StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের প্রকৃতি বা চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা কর

আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা কর । আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা কর ।

লি হাং চ্যাং আত্মশক্তি বিকাশের অঙ্গ হিসাবে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি বিশেষত পাশ্চাত্য গণিতশাস্ত্র ও বিজ্ঞান অনুশীলনের ওপর জোর দেন। কিন্তু তাঁর পরিকল্পনা মূলতঃ সামরিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের মধ্যেই সীমায়িত ছিল। এমনকি বিদ্যালয় স্থাপন এবং ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে প্রেরণও সামরিক পরিকল্পনার অঙ্গীভূত। বস্তুত পক্ষে লি চীনের রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সামাজিক ব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন অনুভব করেননি, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন চীনা সংস্কৃতি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় কোন মৌলিক পরিবর্তন না এনে আধুনিকী করণের এই প্রয়াস ছিল অসম্পূর্ণ। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি, আইন, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান। আহরণের কোনও প্রচেষ্টাই তারা করেননি; তাই আধুনিকতার এই প্রয়াস ছিল অগভীর। ব্যাপক শিল্পায়ন তাই চীনে ঘটেনি।

আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের প্রকৃতি আর্থিক ক্ষেত্রে ভূমিকর সংস্কারের প্রচেষ্টা এই যুগে হয়েছিল। বড় জেন্ট্রি পরিবারের আইনগত সুবিধাগুলির বিলোপ সাধন করে ভূমিকর নিরূপণের শৈথিল্য কাটানোর চেষ্টা হয়। আঞ্চলিক সরকারের প্রশাসন পরিচালনায় স্থানীয় করের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েও চিং সরকার মধ্যবর্তী ছোট জমিদারদের অতিরিক্ত লেভি চাপানোর প্রবণতাকে রুখতে চেয়েছিল। সরকারী কর্মচারীদের কর আদায়ের প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। ধনী ও দরিদ্র উভয় শ্রেণীরই কম করে কর নির্ধারণের জন্য কর্মচারীদের উৎকোচ দেওয়ার যে প্রবণতা ছিল তা সরকার বন্ধ করতে চেয়েছিল। 

তাইপিং বিদ্রোহোত্তর যুগের গভর্নররা সৎ, দক্ষ ও সর্বোতমুখী হলেও তাদের ভূমি সংস্কার প্রচেষ্টা আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আনতে পারেনি এবং তাদের প্রভাব ক্ষণস্থায়ী হয়েছিল। আসলে তাইপিং বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সংস্কারপন্থীরা চেয়েছিল জেন্ট্রি সমাজকেই প্রতিষ্ঠিত করতে। ইয়াংসি প্রদেশগুলিতে ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি ছিল যে অনেক জেন্ট্রি পরিবার সরকারী সাহায্য নিয়েও তারা তাদের পূর্বের সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। তবে এটাও ঘটনা যে প্রদেশগুলির সংস্কারকরা সম্ভাব্য স্থানে পুরনো সম্পদ-সম্পর্ক ফিরিয়ে আনলেও ভূমি স্বত্ব বন্টনের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তন হল জেগ্বিদের ভূমির মালিকানা থেকে কৃষক চাষীদের ভূমি মালিকানায় হস্তান্তর। তুংচি সরকারের সীমাবদ্ধতা আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনেরও সীমাবদ্ধতা।

আত্মশক্তি বিকাশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সীমিত দৃষ্টিভঙ্গী ও নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার অভাব এই আন্দোলনের সাফল্যের প্রধান অন্তরায় ছিল। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিজেদের আঞ্চলিক ক্ষমতার ভিতকে সুদৃঢ় করা ছাড়া নিঃস্বার্থ ভাবে চীনের পুনর্গঠনের কাজে তারা আত্মনিয়োগ করেনি। চীনের আর্থ সামাজিক কাঠামোর রূপান্তর ঘটিয়ে নবরূপে চীনকে ঢেলে সাজানোর কোন পরিকল্পনা তাদের ছিল না। লি হ্যাং চ্যাং-এর মতো যে সব নেতা আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের যেমন কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না তেমনি প্রাদেশিক স্তরের নেতাদের মধ্যেও সঠিক বোঝাপড়া বা সহযোগিতার মনোভাব দেখা যায়নি।

১৮৮৩-৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েতনামে চীন-ফ্রান্স যুদ্ধ সংঘটিত হলে ফরাসী নৌবহরের আক্রমণে বিপন্ন ফুকিয়েন রণপোতগুলির সাহায্যার্থে চীনের নানইয়াং (Nanyang) এবং পেইইয়াং (Peiyang)-এর রণতরীগুলি এগিয়ে আসেনি। আঞ্চলিকতার প্রাধান্য জাতীয় স্বার্থকে বিপন্ন করেছিল। ১৮৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে চীন-জাপান যুদ্ধে জাপানের মত ক্ষুদ্র দেশের কাছে চীনের পরাজয়ে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে চীনের সামরিক আধুনিকীকরণের ভিত কত দুর্বল ছিল। চীন-জাপান যুদ্ধ চলাকালীন নানইয়াং এর রণতরীগুলি নিরপেক্ষতা বজায় রাখায় পেই-ইয়াং এর রণতরীগুলিকে জাপানী নৌবহরের বিরুদ্ধে এককভাবে লড়তে হয়েছিল। নৌবাহিনীর মধ্যে এই সমন্বয়ের অভাব প্রমাণ করে যে চীনের জাতীয় স্বার্থ প্রাদেশিকতা বা আঞ্চলিকতা এবং নেতৃবর্গের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বিঘ্নিত যার স্বাভাবিক পরিণতি ছিল পরাজয়। আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে বিদেশী সম্রাজ্যবাদ চীনের মাটিতে শেকড় ছড়ালে এই আন্দোলন ব্যাহত হয়।

১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে জাপানের ফরমোজা আক্রমণ এবং ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে লিউটিউ দখল, ১৮৭৯-৮১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার ইলি দখল, ১৮৮৪-৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের আন্নাম দখল নিয়ে যুদ্ধ এবং ১৮৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ায় জাপানের আগ্রাসন নিয়ে চীন-জাপান যুদ্ধ বাধলে যুদ্ধ খাতে মাঞ্চু সরকারকে প্রচুর অর্থব্যয় করতে হয় যা আত্মশক্তি বিকাশের কাজে মূলধনের অভাব ঘটায়। আর্থিক দিক থেকে দুর্বল চীনের এই মূলধনের অভাব মেটাবার জন্য চিং সরকার কর সংগ্রাহ প্রয়াসী হলে জনগণের বিনিয়োগের ক্ষমতাও নিঃশেষিত হয়। 

চীনের শিল্পায়নের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য উন্নত আর্থিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল। মূলধনের অভাবে তা করা সম্ভব হয়নি। China Merchants Steam Navigation Company, Shanghai Cotton Cloth Mills, Imperial Telegraph Administra tion Han Yeh Ping Mines এর মত বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে একই ব্যক্তিবর্গের যুক্ত থাকা প্রমাণ করে যে উদ্যোগের সীমা ও মূলধনের পরিমাণ কত সীমিত ছিল। বছরে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ লাভ করে এই সব সংস্থার মূলধন গঠন সম্ভব হত না। কারণ সংস্থার লভ্যাংশ অংশীদার মধ্যে বন্টিত হলে পূর্ণ বিনিয়োগ যোগ্য খুবই অল্প মূলধন পড়ে থাকত শিল্প বিকাশের জন্য।

সরকারী উদ্যোগে চীনে শিল্পায়ন হলে কর্মচারীদের অযোগ্যতা এবং আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির জন্য এর গতি শ্লথ হয়, পূর্বের এই যুক্তি নতুন বিতর্কের সূচনা করে। কারণ একই সময়ে জাপানে সরকারী উদ্যোগে শিল্পায়নে ব্যাপক সাফল্য এসেছিল। স্বাভাবিকভাবেই এখানে ভাল বা মন্দ সরকারের প্রশ্ন এসে যায়। এই সময় চিং সরকারের প্রশাসনের উন্নতির পরিবর্তে উত্তরোত্তর অবনতি লক্ষ্য করা যায়, কারণ সফল উদ্যোগগুলিকে চীনারা সরকারী সুবিধা ও পদমর্যাদাগত লাভের উৎস হিসাবে দেখত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *