StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

পাহাড়ি চিত্রকলা সম্বন্ধে আলোচনা করো

 

পাহাড়ি চিত্রকলা সম্বন্ধে আলোচনা করো

রাজস্থানী চিত্ররীতির সঙ্গে পাহাড়ী চিত্ররীতির পার্থক্য সামান্যই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উভয়কে একই মনে হলেও পাহাড়ী চিত্রকলার আঙ্গিকের বৈশিষ্ট্যের স্বাতন্ত্র শিল্পরসিকদের আকৃষ্ট করে। পাহাড়ী চিত্রকলা মূলত হিন্দুধর্মীয় ভাবাবেগে আচ্ছন্ন। এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে অঙ্কিত ঘটনার চিত্ররূপে। এছাড়াও তৎকালীন পাহাড়ী চিত্রকলাতে সমসাময়িক সামাজিক জীবনযাত্রার ছবি উঠে এসেছিল।
পাহাড়ী চিত্রকলা বলতে আমরা যা বুঝি তা আবার বাশোলি, কাংড়া, চম্বা, জম্মু, পুঞ্জ, তেহরি গাড়োয়াল, মাণ্ডি, রামপুর ইত্যাদি অঞ্চলে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিকশিত হয়েছিল। 
রাজা ও রাজকুমারের মুখের খুঁচালো ভাব, পটভূমিতে উজ্জ্বল লাল রঙের পরিবর্তে উজ্জ্বল হলুদ রঙ এবং ছবিতে লাল ও হলুদ রঙের ছড়াছড়ি গুজরাটী পটের কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয়। তবে অন্য সব রঙ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু তারতম্য আছে।
বাশোলি শৈলীকে কলম’ অনেকে ‘কাংড়া-পূর্ব বলেও অভিহিত করে থাকেন। প্রাচীন গুজরাটী পট, রাজস্থানী ও মুঘল চিত্রকলার মিশ্রণেই এর উৎপত্তি হয়। ছবিগুলিতে রেখার সাবলীলতা, প্রাথমিক রঙ (হলুদ, লাল, নীল) র- ব্যবহার, রঙের উজ্জ্বল, সরলতা ও অনাড়ম্বর ভাব, স্ত্রী-পুরুষমূর্তিতে টানা টানা আবর্ণ-বিস্তৃত চোখ বাশোলি কলমের বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে।
নাদিরের অত্যাচারে যেসব ওস্তাদ শিল্পী পাহাড়ী রাজ্যে আশ্রয় নেন তাঁদের মধ্যে পণ্ডিত শিউ, জারোটা বাশোলি রাজ্যে চাকরি পান। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র নয়নসুখ জম্মু রাজ্যে, আরেক পুত্র মানক প্রথমে গুল ও পরে কাড়ো রাজ্যে সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন। এইভাবে মুঘল দরবারের আরও অনেক সুদক্ষ চিত্রশিল্পী পাহাড়ী রাজ্যে আশ্রয় নিয়ে শিল্পচর্চা আরম্ভ করেন। এঁদের সংস্পর্শেই পাহাড়ী চিত্রকলা ক্রমশ উন্নতি লাভ করতে থাকে। উন্নত মুঘল ও রাজপুত কলমে শিক্ষিত ওস্তাদ চিত্রশিল্পীদের কাছে আঁকা ছবির কাছে ‘বাশোলি কলম’ কিছুটা নিষ্প্রভ হয়ে যায়। কিন্তু একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়নি। বাশোলি কলমের অনাড়ম্বর ও প্রাণময় সরলতা এটিকে অনেকদিন বাঁচিয়ে রেখেছিল। 
পাহাড়ী চিত্রকলা–অন্যান্য শৈলী
জম্মুর রাজা বলবন সিং ও তার ভাই রঞ্জিত দেব চিত্রকলার অতি উৎসাহী অনুরাগী ছিলেন। কাংড়ার রাজা সংসারচাদ এবং চম্বার রাজা রাজসিং চিত্রশিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরবর্তীকালে পাহাড়ী শিল্পীদের আঁকা ছবিগুলি দেখে বোঝা যায় তাঁরাও মুঘল ওস্তাদ শিল্পীদের স্পর্শ করেছিলেন। চঙ্গার রাজা রাজসিং-র ‘বাগান-বাটি-বিহার’ ও ‘রাধানৃত্য’ ছবিতে উৎকর্ষতা ও স্বকীয়তা প্রকাশ পায়।
কাংড়ার শিল্পীদের আঁকা পৌরাণিক ছবিগুলি দৈহিক সৌন্দর্য ও বর্ণের উজ্জ্বল্যে অতুলনীয়। তারা সাধারণত রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীকৃষ্ণলীলা, হরগৌরীর কাহিনী, রাগ-রাগিণীর ছবি এবং মূল শিল্পীদের অনুকরণে কিছু প্রতিকৃতি-চিত্র অঙ্কণ করেন। পৌরাণিক চিত্রগুলির রঙ অতি স্নিগ্ধ ও মনোরম। বিশেষত ঘন লাল ও কমলা রঙের মাঝামাঝি একটি আশ্চর্য রঙের ব্যবহার কাংড়ার পৌরাণিক ছবিগুলিতে দেখা যায়। কাংড়ার হলুদ রঙের একটি বিশেষত্ব আছে। কাংড়ারাজ সংসারচাঁদের ‘রাজদরবার’ ও শ্রীকৃষ্ণের ‘দানলীলা’ ছবি দু’টি খ্যাতি লাভ করেছে। রাঠোর বংশীয় রাজপুত রাজারা কাংড়া শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ছবির নীচের লেখা না থাকায় পাহাড়ী চিত্রগুলি কাদের আঁকা সেবিষয়ে জানার কোনো উপায় নেই।
গুলের রাজা ‘প্রকাশচাঁদ’-র ছবিটি রেখার মাধুর্য্যে, রঙের বিন্যাসে, পরিপ্রেক্ষিতে অতুলনীয়। ছবিতে মুখ, চোখ ও পোশাক-পরিচ্ছদের অঙ্কন পদ্ধতি মুঘল চিত্রকলাকেও অতিক্রম করে যায়।
তেহরি-গাড়োয়াল চিত্ররীতির শ্রেষ্ঠ শিল্পী মোলারাম। তাঁর আঁকা ‘হর-পার্বতী’-র চিত্রগুলি গাড়োয়াল শিল্পের বিশেষ গৌরবের বস্তু বলে বিবেচিত হয়। গাড়োয়াল শিল্পীদের আঁকা বহু সামাজিক চিত্র রয়েছে। তবে কাংড়া শিল্প ও গাড়োয়াল শিল্পকে অনেকে পৃথকভাবে দেখার পক্ষপাতী নন।
পাহাড়ী চিত্রকলার প্রকৃতি
পাহাড়ী চিত্রকলায় বিষয়বস্তু নির্বাচনে যেমন স্বাতন্ত্র লক্ষ্য করা যায়, তেমনি রেখা-জ্ঞান, বর্ণ নির্বাচন ও বর্ণ প্রক্ষেপণে শিল্পীদের নজিরবিহীন দক্ষতা চোখে পড়ে। এইসময়ের নারী-পুরুষের মূর্তিগুলি প্রোফাইলভিত্তিক ভঙ্গীমায় অঙ্কিত হত, যা অনেকটা প্রাচীন মিশরীয় রীতির সাথে তুলনীয়। তবে বস্ত্রসজ্জায় সূক্ষাতিসূক্ষ্ম কাজ পাহাড়ী চিত্রকলাকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে।
পারসিক চিত্রকলা মুঘল চিত্রকলার পথ ধরে পাহাড়ী চিত্রকলায় কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল। রাজস্থানী শৈলী এবং হিন্দু পৌরাণিক বিষয়গুলি পাহাড়ী চিত্রশিল্পকে প্রভাবিত করেছিল। সর্বোপরি পাহাড়ী অঞ্চলসমূহের দীর্ঘকালীন ঐতিহ্য এবং সেখানকার ভৌগোলিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ শিল্পীদের উপর স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব ফেলে। মুঘল ও রাজস্থানী শিল্পরীতির প্রভাবকে অতিক্রম করে পাহাড়ী চিত্রকলা তার স্বতন্ত্র বৈচিত্র্য নিয়ে আজও শিল্পরসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *