StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

Bengal school of art (বেঙ্গল স্কুল অব্ আর্ট ) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

Bengal school of art (বেঙ্গল স্কুল অব্ আর্ট ) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অথবা,

বাংলার শিল্পরীতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

১৮৯০-র দশক থেকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ধারণায় একটি নতুন প্রবণতা যুক্ত হয়। “সম্পদ নির্গমণের তত্ত্ব’ইতিপূর্বে শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মনে ব্রিটিশ শাসনের শোষণমূলক দিকটি সম্পর্কে সচেতন করে। বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতা ভারতীয় যুবসমাজের মধ্যে নতুন করে স্বাজাত্যবোধের জাগরণ ঘটায়।
হ্যাভেল আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে এলে ভারতের প্রাচীন শিল্পকলার পুনরুদ্ধারের বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়। হ্যাভেলের আগেই ভারতীয় শিল্পের ঐতিহ্য উদ্ধারে নিমগ্ন হয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। তিনি ১৮৯০-র দশকেই চিত্রশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হন। আর্ট কলেজের সহকারি-অধ্যক্ষ পামার এবং ইটালির শিল্পী গিলার্দির (Gillardi) কাছে তিনি ইউরোপীয় চিত্রাঙ্কন পদ্ধতি আয়ত্ত্ব করেন।
১৮৯৫ সালে রাজপুত চিত্রের একখানি চিত্রসংগহ দেখে তিনি অত্যন্ত প্রভাবিত হন। ১৮৯৫ সালেই তিনি চণ্ডীদাসের পদাবলী অবলম্বন করে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার বিষয় নিয়ে যে ‘কৃষ্ণলীলা’ চিত্রমালা রচনা করেন, তার মধ্যে আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলায় ইউরোপ-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র একটি ভাষ্য ফুটে ওঠে। হ্যাভেলের প্রতি অবনীন্দ্রনাথের অসীম শ্রদ্ধা ছিল। প্রত্যক্ষভাবে হ্যাভেলের ছাত্র না হলেও তিনি হ্যাভেলকে ‘গুরু’ বলে মানতেন এবং হ্যাভেলও তাঁকে তাঁর ‘কোলাবোরেটর’ (সহযোগী) বলতেন। অধ্যাপক হ্যাভেল অবনীন্দ্রনাথের ‘কৃষ্ণলীলা’ চিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ১৯০৬ সালে তাঁকে সরকার আর্ট স্কুলে সহকারি অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করেন। হ্যাভেল ও অবনীন্দ্রনাথের যুক্ত প্রচেষ্টায় প্রাচ্যরীতির শিক্ষাধারার পরিপূর্ণ স্ফূরণ ঘটে কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে।
কলকাতা আর্ট স্কুলের সহ-অধ্যক্ষ থাকাকালীন অবনীন্দ্রনাথ কালিদাসের ‘ঋতুসংহার’ (১৯০০), মৃত্যুসজ্জায় শাহজাহান’ (১৯০৩) প্রভৃতি চিত্রাবলী অঙ্কন করে ভারতীয় অতীতের প্রতি দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা করেন। ভারতশিল্পের ‘ষড়ঙ্গ তত্ত্ব’ এইসময় তিনি পাঠ করেন। প্রবাসী সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় অবনীন্দ্রনাথের অঙ্কিত চিত্রগুলি তাঁর পত্রিকায় প্রকাশ করার ব্যবস্থা করলে ভারতীয় বিদগ্ধ মহলেও ‘ভারতশিল্প’-র পুনরুদ্ধারের জন্য একটা আগ্রহ তৈরি হতে থাকে।
বিংশ শতকের প্রথম দশক থেকেই ‘স্বদেশ’ বিষয়টি ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের উদ্বুব্ধ করতে থাকে। ১৮৯০-র দশকেই নবজাগরণের মধ্যে স্বদেশ সন্ধানের প্রবণতা গভীরতর হচ্ছিল। ১৯০২ সালে জাতীয় শিক্ষার অভিযান শুরু হয়। ঐ বছরই জাপানী শিল্পতাত্ত্বিক ও মনিষী ওকাকুরা ভারতে আসেন। শিল্পে ইউরোপীয় আদর্শের বিপরীতে এশিয়ার নিজস্ব ঐতিহ্যের ভিত্তিতে এক শিল্প-আদর্শ গড়ে তুলতে তিনি ভারতীয়দের উদ্বুদ্ধ করেন। ‘Ideals of the East’ নামে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যার ভূমিকা লিখেছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে আনন্দ কুমারস্বামী ভারতে আসেন এবং মূলত ভগিনী নিবেদিতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকদের পরিবর্তে ভারতীয় শিল্পীদের চর্চার মাধ্যমে ‘ভারতশিল্প’-র পুনরুদ্ধারের জন্য মতপ্রকাশ করেন।
অবনীন্দ্রনাথ চিত্রকলায় প্রাচ্য পরিমণ্ডল তথা স্বদেশের যে সন্ধান করেছিলেন সেই ধারাটিকে শক্তিশালী করার জন্য নন্দলাল বসু এবং যামিনী রায়কে আর্ট স্কুলের ছাত্র হিসেবে নিয়ে আসেন। এইভাবে ১৯০৫-০৬ সালের মধ্যে ভারতীয় শিল্পকলার অতীত অনুসন্ধানের যাত্রা শুরু হয়। ১৯০৫ সালেই বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে একটি তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হন শিল্পীরা। সাহিত্য ও সঙ্গীতের মতই শিল্পেও স্বদেশচেতনা গভীরতর মাত্রা পায়। এর কিছু আগেই ১৯০৩-০৪ নাগাদ অবনীন্দ্রনাথ ‘ভারতমাতা’ এঁকেছিলেন।
স্বদেশিকতার তীব্র আবেগ ছিল এই ছবি। আনন্দ কুমারস্বামী কলকাতায় আসেন ১৯০৬-র শেষে। ১৯০৮ সালে বউবাজারের আর্ট কলেজে তিনি ‘ভারতশিল্প’ নিয়ে কয়েকটি বক্তৃতা দেন। ১৯০৯-এ প্রকাশিত হয় তাঁর গ্রন্থ ‘Essays on National Idealism’। ১৯১২ সালে প্রকাশিত হয় ‘Art and Swadeshi”।
ভারতীয়তা তথা প্রাচ্যচেতনার তাত্ত্বিক ভিত্তি স্থাপিত হয়। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রবাসী’ এবং ইংরেজি ‘মডার্ন রিভিউ’ এই দুটি মাসিক পত্রিকা ‘নব্য-ভারতীয় রীতি’-র প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এইভাবে স্বদেশচেতনা-সঞ্জাত ভারতীয় শিল্পকলার যাত্রা শুরু হয় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি বাংলাকে কেন্দ্র করে। ভারতীয় শিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য এই উদ্যোগ একদল শিল্পীর শিল্পকর্মের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠতে থাকে। এটিই ‘বেঙ্গল স্কুল অব্ আর্ট’ বা ‘বাংলা শৈলী’ নামে প্রাথমিকভাবে পরিচিত হয়। তবে বাংলা থেকে দ্রুত এই স্বদেশচেতনাপুষ্ট শিল্পধারা ভারতের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাই এটিকে পরবর্তীকালে ‘নব্য-ভারতীয় শিল্প ঘরানা’-র ‘প্রাথমিক রূপ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভারতশিল্পে স্বদেশচেতনা-সঞ্জাত আধুনিকতার এই যে ধারা গড়ে উঠেছিল তার নান্দনিক ভিত্তি তৈরি হয়েছিল হ্যাভেল, ভগিনী নিবেদিতা, অরবিন্দ ঘোষ, আনন্দ কুমারস্বামী ও ওকাকুরার চিন্তার মধ্যে দিয়ে। অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতমাতা’-র চিত্রের মধ্যে দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক প্রারম্ভকে চিহ্নিত করা যায়। ঔপনিবেশিকতা ভারাক্রান্ত যান্ত্রিক আধুনিকতার বিরুদ্ধে ভারতীয়-প্রাচ্যের আধুনিকতার ভিত্তি হিসেবে প্রাচীন ভারতের মরমী আধাত্ম্য-চেতনা এবং মধ্যযুগীয় সারল্য ও সুষমাকে আশ্রয় করে ভারতীয় শিল্প ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়াও যেসব শিল্পীরা অবদান রাখেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন নন্দলাল বসু, অসিতকুমার হালদার, সুনয়নী দেবী, মনিষী দে, মুকুল দে, ক্ষিতিন্দ্রনাথ মজুমদার, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী, গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। বাংলার বাইরে এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যান কে. ভেঙ্কাটাপ্পা (মহীশূর), মহম্মদ আব্দুর রহমান চুঘতাই (লাহোর) প্রমুখ।
মূল্যায়ন :
স্বদেশ-চেতনা আশ্রিত আধুনিক ভারতীয় চিত্রধারাকে ‘বেঙ্গল স্কুল’ অফ্ আর্ট বলে অনেকে চিহ্নিত করেন। কারণ এর সূচনা হয়েছিল বাংলায়। কিন্তু কেউ কেউ ‘বেঙ্গল স্কুল’ নামটি সম্পর্কে আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের মতে, ঊনবিংশ শতকে ব্রিটিশ ‘অ্যাকাডেমিক রীতি’-র অনুষঙ্গে বাংলায় গড়ে উঠেছিল দেশীয় জীবন ও পুরাণ আশ্রিত একটি চিত্রধারা। এটিকেই ‘বেঙ্গল স্কুল’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। ১৮৯৫ থেকে স্বদেশ-চেতনায় অন্বিত যে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে তাকে ‘নিও-বেঙ্গল স্কুল’ বা ‘নব্য-বঙ্গীয় ধারা’ বলে চিহ্নিত করা হয়। আবার ‘নিও-বেঙ্গল স্কুল’ নামকরণটি সম্পর্কেও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কারণ বাংলায় এর সূচনা হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তা সারাভারতে ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বভারতীয় আধুনিকতাকে প্রভাবিত করে। তাই একে ‘নিও-ইণ্ডিয়ান স্কুল’ বা ‘নব্য-ভারতীয় ঘরানা’ তারা অভিহিত করার পক্ষপাতী। সন্দীপ সরকার ‘দ্য নিও ইণ্ডিয়ান স্কুল ইন্‌ রেট্রসপেক্ট” নামক প্রবন্ধে এই মতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top