গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রের উদ্দেশ্য কি ছিল
ভূমিকা:
ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার খ্যাতনামা চিত্র ও কার্টুন শিল্পী ছিলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের সদস্য এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর । ভারতীয় চিত্রশিল্প যখন পাশ্চাত্যের দাপটে অতিমাত্রায় প্রভাবিত তখন রাজা রবিবর্মা ছাড়া প্রাচ্যের শিল্পজগতে যাঁরা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর । তিনি অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে যৌথভাবে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ্ ওরিয়েন্টাল আর্ট প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যঙ্গচিত্রের উদ্দেশ্য:
1) সুকুমার চিত্রাঙ্কনের সঙ্গে ব্যঙ্গ-চিত্রকলাতেও গগণেন্দ্রনাথ পারদর্শীতার পরিচয় রাখেন। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপলক্ষ্য করে তিনি ব্যঙ্গ-চিত্র অঙ্কন করেন।
2) শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি, পণ প্রথা, ধর্মীয় কুসংস্কার, নারী প্রগতি, সাহেবিয়ানা, অসহযোগ আন্দোলন প্রভৃতি বিষয়ের পাশাপাশি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ, চিত্তরঞ্জন, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অ্যানি বেসান্ত প্রমুখ ব্যক্তিদের নিয়ে ব্যঙ্গ-চিত্র তিনি অঙ্কন করেছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় ব্যঙ্গ-চিত্র সংকলন ‘অদ্ভূত লোক’ মুদ্রিত হয়েছিল তাঁর প্রতিষ্ঠিত লিথো মেশিন দ্বারা।
3) বঙ্গীয় ঘরানার শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ তাঁর বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্রে তৎকালীন ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিন খণ্ডে প্রকাশিত ‘অদ্ভুত লোক’ (১৯১৫ খ্রি.), ‘বিরূপ বস্তু’ (১৯১৭ খ্রি.) এবং ‘নয়া হুল্লোড় (১৯২১ খ্রি.)।
5) গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্রগুলি সমাজে ধনী ও অভিজাত শ্রেণির ক্রিয়াকলাপ। এগুলিতে বাঙালিয়ানার প্রভাব খুব স্পষ্ট। তৎকালীন বঙ্গীয় সমাজে একশ্রেণির বাঙালি নিজেকে পাশ্চাত্যের অনুরাগী হিসেবে জাহির করতে ভালোবাসত। এরূপ একটি বিষয় গগনেন্দ্রনাথ তাঁর একটি কার্টুনে ফুটিয়ে তুলেছেন।
6) ইউরোপীয়দের সান্নিধ্য পেতে উদ্গ্রীব বঙ্গীয় সমাজের একটি শ্রেণির চিত্র ফুটে উঠেছে গগনেন্দ্রনাথের আর একটি চিত্রে যেখানে একজন বাঙালি নারী বাংলার শাড়ি এবং ইউরোপের জুতো পরে ইউরোপীয় পুরুষের সঙ্গে নৃত্য করছেন। ‘খল ব্রাহ্মণ’ চিত্রটিতে দেখা যায়, জনৈক ব্রাহ্মণ ধর্মের প্রতি অনুরাগের পরিবর্তে মাংস, মদ ও মহিলায়অনুরক্ত।
7) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান ক্লাব আই. এফ. এ. শিল্ড জিতলে বাঙালির রক্তে ফুটবলপ্রীতি তীব্র হয়ে ওঠে। এই বিষয়টিও গগনেন্দ্রনাথ তাঁর ব্যঙ্গচিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেখানে দেখা যায়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দর্শকরা ছাতা মাথায় খেলা দেখছে। কিন্তু গোলপোস্ট বা বল কোথায়? এইভাবে গগনেন্দ্রনাথ তাঁর বিভিন্ন চিত্রে ঔপনিবেশিকতার সমালোচনা ও স্বদেশপ্রেম ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।