StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

মুঘল স্থাপত্যের প্রকৃতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

মুঘল স্থাপত্যের প্রকৃতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

 

ভারতের ইতিহাসে মুঘল আমল শুধু রাষ্ট্রনৈতিক ও প্রশাসনিক কারণেই উল্লেখযোগ্য নয়, স্থাপত্যশিল্পের ক্ষেত্রেও মুঘলরা এক উন্নতমানের ও পরিশীলিত শিল্পের নিদর্শন রেখে যান। মুঘল স্থাপত্য নির্মাণগুলিতে এমন কতগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় যার দ্বারা এটিকে একটি বিশেষ স্বতন্ত্র শিল্পশৈলী বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। বাগদাদ, পারস্যের ঐতিহ্য, গজনী-আফগানিস্থান হয়ে মুঘলরা ভারতের সমতলভূমিতে বহন করে এনেছিলেন ভারতীয় ও তুর্কিদের সংমিশ্রণে উদ্ভূত এক নতুন শিল্পধারার সঙ্গে বাগদাদ-পারস্য রীতির সংমিশ্রণে মুঘলরা যে স্থাপত্যরীতি প্রবর্তন করেন তাকে কেউ কেউ ‘মুঘলশৈলী’ বলে চিহ্নিত করার পক্ষপাতী।

ফার্গুসন মুঘল স্থাপত্যকে পারসিক ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত বলে মতপ্রকাশ করেছেন। যাঁরা মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে বৈদেশিক প্রভাব লক্ষ্য করেন, তাঁদের মতে স্থাপত্য নিদর্শনে গম্বুজের ব্যবহার যা মুঘল স্থাপত্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য তা হিন্দু শিল্পধারার অনুসারী নয়, বরং বাগদাদের শিল্পধারা থেকে আহরিত। এইমতের সমর্থক এডওয়ার্ড ও গ্যারেট মন্তব্য করেছেন, মুঘল যুগের বহু স্থাপত্যকর্মে বিশেষত বাবর ও হুমায়ুনের শাসনকালে নির্মিত প্রাসাদগুলিতে বিদেশী ও স্বতন্ত্র মুসলিম শিল্পরীতির প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট।

শিল্প বিশেষজ্ঞ হ্যাভেল মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে বহিরাগত প্রভাবকে নগন্য বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, ভারতবর্ষ চিরকালই বহিরাগত  ভাবধারাকে ধারণ করতে অভ্যস্ত। মুঘল শিল্পকলায় কিছুটা পারসিক প্রভাব অসম্ভব নয়, কিন্তু মুঘল স্থাপত্যের মূল শিকড় ভারতীয় রীতির মধ্যেই গ্রথিত ছিল। আধুনিক স্থাপত্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মুঘল স্থাপত্যশিল্পকে বিশেষ কোনো স্বতন্ত্র শিল্পধারা না বলে পারসিক ও ভারতীয় শিল্পধারার সমন্বয়ে সৃষ্ট বলে মনে করেন। যেহেতু এই ধারাবাহিকতা সুলতানী আমল থেকেই বহমান ছিল, তাই ‘মুঘল স্থাপত্যশৈলী’ বলে স্বতন্ত্র কোনো শৈলীকে চিহ্নিত করার তারা পক্ষপাতী নন।

জন মার্শাল বলেছেন—‘ভারতীয় মুসলমানী শিল্পরীতিকে মুসলমানী রীতির এক ভারতীয় সংস্করণ বা হিন্দুরীতির কোনো পরিবর্তিত অংশবিশেষ বলা যায় না’। প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় মুসলমানী স্থাপত্যরীতি হিন্দু ও মুসলমান স্থাপত্যরীতি—উভয়ের দানেই পরিপুষ্ট। আরব, পারস্য, তুরস্ক, উত্তর আফ্রিকা প্রভৃতি মুসলিম দেশসমূহ থেকে আগত শিল্পরীতি ভারতীয় রীতির সঙ্গে সংমিশ্রিত হয়ে যে নতুন শিল্পধারার প্রবর্তন ঘটে, তাই মুঘল যুগে ভারতীয় শিল্প-স্থাপত্যরীতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ভারতের প্রত্যেক প্রদেশের স্থানীয় বিশেষ রীতির সঙ্গে এই স্থাপত্যরীতি যুক্ত হয়ে আবার এক-একটি বিশেষ রূপ লাভ করে। জৌনপুর, বাংলা, বিজাপুর, গুজরাট প্রভৃতি প্রদেশের স্থাপত্যরীতিতে এইরূপ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। প্রসঙ্গত, হিতেশরঞ্জন সান্যাল বাংলার শিল্পরীতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন—পশ্চিম এশিয় স্থাপত্যের একটি উপকরণ বাংলার আঞ্চলিক মুসলিম স্থাপত্যে লক্ষ্য করা যায়। এটি ছিল সৌধের কোণে বা পাশে সংযুক্ত গুরুভার, স্থূল স্তম্ভ। এর উপর বসানো হত পশ্চিম এশীয় আদলে গড়া ক্রমহ্রাসমান চূড়া। এর ফলে বাংলার মসজিদগুলি হয়ে উঠেছিল বাংলার আঞ্চলিক স্থাপত্য রূপ ও পশ্চিম এশীয় স্থাপত্য কৌশল ও উপকরণের সমন্বয় ক্ষেত্র। ঐতিহাসিক ঈশ্বরীপ্রসাদ মুঘল স্থাপত্যশিল্প সম্পর্কে বলেছেন, এক্ষেত্রে ‘মুঘল রীতি’ বলে কিছু ছিল না।

মুঘলরা ভারতে প্রচলিত শিল্পরীতিকেই পরিশীলিত করেন মাত্র। মুঘল যুগের প্রাথমিক পর্বের স্থাপত্যশিল্পে—হুমায়ুন ও আকবরের আমলে স্থাপত্যে পারসিক প্রভাব কিছুটা বেশি ছিল। আবার আকবরের আমলে পারসিক প্রভাব হুমায়ুনের আমলের তুলনায় ছিল কম। জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের আমলে পারসিক প্রভাব ভীষণভাবে হ্রাস এবং প্রকৃত অর্থে ভারতীয় শিল্পধারার নবজাগরণ ঘটে। মুঘল শিল্পরীতিতে মুসলিম ভাবধারা কতটা ছিল, অথবা ভারতীয় ভাবধারায় বা কতটা ছিল তার পরিমাপ করা অত্যন্ত দুরূহ। কেমব্রিজ হিস্ট্রি অফ্ ইন্ডিয়াতে মন্তব্য করা হয়েছে—’broadly speaking Indo-Islamic architecture derives its character from both sources, though not al ways in an equal-degree’।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top