StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

বক্সার বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি কি ছিল

 

বক্সার বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি কি ছিল। বক্সার প্রটোকল এর বৈশিষ্ট্য।

বক্সার বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল – 

1) বক্সার বিদ্রোহ যে বিদেশি বিরোধী, খ্রিস্টান ধর্ম বিরোধী ও মিশনারি বিরোধী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বক্সার বিদ্রোহীরা কোনো ধর্ম সম্প্রদায়ের লোক ছিল। না, তবে তারা নিশ্চিতভাবেই গুপ্ত সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই গুপ্ত সমিতি অবশ্যই খ্রিস্টান ধর্ম বিরোধী ছিল। খ্রিস্টান মিশনারিদের আগমনের আগেই চিনে অনেক গুপ্ত সমিতি ছিল, এরা ছিল রাজতন্ত্র বিরোধী।

2) বিদেশি শক্তিগুলির সঙ্গে মিশনারিরা চিনে এসেছিল, ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছিল। ইতিমধ্যে চিনে শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক দুর্গতি ও অর্থনৈতিক অবক্ষয়। ষাটের দশক থেকে বিদেশি বিরোধী দাঙ্গা ঘটতে থাকে, এগুলি সেই সঙ্গে ছিল খ্রিস্টান বিরোধী। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই প্রতিবাদের শামিল হয়। রাজশক্তির প্ররোচনা এসেছিল পরে, ক্রমশ তারা সংগঠিত হয়, গুপ্ত সমিতিগুলির সমর্থন না পেলে বোধহয় তা সম্ভব হত না। দেশজুড়ে বিশেষ করে কোয়াংটুং, সেচুয়ান, চেকিয়াং, কোয়াংসি ও হুপে অঞ্চলে অসংখ্য ক্যাথলিক বিরোধী অভ্যুত্থান ঘটেছিল। এই অভ্যুত্থানে বহু লোক হতাহত হয়। এগুলি ছিল খ্রিস্টান বিরোধী, বিদেশি বিরোধী বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

3) মিশনারিরা একজন ধর্মান্তরিত চিনাকে কনফুসিয়াস, বৌদ্ধ বা তাও পন্থার সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক রাখতে দিত না। বক্সার বিদ্রোহীরা প্রচার পত্রে বলেছিল ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে খরার জন্য দায়ী হল বিদেশিরা। বিদেশিরা বিতাড়িত হলে দেশে বৃষ্টি হবে, নদীতে বান আসবে। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে একটি ইস্তাহারে লিখেছিল ‘ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ আমাদের দেবতারে বঞ্চনা করেছে, চিনের সস্তদের প্রতি আমাদের বিশ্বাসবোধকে নষ্ট করেছে, অবাধ্য হয়েছে বুদ্ধবাণীর প্রতি। এজন্যই দেশে এত দুৰ্ভিক্ষ, এত বিপর্যয়।’

4) বক্সার বিদ্রোহের পর মিশনারিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে প্রতিবেদন লিখেছিল। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট উভয়ে বিদেশি সরকার ও বণিকদের বিদ্রোহের জন্য দায়ী করেছিল। এদের মতে, বিদেশি রাষ্ট্র ও বণিকদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ হয়েছিল চিনের জনসমাজ। ক্যাথলিকরা প্রোটেস্ট্যান্টদের এবং প্রোটেস্ট্যান্টরা ক্যাথলিকদের বিদ্রোহের জন্য দায়ী করেছিল।

5) এ. এইচ. স্মিথ ফ্রান্সের ক্যাথলিক মিশনারিদের আগ্রাসী কার্যকলাপকে বিদ্রোহের জন্য দায়ী করেন। ব্রিটেন চেয়েছিল বাণিজ্যের প্রসার, আর ফ্রান্স চেয়েছিল এখানে ক্যাথলিক উপনিবেশ গড়ে তুলতে। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের চুক্তি অনুযায়ী ক্যাথলিক চার্চ বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিল, গড়ে তুলেছিল বিশাল বিশাল চার্চ। এগুলি ছিল দুর্ভেদ্য দুর্গের মতো, চিনের স্থাপত্য ঐতিহ্যের সঙ্গে এর মিল ছিল না, এসব কারণে চিনাদের খ্রিস্টান বিরোধিতা বেড়েছিল।

6) বক্সার বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল প্রোটেস্ট্যান্টরা জনহিতকর কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, সমাজসংস্কার ইত্যাদিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। মদ্যপান, ধূমপান ইত্যাদির বিরোধিতা করে চিনাদের বিরাগভাজন হয়। চিনের সাধারণ মানুষ ক্যাথলিক প্রোটেস্ট্যান্ট উভয়কে অপছন্দ করেছিল। বিদেশিদের রাজনীতি ও ধর্মনীতি অবিভাজ্য বলে তাদের মনে হয়েছিল, রাজনীতি ও ধর্মনীতির মধ্যে বিরোধ হলে বিদেশিরা রাজনীতিকে প্রাধান্য দিত। তাইপিং বিদ্রোহের সময় খ্রিস্টানরা তাইপিংদের বিরুদ্ধে মাধু সম্রাটকে সাহায্য দিয়েছিল। এসব কারণে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবিশ্বাস ও সন্দেহ দেখা দিয়েছিল।

7) বক্সার বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল আই-হো-চুয়ান আন্দোলন। আই-হো-চুয়ান আন্দোলন ছিল মূলত চিং রাজবংশ-বিরোধী। এই আন্দোলন চিং রাজবংশের পতন ঘটাতে চেয়েছিল, সেই সঙ্গে বিদেশি বিরোধিতা ছিল (overthrow the Ching, destroy the foreigner)। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে বক্সারদের এরকম লক্ষ্য ছিল, কয়েকমাস পরে লক্ষ্যটা পালটে গেল। ঘোষিত নতুন লক্ষ্য হল চিংদের সমর্থন করা, বিদেশিদের বিতাড়ন এবং ধ্বংস করা (support the Ching destroy the foreigner)। বিদেশি বিরোধিতা ছিল।

8) বক্সার বিদ্রোহের স্থায়ী লক্ষ্য, বিধবা রানি জু-সি বক্সারদের সমর্থন করায় বিদ্রোহীরা উৎসাহিত হয়। বিদেশিদের আমদানি করা রেলপথ, ডাক ও তার ব্যবস্থা, চার্চ, হাসপাতাল, শিক্ষায়তন সবই তাদের আক্রমণের শিকার হয়। বিদেশিদের সঙ্গে যুক্ত সবকিছু চিনাদের অপছন্দের কারণ হয় (The traditional Chinese order was still strong and capable of violent protest against westernization) I মিশনারি, চার্চ, তাদের সব প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মান্তরিত চিনারা বক্সারদের সহিংস আন্দোলনের শিকার হয়। জি. এন. স্টাইগার একটু অন্যধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, বক্সার আন্দোলন ছিল আসলে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলন, খ্রিস্টান বিরোধী নয়। চিনে ধর্মীয় সহনশীলতার ঐতিহ্য ছিল। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে চিনে বৌদ্ধ, কনফুসীয় ও তাওধর্ম পাশাপাশি প্রবহমান ছিল। খ্রিস্টানধর্ম ছিল এসবের বিরোধী, খ্রিস্টান মিশনারিরা চিনের প্রথাগত ধর্মবিশ্বাসকে আক্রমণ করেছিল।

9) চিনা বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন যে তাদের প্রথাগত ধর্ম ও সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে, এই বিপন্নতাবোধ থেকে আক্রোশ তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি খ্রিস্টান ছিল বলে খ্রিস্টান ধর্মের ওপর আক্রমণ হয়নি। খ্রিস্টান ধর্ম চিনের সমাজ ও সংস্কৃতির পক্ষে বিপজ্জনক বলে বিদ্রোহীরা ধরে নিয়েছিল। বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহকে উন্মত্ততা বলে উল্লেখ করেছেন, এদের মধ্যে ফেয়ারব্যাঙ্কও আছেন। একে তাঁরা অন্ধ, গোঁড়া, প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণ বলে চিহ্নিত করেছেন। ইজরায়েল এপস্টেন এই মতের বিরোধিতা করে বলেছেন যে একদল সভ্যতার মুখোশধারী দস্যু চিনকে গ্রাস করার প্রয়াস চালিয়েছিল। দেশপ্রেমিক চিনারা তাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করেছিল, বক্সার বিদ্রোহ প্রতিক্রিয়াশীল সংগ্রাম নয়, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রাম।

10) বক্সার বিদ্রোহের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা হল সংগঠনের অভাব। বিদ্রোহীদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও কর্মসূচি ছিল না। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ মানুষ ছিল কৃষক। কৃষি ছিল দেশের বড়ো সমস্যা, অথচ এই সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো সাধারণ কর্মসূচি ছিল না। বক্সাররা ধর্মের ওপর বেশি জোর দিয়েছিল, কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ তারা গড়ে তুলতে পারেনি। অতীন্দ্রিয়, অতিপ্রাকৃত শক্তিকে তারা জনগণের মুক্তির উপায় হিসেবে প্রচার করত যা ছিল অবাস্তব ও মধ্যযুগীয়।

11) ইংরেজ ঐতিহাসিক এরিক হসবম তার প্রিমিটিভ রেবেলস গ্রন্থে বক্সার বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করেছেন। পৃথিবীর বহুদেশের সামাজিক প্রতিবাদী আন্দোলনের কথা আছে তাঁর গ্রন্থে। বক্সার বিদ্রোহকে তিনি দেখেছেন সামাজিক প্রতিবাদী আন্দোলন হিসেবে। তাঁর মতে, এটি হল একটি আদিম সামাজিক প্রতিবাদী আন্দোলন। এর মধ্যে মিশেছিল রবিনহুড সুলভ ডাকাতি, গ্রামীণ গুপ্ত সংস্থার প্রতিবাদী আন্দোলন এবং প্রাক-শিল্পবিপ্লব যুগের শহরে জনতার দাঙ্গা।

12) চিনের সাম্যবাদী দল বক্সার বিদ্রোহকে একটি স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক বিদ্রোহ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিল। মূলত এটি ছিল সামন্ততন্ত্র-বিরোধী আন্দোলন, কিন্তু বিদেশি বিরোধিতার জন্য তা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল (The Boxer movement, a primitive form of patriotic peasant uprising, with the right motive but the wrong methods)।

13) বক্সার বিদ্রোহ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। সমালোচকরা সকলে স্বীকার করে নিয়েছেন যে এই আন্দোলনের মধ্যে প্রগতি-বিরোধিতা ছিল, ছিল সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামি, ধর্মীয় উন্মত্ততাও অস্বীকার করা যায় না। তবে এর মধ্যে আর যা পাওয়া যায় তা হল চিনের অস্থিরতা, পশ্চিমি অনুপ্রবেশের বিরোধিতা, শোষণের বিরোধিতা এবং বিদেশিদের বাধাদানের প্রবল ইচ্ছা (with all its weakness, its lack of constructive programme, its blind fanaticism and reaction, the Boxer movement was an unmistakable symptom of China’s growing unrest, of her resentment against foreign intrusion and exploitation, and of her will to resist)।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *