StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

১৮৫৩ সালের সনদ আইনের তাৎপর্য লেখ

 

১৮৫৩ সালের সনদ আইনের তাৎপর্য লেখ। ১৮৫৩ সালের শেষ চার্টার আইনে তাৎপর্য লেখ

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইনে কোম্পানিকে বিশ বছরের জন্য ভারত শাসনের অধিকার দেওয়া হয়। ১৮৩৩-১৮৫৩ সময়কালে এদেশে ও ইংল্যান্ডে কোম্পানির শাসন সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাষ্ট্র নেতা ও জনমত দ্বৈত শাসনব্যবস্থাকে পছন্দ করেনি। কোম্পানির ডিরেক্টর সভা এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত বোর্ড অব কন্ট্রোল কোম্পানির শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করত। দ্বৈত শাসনের ফলে কোম্পানির কাজকর্মে অযথা বিলম্ব ঘটত, ব্যয়ও বেশি হত।

ভারতের বিভিন্ন প্রেসিডেন্সি থেকে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে একজন ভারত সচিবের অধীনে শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিতে বলা হয়। ভারত সচিব একটি উপদেষ্টা পর্ষদের সাহায্য নিয়ে ভারত শাসন পরিচালনা করবেন। দেশে ও বিদেশে এই ধারণা গড়ে উঠেছিল যে ভারতে আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। ভারতের গভর্নর-জেনারেল বাংলার গভর্নর হিসেবে কাজ করতেন, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপত্তি উঠেছিল কারণ এই ব্যবস্থায় বাংলা বেশি সুবিধা পেত।

১৮৩০-১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে কোম্পানির রাজ্য সম্প্রসারিত হয়েছিল। সিন্ধু, পাঞ্জাব ও পেণ্ড অধিকৃত হয়, ডালহৌসি ঝাঁসি, সাতারা ও নাগপুর কোম্পানির রাজ্যভুক্ত করে নেন। এসব অধিকৃত অঞ্চলের জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল। ভারতে দুটি দাবি জোরদার হয়ে উঠেছিল — শাসনতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং শাসনব্যবস্থায় ভারতীয়দের অংশ গ্রহণের সুযোগ দান। মধ্য উনিশ শতক হল ইংল্যান্ডে উদারনৈতিক মতবাদের যুগ। লর্ড ডারবি ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে পার্লামেন্টে যে বক্তৃতা দেন তাতে ধর্ম, নৈতিকতা ও মানবতার স্বার্থে ভারতীয়দের শাসনের সঙ্গে যুক্ত করতে বলেছিলেন (It is your bounden duty in the interest of humanity, of benevolence and of morality and religion that as fast as you do it safely, wisely and prudently the inhabitants of India should be gradually entrusted with more and more of superintendence of their own affairs)। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য দুটি কমিটি নিয়োগ করেছিল, এদের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার আইন পাশ করা হয়।

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইনের প্রথম ধারায় বলা হয়েছিল কোম্পানি ভারত শাসনের অধিকার ভোগ করবে ততদিন যতদিন না পার্লামেন্ট এ সম্পর্কে অন্য সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ, কোম্পানিকে আগামী বিশ বছরের জন্য ভারত শাসনের অধিকার দেওয়া হয়নি। এই শেষ চার্টার আইনটি ছিল কার্যত এক অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা। এই আইনের অন্য ধারায় বলা হয়েছিল যে, বোর্ড অব কন্ট্রোলের সদস্য, সেক্রেটারি ও অন্যান্য অফিসারদের বেতন সরকার স্থির করবেন। বেতন দেবে কোম্পানি। ডিরেক্টর সভার সদস্য সংখ্যা চব্বিশ থেকে কমিয়ে আঠারো করা হয়, এদের মধ্যে ছজন হবেন সরকার মনোনীত।

ডিরেক্টর সভা ভারতে কর্মচারী নিয়োগের অধিকার ভোগ করত। এই অধিকার বাতিল করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এসম্পর্কে একটি কমিটি গঠন করা হয় যার সভাপতি হন মেকলে। ডিরেক্টর সভা সদ্যবিজিত অঞ্চলগুলি নিয়ে নতুন প্রেসিডেন্সি গঠন করতে পারবে অথবা পুরোনো প্রেসিডেন্সির মধ্যে সদ্য বিজিত অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। এই ধারার অনুসরণ করে পাঞ্জাবে একটি লে. গভর্নরশাসিত প্রদেশ গঠন করা হয়। ভারতের ল’কমিশনের প্রতিবেদনগুলি পর্যালোচনার পর ইংল্যান্ডে একটি আইন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এই কমিশন নতুন আইনের সুপারিশ করতে পারবে।

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইনে আইন প্রণয়নের জন্য গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদের সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়। আইন সদস্যকে শাসন পরিষদের পূর্ণ সদস্য করা হয়। আইন প্রণয়নের জন্য শাসন পরিষদে আরও ছয়জন সদস্য যোগ দেবেন। এরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, অন্য আর একজন বিচারপতি, এবং বাংলা, মাদ্রাজ, বোম্বে ও উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের চারজন প্রতিনিধি। কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে কমপক্ষে দশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি কাউন্সিলের সদস্য হবেন। গভর্নর জেনারেল আরো দুজন উচ্চ কর্মচারীকে কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত করতে পারবেন। গভর্নর জেনারেল এই ক্ষমতা কখনো প্রয়োগ করেননি। আইন প্রণয়নের জন্য যখন কাউন্সিলের সভা বসবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিয়ম কানুন অনুসরণ করা হবে। সদস্যরা শাসন সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবেন, সরকারি নীতি নিয়ে আলোচনার অধিকার থাকবে, তবে সরকার প্রয়োজন বোধ করলে কোন বিলে ভিটো দিতে পারবে। প্রকাশ্যে আইনসভায় সব আলোচনার ব্যবস্থা হয়, বিল সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানো হত, সদস্যরা মৌখিকভাবে আলোচনায় অংশ নিত।

ইংল্যান্ডে কোম্পানির পক্ষে ও বিপক্ষে যে জনমত তৈরি হয়েছিল এই আইনে তাদের মধ্যে আপস করার চেষ্টা হয়। যারা কোম্পানির শাসন বজায় রাখার পক্ষপাতী ছিল তারা সন্তুষ্ট হয়, কোম্পানির শাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য বজায় রাখা হল। রাজার নামে কোম্পানি ভারত শাসন করবে যতদিন না পার্লামেন্ট অন্যরকম সিদ্ধান্ত নেয় (until parliament should otherwise provide)। যারা কোম্পানির শাসনের বিরোধী ছিল তারা ডিরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস হতে দেখে খুশি হয়। ডিরেক্টর সভার সংখ্যা হল ১৮ যার মধ্যে ৬ জন সরকার মনোনীত সদস্য। কোম্পানির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই বৃদ্ধি পেয়েছিল। ডিরেক্টর সভা কোম্পানির কর্মচারী নিয়োগের অধিকার হারিয়েছিল।

চার্টার আইন অনুযায়ী যে আইনসভা গঠিত হয় তা ভারতের শাসন কাঠামোয় বড়ো ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করেছিল, যদিও এখানে শুধু শাসকগোষ্ঠীর সদস্যরা ছিল। ভারতে একটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান হাউস অব কমন্সের সূচনা হয়, এরা সরকারি কাজকর্মের সমালোচনা করতে থাকে, অনেক গোপন নথি সরকার এদের দেখাতে বাধ্য হয়। এই আইনসভা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে আইনের খসড়া ডিরেক্টর সভা বা বোর্ড অব কন্ট্রোলকে দেখাতে রাজি হয়নি। এই সভা স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়নের কাজ করতে থাকে। এদের কাজকর্ম দেখে এই চার্টার আইনের প্রস্তাবক চার্লস উড বিস্মিত হন। তিনি এক ঘোষণাপত্র জারি করে বলেছিলেন গভর্নর জেনারেলের আইন প্রণয়নকারী সভা পার্লামেন্ট নয়। তরুণ শিক্ষিত ভারতীয়রা এই সভাকে সাংবিধানিক ব্যবস্থার সূচনা হিসেবে দেখেছিল।

ডালহৌসি চার্টার আইন অনুযায়ী আইনসভার কাজকর্ম পরিচালনা করেন, কোনো বাড়াবাড়ি ছিল না। এসব সত্ত্বেও বলা যায় যে, ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার আইন ভারতে সাংবিধানিক, ইতিহাসের সূচনা করেছিল। এই আইনের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা হল এই আইন প্রণয়নের সঙ্গে ভারতীয়দের যুক্ত করা হয়নি। স্যার বার্টল যার (Frere) বলেছিলেন, কোম্পানি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করবে, জনগণ কী ভাবছে শাসকগোষ্ঠী তা জানতে পারবে না, আইন তাদের পছন্দ কি না তাও জানা যাবে না। জনগণের মানসিকতা বোঝানোর একমাত্র পথ হল বিদ্রোহ, শুধু বিদ্রোহ হলে শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারবে জনগণ কী চায়।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *