StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

টোকুগাওয়া শোগুন যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

টোকুগাওয়া শোগুন যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর । টোকুগাওয়া শোগুন যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থা।

টোকুগাওয়া শোগুন যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজতন্ত্র টিকেছিল, কোনো শোগুন সম্রাটকে সরানোর কথা ভাবেননি। ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর সম্রাটের নৈতিক প্রভাব ছিল, শাসনের ক্ষমতা শোগুনের হাতে চলে গিয়েছিল। সম্রাট থাকতেন কিয়োটোতে, আর শোগুনের সদর দপ্তর ছিল এডোতে (পরবর্তী কালে টোকিও), শোগুনের জমিদারি ছিল তেনরিওতে। শোগুনের শাসনকে বলা হয়েছে বাকুফু, এর অর্থ হল শিবির অফিস, ভূস্বামীদের অধীনস্থ অঞ্চলের নাম হল হান।

টোকুগাওয়া শোগুন যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থা-য় শাসনকে বলা হয় বাকুফু-হান-শোগুন ও ডাইমিয়োদের শাসন। মধ্যযুগের ক্যারোলিঞ্জীয় রাজবংশ ও ভারতের মারাঠাদের শাসন ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিণতি লক্ষ করা যায়। রাজা ক্ষমতা হারিয়ে নামমাত্র শাসকে পরিণত হন, তার প্রধান সেনাপতি শোগুন আসল শাসক হয়ে বসেন। টোকুগাওয়া শাসকেরা সব সময় নিজেরা দেশ শাসন করতেন না, তাদের হয়ে উপদেষ্টারা শাসন পরিচালনা করতেন। টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের সকলে দক্ষ শাসক ছিলেন না, এজন্য এদের শাসনের শেষদিকে শাসন কাঠামোর ওপর এদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়েছিল। (There were a few able men among them, but broadly speaking they leaned heavily on the advice of counsellors, often permitting the latter to exercise the real control of public affairs)।

শোগুনতন্ত্র জাপানে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে শান্তিস্থাপন করেছিল। শোগুন ছিলেন ডাইমিয়োদের মধ্যে প্রধান, তিনি নিজে তেনরিও হানের মালিকানা ভোগ করতেন। এডোসহ কয়েকটি বাণিজ্য কেন্দ্রও তিনি নিজের অধিকারে রেখেছিলেন। বাকি জমি ২৮০ জন ডাইমিয়োদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়। ডাইমিয়োরা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল—–সিমপান, ফুদাই ও তোজামা। সিমপান ডাইমিয়োরা শোগুন পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফুদাই হল অনুগত বংশানুক্রমিক ডাইমিয়ো এবং বাকিরা হল তোজামা, এরা সেকিগাহারা যুদ্ধের পর টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল এদের আনুগত্য সন্দেহাতীত ছিল না।

শোগুন দেশে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য একটি জটিল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গঠন করেছিলেন (The Tokugawa shogunate erected a complicated but very effective structure of control to forestall any possibility of internal revolt) | ডাইমিয়োরা নিজেরা শোগুনের সভায় উপস্থিত থাকতেন অথবা তাদের পরিবারকে এডোতে রাখতে হত (permanent hostage system)। শোগুনের অনুমতি না নিয়ে ডাইমিয়োরা নিজেদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারত না। ডাইমিয়ো নতুন প্রাসাদ বানাতে চাইলে তাকে শোগুনের অনুমতি নিতে হত। রাজধানীতে শোগুনের নিয়মবিধি মেনে চলার জন্য ডাইমিরোদের প্রচুর ব্যয় হত, ডাইমিয়োরা অনেক সময় বণিকদের কাছ থেকে টাকা ধার করতে বাধ্য হত। শোগুন ডাইমিয়োদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করতেন। আসল উদ্দেশ্য ছিল ডাইমিয়োরা যেন প্রচুর সম্পদের মালিক না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা।

কোনো ডাইমিয়ো সরাসরি সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে পারত না। শোওনের কর্মচারীরা সম্রাটের আবাসস্থল কিয়োটোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। টোকুগাওয়া সরকার দেশে একটি শক্তিশালী গুপ্তচর ব্যবস্থা গঠন করেছিল। এরা সারাদেশের সংবাদ সংগ্রহ করে শোওনকে জানাত (One Japanese scholar has characterized the Tokugawa regime as the prototype of the absolute police state)। একজন জাপানি পণ্ডিত টোকুগাওয়া যুগের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বলেছেন নিরঙ্কুশ পুলিশি রাষ্ট্র। এসব বিধিনিষেধ সত্ত্বেও ডাইমিয়োরা তাদের জমিদারিতে যথেষ্ট স্বশাসনের অধিকার ভোগ করত। শোওন তার নিজের অধীনস্থ ভূখণ্ডে যেসব নিয়মবিধি অনুসরণ করতেন, অন্যান্য ডাইমিয়োরা তা অনুসরণ করত।

শোগুনের শাসন পরিচালনার জন্য দুটি সভা ছিল—কাউন্সিল অব এল্ডার্স ও জুনিয়র কাউন্সিল। এরা শোগুনের হয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করত। সারা দেশ ডাইমিয়োতে বিভক্ত ছিল, ডাইমিয়ো আবার প্রদেশ, জেলা, শহর ও গ্রামে বিভক্ত ছিল। প্রাদেশিক ও জেলা শাসক কর ধার্য ও কর সংগ্রহের কাজ করত, সামুরাইরা এই শাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই সামুরাইরা বুশ নামে অভিহিত হত, এদের পালনীয় বিধির নাম হল সুশিডো।

শোগুন যুগে বিচারব্যবস্থা ছিল সহজ ও সরল, সালিশির মাধ্যমে বেশিরভাগ বিরোধের মীমাংসা করা হত। দেশে তিন ধরনের আদালত ছিল—জেলা, শহর ও ধর্মীয় আদালত, এড়োতে হাইকোর্ট ছিল। শোগুন শাসন প্রকৃতিগতভাবে অবশ্যই সামন্ততান্ত্রিক, তবে এই সামন্ততন্ত্র ছিল অনেকখানি কেন্দ্রীভূত। এই শাসনের ফল হল যোদ্ধা সামুরাই নিয়ন্ত্রিত, শান্তিপূর্ণ, স্তর বিন্যস্ত এক সমাজ (Rigidly hierarchical peaceful, but warrior dominated society)। শোগুনরা নিজেদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য স্থাপনের প্রয়াস চালিয়েছিলেন, কিন্তু একাধিপতা স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

মূল্যায়ন :

শোগুনরা সর্বদা বিদ্রোহের ভয়ে ভীত থাকতেন। প্রায় ৩০০ জন ডাইমিয়োর মধ্যে তোজামা ডাইমিয়োরা শোগুনের প্রতি নিঃশর্ত, অবিচল আনুগত্য কখনও প্রকাশ করেনি। জাপানের এক বিশাল অঞ্চলে এদের আধিপত্য ছিল। শোগুন এদের বিদেশিদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। ডাইমিয়োরা নিজেদের হানে প্রায় স্বাধীনভাবে চলত, তাদের নিজেদের শাসন, বিচার ও আইনি ব্যবস্থা ছিল, সামুরাইরা তাদের শাসন পরিচালনার ব্যাপারে সহায়তা দিত। কালক্রমে এরা শিক্ষিত শাসক শ্রেণীতে পরিণত হয়।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *