টোকুগাওয়া জাপানের সামাজিক গঠন আলোচনা কর। জাপানে টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের যুগে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস বিশ্লেষণ কর।
টোকুগাওয়া জাপানের সামাজিক গঠন বিন্যাসের একটি লক্ষণীয় দিক হল। সামাজিক কাঠামো, সামাজিক বিধি ও আদর্শগত গোঁড়ামি রক্ষায় শোগুনের অবাধ কর্তৃত্ব। শোগুনের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে তিনি সাধারণ জনগণ থেকে যোদ্ধা শ্রেণী সকলের জন্য দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি (যেমন তাদের বাসস্থান, পোশাক ও সামাজিক সম্পর্কের বিধি) ঠিক করে দিতেন।
টোকুগাওয়া জাপানের সামাজিক গঠন ছিল ডাইমিয়োদের নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমিক্ষেত্রগুলি প্রশাসনের ক্ষেত্রে এই বিধিগুলি-ই আদর্শরূপে পালিত হত। সাধারণভাবে ডাইমিয়োরা নিজেরাই সামরিক পরিবারগুলির জন্য নির্দিষ্ট শোগুনীয় বিধিগুলি পালন করতেন। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন যে শোগুন প্রশাসনের প্রধান কেন্দ্র এডো বাকুফু-র কয়েক দশকের অস্তিত্বই সুপরিকল্পিতভাবে টোকুগাওয়া বংশের স্থায়ী আধিপত্য স্থাপন সংক্রান্ত ইয়েযাসুর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছিল। টোকুগাওয়া বংশের এই আধিপত্য কঠোর স্তরবিন্যস্ত, শান্তিপ্রিয় অথচ যোদ্ধা প্রধান সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বহির্জগতের সংস্পর্শমুক্ত জাপানী সমাজ ছিল সুশৃঙ্খল ও শান্তিপ্রিয়। জাপানীদের কাছে শৃঙ্খলার অভাবের অর্থ-ই হল অপশক্তির উত্থান। তাই জাপানে দীর্ঘ আড়াই শতাব্দী ধরে কিছু স্থানীয় কৃষক-বিদ্রোহ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন শান্তি বিরাজ করেছিল, যে-কোন দেশের পক্ষেই যা ঈর্ষার বড় কারণ হতে পারে।
বিভিন্ন যুগ ধরে চৈনিক সভ্যতা ও ভারতীয় সভ্যতা জাপানী সংস্কৃতিকে পুষ্ট করেছিল। এর ফলে জাপান মিশ্র সংস্কৃতির কেন্দ্রে রূপান্তরিত হলেও জাপানীরা তাদের সংস্কৃতির স্বকীয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। জাপানীদের চলমান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই জাপানী সামাজিক শ্রেণী-কাঠামো অপেক্ষাকৃত সহজ ও সরল। টোকুগাওয়া যুগের সামাজিক শ্রেণী কাঠামোর এই প্রভাব জাপানের পাশ্চাত্য ভাবাদর্শে দীক্ষিত হওয়ার পরেও অব্যাহত থাকে।
জাপানী জনগণের কাছে সম্রাট বংশ তাই রাষ্ট্রীয় ঐক্যের প্রতীক বলে গণ্য হত। সামাজিক মর্যাদার বিচারে সম্রাট বংশের পরেই ছিল কুগে বংশের স্থান। কুগেরা হলেন রাজসভার সম্ভ্রান্ত বংশীয় উচ্চপদাধিকারী পারিষদবর্গ বা অভিজাত শ্রেণী। তবে শোগুন প্রশাসনে তাঁদের পূর্বের মর্যাদা আর ছিলনা। তাঁদের পূর্বপুরুষেরা কিয়োটোতে রাজকার্যে বা মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হলেও শোওন আমলে তাঁদের রাজকার্য থেকে অব্যাহতি দিয়ে বৃত্তিভোগী শ্রেণীতে পরিণত করা হয়। শোগুনের প্রতি আনুগত্যের মূল্য স্বরূপ বৃত্তি পেলেও তা যথেষ্ট ছিলনা। কর্মভার মুক্ত হয়ে তারা যেমন কবিতা লেখায় মনোনিবেশ করেছিল তেমনি আর্থিক দৈন্য দশাকে তারা এড়াতে পারেননি। এই কুগে শ্রেণী প্রাক্-আধুনিক চীনের পণ্ডিতদের সমপর্যায়ভুক্ত ছিল। বংশমর্যাদার কারণেই কুগে পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল শোগুন শাসকেরা।
ডাইমিয়ো : জাপানের সামাজিক কাঠামোয় কুগে বংশের পরেই অবস্থান হল ডাইমিয়োদের। ডাইমিয়োরা হল ভূম্যধিকারী শ্রেণী। ‘ডাইমিয়ো’ (মহানাম, Great names) নামটি তাঁর ভূমিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ডাইমিয়ো বা মহানাম তাঁদেরই বলা হত যারা বাৎসরিক দশ হাজার কোকু চাল উৎপাদনকারী ভূমিক্ষেত্রের অধিকারী ছিলেন। এক কোকুতে ৫.১১ বুল পরিমাপ করা হত যা ছিল টোকুগাওয়া যুগে সম্পদ ও মর্যাদার সূচক। আবার কম রাজস্বের অধিকারী সামরিক ভূম্যধিকারী শ্রেণীকে শোমিও (Shomio) বা “ছোট নামের” (Small names) পদাধিকারী বলা হত। এই ডাইমিয়োদের মধ্যে সবচেয়ে ধনশালী ও সামরিক শক্তিতে বলীয়ান ছিল টোকুগাওয়া পরিবার। বার্ষিক গড়ে ৩০ মিলিয়ন কোকু উৎপাদিত চালের এক-চতুর্থাংশ যেত শোগুনের দখলে।
টোকুগাওয়া বংশের প্রথম তিনজন শোগুন এইভাবে জাপানের প্রায় অর্ধাংশ পুনর্বণ্টন করেছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে এই পন্থা প্রায় অনুসৃত হয়নি বললেই চলে। দূরবর্তী কিউশিউ দ্বীপের সাতসুমা গোষ্ঠী তাদের প্রভাবিত ক্ষেত্রে স্বাধিকার ভোগ করত। সেখানে কোন শোগুন-ই তাঁর কর্তৃত্ব ফলাতে পারেননি।
সামুরাই : জাপানী সামাজিক কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল সামুরাই শ্ৰেণী। প্রাক্ আধুনিক জাপানে এরাই পেশাদার যোদ্ধা শ্রেণী। প্রভুর সেবায় নিযুক্ত নিঃস্বার্থ নিৰ্ভীক আত্মবলিদানে সদাপ্রস্তুত সামুরাই শ্রেণী জাপানী সমাজ ও সংস্কৃতিকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। ইতিহাস খ্যাত এই সামরিক শ্রেষ্ঠ গোষ্ঠী জাপানী জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠাংশ ছিল। তরবারি-ই হল এদের প্রতীক। সামুরাই তরবারির প্রতি জাপানী জনগণের আবেগ ও শ্রদ্ধা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সামুরাইদের প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ততা এবং তাঁদের আত্মমর্যদাবোধ কিংবদন্তীর পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল।
যুদ্ধহীন টোকুগাওয়া শাসনে তাঁদের যুদ্ধ করার তেমন প্রয়োজন না হলেও শোগুনের প্রশাসনে ও ডাইমিয়োর জমিদারিতে তাঁদের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। নৈতিক নিষ্ঠার জন্য সামুরাই শ্রেণী তাদের নিজস্ব নীতি-সংহিতা রচনা করেছিল যা বুশিদো (Bushido) নামে পরিচিত ছিল। বুশিদো কথাটির অর্থ হল “যোদ্ধার পথ” [the way of the bushi (warrior)”]। টোকুগাওয়া যুগে সামুরাই শ্রেণী নিজেদের শিক্ষিত, সংস্কৃত এবং উচ্চ নৈতিক আদর্শ সম্পন্ন শ্রেণীরূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সামুরাই শ্রেণীর মধ্যেই সামরিক শৌর্য ও কনফুসীয় আদর্শ ও পাণ্ডিত্যের সুখ সমন্বয় লক্ষ্য করা গিয়েছিল।
বণিক : জাপানের স্তরবিন্যস্ত সামাজিক কাঠামোয় বণিকদের স্থান নিম্নে হলেও শোগুন শাসকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জাপানী আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছিল তার সবচেয়ে বেশি সুফল ভোগ করেছিলেন এই বণিক শ্রেণী। বণিকদের জাপানী সামাজিক কাঠামোয় নীচে অবস্থান এবং তাঁদের প্রতি ঘৃণার মনোভাব পোষণ করা কনফুশীয় তত্ত্বের প্রভাবের স্বাভাবিক ফলশ্রুতি ছিল। কনফুশীয় আদর্শে কুসীদজীবী বা সুদের কারবারিদের ঘৃণার চোখে দেখা হত। তবে বণিকদের চড়া সুদের বিনিময়ে ঋণ দান-ই সমাজের চোখে তাদের খাটো করেছিল বলে মনে হয়।
জাপানের সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ ছিল বণিক শ্রেণী। এই বণিক শ্রেণীর মধ্যে ওমি (Omi) ও টয়ামা (Toyama)-র ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে চালের দালাল এবং ব্যাঙ্কার সবই ছিল। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের আগে মিৎসুই হাচিরোবেই (Mitsui Hachirobei) একজন মদের ও নয়া সসের ব্যবসায়ী ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর উত্তরসূরীরা ওসাকা ও এডোর মধ্যে “বিনিময় ব্যাঙ্কারে” পরিণত হন। কয়েক প্রজন্ম ধরে মিৎসুই পরিবার প্রতিষ্ঠাতার বিধি অনুসরণ করেছিলেন এবং কঠোর অভ্যন্তরীণ নিয়মানুবর্তিতা বজায় রেখেছিলেন। অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন ছেলেদের অবসরের ব্যবস্থা করে এবং বিবাহসূত্রে দক্ষ ও যোগ্য কর্মীকে ব্যবসায় নিয়োগের ক্ষেত্রে এই পরিবারের দক্ষতা এক উচ্চ মাত্রা লাভ করেছিল। বণিকেরা শোগুন ইয়েযাসু কর্তৃক সম্মানিত হলেও পরবর্তী শোগুনেরা তাদের ঘৃণার চোখে দেখতেন এবং তাদের শস্যক্ষেত্রের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
জাপানের স্তরবিন্যস্ত অনড় সমাজকে ধরে রাখার যে প্রয়াস শোগুনেরা নিয়েছিলেন তা বিশেষ সফল হয়নি, কারণ জাপানী সমাজে মুদ্রা ব্যবস্থা তথা অর্থের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। টোকুগাওয়া শাসনের আদিপর্বে কৃষিপ্রধান জাপানের চাল অর্থনীতিতে (rice economy) মুদ্রার (Currency) সেরকম প্রয়োগ ছিলনা বললেই চলে। পর্তুগাল, স্পেন ও হল্যান্ডের সঙ্গে জাপানের যে বহির্বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাস্বয়ং শোগুন প্রশাসন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিল, বণিকদের ভূমিকা ছিল সেখানে খুবই সীমিত। সরকারি স্তরেও সম্পদের মাপকাঠি ছিল চাল।
একজনের ডাইমিয়োর পদমর্যাদা তাঁর অধীনস্ত ক্ষেত্রের চাল উৎপাদনের দ্বারা নির্ধারিত হত। সামরাই শ্রেণীও শোগুন বা ডাইমিয়োর কাছ থেকে তাঁদের প্রাপ্ত বেতন চালের মাধ্যমেই পেত। তাই বলা যায় টোকুগাওয়া যুগের সূচনায় চাল-ই ছিল বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু শোগুন শাসনের দীর্ঘ শান্তির যুগে জনসমৃদ্ধ ওসাকা এবং এডো (অষ্টাদশ শতকের প্রথমেই এর জনসংখ্যা ৫ লক্ষের বেশি ছিল)-র মত নগরের বিকাশের ফলে চালের মত ভারি বিনিময়ের মাধ্যমের পরিবর্তে মুদ্রার ব্যবহার শুরু হয়। ষোড়শ শতকে এবং সপ্তদশ শতকের প্রথম পর্বে জাপানে বৈদেশিক বাণিজ্যের বিকাশ মূদ্রার সচলতা বৃদ্ধি করে, কারণ পর্তুগীজ, স্পেনীয় ও ওলন্দাজদের জাহাজে জাপান থেকে রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে প্রধান ছিল সোনা ও রূপা। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে জাপানে খনি থেকে ধাতু উত্তোলন ও মুদ্রা তৈরির কাজ উৎসাহিত হয়।
মুদ্রার ব্যবহারের সুবিধার জন্য সপ্তদশ শতকের অগ্রগতির সঙ্গে অধিক সংখ্যায় সামুরাই শ্রেণী ওসাকার বণিকদের সঙ্গে নগদে চালের কারবার শুরু করে। বণিক শ্রেণীর সামাজিক অবস্থান নীচে থাকলেও এই সময় তাঁরা আর্থিক দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী বা বিত্তশালী শ্রেণীতে পরিণত হয়। শীঘ্রই এডো বিপুলসংখ্যক অনুৎপাদক যোদ্ধা শ্রেণীর প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্রে যেমন পরিণত হয়েছিল তেমনি এখানে বণিকশ্রেণী দ্রুত সংখ্যায় ও সম্পদে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কালক্রমে শোগুন, ডাইমিয়ো ও সামুরাই সকল শ্রেণীরই বণিকদের ওপর নির্ভরতা বাড়ে এবং শোগুন-বণিক মৈত্রীর ওপর নির্ভর করে বহু বণিক গিল্ড (Tokumidonya) ও বণিকসভা (Kabunakama) গড়ে ওঠে।
১৭২১ খ্রিস্টাব্দে শোগুন যোশিমুনে (Joshimune) বণিক সংস্থাগুলিকে লাইসেন্স অনুমোদনের মাধ্যমে আইনসিদ্ধ করেন। শোগুন তনুমার শাসনকালে লাইসেন্স প্রদানের এই নীতি আরো সম্প্রসারিত হয়। এইভাবে মিৎসুই সংস্থা (Mitsui House) কোনোইকে সংস্থা (Konoike House), সুমিটোমো সংস্থার মত বাণিজ্যিক সংস্থার উত্থান ঘটে। এই সময় সামুরাই শ্রেণীর অর্থনৈতিক ক্ষমতার অবনতি ঘটেছিল। অর্থ বিষয়ে উদাসীনতা কিংবা অর্থ উপার্জন ও তা ধরে রাখার কোনো চেষ্টা না করার মধ্যেই সামুরাই শ্রেণীর প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ কাজ করত। তাঁরা বণিকদের ঘৃণা করত কারণ জাপানী সামাজিক কাঠামোয় তাঁদের সর্বনিম্নে অবস্থান ছিল। জাপানের প্রথাগত সামাজিক স্তর হল যোদ্ধা, কৃষক, কারিগর এবং বণিক শ্রেণী।
অষ্টাদশ শতকের প্রথম পর্বে জাপানের ভূম্যধিকারী ও যোদ্ধা ডাইমিয়ো ও সামুরাই শ্রেণী বণিকদের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে আর্থিক শক্তিতে বলীয়ান বণিক শ্রেণী তাঁদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে এডো ও ওসাকার মত বড় শহরের উন্নত নাগরিক জীবনযাত্রা, বিত্ত বৈভব তথা ঐশ্বর্যের মধ্যে দিনাতিপাত করে। জাপানে নাগরিক জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত এক শ্রেণীর উত্থান ঘটে যারা ‘চোনিন’ (Chonin) বা শহরে অধিবাসী নামে খ্যাত হয়। শহুরে জীবনের এই নাগরিক স্বাচ্ছন্দ ও সংস্কৃতির বিপুল আকর্ষণ ছিল। বিলাস ও বিনোদনের নানা উপকরণ দিয়ে শহরে বুর্জোয়ারা প্রশাসনিক কাজে ঘুরতে আসা ডাইমিয়োদের অর্থ গ্রাসে উদ্যত থাকত। বেশি অর্থ সঞ্চয় বিপদজ্জনক ছিল, কারণশোগুন প্রশাসন যে-কোন সময় তার ওপর কর আরোপ করতে পারত বা তা বাজেয়াপ্ত করতে পারত। তাই বেশিরভাগ নাগরিকই তাদের অর্থ আহারে বিহারে বা বিনোদনে খরচ করত। শহরের নাগরিকদের বিনোদনের উদ্দেশ্যেই জাপানে “কাবুকি” থিয়েটারের বিকাশ ঘটে, শোগুনের সবিরাম নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও।
শহুরে বণিকদের ঐশ্বর্যকে নাশ করার জন্য শোগুন নানাবিধ উপায় অবলম্বন করতেন। যেমন তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে, কিংবা বণিকদের কাছ থেকে নেওয়া সামুরাই শ্রেণীর ঋণ মুকুব করে এবং পোশাক ও আচরণে বাহুল্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এসব সত্ত্বেও বণিক শ্রেণীর নাগরিক জীবনযাত্রার গতিকে রোধ করা যায়নি। এডোর নানা বর্ণের জীবনযাত্রার এই ছবি সমকালীন চিত্রকলায়, সাইকাকুর (Saikaku) উপন্যাস এবং চিকামাৎসু (Chikamatsu)-র নাটকে প্রতিফলিত হয়েছিল। এই সময় একজন সফল ‘কাবুকি’ অভিনেতার আয় একজন ভাইসরয়ের আয়ের চেয়ে বেশি ছিল এবং সর্বোপরি তাঁর কৌশল নিয়ে আলোচনা চায়ের সভায় অনন্ত বিতর্কের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। Alfred Crofts 3 Percy Buchanan জাপানের নগর জীবনযাত্রার ঐশ্বর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, “So dazzling was city life that samurai and servingmen alike lost their taste for rustic boredom. The cities grew no lass in political power than in wealth.”
জাপানী সামাজিক কাঠামো বাস্তবে ততটা কঠোর ছিল না যতটা বাইরে থেকে দেখে মনে হয়। অল্প হলেও সামাজিক সচলতা ছিল। সামুরাই, কৃষক, কারিগর ও বণিক শ্রেণীর মধ্যে জন্মগত প্রভেদ থাকলেও শ্রেণী পরিবর্তনের ঘটনা বিরল ছিল না। বিভিন্ন সময় সম্পদশালী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী বণিকদের বিবাহ ও দত্তকের মাধ্যমে সামুরাই পদমর্যাদায় উন্নীত হতে দেখা যায়। অন্যদিকে দরিদ্র সামুরাই শ্রেণীও বণিক শ্রেণীর পেশা গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত হত না। এমনও দেখা গেছে যে একজন যাজক অর্থ সরবরাহকে (Financier) পরিণত হয়েছেন। এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে আর্থিক শক্তির জোরে বণিক শ্রেণীও কয়েকটি জাগিরের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ভোগ করত। টোকুগাওয়া যুগের এক জাপানী লেখকের বর্ণনায় জানা যায় যে ওসাকারা ধনী ব্যবসায়ীদের ক্রোধ ডাইমিয়োদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করত।
জাপানে পুঁজিপতি শ্রেণীর উত্থান ও বিকাশ সামন্ততান্ত্রিক সমাজের অস্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলনা। টোকুগাঁওয়া শাসনকালের আদি পর্বের সঙ্গে অষ্টাদশ শতকের শেষ ও ঊনবিংশ শতকের প্রথম পর্বের জাপানের তুলনা করলে বাহারূপ ছাড়া প্রকৃত অর্থে জাপানকে সামন্ততান্ত্রিক দেশ বলা চলে না বলে রিচার্ড স্টোরী মনে করেন। “বাকুফু” বা শোগুন প্রশাসনের অধীন জাপান বিজ্ঞান, শিল্প ও । রাজনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও বাণিজ্যিক দিক থেকে ক্ষুদ্রাকারে হলেও । জাপানের এই প্রগতি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ডের মত পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলির সঙ্গে তুলনীয় ছিল। পাশ্চাত্য রাষ্ট্র এবং জাপানের এই আর্থিক বৈশিষ্ট্য মার্কেন্টাইলবাদ নামে পরিচিত। জাপানে পাশ্চাত্য দেশগুলির মত শিল্পবিপ্লব না হলেও বা ঔপনিবেশিক দেশগুলির মত ব্যাপক বাজার না থাকলেও টোকুগাওয়া যুগের শহরগুলি “মাতৃদেশ” (mother country) এবং তার আসেপাশের গ্রামগুলি যেন বিদেশী উপনিবেশের ভূমিকা পালন করত। জাপানের আর্থিক প্রগতি তথা বাণিজ্যিক বিকাশ তাই বণিক শ্রেণীর সামাজিক রূপান্তরে বড় ভূমিকা পালন করেছিল।
কারিগর : প্রাকৃশিল্প পর্বের জাপানী সমাজের সবচেয়ে ছোট সংগঠিত গোষ্ঠী হল কারিগর শ্রেণী। সমগ্র জাপানী জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ এই শ্রেণী হস্তশিল্পের মত ছোট ছোট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। প্রয়োজনের দিক থেকে ও সামাজিক মর্যাদায় তাদের অবস্থান কৃষকদের পরে ছিল। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, সুতো তৈরি, বস্ত্রবয়ন, গৃহনির্মাণ, লোহা ও কাঠের কাজ এবং খনির সঙ্গে যুক্ত সকল শ্রেণী কারিগর সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। জাপানে শিল্পবিপ্লবের পরিস্থিতি ছিল না ঠিকই কিন্তু হস্তশিল্প উৎপাদনে এত বৈচিত্র্য ও বিকাশ লক্ষ্য করা গিয়েছিল যে জাতীয় বাজারের প্রয়োজন এর দ্বারাই পূরণ হত।
ধাতু ও কয়লার খনির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। উদ্যোগী ডাইমিয়োদের নেতৃত্বে হস্তশিল্পে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে। কারিগরদের মধ্যে তরবারি প্রস্তুতকারীদের সামাজিক মর্যাদা ছিল সবচেয়ে বেশি। প্লাস্টার করার মিস্ত্রী বা রাজমিস্ত্রীদের ও চর্মকারদের সামাজিক অবস্থান তুলনায় নীচে ছিল। তাদের দ্বারা প্রাণীর চুল ও চামড়ার ব্যবহার প্রচলিত বৌদ্ধ রীতির বিরুদ্ধে ছিল। এই ধরনের নিম্নস্তরের হেয় কাজ জাপানী সমাজের সর্বনিম্নে অবস্থিত অস্পৃশ্য এটা ও হিনিনদের জন্য বরাদ্দ ছিল। বিভিন্ন শিল্প-সামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কারিগর শ্রেণী বণিকদের মত ‘গিল্ড’ বা শিল্পী সংঘ গড়ে তুলেছিল। উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সকল কারিগর শ্রেণীর স্বার্থরক্ষা করা থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্যের মান, মূল্যমান, বিপনন সবই গিল্ডের আওতাভুক্ত ছিল। রেশম, বার্নিশ এবং শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত কারিগরেরা প্রথমে কিয়োটোতে কেন্দ্রীভূত ছিল; অতি অল্পদিনের মধ্যেই এডো বিলাস সামগ্রীর বাণিজ্যে প্রাধান্য বিস্তার করে।
পোর্সেলিন তৈরির বাণিজ্য সাতসুমা প্রদেশে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল, কারণ হিসেয়োশীর আক্রমণের সময় যে সব কোরীও (Korean) মৃৎশিল্পীদের হরণ করা। হয়েছিল তারা সাতসুমায় বাসস্থান গড়ে তুলেছিল। দীর্ঘ শতাব্দী ধরে চীনাদের কাছ থেকে শেখা কাঠের ব্লক প্রিন্টিং শিল্প শ্রেষ্ঠ শিল্পমানের কাছাকাছি এসেছিল। বিলাস সামগ্রীর ক্রেতা যা একসময় শুধু সামুরাই শ্রেণীর মধ্যেই সীমায়িত ছিল ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দের পর তা সমগ্র জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে বিপুল বাজার তৈরি করে।
কৃষক : টোকুগাওয়া যুগের জাপানের সমাজ জীবনে ও অর্থনীতিতে কৃষকের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কৃষিপ্রধান জাপানের অর্থনীতি ছিল চাল-নির্ভর এবং কৃষক সমাজ এই চাল উৎপাদনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল। জাপানের প্রধান শহরগুলিতে এক সপ্তাহ চাল সরবরাহ বন্ধ থাকলে এডোর মত বড় শহরের নাগরিকদের অনাহারে কাটাতে হত। এই চাল সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায়শই ব্যর্থ হওয়ার দরুন টোকুগাওয়া যুগে একশোটি শহরে চাল-দাঙ্গা হয়।
সামাজিক মর্যাদায় দ্বিতীয় স্তরভুক্ত জাপানের কৃষক সমাজ জাপানের জাতীয় জনসংখ্যার প্রায় ৮২ শতাংশ ছিল। জাপানী কৃষক সমাজের চাষযোগ্য ভূখণ্ডের আয়তন ছিল খুবই ছোট, প্রায় ২-১/২ একরের মত। এই আয়তনের জমির বাৎসরিক গড় উৎপাদন ছিল পাঁচ কোকুরও কম (১ কোকু = ৪.৯৬ বুশেল)। সামাজিক মর্যাদা থাকলেও জাপানী কৃষকদের আর্থিক অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না। তাদের অবস্থাঅনেকটা ইউরোপীয় ভূমিদাসদের মত ছিল, যদিও তাদের স্বাধীনতা ছিল। টোকুগাওয়া যুগের আদিপর্বে জাপানী কৃষক জমি ক্রয়, বিক্রয় ও বন্ধক রাখার অধিকার হারায়। যোশিমুনের সুশাসনকালে কৃষকেরা সামুরাই পদমর্যাদায় উন্নীত হতে পারত। কৃষকদের মধ্য থেকে খুব কমসংখ্যকই সম্পদশালী হতে পেরেছিল। সমবায়ের মাধ্যমে বীজ ও ঋণ দান করা হলেও কৃষকদের অধিকাংশই দুর্দশায় দিন কাটাত।
কৃষকদের সম্পর্কে শোগুন ইয়েযাসুর নীতি ছিল, “tax the farmer so that he can neither live nor die”। মুদ্রা প্রচলনের আগে জাপানী কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের (চালের) ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কর বাবদ প্রদান করতে হত। সপ্তদশ শতকের অন্তিম লগ্নে জাপানে মুদ্রার প্রচলন হলেও কৃষকদের সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি। কারণ চাল বিক্রি করে মুদ্রা সংগ্রহ করে কর প্রদান করা ছিল তাদের পক্ষে আরো অসুবিধাজনক। চালের বাজার মন্দা থাকলে অনেক সময় আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে খাজনা প্রদান করতে হত। খাজনা প্রদানের জন্য প্রায়শই তারা চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য থাকত। তাছাড়া কৃষক সম্প্রদায় তাদের ইচ্ছেমত ফসল উৎপাদন করতে পারত না।
স্থানীয় সামন্তপ্রভুদের ইচ্ছেমত ফসল তাদের উৎপাদন করতে হত না হলে কৃষকদের সামন্তপ্রভু বা ডাইমিয়োদের হাতে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হত। পরবর্তীকালে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাধানিষেধ তুলে নেওয়া হলে কৃষকেরা যেমন শহরমুখী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল তেমনি শিল্পভিত্তিক কাঁচামাল যেমন তুঁত, শন, পাট, নীলগাছ চাষের সুযোগ পেয়েছিল। এ সব সত্ত্বেও কৃষকদের আর্থিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। খুবই স্বল্প সংখ্যক কৃষক পরিবারই আর্থিক স্বচ্ছলতায় দিন কাটাত। কৃষকদের মধ্যে যারা সৈনিকের বৃত্তি গ্রহণ করত তারা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ ভোগ করত। সৈনিকেরাও জমির মালিকানা পাওয়ার ফলে সৈনিক ও জমির মালিকের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি। সম্পন্ন কৃষকেরা জমি চাষের জন্য গেনিন (genin) নামের এক শ্রেণীর ভূমি মজুরদের নিয়োগ করত। জাপানের কৃষি সমাজের সর্বনিম্নে অবস্থান ছিল এই গেনিন শ্রেণীর। দেখা গেছে একটি কৃষি খামার পরিবার বার্ষিক ৭০০ বুশেলের মত ভাল ফসল উৎপাদন করেও দেনার জালে জড়িয়ে পড়ত।
জমিদার, বণিক, সুদখোর মহাজন, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মচারীদের শোষণ ও অপশাসনের বিরুদ্ধে কৃষক সমাজের যেমন দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল তেমনি তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দুর্ভিক্ষ, বন্যা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এর ফলে কৃষকদের জীবনে নেমে এসেছিল অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশা। এই শোষণ, অত্যাচার ও হতাশা থেকে মুক্তি পেতে কৃষকেরা বিদ্রোহকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিতেন। অনেক সময় কৃষকেরা গ্রাম ছেড়ে জীবিকার তাগিদে শহরে এসে ভীড় করতেন। শহরগুলি অনেক সময় গ্রাম ছেড়ে আসা উদ্বাস্তুদের ভীড় সামলাতে পারত না। এই সময় ১৫০টি দুর্ভিক্ষের উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে ২১টি ছিল ভয়াবহ। এর ফলে কৃষকদের অনাহারে দিন কাটাতে হত। অনাহার ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে জাপানী কৃষকেরা শিশুসন্তানকে হত্যা করতেও কুণ্ঠিত হতেন না। এই ধরনের শিশুহত্যা জাপানে মাধিকি (Mabiki) নামে পরিচিত ছিল। এই ধরনের ঘটনার স্বাভাবিক পরিণতি স্বরূপ জাপানে ক্ষেত খামারে কাজের উপযোগী অল্পবয়সী শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়।
গ্রামেরএই চাহিদা মেটাতে শিশু ব্যবসায়ী (Child merchant) নামের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী শহর থেকে শিশু হরণ করে গ্রামাঞ্চলে বিক্রি শুরু করে। দুর্ভিক্ষ, অনাহার ও মড়ক রোধের জন্য শোগুন প্রশাসনের তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের অভাবও এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার অন্যতম প্রতিবন্ধক ছিল। ১৬০৩ থেকে ১৮৬৭-র মধ্যে তাই ১১৫৩ বার কৃষক বিদ্রোহের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে একথা অনস্বীকার্য যে কৃষি অসন্তোষ ও কৃষি বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল উত্তরোত্তর খাজনা বৃদ্ধি। এ প্রসঙ্গে Alfred Crofts ও Percy Buchanan লিখেছেন : “It is not surprising that the Pax Tokugawana was shaken by one thousand peasant uprisings-four fifths in protest against taxes-ten during each year of the terrible 1780’s”।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অনাহারে প্রচুর কৃষক মারা যাবার ফলে কৃষকদের সংখ্যা কমলেও চালের মত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষক বিদ্রোহ অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে টোকুগাওয়া যুগে ১০১ বার কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। শুধু চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এডো ও ওসাকা শহরে ১৭৮৭ ও ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে চাল দাঙ্গা (Rice riot) বাধে। শোগুন প্রশাসনে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি ও ডাইমিয়োদের ওপর আর্থিক চাপ শেষ পর্যন্ত কৃষক সমাজের ঘাড়ে এসে পড়ত।
রাজধানীতে অবস্থানকালে প্রাসাদ ও দুর্গ মেরামতের অর্থ আদায়ের জন্য ডাইমিয়োদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক কর বা গয়োকিন (Goyokin) আদায় করত। ডাইমিয়োরা আবার শোওনকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ব্যয়িত অর্থ কৃষকদের ওপর বাড়তি খাজনা [(যেমন ফুমাই (Fumai) ও সানশিমাই (Sunshimai)] চাপিয়ে আদায় করত। কৃষক নিপীড়নের চূড়ান্ত পর্যায় কৃষকেরা বিদ্রোহের পথ বেছে নিতে বাধ্য হতেন। এই সময় প্রভূহীন যোদ্ধা শ্রেণী বা রোগিন শ্রেণী কৃষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল একটি বেপরোয়া বিক্ষুব্ধ শ্রেণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে কৃষক বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত হয়। সামাজিক মর্যাদায় কৃষক শ্রেণীকে হীন মনে করলেও এই রোগিন শ্রেণী-ই এই সময় কৃষক বিদ্রোহে মদত যুগিয়েছিল।