হিস্ট্রি ও ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য
‘ইতিহাস’ বা ‘History একটি গ্রিক শব্দ । এর অর্থ হল অনুসন্ধান, গবেষণা, আবিষ্কার বা সংবাদ। গ্রিকরাই প্রথম ইতিহাসের সংজ্ঞা নিরূপণের চেষ্টা করেন। গ্রিকরা মনে করতেন ইতিহাস হল মানবজাতির পূর্ব অভিজ্ঞতার নিখুঁত উদাহরণ এবং এর একটি সার্বিক বা বিশ্বজনীন প্রয়োজনীয়তা ও মূল্য আছে।
সাধারণভাবে আমরা ইংরাজী শব্দ ‘হিস্ট্রি’ অর্থে ‘ইতিহাস’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি।` উল্লেখ্য, গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস ‘হিস্ট্রি’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন এবং তারপর থেকে ধীরে ধীরে এর বহুল ব্যবহার শুরু হয়।
যে অতীতের কোনো বিষয় বা ঘটনা তা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক যাইহোক না কেন, সে সম্পর্কে আলোচনা ও চর্চার জন্য যে বিদ্যা আমরা অধ্যয়ন করি তা ভারতবর্ষে বাংলা ও অন্যান্য কয়েকটি ভাষায় ইতিহাস নামে পরিচিত। ‘ইতিহাস’ নামক এই বিদ্যাটি ইংরাজী ‘হিস্ট্রি’ নামক বিদ্যাটির সঙ্গে অভিন্ন বলেই ধরা হয়। কারণ এই দুটি বিদ্যার উদ্দেশ্য ও চর্চার ধারা প্রায় এক। এখানে অবশ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ইংরাজী ‘হিস্ট্রি’ শব্দটির নিছক অনুবাদ ইতিহাস নয়।
এতদ্সত্ত্বেও আধুনিককালে ‘হিস্ট্রি’ ও ‘ইতিহাস’-এর মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এখানে যেটা জোর দিয়ে বলা দরকার তা হল প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে অতীত তথা ইতিহাস সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল ; তবে সেই ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিককালের ইতিহাস বা হিস্ট্রির সঙ্গে অভিন্ন নয়। এখানে প্রাচীনকালের পুরাণ নির্ভর ইতিহাস অধ্যয়ন (ওপরে আলোচিত)-এর সঙ্গে ঔপনিবেশিক আমলে
ভারতবর্ষে শুরু হওয়া পাশ্চাত্য ধারায় অতীত ঘটনার বিচার ও রীতিনীতির পার্থক্যকে বুঝতে হবে। বস্তুত, আধুনিককালের হিস্ট্রি বা ইতিহাস তথা অতীত চর্চার সঙ্গে প্রাচীন ভারতের অতীত তথা ইতিহাস সংক্রান্ত চিন্তাধারার মূলগত পার্থক্য রয়েছে। কেননা, বর্তমান যুগে অতীতকে অনুধাবন করার জন্য যেসব পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয় যেমন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমা, কালানুক্রম, নির্ভরযোগ্য তথ্য বা আকর উপাদানের বিচার বিশ্লেষণ প্রভৃতি সেগুলি প্রাচীন ভারতে অতীত তথা ইতিহাস চিন্তায় ছিল প্রায় অনুপস্থিত।