রাতের মানুষ
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
-গল্প
ঝুলনপূর্ণিমার রাতে গঞ্জের মেলায় ছোটোমামার সঙ্গে কলকাতার যাত্রা দেখতে গিয়েছিলুম। সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি পড়ছিল। ফেরার সময় দেখি আকাশ ফাঁকা। ঝলমলে চাঁদ কাত হয়ে বাদবাকি জ্যোৎস্না ঢেলে নিজেকে খালি করে দিচ্ছে। রাস্তা শুনশান ফাঁকা। মানুষজন মেলায় রাত কাটাতেই আসে। কিন্তু ছোটোমামা খুঁতখুঁতে মানুষ। ঘুম পাচ্ছে বলেই যেখানে সেখানে শুয়ে পড়তে হবে নাকি? মোটে তো পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা। চলে আয় পুটু।’
ঘুম ঘুম চোখে রাস্তা হাঁটা বেশ কষ্টকর। তা ছাড়া ছোটোমামার চেয়ে আমার পা দুটো বড্ড বেশি ছোটো। বার বার পিছিয়ে পড়ছি আর ধমক খাচ্ছি।
হঠাৎ রাস্তার বাঁকের মুখে গঞ্জের শেষদিকটায়
একটা সাইকেল-রিকশো দেখা গেল। রিকশোটা দাঁড়িয়েই ছিল। তবু ছোটোমামা চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘রোখকে। রোখকে।’ রিকশোওয়ালা হেসে অস্থির। ‘রুখেই তো আছি বাবুমশাই! যাওয়া হবে
কোথায়??
আমারও হাসি পাচ্ছিল। ছোটোমামার সবকিছুই অদ্ভুত। তো আমরা ঝাঁপুইহাটি যাব শুনে রিকশোওয়ালা খুশি হল। বলল, চলুন! আমি কাছাকাছিই থাকি। ওদিককার প্যাসেঞ্জারের জন্য অপেক্ষা করছিলুম। খালি রিকশো নিয়ে বাড়ি ফেরা পোষায় না।
রিকশোতে উঠে বসে ঘুমটা আমাকে বাগে পেয়েছিল। কিন্তু ছোটোমামার বার বার ধমক এবং ‘পড়ে গিয়ে হাড়গোড় ভেঙে যাওয়ার’ হুমকি ক্রমশ ঘুমটাকে এলোমেলো করে দিচ্ছিল। কিছুদূর চলার পর রিকশোওয়ালা রিকশো থামাল। ছোটোমামা বললেন, ‘কী হল ? চেন খুলে গেল নাকি?’ রিকশোওয়ালা সিট থেকে নেমে বলল, ‘আজ্ঞে না। চক্কোত্তিমশাই হজমিগুলি আনতে দিয়েছিলেন। দিয়ে আসি।’
ছোটোমামা বিরক্ত হয়ে বললেন, “এখানে কোথায় তোমার চক্কোত্তিমশাই?? রিকশোওয়ালা কান করল না। রাস্তার ধারে ঝাঁকড়া একটা গাছের তলায় গিয়ে ডাকল, ‘চক্কোত্তিমশাই! ঘুমোচ্ছেন নাকি?? গাছের ভেতর থেকে খ্যানখ্যানে গলায় কেউ বলল, ‘ঘুমোব কী রে বাবা!
পেট আইঢাই। এত দেরি করলি কেন রে?? ‘প্যাসেঞ্জার পেলে তবে তো আসব। এই নিন হজমিগুলি।’ “এনেছিস? কই, দে দে। শিগগির দে।”
রিকশোওয়ালা কাকে হজমিগুলি দিয়ে এসে সিটে উঠল। প্যাডেলে চাপ দিল।
রিকশোর চাকা গড়াল। ছোটোমামা বললেন, ‘ব্যাপার কী হে রিকশোওয়ালা? তোমার চক্কোত্তিমশাই কি গাছে থাকেন নাকি?
“আজ্ঞে।’
‘অ্যাঁ? গাছে থাকেন কেন??
“ওটাই তো তেনার ডেরা।
“তার মানে?’
‘মানে নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার কী বাবুমশাই? ঝাঁপুইহাটি যাবেন। পৌঁছে দেব। ব্যাস! ছোটোমামা রেগে গেলেন। ‘অদ্ভুত তো তোমার কথাবার্তা। রাতবিরেতে গাছের
ওপর–
রিকশোওয়ালা ওঁকে থামিয়ে দিয়ে বলল, চুপ। চুপ। চক্কোতিমশাইয়ের কানে গেলেই কেলেঙ্কারি। আমার কাছ থেকে ততক্ষণ ঘুমটা কেটে পড়েছে। বরাবর দেখে আসছি, ছোটোমামার সঙ্গে কোথাও রাতবিরেতে বেরোলেই গোলমেলে সব ঘটনা ঘটে। বুঝতে পারি না, রাত এলেই পৃথিবীটা অন্যরকম হয়ে যায়? নাকি ছোটোমামার ভুলেই রাতটা গোলমেলে হয়ে যায়? কিন্তু তারপর তো ছোটোমামা ‘চলে আয় পুঁটে’ বলে শেষ পর্যন্ত উধাও হয়ে যান। ধাক্কাটা সামলাতে হয় আমাকেই। এবার কতদূর গড়াবে কে জানে! বুক ঢিপ ঢিপ করতে লাগল।
। একটু পরে আবার রিকশো দাঁড়াল এবং রিকশোওয়ালা তড়াক করে নেমে গিয়ে ডাক দিল ‘ঠাকরুনদিদি! অ ঠাকরুনদিদি!’ একটা শুকনো গাছের ডাল থেকে নেমে সাদা কাপড়পরা কেউ এদিকে এগিয়ে এল। ‘ভূতু এলি? কখন থেকে পথ তাকিয়ে চোখে ব্যথা ধরে গেল। দোস্তা
এনেছিস তো??
‘না আনলে ডাকছি কেন? এই নিন।’
জল দোস্তা নিয়ে ঠাকরুনদিদি ন্যাড়া গাছটার দিকে চলে গেল। ছোটোমামা গুম হয়ে বসেছিলেন। বললেন, ‘কোনো মানে হয়?? রিকশোওয়ালা আবার চুপচাপ রিকশো চালাতে শুরু করল। কিছুদূর গেছি,
হঠাৎ কোত্থেকে কেউ হেঁড়ে গলায় ডাকল, ‘ভৃতু! অ ভূতু! অ্যাই ভূতো! P
ছোটোমামা চাপাস্বরে বললেন, ‘থেমো না যে-ই ডাকুক!’
একটা কালো বেঁটে লোক ধমক দিল, ‘অ্যাই ব্যাটাচ্ছেলে! কথা কানে যায়
না ?’
রিকশোওয়ালা বলল, ‘রোজ রোজ বাকিতে জিনিস দেবে নাকি?’ ‘দেবে না মানে? ওর বাপ দেবে। এখনও তেষট্টি টাকা, সাতষট্টি পয়সা জমা
আছে খাতায়!’ ‘সে আপনি মামলা করে আদায় করুন গে!
লোকটা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল। বাজে কথা বলিসনে। আসলে তুই যাসনি দত্তর দোকানে। “কী ঝামেলা করছেন বাবু? গাড়িতে প্যাসেঞ্জার আছে দেখছেন না??
লোকটা প্রায় কেঁদে ফেলল, ‘এখন আমি ঘুমোব কী করে? একগুলি আফিং আমাকে এত রাত্তিরে কে দেবে? রিকশোওয়ালা পরামর্শ দিল, শ্মশানতলায় চলে যান। দারোগাবাবুর কাছে
একগুলি পেতেও পারেন।’ ‘ওরে বাবা! মৌতাত ভাঙলে লক-আপে ঢোকাবে।’
‘তাহলে বরঞ্চ পাঁচুর কাছে যান।
‘সে ব্যাটা তো চোর।’
‘চোর বলেই তো বলছি। দারোগাবাবুর কৌটো থেকে দু-একটা গুলি সেই হাতাতে পারবে।
লোকটা কিন্তু কিন্তু করে বলল, ‘তা পাঁচুকে পাচ্ছি কোথায়? ও তো ফেরারি আসামি।’
রিকশোওয়ালা চাপাস্বরে বলল, ‘সন্ধ্যে বেলা পাঁচুকে একপলক দেখেছি। মোড়ল মশাইয়ের তাল গাছের কাছে দাঁড়িয়েছিল। মোড়লমশাই গঞ্জের মেলায়
গেছেন। কাজেই পাঁচু নিশ্চয় তেনার ডেরায় ঘুমিয়ে নিচ্ছে।’ বেঁটে কালো ছায়ামূর্তিটি তখনই উধাও হয়ে গেল। রিকশোওয়ালা প্যাডেলে চাপ দিয়ে বলল, ‘রোজ রাত্তিরে আমার এই এক জ্বালা বাবুমশাই। রাজ্যের লোকের হাজার ফরমাস।’
ছোটোমামা গুম হয়ে বসে আছেন। আমি ভাবছি, হঠাৎ আমাকে ফেলে পালিয়ে না যান। বড্ড বেশি গোলমেলে ঘটনা ঘটছে। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তা বাঁক নিল। এবার দু-ধারেই ঘন জঙ্গল। রাস্তায় চকরাবকরা জ্যোৎস্না পড়েছে। রিকশোওয়ালা বলল, ‘আর এক জায়গায় একটুখানি থামতে হবে।
সিঙ্গিমশাইয়ের নস্যির কৌটোটা দিয়েই আমার ছুটি।’
একখানে জঙ্গলটা কিছু ফাঁকা। রিকশো সেখানে থামল। রিকশোওয়ালা সিট
থেকে রাস্তার ধারে গিয়ে চ্যাঁচাতে থাকল, ‘সিঙ্গিমশাই! সিঙ্গিমশাই!
তারপর সাড়া না পেয়ে এগিয়ে গেল। আর তাকে দেখতে পেলুম না। ভয়ে
ভয়ে ডাকলুম, ‘ছোটোমামা!’ ছোটোমামা বিরক্ত হয়ে বললেন, চুপচাপ বসে থাক। আমাদের বাড়ি পৌঁছোনো নিয়ে কথা।”
এইসময় কাছাকাছি একটা গাছ থেকে কেউ বলল, ‘কারা এখানে?? ছোটোমামা ভারিক্কি চালে বললেন, ‘আমরা।
“আমরা মানে? নাম কী? বাড়ি কোথায়??
ছোটোমামা রেগেই ছিলেন, বললেন, ‘তা জেনে তোমার কাজ কী? কে তুমি? গাছে কী করছ?’ ‘অ্যা! বলে কী! গাছে কী করছি। হি হি হি হি! ন্যাকা!’
“খবরদার! বাজে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।’ ‘এটা বাজে কথা হল? জান না গাছে কী করছি?’
ছোটোমামা খাপ্পা হয়ে বললেন, ‘না। জানি না। আমরা মানুষ। আমরা তোমাদের মতো রাতবিরেতে গাছে কাটাই না।’
“হি হি হি! প্রথম প্রথম এই ভুলটা হয়।’
‘কী ভুল হয়?’
‘মানুষ-মানুষ ভুল।’ ‘কী অদ্ভুত!’
‘অদ্ভুত তো বটেই। অদুটুকু বাদ যেতে কয়েকটা দিন দেরি, এই যা। তা তোমরা কি ডেরা খুঁজে বেড়াচ্ছ? বোকা আর কাকে বলে? ভূতোর রিকশোতে চেপে–হি হি হি হি! ভূতোটা এক নম্বরের ধড়িবাজ। সাবধান করে দিচ্ছি কিন্তু!’ ছোটোমামা রিকশো থেকে নেমে ঘুসি পাকিয়ে দাঁড়ালেন। কে হে তুমি! গাছ
থেকে নেমে এসো তো দেখি।’
আমিও নামতে দেরি করলুম না। ছোটোমামার মারামারি করার অভ্যাস আছে। কিন্তু রাতবিরেতে গাছের লোকটার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবেন কি না আমার সন্দেহ। রিকশোওয়ালাও আসছে না। মারামারি বাধলে থামাবে কে, এটাই আমার ভাবনা।
ছোটোমামা ঘুসি বাগিয়ে এবার হুংকার দিলেন, ‘কাম অন! কাম অন!’ গাছের লোকটা এবার বিদঘুটে হাসল। ‘হি হি হি হি! ইংরেজির কী ছিরি! কাম অন কী হে ছোকরা? গেট ডাউন! কিন্তু গেট ডাউন করি কী করে? একটা ঠ্যাংই যে নেই। থাকলে পরে এতক্ষণে নেমে কানটি ধরে স্ট্যান্ড আপ অন দা বেঞ্চ করিয়ে দিতুম।’
পাশের একটা গাছ থেকে কেউ বলল, ‘কী হে পণ্ডিতমশাই? ছাত্র জোটাতে
পারলেন নাকি??
‘নাহ। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা যায় না।’
ছোটোমামা আর সহ্য করতে পারলেন না। রাস্তার ধারে পাথরকুচির স্তূপ থেকে পাথর কুড়িয়ে ছুড়তে শুরু করলেন। আমাকেও বললেন, ‘হাত লাগা পুটু। আমাকে গাধা বলছে! আমাকে ইংরেজি শেখাচ্ছে পাঠশালার পণ্ডিত?’
ওদিকে পণ্ডিতমশাইয়ের চ্যাঁচামেচিতে চারদিকে সাড়া পড়ে গেছে। হইহই রইরই করতে করতে কালো কালো কারা সব গাছ থেকে ঝুপঝাপ করে নেমে আসছিল। আমি ভয়ে প্রায় কেঁদে ফেললুম, ‘ছোটোমামা! ছোটোমামা!’ এবার ছোটোমামার চোখে পড়ল ব্যাপারটা। তারপর যা ভেবেছিলুম এবং বরাবর যা ঘটে আসছে তা-ই হল। ছোটোমামা চলে আয় পুটু’ বলে রিকশোওয়ালা যেদিকে গিয়েছিল, সেইদিকে দৌড়োলেন। আমিও দৌড়োলুম।
কিন্তু ভাগ্যিস ছোটোমামা হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন, তাই সঙ্গ পাওয়া গেল। জ্যোৎস্নায় একটা ভাঙাচোরা দালানবাড়ি দেখা যাচ্ছিল। বাড়ির দরজায় ছোটোমামা ধাক্কা দিতে লাগলেন। একটু পরে ভেতর থেকে সাড়া এল, ‘কে?’ ছোটোমামা ব্যস্তভাবে বলল, ‘আমরা খুব বিপদে পড়েছি। দয়া করে দরজা খুলুন।’
‘কী বিপদ?’
‘কারা আমাদের তাড়া করেছে।’
‘তারা কারা?’
গাছে গাছে যারা থাকে।’
‘গাছে থাকে ভূত বনে থাকে বাঘ
জলে থাকে মাছ মনে থাকে রাগ।” “কী বিপদ। আপনি পদ্য বলছেন নাকি?
“ঠিক ধরেছ। কেমন হয়েছে পদ্যটা বলো।’
‘খুব ভালো। দয়া করে এবার দরজা খুলুন। ওরা আসছে।’
‘ঘোড়ায় যদি পাড়ে ডিম
জ্বলে যদি জ্বলে পিদিম
বলো তবে অতঃ কিম?
ছোটোমামার পদ্য লেখার বাতিক ছিল। বলে দিলেন, ‘জাম গাছে ফলবে
শিম।
“খাসা! খাসা! স্বাগত! সুস্বাগত!’ দরজা খুলে গেল। ছোটোমামা বললেন, ‘আলো নেই কেন? আলো
জ্বালুন।’
যত বড়ো কবি তুই হোস না
যদি না বাসিস ভালো জোসনা
থেকে যাবে কত আফশোস না!
তাই বলি চুপ করে বোস না।’
ভদ্রলোক বাইরের দরজা বন্ধ করে দিলেন। জানলা গলিয়ে জ্যোৎস্না এসে ঘরে ঢুকেছিল। আবছা দেখা যাচ্ছিল ওঁকে। ঢ্যাঙা, বড়ো বড়ো চুল, পরনে পাঞ্জাবি পাজামা। হাতে একটা বই বা মোটা খাতা। পাতা ওলটাতে শুরু করলেন। তারপর
বললেন, ‘এই পদ্যটা আরও ভালো।
একদা এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়া ছিল সারসপাখি লম্বা ঠোঁটে হাড় তুলিয়া দিল।
পুরস্কার চাইলে পরে বাঘ রাগিয়া কহে, মুণ্ডখানা ফেরত পেলি তা-ই যথেষ্ট নহে?’ পাশের ঘর থেকে কেউ বিটকেল গলায় ডাকল, ‘ঘোঁতনা! অ্যাই ঘোঁতনা!
কাকে পদ্য শোনাচ্ছিস?’
‘মানুষকে।’ ‘কয় জন মানুষ?’
“দেড় জন।”
“ধুস! পোষাবে না।’
ছোটোমামা বললেন, “কে উনি?’
কবি ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আমার দাদার ওই এক স্বভাব। খালি
খাই খাই।’
‘খাই খাই মানে?’
‘দাদার খুব খিদে আর কি। যাক গে। এই পদ্যটা পড়ি।…’ সেই সময় বাইরে ডাকাডাকি শোনা গেল, ‘ছোটোবাবু! ছোটোবাবু!
ছোটোবাবু!’
কবি খাপ্পা হয়ে দরজা খুলে বললেন, “কী হয়েছে? চ্যাঁচাচ্ছিস কেন রে
ভূতো??
‘আমার প্যাসেঞ্জার হারিয়ে গেছে। খুঁজে বেড়াচ্ছি।’
‘কয় জন?’
‘আজ্ঞে দেড় জন।
ছোটোমামা আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিলেন। ‘চলে আয় পুটু!’ রিকশোওয়ালা আমাদের দেখেই বলে উঠল, ‘সর্বনাশ! কোথায় ঢুকেছিলেন আপনারা? চলে আসুন। চলে আসুন। এ-বাড়ির বড়োবাবুর বেজায় খিদে।
আমরা তিন জনে দৌড়োচ্ছি। পেছনে কবির করুণ আর্তনাদ কানে আসছে, ‘অত ভালো পদ্যখানা শুনে গেল না। আমার যে আবার মরতে ইচ্ছে হচ্ছে গো! ও হো হো হো….
ছোটোমামা রাস্তার কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ওহে
রিকশোওয়ালা। ওরা সব নেই তো?”
রিকশোওয়ালা হাসল, নাহ । ঘুমিয়ে পড়েছে। ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছে।
শুনতে পাচ্ছেন না?’
ছোটোমামা কান করে শুনে বললেন, ‘হুঁঃ!
আমি তেমন কোনো শব্দ পেলুম না। তবে বাতাসে গাছপালা খুব নড়ছে। নানারকম শব্দও হচ্ছে বটে। কিন্তু ভোঁস ভোঁস নয়। শোঁ শোঁ সর সর খড় খড়। কে জানে বাবা কী।…
এবার আর কোনো গণ্ডগোল হল না। আমাদের গাঁয়ের মোড়ে পৌঁছে দিয়ে রিকশোওয়ালা ভাড়া মিটিয়ে নিল।
ছোটোমামা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কোন গাছে থাক হে?’
রিকশোওয়ালা বেজায় হেসে বলল, ‘আমি কেন গাছে থাকতে যাব বাবুমশাই? আমার কি ঘরদোর নেই? নামটাই না হয় ভূতো। রাতবিরেতে রিকশো চালাই বলে তেনাদের সঙ্গে চেনাজানা হয়েছে।’
ছোটোমামা সন্ধিন্ধ স্বরে বললেন, ‘তুমি মানুষ ?? ‘আজ্ঞে, ষোলোআনা মানুষ।’ বলে সে শেষরাতের জ্যোৎস্নায় রিকশো চালিয়ে কালো হতে হতে দূরে মিলিয়ে গেল।