ষড়ঙ্গ কাকে বলে । ষড়ঙ্গ শিল্প কি । ষড়ঙ্গ বলতে কি বোঝ। ভারতশিল্পের ষড়ঙ্গ
বুদ্ধ-পূর্ব যুগ থেকে শিল্পবিদ্যাকে স্থূলভাবে ছয়টি বিধানের অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োগবিদ্যার জন্য বহুপ্রকার তর্ক ও সিদ্ধান্ত নিয়ে যে শাস্ত্রগ্রহ লিখিত হয়েছে তাকে ষড়ঙ্গ বা ষড়ঙ্গ শিল্প বলা হয়।
ভারতশিল্পে ‘ষড়ঙ্গ’প্রয়োগকে শিল্পজগতের ব্যাপক ভাবগত বন্ধনী বলা যেতে পারে। এই শাস্ত্ৰ কখন রচিত হয়েছিল তা জানা যায় না। বাৎসায়নের ‘কামসূত্র’ গ্রন্থে ষড়ঙ্গ প্রয়োগের কথা উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু এই গ্রন্থটির প্রণয়নকাল নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
শিল্পাচার্য পার্সি ব্রাউন কামসূত্রের প্রকাশকাল খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতক বলে মনে করেন। জয়পুরের রাজা প্রথম জয়সিংহের সভাপন্ডিত যশোধর পণ্ডিত বাৎসায়ন-রচিত কামসূত্রের ‘জয়মঙ্গল’ নামক এক ভাষ্য ব্যাখ্যা-পুস্তক রচনা করেন। এই গ্রন্থের রচনাকাল একাদশ বা দ্বাদশ খ্রিস্টীয় অব্দের অন্তবর্তীকাল বলে অনুমান করা হয়। যশোধর পন্ডিত তাঁর ভাষ্যে লেখেন, তিনি বহু প্রাচীন শিল্পশাস্ত্র ও প্রচলিত শিল্পরীতি অধ্যয়ণ ও পর্যবেক্ষণ করে তাঁর মতামত লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি লিখেছেন, তৎকালীন প্রচলিত শিল্পরীতি ষড়ঙ্গ শাস্ত্রকে অতিক্রম করে কোনো নতুন গতিপথের সন্ধান না পাওয়ায় রূপকাররা শ্রদ্ধার সঙ্গে বাৎসায়নের কৃত অনুশাসন বা বিধানসমূহ মেনে চলতেন।
চিত্রশিল্পের ‘ষড়ঙ্গ’ প্রখর যুক্তি ও গভীর দার্শনিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকায় পরবর্তী সময় বৌদ্ধ শিল্পকলাতেও এগুলির প্রয়োগ অব্যহত ছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীতে Hisch-Ho লিখেছেন, চিন দেশে চিত্রবিদ্যার অনুশীলনের সময় চিনা শিল্পীরাও ষড়ঙ্গের ছয়টি নিয়মকে মেনে চলতেন। তাঁরা ষড়ঙ্গের উপদেশগুলি ভারত ভ্রমণকারী পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শিখেছিলেন।