StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

সুলতানি যুগের স্থাপত্যের উপর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও

সুলতানি যুগের স্থাপত্যের উপর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। অথবা, সুলতানী যুগের স্থাপত্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ভারতে ইসলাম শুধু তার শস্ত্র ক্ষমতা নিয়েই আবির্ভূত হয়নি, শাস্ত্রের নানা ধারাও বহন করে এনেছিল। শিল্পকলাও এর ব্যতিক্রম নয়। হিন্দুসভ্যতা অন্যান্য বহিরাগতদের (শক, হন, ব্যাকট্রিয়, কুষাণ) আত্মস্থ করলেও ইসলামের জীবনীশক্তি ও স্বকীয়তার জন্য ইসলামকে আত্মস্থ করতে পারেনি। তথাপি দীর্ঘকাল পাশাপাশি অবস্থানের ফলে উভয় সভ্যতার শিল্পকলার ক্ষেত্রে বিশেষত স্থাপত্যের ক্ষেত্রে একটা আদান-প্রদান লক্ষ্য করা যায়। এভাবেই ইন্দো-ইসলামীয়’ শিল্পকলার উদ্ভব হয়। তবে একটি’র কোনটি অন্যটিকে বেশি প্রভাবিত করেছিল—বিষয়টি তর্কসাপেক্ষ। হ্যাভেল মনে করেন, সুলতানী শিল্পরীতি ও দেহে ও মনে ছিল একান্তই ভারতীয়। তিনি বলেছেন, ভারতে সুলতানি রাজত্বে যেসব সূচালো শীর্ষদেশযুক্ত খিলান নির্মিত হয়েছিল সেগুলি পশ্চিম এশিয়ার বৌদ্ধ কাঠামোগুলির সঙ্গে আরব দেশের স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ।
অশ্বক্ষুরাকৃতি যে খিলানগুলিকে ভারতীয় মসজিদগুলির আবশ্যিক অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেগুলিরও হাজার বছর পূর্বে ভারতেই জন্ম হয়েছিল বলে হ্যাভেল মতপ্রকাশ করেন। তবে কৌশাম্বী ও উড়িষ্যা ব্যতীত এই শৈলীর কোনো অস্তিত্ব আর অন্য কোথাও দেখা যায় না। এই কারণে বলা হয়ে থাকে, গম্বুজ ও খিলানের নির্মাণ সুলতানি আমলেই এদেশে শুরু হয়। তবে প্রাচীন ভারতে মন্দিরের প্রাচীরের গা থেকে উদগত বাহুর (Bracket Capital) উপর ছাদ ধরে রাখার যে শৈলী দেখা গিয়েছিল সুলতানি আমলেও তা কিছুটা অনুসৃত হয়। অবশ্য কেউ কেউ মনে করেন, এই জাতীয় স্থাপত্য অনেক পূর্বে বৌদ্ধপর্বে পারস্য থেকে ভারতে এসেছিল।
অন্যদিকে ফার্গুসন, স্মিথ প্রমুখ মনে করেন, সুলতানি আমলের স্থাপত্যে হিন্দুরীতির নেতিবাচক প্রভাব ছিল। মার্শাল, রমেশচন্দ্র মজুমদাররা আবার মনে করেন, ইন্দো-ইসলামীয় শিল্পরীতি ইসলামীয় রীতির স্থানীয় রূপ বা হিন্দু-স্থাপত্যের রূপান্তরিত রূপ ছিল না-এর মধ্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন শিল্পরীতির সাথে সাথে বহিরাগত পশ্চিম, মধ্য-এশিয়া এমনকি উত্তর আফ্রিকার শিল্পরীতির আশ্চর্য সংমিশ্রণ ঘটেছিল।
ইসলামীয় স্থাপত্যের সঙ্গে ভারতীয় স্থাপত্যের সংমিশ্রণের একটি পটভূমি ছিল। প্রাচীন ভারতে পারস্য (ইরান) ও ভারতীয় শিল্পীদের ভাবনার সংমিশ্রণ ঘটেছিল। উপরন্তু তুর্কি সুলতানরা ভারতীয় কারিগরদের স্থাপত্য নির্মাণে নিয়োগ করায় ভারতীয় ও ইসলামীয় স্থাপত্যের সংমিশ্রণ ঘটে। পার্সি ব্রাউন বলেছেন, সুলতানি স্থাপত্যের কাজে অভিজ্ঞ ও দক্ষ হিন্দু কারিগরদের নিয়োগ এবং ভারতে স্থাপত্য নির্মাণের উপযোগী।
উপাদানের প্রাচুর্যের কারণে ইসলামীয় স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলি ভারতে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও মুসলিম শাসকরা প্রথমদিকে হিন্দু বা বৌদ্ধমন্দিরগুলির ভগ্নাবশেষকে সংস্কার করে স্থাপত্য নির্মাণে ব্যবহার করলে এগুলিতে ইসলামীয় স্থাপত্যরীতি মিশে যায়। অনেকক্ষেত্রে হিন্দু-বৌদ্ধ মন্দিরগুলির উপরের অংশ ভেঙেও ইসলামীয় রীতিতে গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। তুর্কি আমলের প্রথমদিকে এভাবে হিন্দু-বৌদ্ধ স্থাপত্য নিদর্শন ভেঙে খিলান ও গম্বুজ নির্মাণ করা হলে মসজিদগুলিতে ভারতীয় শিল্পধারা বর্তমান থেকে যায়।
 
অল্পকালের মধ্যেই মুসলিমরা হিন্দু-শিল্পের পার্থিব সৌন্দর্য্যকে গ্রহণ করেন এবং ইসলামীয় স্থাপত্যের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে এক নতুন স্থাপত্যরীতির জন্ম দেন। সুলতানী আমলের মাঝামাঝি সময় থেকে এই ইসলামীয় স্থাপত্যধারা ‘ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্য’ বা ইন্দো-সারাসেনীয় স্থাপত্য’ ইত্যাদি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সরসীকুমার সরস্বতী ভারতে সমন্বয়ী আদর্শের মধ্যেই উন্নততর মুসলিম স্থাপত্যের উৎস খুঁজে পেয়েছেন।
তুর্কো-আফগান যুগ বা সুলতানি যুগের স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল—এতে চুন, বালি ও জলের মিশ্রণে ‘আস্তর’ তৈরির কৌশল। পূর্বে ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীতে এটি অজ্ঞাত ছিল। ভারতীয় স্থপতিরা কংক্রিটের ব্যবহার জানতেন না। ভারতীয়দের স্থাপত্য-কৌশল ছিল পাথরের উপর পাথর বসিয়ে দেওয়াল তৈরি করে এর মাথায় বীম বসিয়ে সৌধটিকে আচ্ছাদিত করা। হিন্দু স্থাপত্যশৈলীতে গর্ভগৃহ, স্তম্ভ, চূড়া, আয়তাকার প্রবেশদ্বার, অলঙ্করণের প্রচলন ছিল।
সুলতানী স্থাপত্যরীতিতে খিলান ও গম্বুজের ব্যবহার শিল্পরীতিতে নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে। সতীশচন্দ্র অবশ্য মনে করেন, রোম-আরব-বাইজান্টাইনদের কাছ থেকে ইসলাম খিলান ও গম্বুজের ব্যবহার আয়ত্ত্ব করেছিল। ইসলামীয় পর্বে খিলান ও গম্বুজ ব্যবহারের ফলে বড় হলঘর বা প্রশস্ত গৃহকক্ষ নির্মাণ সম্ভব হয়। ইসলাম ধর্মে সমবেত প্রার্থনার প্রয়োজনীয়তা থেকে বড় হলঘর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।
সুলতানি স্থাপত্যরীতিতে অলঙ্করণের ক্ষেত্রে একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য ছিল। ইসলামীয় অনুশাসনে জীবিত প্রাণীর প্রতিকৃতি আঁকা নিষিদ্ধ ছিল। তাই তুর্কি-আমলে সৌধসমূহে অলঙ্করণের জন্য জ্যামিতিক চিত্র, লতাপাতার নক্সা এবং কোরাণের বাণীর সম্মিলন ব্যবহার করা হত। তুর্কিরা এর সঙ্গে স্বস্তিকা, পদ্মফুল, ঘন্টা প্রভৃতি ভারতীয় প্রতীকসমূহ অলঙ্করণে যুক্ত করে নেন। এইভাবে সুলতানি স্থাপত্যরীতিতে হিন্দু-বৌদ্ধ শিল্পরীতি এবং ইসলাম কর্তৃক বাহিত পারসিক শিল্পরীতির একটা সংমিশ্রণ ঘটে যায় ।

1 thought on “সুলতানি যুগের স্থাপত্যের উপর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top