StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

১৮১৩ সালের সনদ আইনের তাৎপর্য লেখ

১৮১৩ সালের সনদ আইনের তাৎপর্য লেখ। 1813 সালের সনদ আইনের গুরুত্ব কী।

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার নবীকরণের প্রাক্কালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছিল। ওয়েলেসলির সাম্রাজ্যবাদী নীতির ফলে কোম্পানির ব্যয় বেড়েছিল। কোম্পানির বাণিজ্য খাতে আয় তেমন ছিল না, মন্দা দেখা দিয়েছিল। কোম্পানি সরকারের কাছে ঋণের আবেদন করেছিল। কোম্পানি সম্পর্কে সব তথ্য জানার জন্য পার্লামেন্ট একটি কমিটি গঠন করেছিল, এই কমিটি চার বছর ধরে (১৮০৮-১৮১২) কোম্পানির কাজকর্ম এবং প্রশাসন সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছিল যাতে কোম্পানির সামগ্রিক চিত্রটি পাওয়া যায়। ভারতে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কোম্পানির রাজ্যের বিপুল বিস্তার ঘটে।

ইংল্যান্ডে অবাধ মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষপাতীরা কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান চেয়েছিল। ইংল্যান্ডের উৎপন্ন পণ্যের বাজার সীমিত হয়ে পড়েছিল। নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা জারি করে ব্রিটিশ পণ্যবাহী জাহাজের ইউরোপের বন্দরে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দেন। ব্রিটিশ বণিকরা কার্যত ইউরোপের বাজার হারিয়েছিল। তারা বিকল্প বাজারের সন্ধান করেছিল। ভারতের বাণিজ্য সর্ব শ্রেণির কাছে উন্মুক্ত করে দেবার জন্য পার্লামেন্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। অন্য একটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে বলা যায় কোম্পানির বাণিজ্যিক অধিকার নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে এত বড়ো দেশ শাসনের ভার রাখা উচিত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এজন্য লর্ড গ্রেনভিলের মতো ব্যক্তিরা কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ সরকারের হাতে ভারতের শাসনভার তুলে দেবার প্রস্তাব করেন। বোর্ড অব কন্ট্রোলের প্রেসিডেন্ট ইউরোপে নেপোলিয়নীয় যুদ্ধের পটভূমিকায় বেসরকারি বণিকদের ভারতে বাণিজ্যের অধিকার দিতে রাজি ছিলেন। এজেন্সি হাউস, লন্ডন ও লিভারপুলের বণিক ও পুঁজিপতিরা অবাধ মুক্ত বাণিজ্য নীতি প্রবর্তনের 11) জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন। 

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে চার্টার আইন নিয়ে আলোচনা শুরু করেন লর্ড ক্যাসলারিগ। বিলটি উত্থাপিত হলে ইভানজেলিস্ট আন্দোলনের নেতা উইলবারফোর্স ও তাঁর অনুগামীরা ভারতের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নয়নের জন্য খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্ম, শিক্ষা ও পরিষেবামূলক কাজকর্মের সুযোগ দিতে বলেন। তবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা ছিল, অনেকে মনে করেন ভারতীয়দের প্রথাগত ধর্ম আক্রান্ত হলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিতে পারে। বিস্তৃত আলোচনার পর ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার আইনটি পাশ হয়। এই আইনে কোম্পানির শাসনের অধিকার আরও বিশ বছর বাড়ানো হয়। কোম্পানি চিনে একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার বজায় রাখতে পেরেছিল, তবে ভারতে চা ছাড়া আর সব পণ্যে কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার বাতিল করা হয়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত সব ব্রিটিশ বণিক ভারতে বাণিজ্যের অধিকার পেয়েছিল। কোম্পানির ডিরেক্টর সভা তাদের বাণিজ্যের অনুমতি দেবেন, সভা অসম্মত হলে বোর্ড অব কন্ট্রোল তাদের আবেদন মঞ্জুর করবেন।

কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য ১০.৫ শতাংশ হারে তাদের ডিভিডেন্ড দেবার ব্যবস্থা হয়। কোম্পানির ভারতের রাজস্ব ও বাণিজ্যিক হিসেব পৃথক করতে বলা হয়। কোম্পানি তার সংগৃহীত রাজস্ব থেকে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ব্যয় নির্বাহ করবে। কোম্পানি প্রথম ভারতীয়দের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির দায় স্বীকার করে কোম্পানির বাজেটে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। ভারতীয়দের শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে। কোম্পানি মিশনারিদের এদেশে ধর্ম প্রচার ও শিক্ষা বিস্তারের অনুমতি দিয়েছিল। কলকাতায় একজন বিশপ ও তিনজন আর্ক ডিকন মিশনারিদের নিয়ন্ত্রণ করবেন। বেসামরিক বিভাগে চাকরি করতে হলে হাইলেবেরি কলেজে প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। তেমনি সামরিক বিভাগে কাজের জন্য এডিসকোম কলেজে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এই দুই কলেজ পরিচালনা করবেন বোর্ড অব কন্ট্রোলের প্রেসিডেন্ট।

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার আইনটি নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতে পরিবর্তন কম ছিল না, আরও বেশি পরিবর্তনের ইঙ্গিত ছিল। বোর্ড অব কন্ট্রোলের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হয়। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া গভর্নর জেনারেল, গভর্নর ও প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করা যাবে না। কোম্পানি ভারতে একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার হারিয়েছিল। কোম্পানি আর শুধু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়, বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণতি পেয়েছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার আইনে এই সত্য স্বীকার করে নেওয়া হয় । খ্রিস্টান মিশনারিরা ভারতে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের সুযোগ পেয়েছিল, বোর্ড অব কন্ট্রোল এদের অনুমতি দানের অধিকার পেয়েছিল। কোম্পানির অনুসৃত নীতির পরিবর্তন ঘটেছিল। মিশনারিদের আগমনের ফলে ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির সংস্কারের কথা উঠেছিল।

মিশনারিরা সতীদাহের মতো নিষ্ঠুর অমানবিক প্রথার দিকে ভারতীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ভারতীয় ধর্ম ও সমাজব্যবস্থার ওপর পশ্চিমি অভিঘাত অবশ্যই অনেক বেশি জোরালো। এই আইনের ফলে বহু বেসরকারি বণিক ইংল্যান্ডের শিল্পজাত পণ্য নিয়ে ভারতে বাণিজ্য করতে এসেছিল, এতে এদেশের কুটির শিল্প অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই আইনে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রকে কোম্পানির রাজ্যের সার্বভৌম শক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয় (undoubted sovereignty of the crown)। এই শর্তে যে ইঙ্গিত ছিল তার পরিণতি হল ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন। এর অন্য ভালো দিক হল কোম্পানির নিয়োগ নীতির রূপরেখাটি এতে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। পৃষ্ঠপোষণ বা সুপারিশ নয়, প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়। ভারতীয়দের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির কথা বলা হলেও তাদের কোনো অধিকারের কথা এই আইনে স্থান পায়নি। শাসনব্যবস্থার সঙ্গে ভারতীয়দের যুক্ত করার কোনো প্রস্তাব ছিল না।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *