StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

টীকা লেখ – টেম্পো সংস্কার

 

টীকা লেখ – টেম্পো সংস্কার 

টেম্পো সংস্কার হল প্রাক্-মেজী বা টোকুগাওয়া-শোগুন শাসনকালের বেহাল অর্থনৈতিক • অবস্থার উন্নয়নের প্রয়াস। এই আর্থিক সংস্কার পরিকল্পনার সাথে যেমন যুক্ত ছিলেন মিজুনো তাড়াকুনি (Mizuno Tadakuni, ১৭৯৩-১৮৫১)-র মতো ব্যক্তিত্ব আবার শোগুন-বিরোধী সাতসুমা ও চোষু গোষ্ঠীও নিজ নিজ সামস্তক্ষেত্রে এই সংস্কারের মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়নে প্রয়াসী হয়। নাবালক শোগুন ইয়েনারি (Ienari, ১৭৮৭-১৮৩১) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে সাবালকত্ব প্রাপ্তির পর সদানবু (Sadanobu)-কে বরখাস্ত করে তাঁর জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সব প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দেন। এরফলে শোগুন সরকারের অর্থনীতির বেহাল দশা হয়। ঘন ঘন মুদ্রায় খাদ মেশানো হয়, যার ফলে দ্রুত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং সরকার ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে তাল মেলাতে দরিদ্র সামুরাই শ্রেণী আয় বাড়ানোর জন্য হস্তশিল্প ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপে যোগ দিতে বাধ্য হয়। এই অবস্থা আরও শোচনীয় হয় যখন ১৮২২ ও ১৮৩৬ সালের মধ্যে ব্যাপক শস্যহানি ঘটে ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। শোওনযুগের এই বেহাল অর্থনীতির হাল ফেরাতে  মিজুনো তাড়াকুনি কঠোর ব্যয়-সংকোচের নীতি গ্রহণ করেন যা টেম্পো সংস্কার নামে পরিচিত।

টেম্পো সংস্কার পরিকল্পনার প্রধান বিষয় হল আর্থিক সংকোচনের পুরানো টোটকা যেমন ব্যয়-নিয়ামক আইন, মুদ্রা সংস্কার এবং নৈতিক উপদেশ ইত্যাদি। যে-সব কৃষক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে অভিপ্রয়াণ করেন মিজুনো তাদের গ্রামে ফেরাতে বাধ্য করেন। তিনি শহরের ৭০০ বণিক পরিবার তথা সংস্থার কাছ থেকে জোর করে ব্যাপক ঋণ আদায় করেন। ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে সমস্ত সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বণিক সমিতিগুলিকে অবলুপ্ত করা হয় এবং সব মূল্য ও মজুরীর ২০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। এরফলে যে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা শুরু হয় তার ফলস্বরূপ মিজুনোর সমস্ত সংস্কার পরিকল্পনা বাতিল করা হয় এবং ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ও পতন ঘটে।

ইতিমধ্যে কিছু কিছু সামন্তক্ষেত্রে ১৮৩০-এর দশকেই টেম্পো সংস্কার শুরু হয়। আয়তন ও পরিধিতে তা ছোট হলেও এবং কম বাণিজ্যিক প্রকৃতির হলেও সামন্তক্ষেত্রের আর্থিক উন্নয়নের বিচারে তা শোগুনদের প্রয়াসের চেয়েও সফল ছিল। এই টেম্পো | সংস্কারগুলির মধ্যে সাতসুমা ও চোষু গোষ্ঠীর প্রয়াস উল্লেখযোগ্য। প্রান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থানের ফলে এই দুই সামত্তক্ষেত্র শোওনদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল এবং এই অঞ্চলের সামুরাইদের নৈতিক জোর ও একাত্মতার বন্ধন অটুট ছিল।

সর্বোপরি সাতসুমা ও চোষু  দুই সামত্তগোষ্ঠী অন্যান্য সামন্তগোষ্ঠীর মতো ঋণের জালে জড়িয়ে ছিল না। আর্থিক সঙ্কটের সময়ও তারা সামুরাইদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করতে পেরেছিল, পাশ্চাত্য দেশ থেকে সমরাস্ত্র কিনতে পেরেছিল এবং সর্বোপরি চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার মতো আর্থিক ঝুঁকি নিতে পেরেছিল। এসব সত্ত্বেও ঊনবিংশ শতকের প্রথমভাগে সাতসুমা গোষ্ঠী ঋণভারে জর্জরিত হলে ১৮৩০ সালে তারা সক্রিয় সংস্কারের নীতি গ্রহণ করেন। প্রথমপর্বের এই টেম্পো সংস্কারে তারা তাদের সামত্তক্ষেত্রের আর্থিক ঋণ বাতিল করেন। এবং বাণিজ্যিক একচেটিয়া কারবার, বিশেষ করে আখের চিনি ব্যবসাতে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।

সাতসুমা গোষ্ঠীর উভয় প্রয়াসই সফল হয়। চোষ গোষ্ঠীর টেম্পো সংস্কার শুরু হয় ১৮৩৮ সালে। এই সংস্কারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সামুরাইদের ঋণের ভার কমানো এবং সামস্তক্ষেত্রের ব্যয়ভার হ্রাস। কিন্তু চোষুর আর্থিক সচ্ছলতার প্রধান কারণ হল এর “nurturing office” নামক এক অনন্য বিনিয়োগ সংস্থার বিশেষ ভূমিকা। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে আপৎকালীন তহবিল হিসেবে গঠিত এই সংস্থা সরকার ও সামুরাইদের প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছিল। তাই মুদ্রাস্ফীতির যুগেও এই চোষু গোষ্ঠী ঋণের ভারকে কম করতে ও বিনিয়োগের মূল্য বাড়াতে সক্ষম হয়েছিল।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *