StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা কি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের কারণগুলি আলোচনা কর

গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা কি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের কারণগুলি আলোচনা কর।

অথবা,

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো।

পঞ্চাশের দশকের গোড়ায় স্ট্যালিন গর্ভ ভরে মন্তব্য করেছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ান আর্থিক উন্নয়নে পশ্চিমী জগতে অতি দ্রুত ছাড়িয়ে যাবে, ভিরিশ বছর পরে সোভিযেত কর্ণধার হয়ে গর্বাচেভ দেখেছিলেন যে সোভিয়েত অর্থনীতি শুধুমাত্র পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি অপেক্ষা পশ্চাদপদ নয়, তা কার্যত বিপর্যন্ত। একদিকে প্রশাসনিক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অন্যদিকে আর্থিক পরিকাঠামোর পুনর্গঠন এই দুই আশু কাজের জন্য প্রযোজন ছিল গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কারের এবং এই সংস্কারের জন্য দরকার ছিল উপযুক্ত পরিবেশ তথা চেতনার। 

এই প্রেক্ষিতে গর্বাচেভ মুক্ত মনন ও উপযুক্ত পরিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে নীতিগত পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেছিলেন ১) সেরেম্বোইকা বা পুনর্গঠন এবং ২) গ্লাসনস্ত বা মতপ্রকাশ এবং সমালোচনার স্বাধীনতা বা এককথায় মুক্ত হাওয়া (Open Air )। কমিউনিস্ট পার্টির ২৭ তম সম্মেলনে এই নতুন নীতি গৃহীত হয়। অধ্যাপক ম্যাকউইলিয়ামস ও সিভরোস্কি গর্বাচেভের এই নীতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন যে In the long run. Gorbachev’s programme was nothing sort of revolutionary.’। এই নীতির লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রীয় তথ্য সমাজিক ক্ষেত্রকে অধিকতর মানবিক ও গণতান্ত্রিক করে তোলা এবং আর্থিক পুনর্গঠনের কাজকে অতি দ্রুত শুরু করা। গর্বাচেভ জানতেন যে তাঁর এই নীতি সোভিয়েত তথা সমাজতান্ত্রিক জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে এবং হয়ত তার ক্ষমতাও হয়ত বিপন্ন হবে। কিন্তু স্থবির প্রশাসন এবং অর্থনীতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য এ ছাড়া অন্য কোন রাস্তা তার চোখে পড়েনি।

সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের কারণগুলি /সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ গুলি : 

বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়ার এই আকস্মিক পতনের জন্য কে বা কারা দায়ী তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। পণ্ডিতদের অনেকেই রাশিয়ার এই অকাল ভাঙ্গনের জন্য স্ট্যালিন কর্তৃক আরোপিত ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। ঘিটা ইয়ানের “The Break up of of the Soviet Empire in Eastern Europe’ নামক গবেষণা গ্রন্থে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে ১৯৫০-৬০’র দশক থেকেই স্ট্যালিন পূর্ব ইওরোপের দেশগুলিতে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে মর্যাদা না দিয়ে যে কার্যত সাম্রাজ্যিক এবং হিংসাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তা কখনোই দীর্ঘমেয়াদী ছিলনা এবং এই ব্যবস্থার পতন অনিবার্য ছিল।

সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের অনিবার্যভাকে অধ্যাপক এরিক হবসবমও তাঁর ‘Age of Extremes’ নামক গ্রন্থে স্বীকার করে নিয়েছেন। হবসবমের মতে গর্বাচেভ যে সংস্কারের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন দীর্ঘ ঠান্ডা যুদ্ধে জড়িয়ে থাকার প্রেক্ষিতে রাশিয়ার তা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এই সংস্কারের সঙ্গে সোভিয়েত রাষ্ট্র এবং পার্টি পরিকাঠামোর এবং নিয়ন্ত্রনকামী অর্থনীতির কোন সমন্বয় সম্ভব ছিল না, ফলত গর্বাচেভের সংস্কারের অবর্তে সোভিয়েত ইউনিয়ানের ভাঙ্গন অনিবার্য ছিল।

ওয়ানে ম্যাকউইলিয়ামস এবং হ্যারি সিওএকিও গর্বাচেভকে সংস্কারের জন্য কৃতিত্ব দিলেও মন্তব্য করেছেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ানের ভাঙ্গনের প্রক্রিয়া গর্বাচেভই সৃষ্টি করেছিলেন। বস্তুতপক্ষে গর্বাচেভ সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে থাস খাওয়াতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিকল্প কোন পরিকাঠামো তিনি গড়ে তুলতে পারেননি, ফলে সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙ্গনের পথে এগিযেছিল। স্ট্যালিনোত্তর কালে পূর্ব ইওরোপে হাঙ্গেরী, চেকোস্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলিতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রনবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।

ক্রুশ্চেভ পোল্যান্ডের সঙ্গে আপোস করলেও হাঙ্গেরীতে সেনা নামিয়ে বিদ্রোহ দমনে কুণ্ঠাবোধ করেননি। কিন্তু গর্বাচেন্ডের চিন্তায় ও কাজে পূর্ব ইওরোপের রাষ্ট্রগুলির উপর কর্তৃ বজায় রাখার কোন চিহ্ন পাওয়া যায়না, কার্যত গর্বাচেভের সময়কালে পূর্ব ইওরোপ সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বোঝাতে পরিণত হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ানের ভাগনের জন্য স্ট্যালিন থেকে শুরু করে গর্বাচেভের মত ব্যক্তিত্বকে ঐতিহাসিক বিতর্কে দায়ী করা হলেও ১৯৮৯ সালের এই ভাগনের প্রক্রিয়ার মধ্যে নাটকীয় উপাদান কোন অংশে কম ছিলনা। 

হবসবম রাশিয়ার ভাগনের এই শেষ পর্যায় সম্পর্কে a slow motion catastrophe’ অভিধাটি ব্যবহার করেছেন। তবে আকস্মিক এই ভাঙ্গনের পশ্চাতে কারণগুলি অনুসন্ধান করা যেতে পারে। বলশেভিক বিপ্লবের পর জন্মলগ্ন থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ানের কয়েকটি অন্তর্নিহিত দুর্বলতা ছিল, প্রথমত, জাতিগত বৈচিত্র এবং বিভিন্নতা।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত জনসংখ্যার তিন প্রান জনগোষ্ঠী শুভ সম্প্রদায়ভুক্ত রুশ ১৪.৫২ কোটি, ইউক্রেনিয় ৪.৪২ কোটি এবং বেলারুশ প্রায় ১ কোটি, এই জাতিগুলির মধ্যে আবার অসংখ্য উপজাতির অস্তিত্বও ছিল। এরূপ পরিস্থিতিতে সোভিয়েত নেতৃত্বকে রাজনৈতিক সংস্হতির উপর জোর দিতে হয়েছিল। ১৯১৭ সালে জারের সাম্রাজ্যের অবসানের পর লেনিন সব জাতিগোষ্ঠীগুলিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে নতুন বলশেভিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় তাদের অবস্থান হবে স্বাধীন ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত, সোভিয়েত রাষ্ট্রসংঘ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার স্বাধীনতাও তদ্বগতভাবে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ছিল।

দ্বিতীয়ত, সোভিয়েত রাষ্ট্র ছিল অতিরিক্ত মাত্রায় কেন্দ্রীকৃত। ১৯১৭ সালে বলশেভিকরা যখন ক্ষমতায় আসে তখন সোভিয়েত ইউনিয়ান প্রথম বিশ্বযুদ্ধজনিত আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও আরও নানান সমস্যায় জর্জরিত ছিল, রাষ্ট্রনায়ক লেনিনের সামনে সমস্যা মোকাবিলার জন্য কোন পূর্ব নজিরও ছিলনা, এমদাবস্থায় পথিকৃত হিসাবে তাকে একটি বেশী মাত্রায় কেন্দ্রীকরণের নীতি নিতে হয়েছিল, মার্কসীয় ভাবাদর্শে বিশ্বাসী দলীয় নিয়ন্ত্রনমুখিতাও কেন্দ্রীকরণকে সমর্থন জানায়।

জন্মলগ্ন থেকেই পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছিল, এই প্রচেষ্টাকে মোকাবিলা করার জন্যও কেন্দ্রীকরণের নীতি গ্রহণ করতে হয়েছিল। উল্টোদিকে বিপ্লব পরবর্তী নতুনতর প্রজন্মের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক বা বিপ্লবী মানসিকতা ততটা জোরালো ছিলনা, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতি তাদের আকর্ষণ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ দলীয় এবং আমলাতান্ত্রিক শোষণের ক্ষেত্রটিকেও প্রশস্ত করেছিল।

বাহ্যিক দুর্বলতাও সোভিয়েত ইউনিয়ানের ভাগনে ক্রিয়াশীল ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ানের গ্যাটেলাইট রূপে পরিচিত পূর্ব ইওরোপীয় রাষ্ট্রগুলিতে কমিউনিস্ট সরকারের গণভিত্তি ছিল যথেষ্ট দুর্বল। ফলে গণবিক্ষোভ দেখা দিত এবং সোভিয়েত ইউনিয়ানকে হস্তক্ষেপ করতে হত। ১৯৫৩ সালের জুন মাসে পূর্ব জার্মানী, ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরী এবং ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় কমিউনিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ানকে উক্ত রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল, এমনকি সেনা পাঠিয়ে বিদ্রোহ দমন করতে হয়েছিল।

অন্যদিকে গোমুনকার নেতৃত্বে পোল্যান্ডের কমিউনস্ট সরকার ১৯৫৬ সালের পর থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ানের কাছে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছাড়াই তারা নিজস্ব ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবে। অন্যদিকে পূর্ব ইওরোপের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র যুগোশ্লাভিয়া মার্শাল টিটোর জাতীয়তাবাদী ও স্বতন্ত্র সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলে আন্তর্জাতিকরাজনীতিতে প্রথম থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল।

পূর্ব ইওরোপের রাষ্ট্রগুলির এই দুর্বলতা সোভিয়েত ইউনিয়ানকেও অনেকাংশে পঙ্গু করে রেখেছিল। বস্তুতপক্ষে পোল্যান্ড এবং চেকোশ্লোভাকিয়ার সোভিয়েত নিয়ন্ত্রনবিরোধী যে গণবিদ্রোহগুলি ঘটেছিল তা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ করে যে স্ট্যালিন প্রবর্তিত যান্ত্রিক এবং আরোপিত সোভিয়েত ব্যবস্থা কোনভাবেই ঐ সকল দেশের মানুষকে গম্বু করতে পারেনি কার্যত কাচের ঘরের উপর সোভিয়েত ব্যবস্থা পূর্ব ইওরোপে টিকে ছিল, যে কোন সময় তা ভেঙে পড়তে পারত। ইয়ালেডসিন তিনটি বান্টিক প্রজাতন্ত্র লাটাভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়ার স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেন। ২৯শে আগস্ট সুপ্রিম সোভিয়েত ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং এর চেয়ারম্যান আনাতোলি লুকানেভকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

পয়লা ডিসেম্বর গণভোটের মাধ্যমে সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম প্রজাতন্ত্র ইউক্রেন স্বাধীনতার পক্ষে মত দেয়, লিওনিদ ঐভচুক ইউক্রেনের রাষ্ট্রসতি হন। ৮ই ডিসেম্বর ইউক্রেন, বেলারুশিয়া ও রাশিয়ার নেতৃবৃন্দ মিনাক শহরে মিলিত হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ানের সম্ভাব্য বিলুপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের কমনওয়েলথ (Commonwealth of Independent States) নামে একটি নতুন রাষ্ট্র মন্ডল গঠনের কথা ঘোষণা করেন। এইভাবে সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র, সুপ্রীম সোভিয়েত এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রযন্ত্রের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটল ১৮ই ডিসেম্বর রাশিয়ান পার্লামেন্টের হাতে সুপ্রীম সোভিয়েতের দায়িত্ব অর্পিত হয়।

২১ শে ডিসেম্বর বাজাকাস্থানের রাজধানী আলমা আটায় ১৫টি অঙ্গরাজ্যের একটি কমনওয়েলথ গঠনের চুক্তি হয়। ২৫ শে ডিসেম্বর গর্বাচেভ কার্যত অস্তিত্বহীন সোভিয়েত ইউনিয়ানের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে সোভিয়েত ইউনিয়ান বিলুপ্ত হল। ক্রেমলিনের প্রশাসনিক ভবনের মাথায় কাস্তে হাতুড়ি সম্পন্ন লাল পতাকার স্থান গ্রহণ করল সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার পুরনো পতাকা। বিশ্বের সর্বপ্রথম এবং সর্ববৃহৎ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ইতিহাসের পাঠ্যে জায়গা করে নিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top