StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

পিটের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ

 

পিটের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ ।

ভূমিকা : 

১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে সংশোধনী আইনের পরেও ভারতের শাসন ব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। কোম্পানি ভারতে আগ্রাসী সম্প্রসারণবাদী নীতি অনুসরণ করে চলেছিল। মারাঠা ও মহীশূরের সঙ্গে লড়াই শুরু হয়ে যায়। সিক্রেট ও সিলেক্ট কমিটি কোম্পানি সম্পর্কে বহু তথ্য প্রকাশ করেছিল। ভারতে সুশাসন ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করেছিল। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে ফক্সের মন্ত্রীসভা ভারত শাসন সংক্রান্ত একটি বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছিল। পিট বিরোধী নেতা হিসেবে ফক্সের বিলের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছিলেন। ফক্সের বিলে ভারতের শাসনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার প্রস্তাব ছিল। ফক্সের এই বিল হাউস অব লর্ডসে পরাস্ত হয়। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে নতুন প্রধানমন্ত্রী পিট ভারত শাসন আইনটি পাশ করেন। ভারতে কোম্পানির কাজকর্মের উন্নততর ব্যবস্থাপনার জন্য এই আইনটি পাশ করা হয় (for the better regulation and management of the affairs of the East India Company)।

• পিটের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য  

1) পিটের ভারত শাসন আইনের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য হল ইংল্যান্ডে কোম্পানির ডিরেক্টর সভা এবং ভারতে কোম্পানির শাসনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা হয়। এই আইনে ছজন সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠন করা হয়। একজন সেক্রেটারি, চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার ও চারজন প্রিভি কাউন্সিলর নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এই বোর্ড অব কন্ট্রোল ভারতের সামরিক, বেসামরিক শাসন ও রাজস্বের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করবে (Superintend, direct, control, all acts, operations and concerns related to the civil or military government or revenues of the territorial possessions in the East Indies ) ।

2) পিটের আইনে বলা হয়েছিল বোর্ড অব কন্ট্রোলের নির্দেশ ডিরেক্টর সভা অমান্য করতে পারবে না। তিনজন ডিরেক্টর নিয়ে গঠিত হবে সিক্রেট কমিটি, এরা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে। ভারত শাসন সম্পর্কিত সব নথিপত্র বোর্ডের কাছে পেশ করতে হবে। কোর্ট অব প্রোপ্রাইটরদের ক্ষমতাও এই আইনে খর্ব করা হয়। ডিরেক্টর সভা গভর্নর জেনারেল, গভর্নর ও সেনাপতিদের নিয়োগের অধিকার বজায় রেখেছিল। কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকারও বজায় ছিল।

3) কলকাতার গভর্নমেন্টকে সুপ্রিম গভর্নমেন্ট বলে ঘোষণা করা হয়। গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলে তিনজন সদস্য থাকবেন, সংখ্যাধিক্যের মতানুযায়ী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ভারতের প্রদেশগুলির শাসন গভর্নর জেনারেলের অধীনে থাকবে (superintend, control and direct the several presidencies and governments of the companies)।

4) পিটের ভারত শাসন আইনে আক্রমণাত্মক আগ্রাসী সম্প্রসারণবাদী নীতির বিরোধিতা ছিল, দেশীয় রাজাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির বিরোধিতা করা হয় (schemes of conquest and extension of dominion in India are measures repugnant to the wish, the honour and policy of this nation)। ডিরেক্টর সভার অনুমতি না নিয়ে ভারতে গভর্নর জেনারেল কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারবেন না।

5) ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের আইনে ভারতে কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য বিস্তৃত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় (The Act of 1784 made elaborate provisions for the prevention and punishment of corruption, misgovernment and disobedience on the part of company’s servants in India) I

6) পিটের ভারত শাসন আইন কোম্পানির শাসনের ক্ষেত্রে দ্বৈত ব্যবস্থা চালু করেছিল— ডিরেক্টর সভা ও বোর্ড অব কন্ট্রোল শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল। কিছু পরিবর্তনসহ এই ব্যবস্থা ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন পর্যন্ত টিকে ছিল। পিট কোম্পানির ডিরেক্টর সভার হাত থেকে নিয়োগের দায়িত্ব কেড়ে নেননি (patronage), বাণিজ্য পরিচালনার দায়িত্ব কোম্পানির হাতে রেখেছিলেন। কোম্পানির শাসন কাঠামোয় তিনি বড়ো ধরনের মৌল পরিবর্তন ঘটাতে চাননি। কোম্পানির শাসন কাঠামোয় তিনটি স্তর তৈরি হয়েছিল—বোর্ড অব কন্ট্রোল, ডিরেক্টর সভা এবং ভারতে গভর্নর জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিল।

7) গভর্নর জেনারেলের দুজন প্রভু থাকার জন্য প্রধান শাসক প্রায় স্বাধীনভাবে চলতে পারবেন। তিনি এক প্রভুকে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে নিজের অধিকার বজায় রাখেন। গভর্নর জেনারেলের অসুবিধা হল কাউন্সিলের সংখ্যাধিক্যের মত অনুযায়ী তাঁকে চলতে হত, সৈন্যবাহিনী নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহারের অধিকার তাঁর ছিল না। ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে একটি সংশোধনী আইন পাশ করে গভর্নর জেনারেলকে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়। এই সংশোধনী আইনে জরুরি অবস্থায় নিজের দায়িত্বে তিনি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বাতিল করার অধিকার লাভ করেন।

8) পিটের ভারত শাসন আইন ইংল্যান্ড ও ভারতে কোম্পানির জন্য একটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছিল। পিটের ভাষায় বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয় স্থাপন করা সম্ভব হয় (a unity of system)। সেযুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না, সেজন্য পিটের ঐক্যবদ্ধ শাসনব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। স্যার কোর্টনি ইলবার্ট মনে করেন ভারতের শাসনব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা ছিল, ছিল জটিলতা (cumbrous and dilatory), সেজন্য শাসনক্ষেত্রে বড়ো ধরনের উন্নতি হয়নি।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *