StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি বা প্রেক্ষাপট আলোচনা করো

আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি বা প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।

ভূমিকা : 

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে সবরমতীতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি আইন অমান্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আইন অমান্যের সঙ্গে অসহযোগ এবং কর বন্ধের কথা বলা হয়েছিল। ব্রিটিশ পণ্যবর্জনের কথা ছিল তবে অসহযোগের মতো স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত বর্জনের কথা বলা হয়নি। বিভিন্ন কারণে ভারতের জনগণ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। কংগ্রেস দলের মধ্যে জওহরলাল ও সুভাষচন্দ্রের মতো তরুণ নেতারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠেছিলেন। আগের বছর কংগ্রেস লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার সংকল্প ঘোষণা করেছিল।

আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি / প্রেক্ষাপট 

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি সারাদেশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। দেশের মধ্যে অনেকগুলি ছাত্র ও যুব সংগঠন গড়ে উঠেছিল, এগুলি সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্ততন্ত্র বিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। এসব সংস্থা ও সংগঠন রাজনৈতিক স্বরাজ ছাড়াও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের দাবি তুলেছিল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে। তিরিশের দশকে দেশের লোকসংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছিল, সেইসঙ্গে ছিল অর্থনৈতিক মন্দা ও দারিদ্র্য। বিশ্বে অর্থনৈতিক মহামন্দা চলেছিল, অনিবার্যভাবে এর প্রভাব পড়েছিল ভারতের ওপর। মহামন্দার ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ভারতের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক মন্দার ফলে শ্রমিকের মজুরি কমেছিল, মজুরি হ্রাস ও শ্রমিক ছাঁটাই শ্রমিক অসন্তোষ বাড়িয়েছিল। কৃষিজ পণ্যের দাম ভীষণভাবে কমে যায়, কৃষকের ঋণ ও করের বোঝা বেড়েছিল। খাজনা হ্রাস, ঋণ মকুব ও প্রজা উচ্ছেদ রদের দাবি নিয়ে কৃষকরা বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন শুরু করেছিল।

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ২৩০টি শিল্পে ধর্মঘট হয়েছিল, এতে যোগ দিয়েছিল কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ শ্রমিক। দ্রব্যমূল্য হ্রাসের ফলে মধ্যবিত্ত লাভবান হয়নি কারণ তার আয় কমেছিল, বেকারত্ব ও হতাশা দেখা দিয়েছিল। নানা কারণে শিল্পপতি-বণিকরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করতে এগিয়ে এসেছিল। ভারতীয় বণিক ও শিল্পপতিদের ধারণা হয় ব্রিটিশ পুঁজিপতি ও বণিকরা এদেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। ইম্পিরিয়াল ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ ব্যাংকগুলির মাধ্যমে তাঁরা এদেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন।

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ গান্ধিজি বড়োলাট আরউইনকে একখানি চিঠি লিখে এগারো দফা দাবি রেখেছিলেন। এই এগারোটি দাবির মধ্যে বণিক ও শিল্পপতিদের অনেকগুলি দাবি স্থান পেয়েছিল। এই দাবিগুলির মধ্যে ছিল টাকা ও পাউন্ডের বিনিময় হারে পরিবর্তন, সংরক্ষণ, খাজনা হার ৫০ শতাংশ হ্রাস, মাদক বর্জন, লবণ করের অবসান, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ইত্যাদি। অধ্যাপক সুমিত সরকার জানিয়েছেন যে অর্থনৈতিক স্বনিয়ন্ত্রণ লাভের উদ্দেশ্যে ভারতীয় বণিক ও শিল্পপতিরা আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। গান্ধিজি ঘোষণা করেন যে “ব্রিটিশ শাসন এই মহান দেশ ভারতবর্ষকে নৈতিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে ধ্বংস করেছে। আমি ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের পক্ষে এক অভিশাপ বলে মনে করি। আমি এই সরকারকে ধ্বংস করতে চলেছি। রাজদ্রোহ এখন আমার নিকট ধর্মীয় কর্তব্য। আমাদের এই সংগ্রাম অহিংস, আমরা কারও প্রাণহানি করব না, তবে সরকারি শাসনকে ভারতের মাটি থেকে উচ্ছেদই এখন আমার পবিত্র কর্তব্য’।

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ থেকে গান্ধিজির নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে বড়োলাট আরউইনের সঙ্গে চুক্তি করে গান্ধিজি দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি থেকে আইন অমান্য আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়, ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে গান্ধিজি এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। গান্ধিজি পরিচালিত আইন অমান্য আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল একটি পূর্ণ স্বরাজ অর্জন। গান্ধিজি বড়োলাটকে জানিয়েছিলেন যে লবণ আইন ভঙ্গ করে তিনি আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছেন।

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ তিনি সবরমতী আশ্রম থেকে ৭৮ জন সঙ্গী নিয়ে যাত্রা শুরু করে সমুদ্র উপকূলে ডান্ডিতে গিয়ে পৌঁছোন এবং ৬ এপ্রিল লবণ আইন ভঙ্গ করেন। গান্ধিজির ডান্ডি অভিযান (নন্দলাল বসুর আঁকা ছবিতে তা ধরা আছে) দেশের মধ্যে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। তিনি এমন একটি পণ্য নিয়ে আন্দোলন শুরু করলেন যা সব ভারতবাসীকে স্পর্শ করেছিল। ভারতের সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন স্থানে কংগ্রেস নেতারা ও সাধারণ মানুষ লবণ আইন ভঙ্গ করেছিল। সরকার গান্ধিজিকে বন্দি করলে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। সরোজিনী নাইডু ও আব্বাস তায়েবজি ধারসানায় লবণ সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন। মার্কিন সাংবাদিক ওয়েব মিলার এই সত্যাগ্রহের বিস্তৃত বর্ণনা রেখে গেছেন। সরকারি দমন পীড়নের মধ্যেও সত্যাগ্রহীরা অসাধারণ সংযম দেখিয়েছিল, ছিল অহিংস ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। আইন অমান্যের সঙ্গে ভূমিকর বয়কট, চৌকিদারি করের বিরোধিতা, সরকারি কা আইনের বিরোধিতা ইত্যাদি যুক্ত হয়েছিল। স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণ বিদেশি বস্তু বর্জন, ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শন কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিল।

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন প্রাদেশিক কমিটিগুলিকে স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী আন্দোলন পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল। বোম্বে, মাদ্রাজ, বাংলা ও যুক্তপ্রদেশে এই আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করেছিল। বোম্বে শহর ছিল আইন অমান্য আন্দোলনের একটি বড়ো ঘাটি। তবে এসময় শ্রমিকরা আন্দোলন থেকে দূরে সরে ছিল, সম্ভবত মহামন্দার সময় কর্মহীনতা ও বেকারত্বের ভয় ছিল। আইনজীবী, মুসলিম ও ছাত্ররা আইন অমান্য আন্দোলনকে তেমনভাবে সমর্থন করেনি। অসহযোগ আন্দোলনে এসব গোষ্ঠীর যে ভূমিকা ছিল আইন অমান্য আন্দোলনে তা দেখা যায় না। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও দিল্লিতে মুসলমানরা আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল।

বোম্বে আন্দোলনের মধ্যে একটি চরমপন্থী গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। ইউসুফ মেহের আলি ও কে. এফ. নরিম্যান শ্রমিক শ্রেণিকে আইন অমান্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন। গুজরাট ছিল গান্ধিপন্থী আন্দোলনের এক বড়ো ঘাঁটি। গুজরাটের বিভিন্ন স্থানে জমি বাজেয়াপ্ত করার বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন হয়, আর এই কৃষক আন্দোলন সব সময় শান্তিপূর্ণ ছিল না। আমেদাবাদ, নাগপুর, নাসিক ও সাতারায় আইন অমান্য আন্দোলন হয়েছিল। মাদ্রাজে রাজাগোপালাচারির নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালিত হয়। গান্ধিজিকে অনুসরণ করে রাজাজি ত্রিচিনোপল্লি থেকে ভেদারান্নিয়াম পর্যন্ত একটি প্রতিবাদী অভিযান পরিচালনা করেন। বিদেশি বস্ত্রের দোকানে ধর্নার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে মাদ্রাজে আন্দোলন সবসময় শান্তিপূর্ণ ছিল না, জনগণের মধ্যে হিংসাত্মক বিস্ফোরণ ঘটেছিল কারণ পুলিশের পক্ষ থেকে নির্মম দমনপীড়ন চালানো হয়। মালাবার অঞ্চলে লবণ সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন কেলাপন।

মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে কংগ্রেসের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল উপকূলবর্তী অস্ত্র। এখানে আগে থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, পূর্ব ও পশ্চিম গোদাবরী, কৃষ্ণা ও গুন্টুরে লবণ সত্যাগ্রহ পরিচালনা করা হয়। ওড়িশায় গোপবন্ধু চৌধুরির নেতৃত্বে উপকূলবর্তী অঞ্চলে সত্যাগ্রহ হয়েছিল। আসামে আইন অমান্য আন্দোলন তেমন জোরালো হতে পারেনি কারণ অসমিয়া-বাঙালি ও হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। উপদলীয় কোন্দলে বাংলায় কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এখানে আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনার জন্য সুভাষচন্দ্র বসু ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত দুটি পৃথক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। এই সাংগঠনিক দুর্বলতা সত্ত্বেও বাংলায় সবচেয়ে বেশি সত্যাগ্রহী গ্রেপ্তার হয়েছিল (পনেরো হাজার)।

বাংলায় হিংসাত্মক ঘটনার সংখ্যাও ছিল বেশি। মেদিনীপুর, আরামবাগ, জলপাইগুড়ি ও শ্রীহট্টে আইন অমান্য ও কর বন্ধের আন্দোলন হয়েছিল। আরামবাগে প্রফুল্লচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে বাংলার পাটচাষ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল কিন্তু তা সফল হয়নি, হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা বেধে যায়। মুসলমান কৃষক ফজলুল হকের প্রজা পার্টিতে যোগ দিতে থাকে। বাংলায় আইন অমান্য আন্দোলন শহরকেন্দ্রিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল, গ্রামাঞ্চলের কৃষকের ওপর এর তেমন প্রভাব পড়েনি।

যুক্তপ্রদেশ ছিল আইন অমান্য আন্দোলনের আর এক বড়ো ঘাঁটি। আন্দোলনের সময় এখানকার মুসলমানরা নিষ্ক্রিয় ছিল, কৃষকরাও গোড়ারদিকে তেমন সংগঠিত ছিল না। মধ্যবিত্ত ও শহুরে মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। আইন অমান্য আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে (১৯৩২-৩৪) এই আন্দোলন গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল, কৃষকরা যোগ দিয়েছিল। যুক্তপ্রদেশের দোয়াব অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল। জ্ঞান পাণ্ডে এই আন্দোলনের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। কংগ্রেস কৃষকদের খাজনা বন্ধ করতে বলেছিল, আগ্রা ও রায়বেরিলি অঞ্চলে বাজনা বন্ধের আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছিল।

মধ্যপ্রদেশে আইন অমান্য আন্দোলন গোড়ার দিকে তেমন জনসমর্থন লাভ করেনি, পরে এই আন্দোলন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, মহিলা ও শিশুরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। অবস্থা এমন গুরুতর আকার ধারণ করেছিল যে নাগপুর ও জবলপুর অঞ্চল সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের অরণ্য অঞ্চলে উপজাতিরা অরণ্যের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেছিল। এই অরণ্য সত্যাগ্রহ সব সময় শান্তিপূর্ণ ছিল না, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। অরণ্য সত্যাগ্রহের সঙ্গে মাদক বর্জন আন্দোলনও চলেছিল।

পাঞ্জাবে ব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করেছিল, ব্রিটিশ বস্ত্রের মাসিক বিক্রি পঁচিশ লাখ থেকে কমে দু’লাখে দাঁড়িয়েছিল। চাষিরা খাজনা বন্ধের আন্দোলন করেছিল, কৃষকরা শস্য ব্যবসায়ী ও মহাজনদের আক্রমণ করেছিল। বিহারে আইনজীবী ও ছাত্ররা আন্দোলনে যোগ দেয়নি, আন্দোলন প্রধানত গ্রামের কৃষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বেশিরভাগ বড়ো জমিদার রাজভক্ত হয়ে যায়, ছোটো জমিদার ও সচ্ছল কৃষক আন্দোলনের একটি শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে খান আবদুল গফ্ফর খান ও তাঁর ‘খুদাই খিদমতগার দল’ (লালকোর্তা বাহিনী) পেশোয়ারে আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন। সরকারি প্রশাসন কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল।

সরকার গফ্ফর খানকে বন্দি করলে সংঘর্ষ বেধেছিল। সরকার পুলিশ ও সৈনাবাহিনী দিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করেছিল, তা সত্ত্বেও আন্দোলন চলেছিল। পরে সরকার আরও কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দমনপীড়ন চালিয়ে আন্দোলন দমন করেছিল। সুদূর নাগাল্যান্ডে তরুণী রানি গুইদালো আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনা করেন। পার্শ্ববর্তী মণিপুরের অধিবাসীরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত আইন অমান্য আন্দোলন বিস্তারলাভ করেছিল। পশ্চিমে বোম্বে থেকে পূর্বে ব্রহ্মদেশের সীমান্ত প্রায় সর্বত্র আন্দোলন হয়েছিল।

মূল্যায়ন : 

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ভারতের নতুন গভর্নর জেনারেল হয়ে এসেছিলেন উইলিংডন (১৯৩১-৩৬)। তিনি এই আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন। গান্ধিজিসহ সব নেতাকে বন্দি করা হয়, কংগ্রেস বেআইনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষিত হয়। উইলিংডন প্রবর্তিত নতুন দমনমূলক শাসনকে বেসামরিক আবরণে সামরিক শাসন আখ্যা দেওয়া হয়েছে (civil martial law)। বেসামরিক শাসনের নামে। সামরিক শাসনের সব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। নাগরিক অধিকার বাতিল, বিনা বিচারে আটক, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, বিশেষ আদালতে বিচার সবই চলেছিল। উইলিংডন নিজেই স্বীকার করেছেন যে ভারতে তিনি ইতালির ডিক্টেটর মুসোলিনির মতো আচরণ করেছিলেন (becoming a sort of Mussolini in India)। এক লক্ষ বিশ হাজার সত্যাগ্রহীকে বন্দি করা হয়। এসময় জরুরি আইনের সাহায্য নিয়ে (special ordinances) দেশের শাসন পরিচালনার ব্যবস্থা হয়েছিল, বহু ব্যক্তির বাড়ি, জমি ইত্যাদি সরকার বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিল। জাতীয়তাবাদী সাহিত্যের প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারের তীর দমননীতির চাপে আইন অমান্য আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েছিল, উদ্দীপনা ও উৎসাহ কমে এসেছিল। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *