StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

প্রাক্ পুনঃস্থাপন পর্বে জাপানের কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে লেখ

 

প্রাক্ পুনঃস্থাপন পর্বে জাপানের কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে লেখ

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে মেজি নেতারা ডাইমিয়োদের জমি অধিগ্রহণ করে হান ব্যবস্থা তুলে দিয়েছিল। জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আয় বৃদ্ধির দরকার পড়েছিল। সামন্ততান্ত্রিক ভূমি বন্দোবস্ত তুলে দেবার পর নতুন করে কর স্থাপনের প্রয়োজন হয়। ডাইমিয়ো ও সামুরাইদের পেনশন বাবদ বহু অর্থ দিতে হয়, অনেককে স্টাইপেন্ড মঞ্জুর করতে হয়েছিল, অনেক ডাইমিয়োকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। সরকারের আর্থিক দায়দায়িত্ব অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল। সরকারের আয়ের উৎস বেশি ছিল না, বিদেশ থেকে ঋণ করতে মেজি নেতারা ভয় পেয়েছিলেন, ঋণশোধে অপারগ হলে বিদেশিরা হস্তক্ষেপ করতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হবার সম্ভাবনা ছিল।

পুঁজি গঠনের দিকে মেজি নেতাদের নজর ছিল, এজন্য শিল্প-বাণিজ্যের ওপর কর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর কর বৃদ্ধির উপায় ছিল না, চুক্তি করে বিদেশিরা নির্দিষ্ট শুল্কের ব্যবস্থা করেছিল। নেতারা কৃষির ওপর কর কমানোর কথা ভাবেননি, আবার কৃষক শ্রেণী রাষ্ট্রের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠুক এটাও তাদের নীতি ছিল না। মেজি নেতারা কৃষক বিদ্রোহের কথা ভাবেননি, তবে কৃষক কর দেওয়া বন্ধ করলে রাষ্ট্রের আর্থিক অস্বাচ্ছন্দ্য দেখা দেবে, অহিংস প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও ছিল।

টোকুগাওয়া যুগের শেষ দিকে গ্রাম ও শহরে যেসব প্রতিবাদী আন্দোলন হয়েছিল তাদের স্মৃতি তখনও মুছে যায়নি। কৃষকরা নতুন করের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে প্রিফেকচার স্তরে কর্মচারীরা সামুরাইদের সাহায্য নিয়ে তা দমন করবে এমন ব্যবস্থা ছিল। অনেক বেকার প্রভুহীন সামুরাই সরকারের পক্ষে কাজ করতে রাজি ছিল কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাননি। এজন্য সরকার ভূমি বন্দোবস্ত ও কর ধার্যের ক্ষেত্রে কৃষকদের সম্মতি আদায়ের প্রয়াস চালিয়েছিলেন। সরকারের সামনে সমস্যা হল কর না কমিয়ে কৃষকদের সম্মতি আদায় করা। সমস্যার আংশিক সমাধান মিলেছিল সামন্ততান্ত্রিক ভূমি ব্যবস্থার উচ্ছেদ করে এবং পুঁজিবাদী কৃষি সম্পর্কের প্রবর্তনের মধ্যে দিয়ে। ধনী ভূস্বামী ও কৃষক উভয়ে এধরনের সম্মতি দিয়েছিল।

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে সরকার ভূমির ওপর যেসব প্রথাগত নিয়ন্ত্রণ ছিল সেগুলি তুলে দিয়েছিল, জমির মালিক ইচ্ছামতো জমি ব্যবহারের অধিকার লাভ করেছিল। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সরকার কৃষকদের জমি বিক্রির অধিকার দিয়েছিল, ডাইমিয়ো ও সামুরাইরা কৃষি জমির ওপর সার্টিফিকেট দিয়েছিল। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সরকার একটি আদেশ জারি করে নতুন করে কর স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিল, তবে পুরোনো করের হার বজায় রাখতে বলা হয়। মেজি সরকার জমির বাজার মূল্যের ওপর নির্ভর করে কর ধার্য করার ব্যবস্থা করেছিল। জমিকে গণ্য করা হল স্থায়ী বিনিয়োগ হিসেবে। টোকুগাওয়া যুগে জমির উৎপাদিকা শক্তির ওপর কর ধার্য করা হত, উৎপাদনের মাপকাঠি ছিল চাল, আবার বিভিন্ন হানে বিভিন্ন হারে কর ধার্য হত। নতুন ব্যবস্থায় প্রত্যেক ভূমিখণ্ডের বাজার দামের ওপর তিন শতাংশ হারে ভূমিকর ধার্য করা হয়। কর ধার্যের সময় হিসেব করা হত জমির উৎপাদিকা শক্তি, পণ্যের দাম, উৎপাদন ব্যয় এবং কৃষকের লাভ। জমির মালিক নগদ অর্থে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ভূমিকর জমা দিত। এটি ছিল স্থায়ী কর, গোড়ার দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ছাড়ের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এসবের বিনিময়ে ভূমির মালিককে পূর্ণ অধিকারসহ দলিল দেওয়া হয়। সরকার মালিক ও প্রজার সম্পর্কে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জমির মালিক সরকারি রাজস্ব জমা দিয়ে যেকোনো হারে খাজনা আদায়ের অধিকার পেয়েছিল।

১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ভূমিসংস্কার পুরোনো ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। আরিমেটো মাসাও জানাচ্ছেন ১৮৭৪-১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জাপানের গ্রামাঞ্চলে নিরানব্বইটি কৃষক আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছিল। কৃষকরা যে ভূমিকরের বিরুদ্ধে আপত্তি করেছিল তা নয়, আপত্তি করেছিল লোকাল ট্যাক্স কমিশন যেভাবে ভূমির মূল্য নিরূপণ করেছিল এবং অস্থায়ী কর ধার্য করেছিল তার বিরুদ্ধে। গ্রামের কৃষক কৃষিজ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ও তার ভিত্তিতে নগদ কর ধার্যের বিরোধিতায় নেমেছিল। পণ্যমূল্য কম ধরা হলে তাদের দেয় করও কম হবে কৃষকরা ধরে নিয়েছিল। চালের দাম সর্বত্র এক ছিল না, সব সময়ে এক থাকত না, কৃষকরা ধরে নিয়েছিল কর ধার্যের সময় তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। জাপানের সর্বত্র জমির উর্বরতা এক ছিল না, আবহাওয়া এক থাকত না, এবং বিপণনের অসুবিধার জন্য কৃষক কৃষিজ পণ্যের দাম কম পেত।

১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়াকাইয়ামা প্রিফেকচারের নাকা জেলায় একটি বড়ো ধরনের কৃষক আন্দোলন হয়। এখানকার একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি কোডামা সোয়েমন স্থানীয় গভর্নরকে জানিয়েছিল যে ট্যাক্স কমিশন চালের দাম বেশি করে ধরে নিয়ে করের হার বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বারোটি গ্রামের মেয়ররা একই অভিযোগ করেছিল। গভর্নর আবেদন বাতিল করলে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। কৃষকরা অস্থায়ী করের শুধু বিরোধিতা করেনি, তারা জমির দামের পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছিল। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল যে করের পুনর্বিবেচনা না করা হলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে। কৃষকরা নতুন কর ব্যবস্থার জন্য তাদের দুর্দশার কথা জানিয়েছিল।

ঊনত্রিশজন মেয়র ও কর্মচারী পদত্যাগ করলে গভর্নর আপস করার কথা ভাবেন। তিনি এদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি, ৫ শতাংশ মূল্যমান কমানোর নির্দেশ দেন অথচ জনগণ দাবি করেছিল ১০ শতাংশ। তার এই সিদ্ধান্ত বিক্ষোভ কমায়নি, বরং কৃষকরা আরও সুবিধালাভের আশায় আন্দোলন জোরদার করেছিল, আরও বহু কৃষক আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। ১৭৭ জন গ্রামীণ কর্মচারী গভর্নরকে জানিয়েছিল যে মূল্যস্তর বিভিন্ন অঞ্চলের অসম পণ্য মূল্যের ওপর ধার্য করতে হবে, সব অঞ্চলের জন্য একটি হার ধার্য করা ঠিক হবে না। কৃষকরা এক মাপকাঠি গ্রহণের বিরোধিতায় নামলে কর ধার্য ও সংগ্রহের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আপস করতে ব্যর্থ হয়ে গভর্নর কড়া ব্যবস্থা নেন, মেয়রদের ডেকে তিনি ধমকান, তাতেও কাজ হল না দেখে তিনি পাঁচজন নেতাকে বন্দি করেন। নেতারা বন্দি হলে কৃষকরা আরও বড়ো আকারের বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল, তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। গ্রামীণ বিক্ষোভ দমনের জন্য সৈন্যবাহিনী নিয়োগের দরকার হয়নি। সরকার বহুলোককে বন্দি করেছিল, ৬৮৮ জনকে গোলমাল করার জন্য শাস্তি দেওয়া হয়।

ওয়াকাইয়ামার ঘটনায় কাউকে জরিমানা করা হয়নি, বিরাট সংখ্যক লোককে বন্দি করা হয়নি। এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল টোটোরি অঞ্চলে, এখানকার কুড়িটি গ্রাম নতুন ধার্য কর গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল। অন্যরা ধার্য কর গ্রহণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছিল। বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ার আগেই অঙ্কুরে তাকে বিনষ্ট করার জন্য সরকারি কর্মচারীরা কৃষক প্রতিনিধিদের প্রিফেকচার অফিসে ডেকে ধার্য কর গ্রহণের জন্য প্রচণ্ড চাপ দিয়েছিল। চাপের কাছে নতিস্বীকার করে কৃষক প্রতিনিধিরা নতুন কর মেনে নিতে রাজি হয়, তবে কয়েকটি গ্রাম প্রতিরোধে অনড় ছিল, আরও কয়েকটি গ্রাম প্রতিবাদীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। ৩৬টি গ্রামের কৃষক জেলা আদালতে কর ধার্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।

১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ ১১২টি গ্রাম প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে থাকে। কর্মচারীরা সম্পন্ন ভূস্বামীদের সহায়তা নিয়ে আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করেছিল, এরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মতি জানালে আন্দোলন অবশ্যই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সরকার ভূমি আইনের সংশোধন করে স্থানীয় কমিটিকে অনুসন্ধান করে কর প্রস্তাব দিতে বলেছিল। কমিটির মতে, কর ধার্যের ব্যাপারে অবিচার হয়নি, কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হলে আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায়। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সাতটি গ্রামের ধার্য করের হার কমানো হয়।

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে বেশিরভাগ কৃষক আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছিল। ১৮৭৪ সালে কর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। হিরোশিমা, চিকুমা ও ইয়ামাগুচিতে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। নতুন ধার্য কর পুরোনো করের চেয়ে কম ছিল (New assessments were generally lower than the old) টোকিও কর ধার্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য নতুন এজেন্সি গঠন করলে সমস্যার সৃষ্টি হয়, কর ধার্যের ক্ষেত্রে কৃষকের স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি (Assessments were less generous to the farmers)। প্রত্যেক কমিশনকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর (quota) যার্য করতে হয়, এজন্য তারা যথেষ্ট উদারতা দেখাতে পারেনি। সরজমিনে কর ধার্যের ব্যাপারটি বজায় রাখা হয়, সরকার কঠোর হলে কৃষকদের প্রতিবাদও বেড়েছিল। একই সময়ে জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমে সামুরাই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। সরকার বাধ্য হয়ে কৃষকদের প্রতি আপসমূলক মনোভাব গ্রহণ করেছিল।

১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে সরকার জমির বাজার মূল্যের ২.৫ শতাংশ ভূমিকর ধার্য করেছিল, বার্ষিক করে ছাড় দেওয়া হয় ১৭ শতাংশ। ঐ বছর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শস্যহানির ঘটনা ঘটলে রাজস্ব কমাতে হবে। বাজার থেকে অনেক দূরে অবস্থিত গ্রামগুলির ক্ষেত্রে সরকার অর্ধেক রাজস্ব উৎপন্ন শস্যে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এসব ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে গ্রামাঞ্চলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কমে এসেছিল, তবে প্রতিবাদ একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ইশিকাবা প্রিফেকচারে বড়ো ধরনের আন্দোলন হয়েছিল, সাতটি জেলার মোট ২৩২টি গ্রাম নতুন ধার্য রাজস্ব গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল। তবে সরকারি কর্মচারীরা চাপ সৃষ্টি করলে প্রতিবাদ কমে এসেছিল। এখানে আটাশটি গ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা সরকারের কাছে নতিস্বীকার করেনি, তারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলেছিল। এরা নিজেদের দাবির সমর্থনে ইতাগাকি তাইসুকের রিশিশার সমর্থন চেয়েছিল। এই দলের সুগিতা তেইচি কৃষক নেতাদের সঙ্গে যোগ দেন। সুগিতা কৃষকদের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিলেন, সরকার দুই আন্দোলনের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হলে ভয় পেয়েছিল (কৃষক ও রাজনৈতিক আন্দোলন)। সরকার কর ধার্যের বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করতে বলেন, এমনকি নতুন করে জরিপ করতে বলেছিলেন। কৃষকদের খুব বেশি লাভ হয়নি, ভূমিকর কমলেও প্রশাসনিক কর বেড়েছিল। নতুন ভূমিব্যবস্থায় প্রতিবাদ ছিল অবশ্যম্ভাবী, সাত বছরে ৯৯টি প্রতিবাদের ঘটনা খুব বেশি ছিল বলা যায় না, এ মধ্যে সাঁইত্রিশটি ঘটনা ছিল ভূস্বামী-প্রজার মধ্যেকার দ্বন্দ্ব। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বেশিরভাগ কৃষি-বিরোধ মেটানো সম্ভব হয়, সরকারকে সৈন্য মোতায়েন করতে হয়নি। সৈন্যবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান নিয়ে যে বিদ্রোহ হয় (blood) tax) তার সঙ্গে তুলনায় কৃষক বিদ্রোহ বড়ো ঘটনা ছিল বলা যায় না।

টোকুগাওয়া কর ব্যবস্থায় যে বৈষম্য ছিল তা দূর করে মেজি নেতারা সমতার ভিত্তিতে কর ধার্য করেন। সমহারে কর ধার্য করে মেজি নেতারা জমির মালিকদের। খানিকটা স্বস্তি দিয়েছিলেন (Meiji tax assessments provided some relief to the majority of land holders)। তবে সর্ব শ্রেণীর ভূমির মালিক মেজি ব্যবস্থায় উপকৃত হয়নি, এই ব্যবস্থায় দরিদ্র, প্রান্তিক চাষিরা বিশেষ সুবিধা পায়নি। নগদে কর দেবার ব্যবস্থা হলে দরিদ্র কৃষক বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল, তাদের দেউলিয়া হয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। প্রান্তিক চাষিদের সাহায্যের প্রয়োজন হত, ভূমি বন্দোবস্তে তার ব্যবস্থা ছিল না। এই ব্যবস্থায় ধনী ভূস্বামী ও সম্পন্ন কৃষকরা লাভবান হয়েছিল, পুঁজিবাদী কৃষির সূচনা হয়। যাদের যথেষ্ট পুঁজি ও প্রযুক্তি ছিল তারা কৃষির রূপান্তর ঘটিয়ে লাভবান হয়েছিল। কৃষকদের জমির পূর্ণ মালিকানা দেওয়া হয়, প্রজা কৃষকের স্থায়ী স্বত্ব তৈরি হয়নি।

১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে গ্রামাঞ্চলে ভূস্বামী ও প্রজার মধ্যে বিরোধ বেড়েছিল, বিরোধের বিষয় হল খাজনা এবং কৃষকের প্রথাগত অধিকার। প্রজারা আশা করেছিল সরকারি রাজস্ব কমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দেয় খাজনাও কমবে। কানাগাওয়া প্রিফেকচারে ভূস্বামী ও প্রজার বিরোধ আদালতে যায় কিন্তু ভূস্বামী এ মামলায় জয়ী হয়েছিল। ক্ষুব্ধ কৃষকরা ভূস্বামীর গৃহ আক্রমণ করেছিল, ভূস্বামী ও তার কয়েকজন অনুচর নিহত হয়, বিদ্রোহী কৃষকরা জনমতের সমর্থন লাভ করেছিল।

গ্রামের সম্পন্ন কৃষকরা কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল, কৃষকদের অভাব অভিযোগ তারা সরকারি কর্মচারীদের কাছে পৌঁছে দিত। টোকুগাওয়া যুগে গ্রাম প্রধানরা এই কাজ করত, তারাই গ্রামের হয়ে রাজস্ব জমা দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকত। কৃষকদের হয়ে এরা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলত। টোকুগাওয়া যুগের ঐতিহ্য মেজি যুগেও বজায় ছিল, মেজি ব্যবস্থায় জমি জরিপ করে কর ধার্যের ব্যবস্থা হলে এরা তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল। সরকার এদের গ্রাম সমাজের প্রতিনিধি স্থানীয় গণ্য করত, কমিশন এদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করলে বিরোধ হত। গ্রাম প্রধানরা কর ধার্যকে অন্যায্য বলে মনে করলে কৃষকরা যৌথভাবে বাধা দিত। খুব বেশি কৃষক বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেনি কারণ করের হার টোকুগাওয়া জানাত, মামলা লড়ত, এজন্য প্রতিরোধের ঘটনা ছিল কম।

গ্রাম প্রধানরা গ্রামের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে আন্দোলন করেনি, এরা ছিল সমাজের সবচেয়ে জঙ্গি সামাজিক গোষ্ঠী। কৃষকরা মেজি ব্যবস্থায় করের হারের বিরুদ্ধে আপত্তি করেনি, আপত্তি ছিল কমিশনের কাজকর্মের বিরুদ্ধে। প্রান্তিক চাষি বা অধিকারহীন প্রজা বিদ্রোহ করতে পারেনি যদিও তাদের অবস্থা ছিল দুঃসহ। পুঁজিবাদী সম্পন্ন কৃষক জমির নিরঙ্কুশ মালিকানা পেয়ে লাভবান হয়েছিল, নির্দিষ্ট ভূমিকর তাদের অপছন্দের ছিল না। গ্রাম প্রধানরা নিজেরাই ছিলেন ভূমির মালিক ও মহাজন, এদের স্বার্থ রক্ষিত হলে কৃষক আন্দোলনও শেষ হয়ে যায়। দরিদ্র প্রান্তিক চাষিদের হয়ে লড়বার কেউ গ্রামসমাজে ছিল না, তাদের সংঘবদ্ধ করে আন্দোলন করার মতো নেতৃত্বের অভাব ছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *