StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

বাংলা চিত্রকলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর

বাংলা চিত্রকলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর।

 
১৮৬১ সালের ৮ মে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ভারতীয় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে এক মহালগ্নের সূচনা ঘটায়। ছোটোবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন। বিদ্যালয়ের প্রথাগত শিক্ষার বাইরে গৃহশিক্ষকের তত্ত্ববধানে তাঁর সার্বিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল।
কাব্য, সাহিত্য, নাটক অভিনয়, সঙ্গীত-চিত্রাঙ্কন ইত্যাদির পাশাপশি লেখাপড়া, শরীরচর্চা সবকিছুরসমান্তরাল অনুশীলনের মাধ্যমে অচিরেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক পরিপূর্ণ মানব বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ মূলত কবি-সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হলেও সংস্কৃতির সব অঙ্গনেই তাঁর দৃপ্ত বিচরণ ছিল। আশি বছরের জীবনকালে তাঁর প্রতিটি ক্ষণই বিশ্বমানবতার সেবায় নিয়োজিত। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার তিনি লাভ করেন ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্য রচনার জন্য। ১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ (ইং ৭ আগস্ট) মহামানব রবীন্দ্রনাথের জীবনাবসান হয়।
 
শিল্পী হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে স্থান করে নেন। তাঁর আঁকা ছবির সংখ্যা ঠিক কত তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে সাহিত্য পাণ্ডুলিপির কাটাকুটিতে সৃষ্ট ছবিগুলি বাদ দিলে এই সংখ্যা ২, ০০০-র প্রায় কাছাকাছি হবে বলে গবেষকদের অনুমান। রবীন্দ্র চিত্রকলা আধুনিক চিত্রকলার মুক্তপীঠ। কাব্য-সাহিত্যের মতই অতি সাবলীল প্রবাহমানতা তাঁর চিত্রকলায় বিদ্যমান। বিষয়গত ভাবনার অপেক্ষা ভাবগত ভাবনার স্পষ্টতা তাঁর ছবিগুলিকে বহুমাত্রিকতা দান করেছে।
 
কবিতার পাণ্ডুলিপির কাটাকুটির মধ্যে দিয়েই রবীন্দ্র চিত্রকলার সূত্রপাত। শুরু থেকেই স্বাভাবিক বিষয় ও বস্তুর হুবহু চিত্র (Copy Painting) বর্জন করে স্মৃতিনির্ভর কাল্পনিক চিত্র অঙ্কনেই রবীন্দ্রনাথের আগ্রহের প্রাবল্য লক্ষ্য করা যায়। তবে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিনির্ভর চিত্রাঙ্কনকৈ সমকালীন ইউরোপীয় ‘ইজম’ (ism) ভিত্তিক চিত্রের অনুসারী বলে মনে হলেও তা কখনোই ভারতীয় ঐতিহ্যকে বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন করেনি। কখনো পা লম্বা, মাথা ছোটো; আবার কখনো দেহ মোটা, মাথা সরু; কখনো আবার এক প্রাণীর ঘাড়ে অন্য প্রাণীর মাথার সংযোজন—এইভাবে আঁকা তাঁর প্রাণীচিত্রগুলি মিরো কিংবা সালভেদর দালি বা ক্যানভিনস্কির ছবির সাথে তুলনীয়। রবীন্দ্রনাথের অঙ্কনশৈলীতে সুচারু সমাপনী ছোপের চিহ্ন নেই বললেই চলে। তিনি তাঁর কোনো ছবিই যেমন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেননি, তেমনি শেষও করেছেন হঠাৎ করেই
রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্কনের প্রাথমিক পর্ব কিছুটা শ্লথগতিতে শুরু হলেও পরিণত বয়সে তিনি একের পর এক ছবি আঁকেন। এসময়ের আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্য, দেহাবয়ব ইত্যাদিতে আয়তনিক ভর, পরিপ্রেক্ষিতের অনুসন্ধান লক্ষ্য করা যায়। তবে রবীন্দ্র চিত্রকলায় ইউরোপীয় ‘কম্পোজিশন’ ধর্মীতার পরিচয় পাওয়া যায় না। এক অদ্ভূত সারল্য ও ঋজুতা তাঁর চিত্রকর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর চিত্রে সরলরেখার প্রাচুর্য্যের পাশাপাশি বৃত্ত, ত্রিভূজ, হাইপ্যারাবলিক রূপের অতি ব্যবহার লক্ষ্য করা গেলেও তা জটিলতার নামে চিত্রকর্মকে দুর্বোধ্য করে তোলেনি। রবীন্দ্রনাথের আঁকা ‘Nude’ ছবিগুলিতে সংযত রূপের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্যণীয়, যা পাশ্চাত্যের অঙ্কনশৈলী থেকে পুরোপুরি আলাদা। কি নারী, কি পুরুষমুর্তি কোনো ক্ষেত্রেই তিনি অভীষ্টের বাইরে কোনো ভাবের অবতারণা করেননি।
রবীন্দ্রনাথের চিত্রের বিষয়বস্তুর মধ্যে ফুল-ফল, লতা-পাতা, নক্সা চিত্র ইত্যাদির পাশাপাশি মানুষ, জীবজন্তুর চিত্র লক্ষ্য করা যায়। তাঁর একাধিক চিত্রে নারীর ডিম্বাকৃতি মুখাবয়ব বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাধান্য লাভ করেছে। তাঁর আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্যরাজিতে গতানুগতিক প্রকরণের প্রত্যক্ষতা নেই। ছবি আঁকার কাজে রবীন্দ্রনাথ পেলিক্যান কালিই বেশি ব্যবহার করতেন। ক্রেয়ন, জলরঙ, মিশ্র মাধ্যমেও তিনি সাবলীলভাবে বহু চিত্র অঙ্কন করেছেন। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বাধ্যবাধকতাবিরোধী মতবাদের সমর্থক।
রবীন্দ্র চিত্রকলার মধ্যে ‘নারীর মুখাবয়ব’ (১৯৩৫), ‘নারী’, ‘কালো মেয়ে’, ‘লাছোড়া’ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে তাঁর নামহীন চিত্রকর্মের সংখ্যায় সর্বাধিক।
ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শুদ্ধ ছবির স্রষ্টা ও জনক। আনন্দের রূপই তাঁর চিত্রকলার প্রকৃত রূপ। এছাড়া ভারতীয় সনাতনী ঐতিহ্যের পরম্পরা তাঁর চিত্রকলায় বিদ্যমান। তাই তাঁর চিত্রে বাহ্যিক রূপ যত না বাঙময়, তার চেয়ে অন্তর্নিহিত রূপটি অনেক বেশি সরস।
Share

1 thought on “বাংলা চিত্রকলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *