনোপলের পতনের উপর হঠাৎ পরিবর্তনের তত্তও খারিজ হয়ে গেছে। তবে1453 সালকে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয় যে এ সময় থেকেই ইউরোপ মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ তার রূপান্তরের পথে পা বাড়ায়।




বাইজানটেনিয় শাসনের শেষ লগ্নে স্বীত দরিদ্র কনস্টান্টিনোপল তুর্কিদের দ্বারা নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে গড়ে ওঠে নতুন বসতি তাল নতুন নামকরণ করা হয় ইস্তানবুল যা হয়ে উঠল অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী তথা প্রাণকেন্দ্র। সুলতানের শাসনতান্ত্রিক কাঠামোতে বহু বাইজানটাইন প্রথা পদ্ধতি স্থান পেয়েছিল। শুরু হয়েছিল গ্রিক ও তুর্কি স্থাপত্যশৈলী ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ। যেখানে ভেনিসের নাগরিক শৈলী এর উপরেও তার যথেষ্ট প্রভাব ছিল।





পঞ্চদশ শতকে অটোমান তুর্কিদের পূর্ব ইউরোপীয় ভূখণ্ডে আধিপত্য স্থাপন ইউরোপের সংস্কৃতি জগতকে প্রভাবিত করেছিল। লিভার বা ভূমধ্যসাগরের তীরে গ্রিক ভাষা শিক্ষকরা 1453 ঘটনায় বিতাড়িত হয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে চলে আসে এবং সেখানকার হিউম্যানিস্ট দের শিক্ষার কাজে সহায়ক হয়েছিলেন। মেনুয়াল ক্লাইসোলোরোম ইতালির মানবতাবাদীদের গ্রিক ভাষা শিখেছিলেন। জর্জিয়া হারমোনিসোস ফ্রান্সের এই ভূমিকা পালন করেছিলেন আর রেনুন্সিও কবিরা কনস্টান্টিনোপল থেকে পশ্চিম সার্বিয়া এবং ডালমাসিয়াতে গিয়ে সংস্কৃতি চর্চা বজায় রেখেছিলেন। হ্যান্সব্যারন লিখেছেন যে বাইজেনটিয়াম এর রিফিউজি স্কলাররা মৌলিক সাহিত্য পুথি সরবরাহ করে সংস্কৃতির জগৎ কে আলোকিত করেছিলেন।




1453 ঘটনা ইউরোপীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল। ভারত ও প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এবং1453 এরপর এই বাণিজ্যেও অটোমান তুর্কিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তবে সমগ্র পঞ্চদশ শতক ও ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে এই বাণিজ্যের পরিকাঠামোগত কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। পূর্ব এশিয়ার মালাক্কা, কালিকট বন্দর মারফত মসলা বাণিজ্য ওরমুজ, বেইরুট অথবা এডেন, আলেকজান্দ্রিয়া হয় ভূমধ্যসাগর ও সেখান থেকে ইউরোপের বাজারে পৌঁছত। এক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরের আরব তুরস্ক মিশর ও ভেনিসের বণিকের সকলেই লাভবান হতেন, এবং সবাই মিলে এই বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।1453 এ অটোমান তুর্কিরা এডেন বন্দর দখল করে নেওয়াই লোহিত সাগর কার্যত তুর্কি হ্রদে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অধিকার করে নেওয়াই একদিকে যেমন ভেনিসের বাণিজ্য পতনের মুখে পড়ে তেমনি ভূমধ্যসাগরীয় মসলা বাণিজ্য তার একত্রিত ছেড়ে পরোক্ষভাবে আটলান্টিক কেন্দ্রিক দ্বিমাত্রিক বাণিজ্যে পরিণত হয়েছিল।





কনস্টান্টিনোপলের পতনের প্রায়ই সমকালীন ঘটনা ছিল সামরিক অভিযানের প্রয়াস যা পরবর্তীকালে ইতিহাসের গতিমুখ পাল্টে দিয়েছিল। ভৌগোলিক আবিষ্কার বাণিজ্যের প্রসার এবং উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তুর্কি আক্রমণ এ ইটালি ওদের অংশগ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তি তাতে সাফল্য লাভ করেছিল।




বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে ইউরোপের সর্বজনীন সাম্রাজ্যের ধারণা শেষ হয়ে যায় শুরু হয় “জাতি রাজ্যের” উন্থানের যুগ । সামন্ততন্ত্রের তাগিদে একাধিক রাজ শক্তির উদ্ভব ঘটেছিল আর বানিজ্য সম্পদের উপর সামন্ততন্ত্রের লোভের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য বণিক গোষ্ঠী রাজতন্ত্রের শরণাপন্ন হয় রাজকোষ পূর্ণ হবার আশায় রাজ শক্তি ও তাদের সমর্থন করেন।




 নরম্যান ডেভিস অবশ্য ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই ঘটনার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি দেখেছেন যে তুর্কিদের1453 এর পরবর্তী অভিযান গুলি বিক্ষিপ্তভাবে ক্রুসেডীয় চেতনাকে জাগ্রত রেখেছিল। প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম সংস্কারের সময় খ্রিষ্টান ডোমের ধর্মীয় বিভেদ কে বজায় রেখেছিল এবং পশ্চিমী রাজশক্তিকে পূর্ব ইউরোপ সম্পর্কে চিন্তাগ্রস্থ রেখেছিল এবং তুর্কিদের শিল্প-সংস্কৃতির আকর্ষণে ইউরোপীয়রা প্রথম ওরিয়েন্টালিজম বা প্রাচ্যবাদী এর স্বাদ পেয়েছিল।
















Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *