StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের ফলাফল আলোচনা করো

 

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের ফলাফল আলোচনা করো ।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের ফলাফল বা প্রভাব।

ভূমিকা : 

খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অম্ল থেকে শুরু করে খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত এই সময়ে আলেকজান্ডার উত্তর-পশ্চিম ভারতে অভিযানের ফলাফলের বিষয়টি ঐতিহাসিক মহলে যথেষ্ট আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। বহু প্রথিতযশা পণ্ডিত এই অভিযানের ফলাফলের ওপর আলোকপাত করেছেন। বলাবাহুল্য, এঁদের সকলেই আলেকজান্ডারের সঙ্গে আগত গ্রিক ঐতিহাসিকদের বিবরণ ও পরবর্তীকালের গ্রিক লেখকদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে এ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতেই এই পর্যায়ের আলোচনার গভীরে প্রবেশ করা সম্ভব হবে।

আলেকজান্ডারের 

ভারত আক্রমণের ফলাফল :

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ক্ষেত্রেই আলেকজান্ডারের অভিযানের প্রভাব কতখানি পড়েছিল সে বিষয়ে এখন আলোচনা করা যেতে পারে। ভিনসেন্ট স্মিথ আর্লি হিস্ট্রি অব্ ইন্ডিয়া গ্রন্থে আলেকজান্ডারের অভিযানের সূত্র ধরে তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুর্বলতা প্রকটিত হওয়ার বিষয়টির ওপর জোর নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হিমালয় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত আলেকজান্ডারের বাহিনীর বিজয় রথের অগ্রগতির মাধ্যমে গ্রিক তথা ইওরোপীয় সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও নিয়মানুবর্তিতা প্রতিভাত হয়ে উঠেছিল, অপরদিকে এশিয়ার বৃহত্তম বাহিনীর সহজাত দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছিল। একে একটি বৃহত্তর সফল বৈদেশিক অভিযান বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। কিন্তু স্মিথের এই বক্তব্য সর্বাংশে সত্য নয়। এমনকি অনেকে একে অতিরঞ্জন দোষে দুষ্ট বলেও অভিযোগ করেছেন।

ঐতিহাসিক আর. কে. মুখার্জী যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন যে আলেকজান্ডারের এই অভিযান নিঃসন্দেহে উচ্চ প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু সামরিক দিক থেকে তা বিশেষ সাফল্য দাবি করতে পারে না। কারণ, হিন্দুকুশ তথা ভারতের বৃহত্তর কোনো জাতির সঙ্গে তাঁর বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়নি। তিনি আরো বলেছেন যে পুরু ও পাঞ্জাবের কিছু প্রজাতন্ত্র শাসিত রাজ্যের শাসকরা তাঁর বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তাদের নেতৃত্ব, আর্থিক সংগতি ও সংগঠনের অভাবে আলেকজান্ডারের সামরিক বাহিনীকে পরাভূত করা সম্ভব হয়নি। আলেকজান্ডারকে কোনো বৃহত্তর শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়নি। অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জোট যে মোটেই গড়ে ওঠেনি তা বলা ঠিক হবে না। কারণ, তাঁর প্রত্যাবর্তনের পথে মালব ও ক্ষুদ্রকরা মিলিতভাবে তাদের এই বৈদেশিক শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। বলাবাহুল্য, তাদের এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বেশ বিলম্ব ঘটে গিয়েছিল। অপরদিকে অস্তি ও শশীগুপ্তর মতো কিছু ভারতীয় শাসকের বিশ্বাসঘাতকতা আলেকজান্ডারের সাফল্যের পিছনে সহায়ক হয়েছিল।

আলেকজান্ডারের অভিযান এদেশের সামরিক ব্যবস্থার ওপর অবশ্য বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ, গ্রিস তথা পাশ্চাত্যের সামরিক কৌশল থেকে কোনো শিক্ষা না নিয়ে চিরাচরিত পদ্ধতিতেই তারা যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল। তবে ভিনসেন্ট স্মিথ যে বলেছেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সহজাত দুর্বলতা এর ফলে প্রকটিত হয়ে উঠেছিল তাকে একেবারে তাচ্ছিল্য ভরে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। একথা সত্য যে, বৃহত্তর জোটবদ্ধ কোনো শক্তির বিরুদ্ধে আলেকজান্ডারের বাহিনীকে লড়তে হয়নি। কিন্তু পাশ্চাত্যের উন্নত রণকৌশল থেকে এখানের সেনাবাহিনী যে পিছিয়ে ছিল তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল এই অভিযানের সূত্র ধরে। বলাবাহুল্য, যুদ্ধের উপকরণ ও সেনাবাহিনী পরিচালনার ক্ষেত্রে চিরাচরিত পদ্ধতিকে পরবর্তীকালে বলবৎ রাখার বিষয়টি এখানের সামরিক শক্তির সহজাত দুর্বলতারই চরম প্রকাশ।

শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক দিক থেকেও তাঁর অভিযান অসফল হয়েছিল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য রাজ্যগুলির পরাজয় ঘটিয়ে পাঞ্জাবে যে গ্রিক আধিপত্যের তিনি প্রতিষ্ঠা ঘটিয়েছিলেন তা দীর্ঘায়ু হতে পারেনি। আর. কে. মুখার্জী বলেছেন, আলেকজান্ডার পাঞ্জাব ও সিন্ধুকে তাঁর ‘বিশ্ব সাম্রাজ্যে’ (World Empire)-র অন্তর্ভুক্ত করার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা নৈরাশ্যজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রীক শাসন তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পরেই অবলুপ্ত হয়ে যায়। এর পিছনে আলেকজান্ডারকে অবশ্য বিশেষভাবে দায়ী করা ঠিক হবে না, বরং বলা যায়, বাস্তব পরিস্থিতির ভূমিকা ছিল এতে বেশি। আসলে গ্রিস ও ভারতের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে অভিযানের সমাপ্তির অল্পকাল পরেই আলেকজান্ডারের মৃত্যু গ্রিক শাসনের অবসানে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মতো প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বের।

পরোক্ষভাবে অবশ্য আলেকজান্ডারের অভিযান চরম রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছিল। ভারতীয় রাজনৈতিক ঐক্যের পথকে অনেকখানি প্রশস্ত করে নিয়েছিল এই অভিযান। উত্তর-পশ্চিম ভারতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজতন্ত্র ও গণরাজ্যগুলির অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন আলেকজান্ডার তাঁর অভিযানের মাধ্যমে। তিনি কেবল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজাগুলির অবলুপ্তি ঘটাননি; বিলুপ্তির পর সেগুলিকে কয়েকটি প্রধান বৃহৎ ভাগে বিভক্ত করে সেগুলির ওপর কয়েকজন বিশিষ্ট ভারতীয় ও গ্রিকদের কর্তৃত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলেন। 

আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর উত্তর-পশ্চিম ভারতের ঐ এলাকায় এক রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মগধে যে রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চলে আসছিল এই সময় তা প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। এই অনুকূল পরিস্থিতিতে নব প্রতিষ্ঠিত মৌর্য বংশের শাসক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য উত্তর-পশ্চিম ভারত জয় করার কাজে হাত দেন। যেহেতু আলেকজান্ডার ঐ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতীয় শাসনব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন তাই চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে তাদের পরাজিত করার জন্য নতুন করে কোনো উদ্যোগ নিতে হয়নি। রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিয়ে তাঁর প্রত্যাবর্তনের অল্পকাল পরেই চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ঐ অঞ্চল দখল করে নিয়ে তাকে মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, আলেকজান্ডার সরাসরি ভারতীয় রাজনীতির ওপর কোনো প্রভাব না ফেললেও ভারতীয় রাজনৈতিক ঐক্যের পথকে সুগম করে দিয়েছিলেন। এইচ. সি. রায়চৌধুরী তাই বলেছেন, উত্তর-পশ্চিম ভারতকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য যে তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন তার পিছনে অনেকখানি অবদান আছে আলেকজান্ডারের। এমনকি এক্ষেত্রে তিনি আলেকজান্ডারকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের ‘পথপ্রদর্শক’ বলেও অভিহিত করেছেন।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ পরোক্ষভাবে ভারতীয় রাজনীতিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত করেছিল। বস্তুতপক্ষে ভারতের বিশেষ করে আলেকজান্ডারের দ্বারা আক্রান্ত উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজনীতি দীর্ঘকাল ধরে গতানুগতিক ধারায় চলছিল। অনৈক্যে বিদীর্ণ ঐ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিকে তিনি আক্রান্ত করে সেখানে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এক ধরনের জাগরণ ঘটিয়েছিলেন। সর্বোপরি আক্রান্ত এলাকার সঙ্গে ভারতের অন্যান্য বিস্তীর্ণ অংশের যে একটা সংযোগের অভাব ছিল এই বৈদেশিক আক্রমণ সেই দূরত্বের মোচন ঘটায়।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য যে পরবর্তীকালে আঞ্চলিকতার অবসান ঘটিয়ে সমগ্র ভারতকে এক পতাকাতলে আনতে প্রয়াসী হয়েছিলেন তাতে প্রধান প্রেরণার সঞ্চার করেছিল এই গ্রিক আক্রমণ।আপাতদৃষ্টিতে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ওপরেও আলেকজান্ডারের আক্রমণের কোনো প্রভাব পড়েনি। এদেশীয় সাহিত্যে কোনো স্থায়ী চিহ্নও রেখে যায়নি এই অভিযান। মানুষের জীবনযাত্রাতেও কোনো লক্ষণীয় পরিবর্তন আসেনি—বহুদিনের পুরোনো পথ ধরেই তারা এর পরেও জীবন অতিবাহিত করেছিল। এছাড়া, গ্রিস ও ভারত উভয় দেশের মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। ঐ অঞ্চলে বিদেশীয় আধিপত্যের যেটুকু প্রভাব পড়েছিল, আলেকজান্ডারের মৃত্যুর কিছুকাল পর স্বাধীনতা যুদ্ধের (War of Liberation) মাধ্যমে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তা ধুয়ে মুছে দিয়েছিলেন।

গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে অবশ্য দেখা যাবে যে পরোক্ষভাবে ভারতীয় সংস্কৃতির ওপর এই অভিযান অপরিসীম প্রভাব ফেলেছে। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, উত্তর-পশ্চিম ভারত (উত্তরাপথ)-এ আলেকজান্ডার কয়েকটি গ্রিক উপনিবেশ স্থাপন করে গিয়েছিলেন, যেগুলি তাঁর আক্রমণের স্থায়ী ফল হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। এই উপনিবেশগুলি হল যথাক্রমে কাবুল অঞ্চলের আলেকজান্দ্রিয়া, ঝিলামের তীরবর্তী বুকেফালা, পুরুর সঙ্গে আলেকজান্ডারের যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি অঞ্চলে অবস্থিত নিকিয়া এবং চেনাব ও সিন্ধুনদের সংগমস্থলে অবস্থিত আলেকজান্দ্রিয়া। উল্লেখ্য, এই সমস্ত উপনিবেশগুলি মৌর্য সম্রাট অশোকের সময় পর্যন্ত তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

মৌর্যদের অধীনে পরবর্তীকালে এই উপনিবেশগুলি এলেও সেগুলির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। বহুদিন ধরে ঐ উপনিবেশগুলিতে বহুসংখ্যক গ্রিক বসবাস করত। সমকালীন তথ্য থেকে জানা যায় যে যবন রাজ তুসাস্প সহ ঐ উপনিবেশগুলি থেকে অনান্য বহু যবনকে অশোক উচ্চ পদে নিযুক্ত করেছিলেন। এমনকি খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে লেখা ‘পেরিপ্লাস অব্ দ্য এরিথ্রিয়ান সী’-তে বুকেফালা ও আলেকজান্দ্রিয়ার কথা স্থান পেয়েছে। যাই হোক, এই সমস্ত গ্রিক উপনিবেশগুলি থেকে ভারতের সীমান্তে গ্রিক সংস্কৃতি সম্প্রসারিত হয়। পরবর্তীকালে ভারতে যে গন্ধার শিল্পরীতির উন্মেষ ঘটেছিল তার ওপর আলেকজান্ডারের অভিযানের পরোক্ষ প্রভাব পড়েছিল। কারণ, যে ব্যাকট্রিয় গ্রিকদের স্মৃতি গন্ধার শিল্পরীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এদেশে তাদের আগমন ঘটেছিল তাঁর অভিযানের সূত্র ধরেই। তাই আলেকজান্ডার গ্রিক সংস্কৃতিকে সরাসরি এদেশে বহন করে না আনলেও তার ক্ষেত্রকে প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন। এছাড়া পরবর্তী ক্ষেত্রে এই ঘটনার সূত্র ধরে দেশের মধ্যে সরাসরি সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গ্রিক চিন্তাবিদরা ভারতীয় দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন।

আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের অন্যতম স্থায়ী ফল হিসাবে গ্রিস ও ভারত অর্থাৎ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘকাল ধরে উভয়দেশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হত পারস্যের মাধ্যমে। কিন্তু এই ঘটনার পর ঐ সংযোগ স্থাপিত হয় প্রত্যক্ষভাবে। কারণ, আলেকজান্ডার এদেশে অভিযানকে বাস্তবায়িত করার জন্য কাবুল, বালুচিস্তানের মুল্লা গিরিপথ ও মাকরানের মধ্যে দিয়ে তিনটি স্থলপথ এবং একটি নতুন জলপথ আবিষ্কার করেছিলেন। এর সূত্র ধরে স্থল ও জলপথে ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। 

বাণিজ্যের প্রসার সংক্রান্ত ব্যাপারে অধ্যাপিকা রোমিলা থাপার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি যথার্থই অনুমান করেছেন যে, আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে গ্রিক বাহিনী গ্রিস থেকে যাত্রা শুরু করে পশ্চিম এশিয়া ও ইরান অতিক্রম করার মাধ্যমে ভারতে এসে পৌঁছানোর দরুন স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্যের পথ কিছুটা সহজ হয়। কেননা, এর ফলে একদিকে যেমন কিছু নতুন পথ সৃষ্টি হয়েছিল তেমনি পুরোনো পথগুলিও পুনরুজ্জীবিত হল। তিনি লিখেছেন যে, ঐ পথগুলি উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে আফগানিস্তান ও পারস্য হয়ে এশিয়া মাইনরে গিয়ে পৌঁছায় এবং কয়েকটি পথ আবার পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় বন্দরগুলির দিকে যায়। উল্লেখ্য, ভারতে অবস্থিত গ্রিক অধিবাসীদের আগ্রহ এবং বাণিজ্য পথের সাহায্যে উত্তর-পশ্চিম দিকের বাণিজ্য প্রসারিত হয়। ঐ

মূল্যায়ন :

সমকালীন ভারতের ইতিহাস জানার জন্য আমরা আলেকজান্ডারের কাছে অনেকখানি ঋণী। কারণ, ভারতীয় সাহিত্য, ঐতিহ্য বা অন্য কোনো সূত্র থেকে, তৎকালীন উত্তর-পশ্চিম ভারতের মানুষের জীবনযাত্রা ও রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া আগেই বলা হয়েছে যে, আলেকজান্ডারের এই অভিযানের কাহিনিও আমরা অন্য কোনো সূত্র থেকে জানতে পারি না। তাই তাঁর সঙ্গে আগত গ্রিক ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে ঐ সময়ের উত্তর-পশ্চিম ভারতের চলমান জীবনযাত্রার কথা জানা যায়। উক্ত এলাকায় কিছু কিছু জায়গায় তখনও যে অনার্য রীতিনীতি প্রচলিত ছিল তা আমরা তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারি। এককথায়, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস জানার জন্য অন্যতম প্রধান সাহিত্যিক উপাদান হিসাবে তাঁদের বিবরণগুলি বিবেচিত হয়ে থাকে। সর্বোপরি, একটা নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক তারিখের কথা জানা যায় আলেকজান্ডারের অভিযানের সূত্র ধরে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ রাখা দরকার যে এই অভিযানের আগে ভারত ইতিহাসের কোনো ঘটনার তারিখ এত স্পষ্টভাবে জানা যায় না।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *