StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

তাজমহলের স্থাপত্য শৈলী সম্পর্কে লেখ

 

তাজমহলের স্থাপত্য শৈলী সম্পর্কে লেখ।

শাহজাহানের শিল্প সৃষ্টির সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নিদর্শন তাজমহল। প্রিয়তমা পত্নী মমতাজের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিতে শাহজাহান আগ্রায় যমুনার তীরে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেন (১৬৩১ খ্রিস্টাব্দ)। তাজমহলের বিশেষ সৌন্দর্য হল এর বিশাল গম্বুজ ও চারটি মিনার। সাদা মার্বেল পাথরে এই অনুপম সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাজমহলে ‘ঋরোখ শৈলী’র স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন দেখা যায়।  তাজমহল তৈরি করতে ২২  বছর সময় লেগেছিল। তাজমহল বানাতে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ হয়েছিল, এই সৌধটি নির্মিত হয়।

তাজমহলের সামগ্রিক পরিকল্পনা সম্রাটের নিজ মস্তিষ্কপ্রসূত হলেও তিনি ছিলেন পৃষ্ঠপোষক মাত্র, স্থপতি নন। শাহজাহান এই স্বপ্নের সৌধ নির্মাণের পরিকল্পনার ভার কার বা কাদের উপর অর্পণ করেন এবিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ এর মধ্যে বৈদেশিক প্রভাব খুঁজে পেয়েছেন। স্পেনীয় পর্যটক মানরিকের ভাষ্যে বলা হয়েছে, জনৈক ভেনিসীয় স্থপতি জেরেনিমো ভেরেনিও এর খসড়া তৈরি করেন।

ভিনসেন্ট স্মিথ আবার মনে করেন, তাজমহলের নির্মাণে ইরানী, তুর্কি ও ভারতীয় শিল্পীদের নিয়োগ করা হয়েছিল। মানরিক ছাড়া অন্য কোনো বৈদেশিক পর্যটক তাজমহলের রূপকার হিসেবে ভেরেনিও-র নাম উল্লেখ করেননি। তাছাড়া তাজমহলের শিল্পরীতির সঙ্গে ইউরোপীয় শিল্পরীতির ফারাক এভটাই বেশি যে, এর গঠন ও পরিকল্পনার পিছনে ইউরোপীয় প্রভাব খোঁজার চেষ্টা অর্থহীন। পার্সি ব্রাউন স্পষ্টভাবে বলেছেন, সমকালীন তথ্য থেকে তাজমহলের রূপকার ও শিল্পীদের যে নাম পাওয়া যায়, তা থেকে স্পষ্ট এটি একটি ভারতীয় প্রতিভার নিদর্শন। এখানে ইউরোপীয় ভূমিকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। টিলোটসনের ভাষায়, “The Indian routes of the Taj Mahal are many, varied and deep’।

আব্দুল হামিদ লাহোরি বলেছেন যে, তাজের অধিকাংশ স্থপতি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন। প্রকৃতপক্ষে তাজমহলকে হুমায়ুনের সমাধি স্থাপত্যরীতির পূর্ণ পরিণতি বলা যায়। সমকালীন রচনা ‘দেওয়ান-ই-আফ্রিদি’ থেকে তাজমহলের স্থপতি ও কারিগরদের নাম, পরিচয় ও বেতনের তালিকা পাওয়া যায়। এতে বলা হয়েছে, আগ্রার অধিবাসী ওস্তাদ ইসা তাজমহলের নক্সা করেন; কাশ্মীরবাসী রনমল তাজমহলের উদ্যানের নক্সা করেন; তাজমহলের ‘পিয়েত্রা দুরা’ অলঙ্করণের কাজ করেন মুলতান ও কনৌজ থেকে আগত হিন্দু শিল্পীরা। জনৈক ফরাসী আষ্টিন অফ বোদো-র উপর এর অলঙ্করণের কৃতিত্ব অর্পণ করার চেষ্টা বৃথা। তাজমহলের দেওয়ালে কোরাণের বাণীগুলি খোদাই করেন কান্দাহারবাসী আমানত খাঁ সিরাজী; গম্বুজের কাজ করেন বাইজান্টিয়ান থেকে আগত ইসমাইল খাঁ রুমি। সমগ্র সৌধটি প্রাচ্যদেশীয় স্থপতিদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। হ্যাভেল মন্তব্য করেছেন যে, কোনো একজন ব্যক্তি তাজমহল নির্মাণ করেননি, স্থাপত্যের যে ঐতিহ্য তখন গড়ে উঠেছিল তার উপর ভিত্তি করে সেযুগের শ্রেষ্ঠ শিল্পীরা এর রূপ দান করেন।

অধ্যাপক হীরেন মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন—শুচি, সারল্য, শোভন অলঙ্কারের সমন্বয় তাজমহলকে অনন্য করে তুলেছে। পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম বলে পরিগণিত এই সৌধ তুলনাহীন। যুগে যুগে বিভিন্ন দেশের শিল্পরসিক ও সাধারণ দর্শক তাজমহলের অনুপম সৌন্দর্যে মোহিত ও বিস্মিত হয়েছেন। বেয়ার্ড টেলার তাজ সম্পর্কে বলেছেন—’A febric of mist and moon shine with its great dome soaring up like up silvery bubble’।

তাজমহল সম্পর্কে আবেগের আতিশয্য এবং শিল্পরসিকের আচ্ছন্নতা নিঃসন্দেহে তাজমহলকে মহিমান্বিত করেছে। এর অলঙ্করণ নিখুঁত ও দৃষ্টিনন্দন হলেও এর আতিশয্যকে আবার কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। অধ্যাপক সরসীকুমার সরস্বতী মন্তব্য করেছেন—“The Taj is not so much a triumph of architecture as of splendid deco rative setting; and to this the monument owes much of its charm and beauty’। তাঁর মতে, এই সৌধের শিল্পগুণ ও স্থাপত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হয়নি। হাক্সলে তাজের মধ্যে ‘কল্পনার দীনতা’-র কথা উল্লেখ করেছেন। এঁদের মতে, স্থাপত্যশৈলীর প্রযুক্তিগত দিক বিচার করলে তাজমহল অনন্য কোনো সৃষ্টি ছিল না। তথাপি এর অনুপম সৌন্দর্য বরাবর শিল্প রসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড ও গ্যারেট তাজমহলের সৌন্দর্য ও শিল্পনৈপুণ্যের কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন—’Certainly one of the unri valled beauties of this world’।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *