StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

1931 খ্রিস্টানদের মাঞ্চুরিয়া সঙ্কটে জাতি সংঘের ভূমিকা কি ছিল

 

1931 খ্রিস্টানদের মাঞ্চুরিয়া সঙ্কটে জাতি সংঘের ভূমিকা কি ছিল ।

ভূমিকা : 

আধুনিক পূর্ব এশিয়ার ইতিহাসে জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। তাই ঐতিহাসিক ই.এইচ. কার (E. H. Carr) তাঁর “International Relations between the Two World Wars” গ্রন্থে একে “প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা” রূপে বর্ণনা করেছেন। আবার ঐতিহাসিক এ. জে. পি. টেলর ( A. J. P. Taylor) তাঁর “The Origins of the Second World War” গ্রন্থে মাঞ্চুরিয়া সংকটকে যুদ্ধের পথে একটি স্মরণীয় ধাপ; জাতিসংঘের প্রতি বিশেষত ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা এটি ছিল প্রথম চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা (It was treated as a milestone on the road to war, first decisive betryal of the league, specially by the British Government) বলে আখ্যা দেন।

জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের ঘটনাটিকে যথা সময়োচিত বলে মন্তব্য করেন আলফ্রেড ক্রফটস (Alfred Crofts) ও পার্সি বুকানন। তাঁদের মতে পাশ্চাত্য আর্থিক ব্যবস্থা যখন মন্দার তলানিতে এসে ঠেকেছে, সরকারগুলি যখন অর্থাভাবে নিজেদের শহরেই ধুঁকছে তখন পৃথিবীর অপর অর্ধাংশে প্রাচ্য বৈপ্লবিক অভুত্থান রোখা সম্ভব নয়। (The incident was well timed. The western financial system was spiraling to lower depths of depression. Governments faced with bread lines in  their own cities were unlikely to halt an oriental putsch half a world away)। জাতিসংজ্যে চীনের প্রতিনিধি ড. আলফ্রেড জি (Arfred Sze) লীগ চুক্তিপত্রের ১১ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে জাপানের বিরুদ্ধে সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ ১১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসরণ করে জাপানকে বাধাদানে ব্যর্থ হয়। জেনেভা থেকে তার বার্তা এলে টোকিও-র বিদেশ দপ্তর জানায় যে জাপানের ভূখণ্ড আগ্রাসনের কোন লোভ নেই। জাপান সরকার অবশ্য কোয়ানটুং সেনাবাহিনীর এই আগ্রাসী পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রথম থেকেই অবহিত ছিল না।

মাঞ্চুরিয়া সঙ্কটে জাতি সংঘের ভূমিকা : 

মাঞ্চুরিয়া সঙ্কটে জাতি সংঘের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।জাতিসঙ্ঘের অস্তিত্বকে উপেক্ষা করে জাপান মাঞ্চুরিয়ায় যে আগ্রাসন চালায় তার বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের পরিষদের সভায় (৩০শে সেপ্টেম্বর ১৯৩১) সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে যত শীঘ্র সম্ভব জাপানকে অধিকৃত এলাকা খালি করে দিতে হবে। কিন্তু অক্টোবরে কাউন্সিলের পুনরায় অধিবেশন বসলে দেখা যায় যে জাপান অধিকৃত অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার পরিবর্তে আরো অঞ্চল নিজের অধিকারে আনে। এই সভায় জাপানের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই প্রস্তাব নেওয়া হয় যে রেলপথ বরাবর জাপানী সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নিতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই তা করতে হবে। নভেম্বরে প্যারিসে পরিষদের পুনরায় সভা বসলে দেখা যায় যে জাপানী অধিকৃত অঞ্চল সঙ্কোচনের পরিবর্তে বর্ধিত হয়েছে। ডিসেম্বরে কাউন্সিলের পরবর্তী অধিবেশনে একটি অনুসন্ধান কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

লর্ড লিটনের সভাপতিত্বে গ্রেট ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি এই পাঁচ দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কমিশন গঠিত হয়েছিল। অনুসন্ধান কমিশন প্রতিবেদন পেশ করতে বিলম্ব করায় জাপান মাঞ্চুরিয়ায় আরো আক্রমণ চালায়। জেনেভায় আলোচনা চলাকালীন জাপান শুধু অধিকৃত অঞ্চলই বাড়ায়নি, কুটনৈতিক অবস্থানও পরিবর্তন করে। কাউন্সিলের প্রথম সভায় জাপান যত শীঘ্র সম্ভব সৈন্য প্রত্যাহারে রাজী হলেও এখন বলতে শুরু করে যে চীনা সরকারের সঙ্গে জাপানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যার নীতিগুলি নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পরেই জাপান মাঞ্চুরিয়া থেকে সেনা অপসারণ করবে। অন্যদিকে চীন চাপ দেয় যে জাপান সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার পরেই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা সম্ভব।

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে লিটন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। লিটন কমিশনের এই রিপোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই প্রতিবেদনে মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের কথাই শুধু বলা হয়নি চীন-জাপান সম্পর্কের সমস্ত দিক এখানে আলোকপাত করা হয়েছে। জাপান মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের স্বপক্ষে যে-সব অজুহাত খাড়া করেছিল তা সবই প্রত্যাখান করা হয়: বলা হয়  “indisputably Chinese territory had been………..seized………… by the armed forces of Japan”। অর্থাৎ নিঃসন্দেহে জাপানী সেনাবাহিনী চীনা ভূখণ্ড দখল করেছিল। কমিশন চীনা প্রজাতন্ত্রের অধীনেই মাঞ্চুরিয়াকে রাখার নির্দেশ দেয়, যদিও জাপানকে সন্ধি সম্পর্কিত নির্দিষ্ট কিছু অধিকার অর্পণ করে। স্বাধীন মাঞ্চুকুয়ো রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে এখানে স্বীকার করা হয়নি। স্বাধীন মাঞ্চুকুয়ো হচ্ছে একটি অবাস্তব অস্তিত্ব, তাই পূর্বাবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা বা মাঞ্চুকুয়োর অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এই রিপোর্টে আরো বলা হয়, মাঞ্চুরিয়া অভিযান কেবলমাত্র একটি পুলিশবাহিনীর কার্যকলাপ – জাপান সরকারের এই বক্তব্য জাতিসঙ্ঘ মানবে না।

মাঞ্চুকুয়োর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা ছাড়া জাতিসঙ্ঘ জাপানের বিরুদ্ধে তেমন কোন শাক্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের দায়ে জাপানের বিরুদ্ধে কোন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়নি। জাতিসঙ্ঘের এই নিস্ক্রিয়তার জন্য গ্রেট ব্রিটেনের উদাসীনতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয়তার অভাবই দায়ী। গ্রেট ব্রিটেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তার সাম্রাজ্যিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা ভেবেই পূর্ব এশিয়ায় জাপানের বিস্তার নীতিতে বাধা দান করেনি। 

ব্রিটেন ভেবেছিল জাপান মাঞ্চুরিয়ায় সম্প্রসারণবাদী কার্যকলাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটেনের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাপানী আগ্রাসন বিরোধী নীতি ছিল স্ববিরোধিতা পূর্ণ। এই প্রসঙ্গে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৭ই জানুয়ারী মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব (Secretary of State) হেরি স্টিমসন যে নীতি ঘোষণা করেন তা “অস্বীকৃতিদানের নীতি” (Doctrine of Non-recognition) বা স্টিমসন নীতি (Stimson Doctrine) নামে খ্যাত। এই নীতিতে বলা হয় যে চীনের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা অথবা মুক্তদ্বার নীতি ভঙ্গকারী কোন চুক্তি চীন ও জাপানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা মানবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষ্ক্রিয় ভুমিকার মূল কারণ অবশ্য মার্কিন অর্থনৈতিক ও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তরচীনের গুরুত্বহীনতা এবং মার্কিন-জাপান বাণিজ্যিক লেনদেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাস্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতাবস্থা বজা রাখতেই বেশি আগ্রহী ছিল।।

মূল্যায়ন : 

তবে চীনে মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। চীনাবাসীরা মাঞ্চুরিয়া অধিগ্রহণের প্রতিবাদস্বরূপ “বয়কটকে হাতিয়ার করে। জাপানী পণ্য বয়কটের ফলে জাপানের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ে। চীনাদের জাপানী পণ্য বয়কট এতটাই কার্যকর ছিল যে চীনে জাপানী পণ্যের রপ্তানি ১৯৩১-এর সেপ্টেম্বরে ১২,৭০৬,০০০ ইয়েন থেকে কমে ডিসেম্বরে ৪,২৯৯,০০০ ইয়েন গিয়ে দাঁড়ায়। এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার হারানোর ফলে জাপান ক্ষিপ্ত হয়ে।

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারীতে সাংহাইতে অর্থনৈতিক অবরোধ বা বয়কট ভাঙার জন্য একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। জাপান চীনকে জানায় বয়কট জাপানের কাছে সরাসরি আগ্রাসনের সমান এবং দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের প্রধান অন্তরায়। শেষ পর্যন্ত ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৫ই মে চীন ও জাপানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং জাপানী সেনাকে সাংহাই থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top