StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ভারতীয় কৃষকের বাণিজ্যিক পণ্য চাষ কতখানি স্বেচ্ছামূলক?

ভারতীয় কৃষকের বাণিজ্যিক পণ্য চাষ কতখানি স্বেচ্ছামূলক? 

ভূমিকা : 

উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারতের অন্তর্বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যায়। মোগল যুগে এদেশে অর্থকরী ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা ছিল, নগদ অর্থে  রাজস্ব সংগ্রহ করা হত, এজন্য নগদা ফসলের চাষ বেড়েছিল। ব্রিটিশ শাসনকালে নতুন নতুন শহর স্থাপিত হলে কৃষিজ পণ্যের চাহিদা বেড়েছিল — শহরের প্রয়োজন হত শিল্পের কাঁচামাল ও খাদ্যশস্যের। এসবের ফলে কৃষিজ পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়। দেশের মধ্যে অন্তর্বাণিজ্যের জন্য পরিবহনের উন্নতি ঘটানো হয়, অভ্যন্তরীণ শুল্ক তুলে দেওয়া হয়। আবার সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ইংল্যান্ডে শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা বেড়েছিল।

ভারতীয় কৃষকের বাণিজ্যিক পণ্য চাষ কতখানি স্বেচ্ছামূলক 

১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খালের উদ্বোধন হলে অনেক কম সময়ে এবং কম শুল্কে ভারতের কাঁচামাল ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা সম্ভব হয়। প্রতি টনে মাশুল কমেছিল ৩০ শতাংশ। ইংল্যান্ডে ভারতীয় কৃষিজ পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে ব্রিটিশ সরকারের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ভারতের কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে বন্দর পর্যন্ত রেলপথ গড়ে তোলা হয়। শুল্ক এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছিল যাতে সস্তায় কৃষিজ পণ্য বন্দরে পৌঁছেতে পারে। সবচেয়ে বড়ো কথা সরকারি করনীতি কৃষিজ পণ্য রপ্তানির সহায়ক ছিল।

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম বাজেট প্রণেতা অর্থমন্ত্রী জেমস উইলসন এই ধরনের করনীতির সূচনা করেন। তাঁর মতে, ভারতের স্বাভাবিক সুবিধা হল কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করা। ভারত বিদেশে কৃষিজ পণ্য রপ্তানি করে আয় বাড়াতে পারে, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের ওপর কর বসালে ভারত বাইরের বাজার হারাতে পারে। কৃষি প্রধান ভারত শিল্পসমৃদ্ধ ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি করবে। উনিশ শতকের শেষ অবধি ভারতের বেশিরভাগ কৃষিজপণ্য বিনাশুল্কে রপ্তানি হত, শুধু চাল রপ্তানির ওপর সামান্য শুল্ক ছিল।

উনিশ শতকে ভারত বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী অর্থনীতির এক অচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়। আঠারো শতকের শেষদিক থেকে বাণিজ্যিক পণ্যের উৎপাদন বেড়েছিল। উনিশ শতকের মধ্যভাগে এই বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন বিস্তৃত আকার ধারণ করেছিল। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে আফিম ও নীল চাষের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, অধ্যাপক বিনয় চৌধুরি এব্যাপারে বিস্তৃত তথ্য সরবরাহ করেছেন। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের চাষি তুলোর চাষ করে লাভবান হয়। গৃহযুদ্ধের অবসান হলে তুলো চাষ আর আগের মতো লাভজনক ছিল না ঠিকই, এ চাষ বন্ধ হয়নি। ভারতে সুতো ও বস্ত্র শিল্প গড়ে উঠলে তুলোর চাহিদা বেড়েছিল।

১৮৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বোম্বে প্রেসিডেন্সিতে তুলো, বাংলায় পার্ট ও নীল, বিহারে আফিম, উত্তরপ্রদেশে আখ এবং মাদ্রাজে চিনা বাদামের চাষ বেড়েছিল। কৃষিজ পণ্যের মধ্যে এগুলি বাজারের চাহিদার দিকে তাকিয়ে চাষ হত বলে এগুলি নগদা ফসল (cashcrop) নামে পরিচিত। নগদা ফসল উৎপাদনে এক একটি অঞ্চল চিহ্নিত হওয়ার পরিণাম হল কৃষিজ পণ্য ও খাদ্যশস্যের বাজারের সম্প্রসারণ। 

উনিশ শতকে ব্রিটিশ সরকার পরিকল্পিতভাবে ভারতীয় অর্থনীতিকে ব্রিটিশ অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছিল। কৃষির বাণিজ্যিকরণের ফলে কৃষকের সুবিধা হয়েছিল কিনা তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলেছেন। মূল প্রশ্নটি হল বাণিজ্যিক পণ্য চাষ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত, না জোর করে কৃষকের ওপর চাপানো হয়েছিল। প্রথম প্রশ্নটি উঠেছিল কারণ কৃষক তার ভালো জমি বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনের কাজে লাগিয়েছিল। সরকারি হিসেবে দেখা যায় ব্রিটিশ ভারতে (ব্রহ্মদেশসহ) ১৯০১ ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খাদ্যশস্যের আবাদি জমির এলাকা বেড়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ, নগদা ফসলের আবাদি এলাকা বেড়েছে অনেক বেশি। আখের ৬৯ শতাংশ, তুলোর ৫৯ শতাংশ, তৈলবীজ ৩৬ শতাংশ।

অধ্যাপক জর্জ ব্রিন ১৮৯১ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে ভারতীয় কৃষির যে হিসেব তৈরি করেছেন তাতে দেখা যায় নগদা ফসল আখ, তৈলবীজ, তামাক, তুলো, পাটের মোট উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রতি দশকে ১৩ শতাংশ, অন্যদিকে খাদ্যশস্য বৃদ্ধির হার প্রতি দশকে মাত্র ১ শতাংশ। ভালো জমি, সার, সেচের জল সব নগদা ফসলে চলে যেতে থাকে, একর প্রতি নগদা ফসলের উৎপাদন হার বৃদ্ধি দশকে ৮ শতাংশের বেশি, খাদ্যশস্যে এই গড় ২ শতাংশের কম। বি. এম. ভাটিয়া জর্জ রিনের পরিসংখ্যান ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে, ১৮৯৫-৯৬-১৯৪৫-৪৬ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে ভারতে বাণিজ্যিক পণ্যের উৎপাদনও বেড়েছিল ৮৫ শতাংশ, খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমেছিল ৭ শতাংশ। জাভায় ডাচদের শাসনকালে বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনের যে ব্যবস্থা হয়েছিল তার সঙ্গে ভারতীয় কৃষির বাণিজ্যিকরণের তুলনা হয় না।

ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ক্ল্যাসিকাল ও নিও-ক্ল্যাসিকাল অর্থনৈতিক তত্ত্ব অনুসরণ করে দেখাতে চান যে, ভারতীয় কৃষির বাণিজ্যিকরণের ফলে ভারতীয় কৃষক লাভবান হয়েছিল। অর্থনৈতিক সব লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের লাভ হয়, ক্রেতা মনে করে সে সবচেয়ে কম দামে কিনছে, বিক্রেতা মনে করে সে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়ে বিক্রি করছে। সবরকমের অর্থনৈতিক আদানপ্রদানে মুনাফার সুযোগ থেকে যায়। জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা মনে করেন বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন করে ভারতীয় কৃষক লাভবান হয়নি, তার অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। বাণিজ্যিক শস্য উৎপাদনের পেছনে যে অর্থনৈতিক কার্যকারণ সক্রিয় ছিল তা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন।

জাতীয়তাবাদীদের বক্তব্য হল বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন স্বেচ্ছামূলক ছিল না। কৃষক বাধ্য হয়ে নগদা ফসল চাষের দিকে ঝুঁকেছিল। গ্যাডগিল, থরনার দম্পতি, অমিত ভাদুড়ি ও শাহিদ আমিন মনে করেন বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনের পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক চাপ ছিল ( Institutional compulsion)। ভূমি রাজস্বের হার ছিল উঁচু সরকার প্রয়োজনমতো রাজস্ব বাড়িয়ে নিত, রাজস্ব সংগ্রহ পদ্ধতি ছিল অত্যাচারমূলক। সরকার  নগদ অর্থে রাজস্ব আদায় করত। গ্যাডগিল দেখিয়েছেন, যেখানে রাজস্বের চাপ কম ছিল সেখানেও কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। এজন্য কৃষক বিকল্প আয়ের কথা ভেবে বাণিজ্যিক পণ্য চাষের দিকে এগিয়েছিল।

শাহিদ আমিন গোরখপুরের আখ চাষিদের কথা উল্লেখ করে দেখিয়েছেন জমিদাররা এমন সময় খাজনা আদায় করত যখন কৃষকের হাতে পয়সা থাকত না, এজন্য তাদের মহাজনের কাছে ধার করতে হত। বাণিজ্যিক শস্য চাষ করতে গিয়ে কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ত, মহাজনের দাবি অনুযায়ী তাকে বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন করতে হত। অমিত ভাদুড়ি তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, যেখানে ভূমিব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা বেশি সেখানে কৃষির বাণিজ্যিকরণ বেশি হয়েছিল। বর্ধমান জমিদারিতে পত্তনিদাররা রাজস্বের চাপ মিটিয়ে লাভের আশায় বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনের পথে পা বাড়িয়েছিল। কৃষির বাণিজ্যিকরণের পরিণতি হল খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস, কৃষকের ঋণগ্রস্ততা এবং তার পরিভোগের ক্রমহ্রাসমানতা।

ভারতে কৃষিজ পণ্যের বাণিজ্যিকরণের ফলে কৃষক মহাজন, জমিদার, বণিক ও বানিয়াদের কুক্ষিগত হয়ে পড়েছিল। বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনের জন্য ভালো বীজ, সার ও বেশি জলের দরকার হয়। মহাজন ও বানিয়া কৃষককে উৎপাদনের জন্য ঋণ দিত (production loan), এবং ফরমাশ দিয়ে তার প্রয়োজনীয় নগদা ফসল, অনেক সময় বিশেষ জাত ও ধরনের, তৈরি করে নিতে থাকে।

আবাদি ঋণ ছাড়াও ফসল ঘরে ওঠা পর্যন্ত খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য কৃষককে আবার খোরাকি ঋণ নিতে হত (consumption loan)। তাছাড়া নানা পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য কৃষককে ঋণ নিতে হত। ফসল কোনো কারণে নষ্ট হলে কৃষক মহাজনের দয়ার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকত। সেজন্য সে মহাজনকে অগ্রাহ্য করে শুধু বাজারের দিকে তাকিয়ে অর্থকরী ফসল উৎপাদনের কথা ভাবতে পারত না। মহাজনকে ঋণের জন্য ২০০-৩০০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হত। নগদা ফসল বাজারজাত করার ব্যাপারে চাষির অসুবিধা ছিল। মধ্যবর্তী বণিক বা দালাল বাজারের খবর রাখত, বিশ্ব বাজারের ওঠানামার দিকে তাকিয়ে বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ বা অনুৎসাহ দিত। ভারতে বিপণন ব্যাপারটা এমন ছিল যে চাষি বুঝতে পারত না ন্যায্য দাম সে পেল কিনা।

বাণিজ্যিক পণ্যের দাম বাড়লে সরকার রায়তওয়ারি অঞ্চলে রাজস্ব বাড়িয়ে দিত। ১৮৬০-৬৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পশ্চিম ভারতে তুলোর বাজার তেজি থাকার সময়ে সরকার উঁচু হারে খাজনা ধার্য করেছিল। রপ্তানিযোগ্য পণ্য তুলো ও পার্ট রপ্তানিযোগ্য করার প্রক্রিয়া কৃষকের আয়ত্তের বাইরে ছিল। এজন্য মহাজন বা ব্যবসায়ীর ওপর নির্ভর করতে সে বাধ্য হত। বলা হয় বাণিজ্যিক পণ্য চাষের সিদ্ধান্ত থেকে জমিদার বা সরকারের খাজনা মেটানো, পণ্য বাজারজাত করা সব কাজই মহাজনের হাতে চলে যায়। মহাজনের হাতে কৃষকের টিকি বাঁধা পড়েছিল।

অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য মনে করেন অর্থকরী ফসল উৎপাদনের জন্য নানাভাবে কৃষকের পরাধীনতা বেড়ে ছিল। উৎপাদনের জন্য আগাম, খাওয়া ও খাজনার জন্য ঋণ এবং পণ্য বিক্রির জন্য মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীর ওপর নির্ভরতা কৃষকের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। এই নির্ভরতা এবং পরাধীনতা ছোটো গরিব কৃষকের ক্ষেত্রে ছিল অত্যন্ত প্রকট, এর ফলে ক্ষুদ্র ও বর্ধিষ্ণু চাষির মধ্যে ব্যবধান বাড়তে থাকে। অনেক জায়গায় বর্ধিষ্ণু সচ্ছল চাষি মহাজনের ভূমিকায় নেমে পড়ে। অনেকের মতে, কৃষক সমাজের নিম্নস্তরে কৃষি বাণিজ্যের প্রসার ছিল জবরদস্তির নামান্তর। একে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত, স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলা যায় না।

অধ্যাপক বিনয়ভূষণ চৌধুরি কেম্ব্রিজ ইকোনমিক হিস্ট্রিতেও দেখিয়েছেন যে জবরদস্তি বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনের যে চিত্রটি তুলে ধরা হয় তা আংশিক সত্য, সর্বাংশে সত্য নয় (The view is only partially valid)। ঋণ বন্ধন থেকে মুক্তি পাবার আশায় অনেক সময় ভারতীয় কৃষক বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনের দিকে এগিয়ে ছিল, খাদ্যশস্য চাষ থেকে তার আয় বেশি হত না। কৃষক আখ, পাট, আফিম ও রেশম চাষের জন্য ঋণ নিত, কিন্তু এক্ষেত্রে আয় বাড়ানো ছিল তার আসল লক্ষ্য। নীল ও আফিম ছাড়া আর সব পণ্য কৃষক অবাধে খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারত। কোনো বাধা ছিল না। কৃষক তার উৎপন্ন পণ্যের সবটা মহাজনের হাতে তুলে দিত না। যেহেতু কৃষক তার উৎপাদনের একাংশ খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারত, সে কৃষিজ পণ্যের ক্রমবর্ধমান বাজার দাম থেকে লাভবান হত। হয়তো কৃষকের আশানুরূপ লাভ হত না বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থকরী ফসল চাষ করে কৃষকের লাভ হত না। এগুলি হল ব্যতিক্রমী ঘটনা। অধ্যাপক চৌধুরি মনে করেন অর্থকরী ফসল চাষ করে ভারতীয় কৃষক একেবারে লাভবান হয়নি একথা ঠিক নয়।

মূল্যায়ন : 

ভারতীয় কৃষির বাণিজ্যিকরণ এদেশের অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ভারতীয় কৃষিজ পণ্যের বাজার বিশ্ববাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়। বিশ্ববাজারে ওঠানামা ভারতের কৃষিজ পণ্যের দামে উত্থান-পতন নিয়ে আসত। কৃষির বাণিজ্যিকরণের ফলে পতিত জমি চাষের আওতায় এসেছিল, সামগ্রিকভাবে কৃষিজ পণ্যের দাম বেড়েছিল, কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছিল। কৃষিজ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছিল, এর দামও বেড়েছিল কিন্তু কৃষক যতখানি আশা করেছিল ততখানি লাভবান হ্যানি। বণিক, দালাল ও মহাজনরা কৃষকের লভ্যাংশের একাংশ আত্মসাৎ করেছিল। বাণিজ্যিক পণ্যের উৎপাদন করতে গিয়ে কৃষক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছিল, ঋণগ্রস্ত হয়ে সে জমির অধিকার হারিয়েছিল। ভারতে ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে  থাকে। কৃষকের ঋণগ্রস্ততা ও ভূমিহীনতা হল বাণিজ্যিকরণের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। খাদ্য শস্যের উৎপাদন কমেছিল, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে খাদ্যাভাব, ঘন ঘন দুর্ভিক্ষ ও আকাল হল এর অন্য পরিণাম।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *