StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

সামুরাই এবং ডাইমিও এর উপর একটি নোট লিখুন

 

সামুরাই এবং ডাইমিও এর উপর একটি নোট লিখুন

সামুরাই : 

জাপানী সামাজিক কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল সামুরাই শ্রেণী। প্রাক্‌ আধুনিক জাপানে এরাই পেশাদার যোদ্ধা শ্রেণী। প্রভুর সেবায় নিযুক্ত নিঃস্বার্থ নির্ভীক আত্মবলিদানে সদাপ্রস্তুত সামুরাই শ্রেণী জাপানী সমাজ ও সংস্কৃতিকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। ইতিহাস খ্যাত এই সামরিক শ্রেষ্ঠ গোষ্ঠী জাপানী জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠাংশ ছিল। তরবারি-ই হল এদের প্রতীক। তাই বলা হয়, “The girded sword is the living soul of the Samurai”। শুরুতে সামুরাই শ্রেণী কৃষিতে নিযুক্ত ছিল তবে তাদের অস্ত্রধারণের অধিকার ছিল। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে মিনামোটো ও টায়রা গোষ্ঠীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাঁধলে এই পেশাদার সামরিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে।

পরবর্তীকালে সামুরাই শ্রেণীর পুরোমাত্রায় পেশাদার যোদ্ধা শ্রেণীরূপে উত্তোরণ হয়েছিল মূলত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উন্নত সমরকৌশল আয়ত্ত করা বা বিশেষ সামরিক দক্ষতা আয়ত্ত করার জন্য। কৃষির সঙ্গে তাই সংযোগবিহীন হয়ে পড়ে সামুরাই শ্রেণী। শোগুন যুগে একজন সামুরাইকে দুটি তরবারি ধারণ করতে হত। ছোট-টি (ওয়াকাজাশি) ঢাকা থাকত এবং বড় লম্বা তরবারিটি (কাটানা) যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী ছিল। সামুরাই তরবারির প্রতি জাপানী জনগণের আবেগ ও শ্রদ্ধা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সামুরাইদের প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ততা এবং তাঁদের আত্মমর্যদাবোধ কিংবদন্তীর পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। প্রভুর সেবায় নিযুক্ত সামুরাই তাঁর সম্মান রক্ষায় ব্যর্থ হলে বা তাঁর বিরাগভাজন হ’লে নিজের পেট কেটে আত্মহত্যা করে প্রায়শ্চিত্ত করতেন। উদর কেটে আত্মহত্যা করার এই প্রথা “হারিকিরি” (উদর-কর্তন) নামে পরিচিত। উচ্চতর প্রভুর সেবায় নিযুক্ত সামুরাই মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ যে কোন অধস্তন ব্যক্তিকে হত্যা করার বিশেষাধিকারও ভোগ করত। প্রভুহীন সামুরাইগণ ‘রোণিন’ নামে পরিচিত ছিল।

১৬০০ খ্রিস্টাব্দে সেকিগাহারা-র যুদ্ধের পর জাগির (fief) বণ্টনের সময় দেখা যায় অনেক যোদ্ধা শ্রেণী প্রভুহীন হয়ে পড়েছিল। প্রভুহীন সামুরাইগণের অনেকেই বাধ্য হয়ে কৃষিকাজ শুরু করেন, আর অনেকেই প্রভুহীন রোগিন থেকে যান। টোকুগাওয়া শোগুন যুগের জাপানী সমাজে রোণিন শ্রেণীর বিশিষ্টতা এক লক্ষণীয় দিক। রোণিন শ্রেণী জাপানের ইতিহাস ও কিংবদন্তীতে নানারূপে আবির্ভূত হতে দেখা যায়, কখনো সাহসী সম্মান-পিপাসু সাহসী ভাড়াটে সৈন্য রূপে, তর্জন-গর্জনকারী ও মারামারিতে অভ্যস্ত মস্তান রূপে যে-কোন হিংসাত্মক কাজের জন্য প্রস্তুত, আবার গুপ্তা ও সমাজের উৎপাত রূপে।

Richard Storry-র ভাষায় : “The ronin, in history and legend, appears in many guises as a gallant freelance, jealous of his honour; as a brawling swashbuckler, ready for any deed of violence; as a bully : as a social nuisance.” এই শ্রেণীর লোকেরাই ওসাকা দুর্গের কঠিন যুদ্ধকারী সৈন্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল। শিমাবারা সামরিক ঘাঁটির প্রতিরক্ষায় যুক্ত অনেক কৃষকই সেই যুগের ‘রোণিন’ বা প্রভুহীন সামুরাই শ্রেণী ছিল। টোকুগাওয়া শাসকদের মনে সর্বদাই এক অসুস্থ ভীতি তাড়া করে বেড়াত যে দক্ষিণ-পশ্চিমের রোণিনরা বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে টোকুগাওয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সামিল হবে। এই কারণেই টোকুগাওয়া সরকার জাপানকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চেয়েছিল। টোকুগাওয়া যুগের এই শান্তি সামুরাই শ্রেণীকে সামরিক দিক থেকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল। ফলে সামুরাই শ্রেণী অনেকাংশে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজেদের শোওনের দরবারে বা ডাইমিয়োর অধীনে প্রশাসনিক কাজে লিপ্ত হবার জন্য এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হবার জন্য শহরে বসবাস শুরু করেন এবং নিজেদের এক আমলাতান্ত্রিক অভিজাত শ্রেণীরূপে গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন।

টোকুগাওয়া যুগে সামুরাই শ্রেণী নিজেদের শিক্ষিত, সংস্কৃত এবং উচ্চ নৈতিক আদর্শ সম্পন্ন শ্রেণীরূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সামুরাই শ্রেণীর মধ্যেই সামরিক শৌর্য ও কনফুসীয় আদর্শ ও পাণ্ডিত্যের সুখ সমন্বয় লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যুদ্ধহীন টোকুগাওয়া শাসনে তাঁদের যুদ্ধ করার তেমন প্রয়োজন না হলেও শোগুনের প্রশাসনে ও ডাইমিয়োর জমিদারিতে তাঁদের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। নৈতিক নিষ্ঠার জন্য সামুরাই শ্রেণী তাঁদের নিজস্ব নীতি-সংহিতা রচনা করেছিল যা বুশিদো (Bushido) নামে পরিচিত ছিল। বুশিদো কথাটির অর্থ হল “যোদ্ধার পথ” [“the way of the bushi (warrior)”]। বন্ধুশীয় আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বুশিদো প্রকৃত অর্থেই একজন শাসক ও সৈনিকের জীবন-নির্দেশিকা ছিল। নির্ভীক শৃঙ্খলায় যোদ্ধা সামুরাই শ্রেণীর যুদ্ধ-শিল্প, আত্মত্যাগের জন্য সদা প্রস্তুতি এবং উচ্চতম যোদ্ধা প্রভুর প্রতি আনুগত্য ও ভক্তি এই বুশিদোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল।

রিচার্ড স্টোরী লিখেছেন : “Indeed, in so far as Bushido means a Spartan devotion by a warrior class to the arts of war, a readiness for self-sacrifice, and loyalty to a martial superior, it existed as an ideal in the twelfth century, and its origins can be traced back several hundred years before that”। দ্বাদশ শতকে বা তার পূর্বে বুশিদোর এই আদর্শ কার্যকর থাকলেও টোকুগাওয়া শোগুন যুগে ‘বুশিদো’র অপরিহার্য অঙ্গরূপে আনুগত্যের নিষ্ঠা ও নৈতিকতা আধাধর্মীয় মর্যাদায় (Semi religious status) উন্নীত হয়েছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল শোগুন শাসকদের কক্রুশীয় গোঁড়া রাষ্ট্রীয় আদর্শের তত্ত্বকে অনুসরণের জন্য। শোগুন শাসকেরা বৌদ্ধধর্মের নিষ্ঠাবান পৃষ্ঠপোষক হলেও নব কনফুশীয়বাদকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এই উদ্দেশ্যে “Lords of Learning” খেতাবযুক্ত একদল পণ্ডিতদের নিযুক্ত করেন। শোগুন সমর্থিত এই পণ্ডিতবর্গ ঘোষণা করেন যে শিন্টোধর্ম ও কনক্রুশীয়বাদের মধ্যে মূলগত কোন প্রভেদ নেই। আসলে কনফুসীয় নীতিবিদ্যায় উচ্চতমের প্রতি অধস্তনের আনুগত্য ও কর্তব্যবোধের আদর্শ শ্রেণী বিভক্ত ও পদ সচেতন জাপানী সমাজে ভাল খাপ খেয়েছিল এবং টোকুগাওয়া বংশের স্বার্থের অনুকূলেও ছিল।

ডাইমিয়ো :

জাপানের সামাজিক কাঠামোয় কুগে বংশের পরেই অবস্থান হল ডাইমিয়োদের। ডাইমিয়োরা হল ভূম্যধিকারী শ্রেণী। ‘ডাইমিয়ো’ (মহানাম, Great names) নামটি তাঁর ভূমিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ডাইমিয়ো বা মহানাম তাঁদেরই বলা হত যারা বাৎসরিক দশ হাজার কোকু চাল উৎপাদনকারী ভূমিক্ষেত্রের অধিকারী ছিলেন। এক কোকুতে ৫.১১ বুল পরিমাপ করা হত যা ছিল টোকুগাওয়া যুগে সম্পদ ও মর্যাদার সূচক। আবার কম রাজস্বের অধিকারী সামরিক ভূম্যধিকারী শ্রেণীকে শোমিও (Shomio) বা “ছোট নামের” (Small names) পদাধিকারী বলা হত। এই ডাইমিয়োদের মধ্যে সবচেয়ে ধনশালী ও সামরিক শক্তিতে বলীয়ান ছিল টোকুগাওয়া পরিবার। বার্ষিক গড়ে ৩০ মিলিয়ন কোকু উৎপাদিত চালের এক-চতুর্থাংশ যেত শোগুনের দখলে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ১ মিলিয়ন কোকু চালের অধিকারী ছিল এবং জাপানী সম্রাট মাত্র ৪০ (চল্লিশ) হাজার কোকু চালের মালিকানা ভোগ করতেন। ঐতিহাসিক হলের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় জাপানে এই সময় ২২ জন বৃহৎ ডাইমিয়ো ছিলেন যাদের মোট শস্য উৎপাদনের পরিমাণ দু’লক্ষ কোকুর কিছু বেশি ছিল। ডাইমিয়োদের মোট সংখ্যা ২৯৫ থেকে ২০০-র মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ডাইমিয়োদের মধ্যে অর্ধাংশের জমিতে উৎপাদিত শস্যের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার কোকুরও কম। একজন সাধারণ ডাইমিয়োর জমিতে উৎপাদিত শস্যের অর্ধেক উৎপাদক চাষীদের ভরণপোষণে ব্যয়িত হত। অপর এক-চতুর্থাংশ তাঁর প্রধান রক্ষীদের ভাতা বাবদ ব্যয়িত হত। এরপর যে শস্য অবশিষ্ট থাকত তা ওসাকার বাজারে বিক্রি করা হত। এই শস্য বিক্রি থেকে যে অর্থ আসত তা দিয়ে শোগুনকে দেয় যাবতীয় উপহার, শোগুনের দরবারে নিরন্তর ভ্রমন বাবদ ব্যয়, এডোতে অবস্থান কালীন ব্যয়বহুল জীবনের খরচ এবং ডাইমিয়োর নিজস্ব গৃহ ও পরিবারের সমস্ত লোকজনের ভরণপোষণের খরচ মেটানো হত।

শোগুন ডাইমিয়োদের প্রধান হিসেবে শুধু বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তির ও শস্যের মালিকানা ভোগ করতেন তাই নয়। বিপুল উপহার সামগ্রী ও বেগার শ্রমের ভোগের অধিকারী যেমন ছিলেন তেমনি ডাইমিয়োদের বিশেষত দূরবর্তী ডাইমিয়োদের দিয়ে প্রাসাদ ও দুর্গসংস্কার এমনকি এডোতে ব্যয়বহুল মন্দির নির্মাণ অথবা ভস্মীভূত শহরের একাংশের পুনর্গঠনের মত কাজ করিয়ে নিয়ে লাভবান হতেন। অন্যদিকে ডাইমিয়োরা এই খরচ বহন করতে গিয়ে প্রায়শই নিঃশেষিত হতেন। শোগুনের বিরোধী অবিশ্বস্ত ডাইমিয়োদের ছোট জাগিরে স্থানান্তরিত করে প্রায়শই শাস্তি দেওয়া হত। টোকুগাওয়া বংশের প্রথম তিনজন শোগুন এইভাবে জাপানের প্রায় অর্ধাংশ পুনর্বণ্টন করেছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে এই পন্থা প্রায় অনুসৃত হয়নি বললেই চলে। দূরবর্তী কিউশিউ দ্বীপের সাতসুমা গোষ্ঠী তাদের প্রভাবিত ক্ষেত্রে স্বাধিকার ভোগ করত। সেখানে কোন শোগুন-ই তাঁর কর্তৃত্ব ফলাতে পারেননি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *